আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়ের আর্তচিৎকার (আগোছালো ভাবনাগুচ্ছ)..................২

পরাঞ্জয়ী...

ছেলেটির নাম শাকিল। বয়স ৯-১০ বছর। চারুকলার ২য় গেইটের সামনে যে চটপটির স্টল টা আছে ওটাতেই হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করে ছেলেটা। আমার প্রতিদিনের রুটিনের একটা হল বাসায় ফেরার সময় ঐ স্টল থেকে চটপটি খাওয়া। শ্যাম রঙের ছোট-খাটো ছেলেটা আমাকে দেখেই ভীষণ মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়।

বলতে গেলে এমনও হয়েছে আমার চটমপটি খাওয়ার ইচ্ছে নেই স্রেফ ওর ঐ হাসিটা দেখার জন্য আমি জোর করে নিজেকে টেনে নিয়ে যাই ঐ স্টলে! মাত্র বিশ টাকায় যদি এমন একটা হাসি পাওয়া যায় তবে আমার মত ভ্যাগাবন্ড ছন্নছাড়ার জন্য সেও বা কম কি! আমরা মজা করে ওকে শাকিল খান ডাকি। মজার ব্যাপার হল শাকিল খান বলে ডাক দিলে সে জবাবও দেয়! সেদিন আমাকে একটা লেখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো "আপা এইডা কি লিখা?" আমি পড়ে বললাম ওকে। তারপর জানতে চাইলাম "স্কুলে যাও না কেন?" এবার কোন দিন কিন্তু আমি তোমাকে পড়ে শোনাব না" ঝটপট জবাব দিল "আমি তো পড়ালিখা করি, অ, আ, A, B, C এগুলা পড়তে পারি" আমি বললাম "শুধু ওগুলো পড়লে হবেনা, এই লেখা গুলোও পড়তে হবে!" আবার সেই মনমুগ্ধকর হাসি। হাওয়া মিঠাই খেয়ে গাল লাল করতে আমার খুব ভাল লাগে। নিজে খেয়ে ওর হাতে যখন বাকিটা ধরিয়ে দিলাম কি মজাটাই না পেল।

যেন ওসব রাস্তার খাওয়া আমরা খাচ্ছি এটা জগতের সবথেকে রসালো কৌতুক!! আমাদের শাকিল খান সেদিন কোথা থেকে একটা খাতা নিয়ে এসে আমাকে দেখাল তার লেখনি প্রতিভার গুপ্ত ভান্ডার! আমি ওকে বললাম "আমি যখন চটপটি খেতে আসব রোজ তুমি আমার কাছে লেখা শিখবা" সে খালি হাসে আর হাসে। ইচ্ছে থাকলেও সময় করে ওকে লেখা পরা শেখান হয়না আমার। সময়ের দোহাই পালিয়ে বেড়াই নিজের করা প্রতিজ্ঞার কাছ থেকে! ছবির হাটের আমিনুলের চায়ের স্টলটা হয়ত অনেকেই চিনেন। বয়স বড়জোর ১৪-১৫ হবে হয়ত। মজা করতে করতে একদইন ওর দোকানের চা খাচ্ছিলাম।

ব্যাস সেই থেকেই আমিনুলের ভিষণ প্রিয় ক্রেতাদের একজন আমি। একদিন না গেলে যে দিব্যি আপনজনটির মত জিজ্ঞেস করে "কালকে আসেন নি যে আপু?" বসতে চাইলেই যেখান থেকেই হোক টুল কিংবা পানির ড্রাম নিয়ে হাজির করে বসতে দেবার জন্য। মূখস্থ করে রেখেছে যে আমি আমি চায়ে চিনি বেশি খাই। চার টাকার চায়ের মধ্যে যে অমৃত সে ভরে দেয় এ তো ফুড কোর্টের গরম কফিতে নেই! কত গল্প করে। বাড়ি কোথায়, আগামী পাঁচ বছর পর তাকে হয়ত এখনে আর ব্যবসা করটে দেয়া হবেনা, এই সব।

এই মানুষগুলোর জন্য ভাবতে ইচ্ছে করে ভীষণ! অর্থমুল্যে এদের ভালবাসা কিনতে পাওয়া যায়না। কিন্তু কিভাবে করবো, বিভ্রান্ত এই আমি ই যখন অন্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকি, পরের পয়সায় শপিং করি কিংবা ওদের হাসি কিনতে যাই প্রতিদিন?! যখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলতে শিখব তখন কি আমাদের শাকিল খান কিংবা আমিনুল রা আমাকে আর টানবে। ওদের ঐ হাসি কি আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবে? জানিনা। নিজেকেও এখন আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়না। কারণ মানুষ শুধু সৃষ্টির সেরা জীবই নয় সৃষ্টির সবথেকে নিষ্ঠুর জীবও! পুনশ্চ: সবার নিমণ্ত্রন রইল শাকিল খানের চটপটি আর আমিনূলের চা খাওয়ার।

একদিন নিজের পয়সায় হাসি কিনে নিতে ভুলে যাবেননা!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।