আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপর্যস্ত পৃথিবী



জানুয়ারী মাস কানাডার তাপমাত্রা থাকবে হিমাঙ্কের নিচে। যে ক’বছর শীত প্রধান দেশে আছি এ রকমই দেখে আসছি। আমরা প্রস্তুত শীতের জন্য। শীত আমাদের কাবু করতে পারবে না। হিটিং চলছে ঘরে ঘরে অক্টোবর থেকে, বন্ধ হবে মে মাসে।

শীতের সমস্ত কাপড় বের করা হয়েছে বাক্স থেকে, কেনা হয়েছে কিছু নতুন। কিন্তু কি হচ্ছে এই ২০০৬-এর জানুয়ারী মাসে ? অভ্যস্ত ক্যানেডিয়ানরা ব্যাস্ত বরফের জন্য। স্নো- র্বোডিং, স্কেটিং, ক্রস কান্ট্রি, স্লেজ কত রকমের খেলা যে বরফের সাথে সম্পর্কিত কিন্তু কোথায় বরফ ? খটখটে মাঠ-ঘাট। উষ্ণ আবহাওয়া, জিরো দূরে থাক প্লাস ৮/৯ সেলসিয়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাপমাত্রা। হালকা একটা জ্যাকেট পরে আমরাও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছি।

প্রচণ্ড হাড় কাঁপানো শীত নেই। মন ফুরফুরে থাকার কথা কিন্তু শংকিত হয়ে উঠছি পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ায়। গ্রীন হাউস এ্যাফেক্টের জ্বলন্ত স্বাক্ষর যেন এই আবহাওয়া। যখন বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রবল শৈত্য প্রবাহ, তখন উত্তর মেরুর মতন শীত প্রধান দেশে আমরা উষ্ণতায় আছি। এই উষ্ণ আবহাওয়া এভাবেই যদি বদলাতে থাকে বছর বছর, শীত কালেও তাহলে টুরিস্ট আসবে কানাডায়।

ভালোর দিকে এভাবেই চিন্তা করা হচ্ছে। তবে দুঃখ শুধু হারিয়ে যাবে বরফের দেশের পোলার বিয়ার চিরতরে। নিজের ক্ষমতা জাহির করার জন্য শক্তিশালী বোমা তৈরী করে ফাটানো হচ্ছে সাগর গর্ভে। এ থেকে কি প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না ? হিংসা হানাহানি থেকে কেন নেই মানুষের মুক্তি ? প্রতিটি যুদ্ধ থেকে জন্ম নেয় হাজার হাজার পঙ্গু বিকলাঙ্গ শিশু। মানুষের আধুনিক অস্ত্র ব্যবহরের ফল।

অথচ মানুষের বোধদয় হয় না। প্রকৃতির বিরুদ্ধ আচরণে নানা রকম বিপর্যয় ঘটছে পৃথিবীতে। মানুষের চুড়ান্ত উন্নতির দূর্ভোগ এগুলো। আনবিক ও রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় ফেটে গেছে আজ উত্তর আমেরিকার ওজন স্তর। প্রোকট ভাবে এর প্রভাবে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ স্কিন ক্যানসারে।

সানস ক্রীম আর সান ব্লক কতটা পারে ঠেকাতে ভয়াবহ আল্ট্রাভায়লেট রে-এর ক্ষতি। অথচ ভয়ের চোটে মানুষ ব্যবহার করছে এসব নিজেকে বাঁচাতে। কতটা লাভ হচ্ছে কে জানে তবে ভালো ব্যবসা হয়ে যাচ্ছে ক্যামিকেল ব্যবসায়িদের। পরিবেশবাদীদের সতর্কিকরণে অনেকেই ফেরার চেষ্টা করছে ন্যাচারেল পদ্ধতিতে। আজকাল এখানকার দোকান গুলোতে দেখি অরগানিক খাবারের পণ্য সম্ভার অনেক বেশী।

অরগানিক খাবার, কসমেটিকস, হারবাল ঔষধ, এসব প্রচীন পদ্ধতিতে ফিরতে চাচ্ছে মানুষ-যারা সচেতন। কারণ ক্যামিকেল যুক্ত কোন কিছুই স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ভালো নয়। পপ জাতিয় পানিয় কোক, স্প্রাইট, পেপসি, থেকেও সরছে এখানকার মানুষ। আগ্রহি হচ্ছে জুস, পানির প্রতি। স্কুলের ভ্যান্ডার মেশিন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এসব সামগ্রী।

