আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কামড় দিতে শিখবো কবে



বেশ কিছুদিন আগে একটা ‘আর্টিকেল’ লিখেছিলাম। সেখানে বিশিষ্ট গণক প্রফেসারের মত ভবিষ্যৎবাণী করেছিলাম। ‘আগামী কিছুদিন ঐশীর খবর বাজার মাতিয়ে রাখবে’। এদেশের পাঠক কুল আর সম্পাদকদের মেধার ওপর আমার অগাধ আস্থার কারণে এই ভবিষ্যৎ বাণী করতে সাহসী হয়েছিলাম। বলাই বাহুল্য তাঁরা আমার এই আস্থা ভাঙ্গেন নি।

ফলে বলা যায় এই লাইনে ভবিষ্যৎ নেহাত মন্দ না। নিজের ভবিষ্যৎ বাণী ফলে যাওয়াতে আমি নিজে যদিও যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি, তবে তাঁর চেয়েও বেশী বিস্মিত হয়েছি খবরটা এতদিন শিরোনামে থাকায়। কিছুদিন পর পরেই কিছু না কিছু খবর বেরোচ্ছে। কখনও বয়স নিয়ে, কখনও কাজের মেয়ে সুমিকে নিয়ে। ল্যাপটপ হারানোর খবর থেকে শুরু করে তাঁর ইয়াবায় আক্রান্ত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ।

পাঠক কুল ও গ্রোগ্রাসে গিলছে বলেই মনে হয়। যে কয়টি পত্রিকার ‘পেজ’ লাইক দেয়া আছে, প্রায় প্রতিদিন ই সেসব পত্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ খবর আমার ফেসবুকে জানান দেয়া হয়। ঐশী নেই এমন দিনের দেখা এখনও পাই নি। ভবিষ্যৎ বাণী আরও একটি করেছিলাম। মাদক চক্রের ভয়বহ বিস্তার নিয়ে তেমন কোন কথা হবে না।

এক্ষেত্রেও আমি সফল। ঐশীর চিকিৎসা হওয়া উচিৎ না জেলে দেয়া উচিৎ। রিমান্ডে নেয়া উচিৎ না শোধনালয়ে। ইয়াবাতে কি থাকে, কেমন নেশা হয়, কারা করে এ নিয়েও বিস্তারিত আলাপ হল। শুধু পিছিয়ে থাকলো মায়ানমার থেকে আসবার পথে দেশীয় সহযোগীদের নিয়ে কোন লেখালেখি।

এই চক্রের সঙ্গে যেসব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কত বড় বড় মহামান্য গণ জড়িত আছেন, তাঁরা কত বখশিস পান, কিংবা সেসব এলাকায় বদলী হতে কি পরিমাণ দক্ষিনা তাঁদের দিতে হয়—এসব নিয়ে কোন রিপোর্ট দেখলাম না। তবে এ নিয়ে যে সরকার বেজায় গম্ভীর তা বোঝানোর জন্য মাঝে মাঝে বেশ কিছু ফেনসিডিলের বোতল গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হল। ধরা পড়া কিছু ইয়াবার ছবি প্রচার করা হল। এবং যথারীতি অন্য আলাপ শুরু হল। কখনও ইউনুস সাহেবের গুনগান কখনও নিজের উন্নয়ন সম্পর্কে ঝুরি ঝুরি গল্প।

বিরোধী দলেরও তেমন কোন কাজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুইদিন পড়ে পড়ে শুধু হুমকি, আর উপদেশ। ‘আমাদের কথা না মানলে---- ইত্যাদি ইত্যাদি হবে’। সুশীল সমাজের প্রিয় বিষয় রাজনীতি। তাঁরা বেশ সমস্যায় আছেন।

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বেশী কথা বললে ধরে নেয়া হবে বিএনপি পন্থী। আর না বললে, আওয়ামী। মাঝামাঝি থেকে দুদলকেই মৃদু ভর্তসনা করার জায়গা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। কোন এক দলের চামচা হওয়া ছাড়া আর বিশেষ রাস্তা খোলা নেই। টিভি চ্যানেলে ডাক পাবেন না।

পত্রিকায় জমা দেয়া লেখা ভালো গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হবে না। এখন আবার ফর্মুলা দেয়ার মাস শুরু হবে। কিছু কিছু চলে এসেছে। সামনে আরও আসবে। ‘এঁকে প্রধান করুন’ কিংবা ‘ওকে করুন’।

