আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময়ের ঝুল

writerrazu.com

২৬ ফেব্র“য়ারী ৩০১০ সাল । আলফা-রে কম্পিউটারে বসে কাজ করছে হ্যালিও। সে খুব ক্রিয়েটিভ মানুষ, একটা লোকাল ইনটারনেট রেডিওতে কাজ করে। সে প্রযোজক। ইতিহাসের বিভিন্ন মজার মজার ঘটনা নিয়ে সে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান বানায়।

খুবই জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, নাম “সময়ের ঝুল”। ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে সে এইসব মজার ঘটনা খুঁজে বের করে। এপিসোড-১: এক সময় পৃথিবীতে ধর্ম বলে এক ধরনের সংস্কৃতি ছিল। ধর্মের জন্যে কোটি কোটি লোক জীবন দিয়েছে। কত সন্ত্রাসী হামলাই না হয়েছে।

র্ধমের নামে রাজনৈতিক দল চলত, ডায়গনেস্টিক সেন্টার চলত, কোচিং সেন্টার চলত, দেশ দখল হত, উত্তর গেট গরম হত। চারিদিকে ধর্মগুরুদের জয়জয়কার। ধীরে ধীরে মানুষ পরকাল-বেহেস্ত-দোজঘ-জন্মান্তর ইত্যাদি বিষয়ে ক্লান্ত হয়ে পরেছে। প্রমান বিহীন এক ধরনের সংস্কৃতির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল ২৫০০ সালের ভার্চুয়াল যুগের মানুষ। তারপর আরও ৫শ বছর পেরিছে গেছে।

এখনকার মানুষ ধর্মের কথা ভুলেই গেছে । ধর্ম নিয়ে হ্যালিও’র তৈরি অনুষ্ঠান শুনে হেসে কুটি কুটি হয় এখনকার সময়ের তরুণ প্রজন্ম। হ্যালিও তার এপিসোড শেষ করে এই লাইনটা দিয়ে “এভাবেই মধ্যযুগে-্আধুনিকযুগে ধর্মের নামে নিজেদের পেট-পকেট ভরত ধর্মগুরুরা”। এপিসোড-২: হ্যালিও ২য় এপিসোডটি করল সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে। উনবিংশ শতাব্দীর পর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি ছোট ছোট দেশ দখল করে নিজেদের কলোনী বানিয়েছিল।

এরপর কত মুক্তিযুদ্ধ-কত মুক্তিযোদ্ধা-কত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পেরিয়ে পৃথিবী এগিয়ে গেছে। চারিদিকে রাজনীতিবিদদের জয়জয়কার। আস্তে আস্তে পৃথিবীতে সব রাষ্ট্র মিলে গিয়ে একটি কনফেডারেশন তৈরি হয়। একজন প্রেসিডেন্ট সারা পৃথিবী শাষন করেছে। ২৫০০সালের কথা, তখন পৃথিবীতে কেবল ভার্চুয়াল যুগের সুচনা হয়।

মানুষের যাবতীয় যোগাযোগ-প্রয়োজন-শিক্ষা-বিনোদন- সেক্সের প্রয়োজন মেটায় ইন্টারনেট। দোকানের একটি মেশিনে একহালি আপেল ঢুকিয়ে দিলে তা রুপান্তরিত হয় ইলেট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই ইলেট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ চলে যায় ক্রেতার বাড়িতে। সেখানে আবার আরেকটি মেশিনে ইলেট্রোম্যগানেটিক ওয়েভ কে রিকনভার্ট করা হয় এক হালি আপেলে। সেই ২৫০০ সালেই প্রথম উদ্ভব হয় ইন্টারনেট রাষ্ট্রের।

প্রথমে ২টি রাষ্ট্র হল, একটি লিবারাল অন্যটি কনজারভেটিভ। এরপর আরও ৫শ বছর কেটে গেল। মানুষ এখন ইন্টারনেট রাষ্ট্রেরও বিকল্প খুজছে। ১১শ বছর আগের সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ-সীমান্ত সংঘাত এখন স্থান পেয়েছে জোকসের বইয়ে। হ্যালিও রাজনীতি নিয়ে তার এপিসোডটা শেষ করল এই সেন্টেন্সটা বলে “উনবিংশ-বিংশ শতাব্দিতে ন্যাশনালিজমের নামে রাজনৈতিক নেতারা মুলত নিজেদের চেয়ার এবং ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়েই বেশী ভাবত”।

এপিসোড-৩: বিষয় ব্যাবসা বানিজ্য। ১৯৯০ সালের পর থেকে তৎকালীন বিশ্ব বাণিজ্যে ব্যাপক পরির্তন এসেছিল। দুনিয়ার তাবৎ মেধাবী ছেলে মেয়েরা বিবিত্র-এমবিএ করা শুরু করল। মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় বেশী পণ্য উৎপাদিত হত তখন। কাজেই পন্য গুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হত কে ক্রেতার মন জয় করতে পারে।

বিবিত্র-এমবিএ কর্পোরেটদের উপর দায়িত্ব এসে পড়ল কিভাবে ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করা যায়। কর্পোরেটরা দারস্থ হল ক্রিয়েটিভদের। ফইন আর্টসে পাস করা ক্রিয়েটিভদের কাছে। তারাও অতি উৎসাহে দায়িত্ব বুঝে নিন। কপৌরেট-ক্রিয়েটিভ মিলে শুরু হল মানুষদের প্রলুব্ধ করা, বোকা বানানো।

এমন ভাবে পন্যগুলির প্রচার চলল যেন এগুলি শুধু পণ্য নয়, ঈশ্বর প্রদত্ত একেকটি বেহেস্তি ফল, একবার খেলে অমরত্ব নিশ্চিত। এভাবে ক্রেতা নিয়ে টানা হেচড়া চলল প্রায় তিনশ বছর । তারপর ক্রেতারা নিষ্পৃহ হয়ে গেল। কোন বিজ্ঞাপনেই আর কাজ হয় না। ক্রেতারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নেওয়া শুরু করল।

গড়ে উঠল ছোট ছোট শিল্প কারখানা, যাদের সাথে ক্রেতাদের সরাসরি যোগাযোগ। কোন মিডিল ম্যান-থার্ড পার্টি-এজেন্সি থাকলনা। উতপাদক-ক্রেতা সরাসরি কারবার। কর্পোরেট-ক্রিয়েটিভদের বাবসা লাটে উঠল। আরো প্রায় দুশ বছর পর এল “সলিড ই-ট্রান্সফার”, ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের মাধ্যমে কারখানা থেকে পণ্য চলে যাচ্ছে মানুষের ঘরে।

ধিরে ধিরে মানুষের প্রয়োজনও অনেক কমে এল। এখন ব্যবসা বানিজ্য হচ্ছে একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে। এই এপিসোডের শেষে হ্যলিও বলল “আশ্চর্য্য চরিত্র এই কপৌরেট-ক্রিয়েটিভদের। এরা নিজেদের দাবি করত বিজনেস লিডার অথচ হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এরা অন্যের পেট-পকেট, চেয়ার এবং ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়েই বেশী ভাবত, মুনাফা তুলে দিত মালিকদের পকেটে”।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।