তখন আমাদের দেশে বাড়ছে এসব ক্যামিকেলের ব্যবহার। উন্নত বিশ্ব উন্নত অবস্থান তৈরী করার সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা অতটা মনে রাখেনি। আমাদের প্রয়োজনে আমরা সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো জীবন যাপন করছি, কিন্ত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ পৃথিবী বাসের অযোগ্য করে যাচ্ছি। কেউ আমরা আমাদের সুবিধাগুলোকে এতটুকুও ছাড় দেই না। টিভি, গেমবয়, ভিডিও গেম, কম্পিউটারের গেইম এর কি বিশাল জনপ্রিয়তা।

এর ফলে বাচ্চারা আনন্দ পাচ্ছে, খেলা করছে, যন্ত্রনা করছে না মা বাবাকে। তো ওই নিয়ে খুশি থাকুক ওরা। এর কুফল ধরা পরেছে উন্নত বিশ্বে । সজাগ হয়ে গেছে সরকার, স্কুল গুলোতে শারীরিক ফিটনেসের ক্লাস এবং পাসের নাম্বারের উপর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। স্কুলে দৌড় ঝাঁপের ফলে বাচ্চারা কাউচ পটেটো হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

সচেতন গার্জিয়ানরা এর পরও খেলাধূলা করতে নিয়ে যান। অথবা লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বই পড়াতে আগ্রহী হন, যাতে বাচ্চাদের চিন্তা শক্তি বারে। আমাদের দেশের বাচ্চাদের দৌড় ঝাঁপের সুযোগ কম। বিশেষত ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে নিরাপত্তাও কম। তাই আমাদের দেশের বাচ্চারাই স্বীকার হচ্ছে স্থবিরতার।

উন্নত বিশ্বের শেষ হয়ে যাওয়া সব কিছু শুরু হচ্ছে আমাদের দেশে। বরফ না পরায় শীত কমে যাওয়া এদেশে পোলার বিয়ার বিলুপ্তি ছাড়া গাছপালা- জন্তু জানোয়ারের উপর কিছু পরিবেশ গত প্রভাব পরার পর যে অবস্থা আসবে, মানুষ হয়তো মানিয়ে নিয়ে ভালোই থাকবে এখানে। কিন্তু দুঃখে বুক ভেঙ্গে যায় এদেশের বরফ গলে একদিন ডুবিয়ে দিবে আমার শ্যামল বাংলাকে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাবে একটি দেশ । সরকার, জননেতা কারোরই এতটুকু চিন্তা নেই।

নেই সুদূর প্রসারী চিন্তা ভাবনা। সবটুকু কিভাবে দখল করবো এই চিন্তায় ব্যস্ত সবাই । একজন মানুষ ও একটা পরিবারের জন্য কতটা সম্পদের প্রয়োজন? ভালোবেসে হাতে হাত মিলিয়ে ক্ষমতাধারী সকলে যদি ভাবত নিজের দেশের কথা, নিজের অস্তিত্বের কথা। হয়তো বা রক্ষা পেতো আমাদের সোনার বাংলা। কোপেনহেগেনে গ্লোবাল ওর্য়ামিংয়ের সম্মেলন : ২০০৬ এর এই লেখাটার কথা মনে করিয়ে দিল।

তখন ছাপা হয়েছিল জনকন্ঠ পত্রিকায় । সামুর পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা হলো। এই ডিসেম্বরেও ক্যানাডায় বরফের দেখা নাই এবার । গেল সপ্তাহে আলবার্টা প্রভিন্সে স্নো স্র্টর্ময়ে ডুবে যায় শহর একফুট বরফের নীচে, থেমে যায় জীবন যাত্রা। সারা বছর জুড়ে হয়েছে শ্রাবণ ধারার অবিরাম বৃষ্টি যা খুব বিরল এখানের আবহাওয়ায়।

এমন এমন অদ্ভুত আচরণ করেছ আবহাওয়ায়া যা বোঝা কঠিণ। শীতের দেশে থেকে বরফ আর শীতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি না পেলে কেমন বৈচিত্রহীন মনে হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.