কোন সুপার কম্পিউটার কে করুন কিংবা কোন রোবট কে। বিশ্বকাপের সময় সাড়া জাগানো সেই অক্টোপাস মহাশয় নেহাত পটল তুলেছেন। নয়তো তাঁকে দিয়ে গননা করিয়ে নেয়া যেত—কে জিতবে। এরপর তাঁর হাতে রাজদণ্ড তুলে দেয়া যেত। বিশাল ব্যায়ের এক নির্বাচন থেকে বাঁচা যেত।

ভাগ্য গণনা তে আমার দেখাদেখি অনেকে নেমে পড়েছেন। নেত্রীর পুত্র প্রথমে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। ভবিষ্যৎ বাণী না পরিসংখ্যান প্রথমটায় বোঝা যায় নি। পরে জানিয়েছেন ‘ওপিনিয়ন পোল’ টাইপ কিছু করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এরপরে ভাগ্য গণনার জোয়ার শুরু হল।

কোন দল কয়টি সীট পাবে, কে কে হারবে, কোন মন্ত্রী নমিনেশান পাবে না, কার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে—কি নেই ভবিষ্যৎ বাণী তে। এরশাদ সাহেব কে নিয়ে কেউই খুব বেশী আগ্রহী না। উনার ভাগ্য তাই উনাকে নিজেকেই বলতে হচ্ছে। এবং সম্ভবতঃ নিজেই শুনতে হচ্ছে। ছোট খাট দল নিয়ে আপাততঃ দোলাচাল একটাই, নিজের প্রতীক পাবে না অন্যের প্রতীক।

আর কয়টা সীট দেয়া হবে। কেউ কেউ দেন দরবার শুরু করেছেন। ফেসবুক আর ব্লগে নিজের দলের কার্যকলাপ নিয়ে চাটুকারিতা থামবারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে চারদিকে শুধু কথা আর কথা। আসল খেলা কখন হবে? অক্টোবরে? এই সরকারের সময় সীমা শেষ হলে? কি দেখবো তখন? লগি বৈঠা? না এবার মাঠে নামবে ধানের শীষ কাটবার কাস্তে কিংবা ধান ভানার ঢেকির পাটাতন? শুকনো কথা শুনতে শুনতে দেশবাসী বেজায় বিরক্ত।

টক শোর দর্শক সংখ্যায় অচিরেই ধ্বস নামবে। অক্টোবর পর্যন্ত হয়তো শুনবে এরপরে কিন্তু সবাই অ্যাকশান চাইবে। সে আর্মি অ্যাকশানই হোক আর আর লগি বৈঠা কাস্তে র অ্যাকশানই হোক। কিছু একটা চাই। সাসপেন্স আর ভালো লাগছে না।

ধৈর্য বোধ হয় অপরাধী রাও হারিয়ে ফেলেছে। আজকে দেখলাম জনৈক প্রাক্তন পুলিশ অফিসার খুন হয়েছেন। একসময় হয়তো পুলিশকে ঘাঁটাতো না তবে এখন তাঁর আর প্রয়োজন বোধ করছে না। এই নপুংসক পুলিশদেরকে খুন করতেও আর এরা ভয় পায় না। সবাই জানে, কিছু টক শো, লোক দেখানো কিছু গ্রেফতার এবং কিছুদিন পরে আবার অন্য বিষয় নিয়ে যুক্তি তর্কের বন্যা বয়ে যাবে।

সত্যিকারের গড ফাদার সব সময় আড়ালেই থাকবে। তাঁদের আড়ালে রাখা হবে। হয়তো সাহসের অভাবে, হয়তো ইচ্ছের অভাবে। আমরা যা করবো তা হচ্ছে বিভিন্ন তত্ত্বকথা বলে তাঁদের আড়ালে রাখতে সাহায্য করব। পত্র পত্রিকা আর টিভির টক শো তে সারাক্ষণ ঘেউ ঘেউ করব।

আমরা কি আদৌ কামড় দিতে শিখব? এসব গড ফাদার দের ধরবার শখ কি আমাদের আদৌ কোনদিন হবে? নাকি দক্ষিণা বন্ধ হয়ে যাবার ভয়ে কেবল ঘেউ ঘেউ করেই সময়টা পার করে দিব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।