আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু অপ্রিয় বাস্তব কথা ও সম্ভাবনার কথা

চামড়া দেশের ৩য় বৃহত্তম রপ্তানী খাত। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে মূলত বিদেশে রপ্তানী করা হয়। এই পাকা চামড়া কয়েক গ্রেডের হয় যেমন A, B, C ইত্যাদি। মজার বিষয় হচ্ছে যে আমাদের দেশের কাঁচা চামড়া থেকে ভালো মানের চামড়া হলেও তা আপনি চাইলেও পাবেন না। বায়াররা বেশি দাম দিয়ে বা চুক্তির আওয়াতায় তাদের দেয়া গোপন ফর্মুলায় বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এদেশ থেকে।

এখন দেশে ধীরে ধীরে এই চামড়া নির্ভর অনেক কারখানা গড়ে উঠছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পাদুকা কেন্দ্রিক। পাশাপাশি বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য। বিশেষ করে ব্যাগ সাথে সাথে ছোট ছোট জিনিস যেমন আইডি কার্ড কভার, পেন কেইস, পেন হোল্ডার, মানিব্যাগ, গিফট আইটেম ইত্যাদি জিনিস তৈরি করছে। বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী কোম্পানী পিকার্ড বাংলাদেশ।

যার কারখানার এরিয়া হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার স্কয়ার ফুট এবং ওয়ার্কার প্রায় ১২০০। আরো প্রায় ৩০০০ লোক নিয়ে আরো বেশি প্রোডাকশনে যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরো আছে ক্রিসেন্ট, মাতৃঘর, মিসুজি, গোল্ডেন ফ্রগ, ফরচুনা ইত্যাদি। http://www.picardbd.com/ http://www.mother-house.jp/en/ এইসব কোম্পানী নিয়মিত ইউরোপে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানী করছে নিয়ে আসছে মূল্যবান বৈদিশিক মূদ্রা। এখন ১টা চামড়া রপ্তানী করে যে বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানী করে ঐ চামড়ার মূল্য থেকে ২-৩ গুণ বেশি মূল্যের পণ্য দিয়ে আরো বেশি আয় করা যায়।

কারণ ঐ সব ব্যাগ বাংলাদেশী টাকায় ১৫০০০-৩০০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। আমার দেখা ৪৮০০০ টাকা দামের ব্যাগ ও আছে। আর ঐ ব্যাগ তৈরি করতে গিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু যে চামড়া ব্যবহৃত হচ্ছে তা না। আরো হচ্ছে পাট, দেশীয় কাপড় ইত্যাদি।

এতে বস্ত্র শিল্প বা পাট শিল্পেরও সহায়ক হচ্ছে। এই চামড়া বিষয় নিয়ে দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইন্সটিউট অফ লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি(আইলেট)তে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ৩টি এবং কুয়েটে শুধু লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে সাবজেক্ট আছে। এদের ১মটিতে কাঁচা চামড়া থেকে পাকা চামড়া তৈরি বিষয়ে পড়ানো হয় ২য়টিতে পাদুকা বাদে সব চামড়াজাত পণ্য এবং ৩য়টিতে শুধু পাদুকা তৈরি বিষয়ে শেখানো হয়। এখন আসল কথা হচ্ছে ১ম বিষয়টিতেই শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দ প্রোজয্য হয় বাকি ২টাতে না। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লেস দেয়া চামড়া যা প্রায় আয়না হিসেবে ব্যবহার করা যায়, পলিথিন টাইপ চামড়া তৈরি করা যায়।

বাংলাদেশে অনেক বাইরের কোম্পানী রয়েছে যারা নিজেদের ফর্মুলায় দেশীয় ট্যানারী থেকে বিশেষ গুনসম্পন্ন চামড়া তৈরি করে পণ্য তৈরি করছে যা বেশ আকর্ষনীয় এবং যে কারো দেখলে তা কিনে মন চাইবে। তাই প্রোডাক্টাস বা ফুটওয়্যার কোম্পানীতে অল্প দক্ষ লোক নিয়োগ দিলেই হয়। সেক্ষেত্রে এইসব পড়াশোনা ইঞ্জিনিয়ারিং না করে ডিপ্লোমা কোর্স করা উচিত। কারণ এইসব কোম্পানীতে প্রোডাকশন করার জন্য অনেক লোক দরকার। এটা তো আর রকেট বানাতে হবে না যে অনেক কিছু জানতে হবে।

দিনশেষে ব্যাগ বা অন্য কিছু তৈরি করতে হবে। আর চামড়া এমন ১টা জিনিস যা বাংলাদেশে থাকবেই কারণ চামড়া ট্যান করতে যে পরিমান পরিবেশ দূষিত হয় তা আমাদের দেশে সম্ভব হলেও বাইরের দেশ কখনই তা সহ্য করবে না। পাট বা অন্য শিল্প চলে গেলেও যেতে পারে চামড়া যাবে না। আর আমাদের দেশে অনেক জনসংখ্যার কারণে যাওয়াও কঠিন ব্যাপার কারণ সুন্দর করার কাজ কখনই রোবোট দিয়ে করা যায় না হাত ব্যবহার করতেই হবে। তাই ১টা চামড়াজাত পণ্যের কারখানা করতে গেলে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলেই খব সহজেই অন্য সেক্টরের তুলনায় কম খরচে বেশ ভালো কোম্পানী খুলতে পারবেন।

কথা হচ্ছে কত টাকা? ১ থেকে দেড় কোটি টাকা হলেই ১০০ জন ওয়ার্কার নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। আর নিচের ৪টা বিষয় ঠিক রাখতে পারলেই সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন 1. ২-৩ জন দক্ষ লোক কারণ এরা আরো ১০০ জন ওয়ার্কের কাছ থেকে কাজ বের করে আনবে। 2. ভালো সুইং অপারেটর কারণ সেলাই এর কৌশলের মাধ্যমে আরো সুন্দর পণ্য তৈরি করা যায়। 3. আপনার চাহিদা মত চামড়া। আমরা যেসব চামড়া সচারচর দেখি সেগুলা নয়।

বিভিন্ন কালারের শেডের বা বিভিন্ন টেক্সচার সম্বলিত চামড়া 4. বায়ার ও ভালো ডিজাইনার। চামড়াজাত পণ্য ১টু দামি হওয়ায় তা সবার নাগালের মধ্যে হবে না। তবে আশার কথা হচ্ছে মানুষের রুচি পরিবর্তনের সাথে সাথে এইসবের চাহিদাও বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। আর মানুষ বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকায় জিনিস পছন্দ হলে দাম নিয়ে চিন্তা করে না।

পরিশেষে বলতে চাই বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এই সেক্টর দিয়ে। তাই পাকা চামড়া রপ্তানী কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা উচিত। দেশে কারখানা সেট আপের জন্য আরো বেশি সুবিধা দেয়া উচিত। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং পাকা চামড়া রপ্তানী করে যা আয় করা হয় তার ২-৩ গুন বেশি আয় হবে। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।