আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে বিপর্যস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি মুদি দোকানের শাটার আধা বন্ধ অবস্থায় দেখা গেল। পাশে দাঁড়িয়ে রফিকুল ইসলাম। এটি তাঁরই দোকান। দোকান এভাবে রেখেছেন কেন ভাই? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কয়েক শ টাকার বিক্রির জন্য কয়েক হাজার টাকার জিনিস হারাব নাকি?’
ফার্মগেটের ফুটপাতে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার প্যান্ট-ট্রাউজার বিক্রি করেন আলী হোসেন। হরতালে বিক্রি কমে দাঁড়ায় দুই-তিন শ টাকা।

তাও বিক্রিটা হয় সন্ধ্যার পরে, হরতাল শেষ হলে। এমনও অনেক হরতালের দিন গেছে, যেদিন তিনি দোকানের কাছেই ঘেঁষেননি সারা দিন।
আলী হোসেন বলেন, ‘হরতালে বড় ব্যবসায়ীগো কোনো ক্ষতি হয় না। সব ক্ষতি আমাগো। এই রকম হরতাল চলতে থাকলে আমাগো কী হইব, জানি না।

’ তিনি কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন তাঁর প্যান্ট রাখার চৌকিটি প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে আধমোড়া অবস্থায় ছিল।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা চার দিনের হরতালের প্রথম দিনের দুটি খণ্ডচিত্র এগুলো। হরতালে দেশের সব স্তরের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড় ক্ষতির মুখে পড়েন রফিকুল ইসলাম কিংবা আলী হোসেনের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা, যাঁদের প্রতিদিনের পণ্য বিক্রির অর্থ দিয়ে পুরো পরিবারটি চলে।
চলতি মাসে এর আগেও তিন দিন হরতাল পালন করেছে বিরোধী দল। আর এবারের হরতাল চলবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।


এক দিনের হরতালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কত টাকার ক্ষতি হয়, তার একটি হিসাব রয়েছে ঢাকা চেম্বারের কাছে। সংগঠনটির হিসাবে, পাইকারি বাজার, শপিং মল, শোরুম, ক্ষুদ্র্র ও ছোট দোকানে প্রতিদিন ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি অবশ্য বলছে, এক দিনের হরতালে সারা দেশের ২০ লাখ দোকানের এক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয়।
জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) ২০০৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাভাবিক দিনে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যত টাকার পণ্য বিক্রি করেন, হরতালে এর চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কম পণ্য বিক্রি হয় তাঁর।
দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব এস এ কাদের কিরণের কথায়ও এর সত্যতা মেলে।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যত টাকার পণ্য বিক্রি হয়, তাতে ১৫ শতাংশের মতো লাভ থাকে দোকান মালিকদের। কিন্তু হরতালে লাভের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকে।
রাজধানীর ইসলামপুরে কাপড়ের ছোট-বড় চার হাজারের মতো পাইকারি দোকান আছে। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, এই বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার কাপড়ের বেচাবিক্রি হয়। তবে হরতালে চিত্র ভিন্ন।


গতকাল সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন মার্কেটের সারি সারি কাপড়ের ছোট-বড় সব দোকান সবই বন্ধ। আর মার্কেটের সামনে হাত গুটিয়ে বসে আছেন শ্রমিকেরা, যাঁরা মাথায় বা ট্রলিতে করে কাপড় ওঠানো-নামানোর কাজ করেন।
ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণে ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে সাহস করেন না। তাই সব হরতালেই এখানকার দোকানপাট বন্ধ থাকে। ’ তিনি আরও বলেন, এক মাসের মধ্যে যদি ১০ দিন দোকান বন্ধ থাকে, তাহলে হয়তো দু-চারজন বড় ব্যবসায়ী টিকে থাকতে পারবেন, বেশির ভাগই টিকতে পারবেন না।


নবাবপুরে ছোট-বড় আড়াই হাজার দোকান আছে, যারা ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ইলেকট্রিক্যাল পণ্য বিক্রি করে। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, হরতালে পাইকারেরা এখান থেকে পণ্য কিনতে আসতে পারেন না। আবার ঝুঁকি নিয়ে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই দোকান খুলতে চান না।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএমএমএ) সভাপতি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ব্যবসায়ীরই কিছু না কিছু ঋণ আছে। প্রতিদিনের বেচাবিক্রির লাভ থেকে তা পরিশোধ করা হয়।

তাই হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার যদি দ্রুত কোনো সমাধান না হয়, তাহলে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হবে। ’
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির হিসাবে, ঢাকায় স্বর্ণালংকারের সাড়ে ৭০০ দোকান রয়েছে। হরতালে নিরাপত্তাহীনতায় কেউই দোকান খোলা রাখার সাহস করছেন না। এতে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়।
রাজধানীর নিউমার্কেটে ছোট-বড় মিলিয়ে দোকান আছে ৪৭৫টি।

এর বাইরে মার্কেটের ভেতরেই চৌকি পেতে কাপড়, বাচ্চাদের পোশাক, চুড়ি-গয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে, এই মার্কেটের দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরতালে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সবাইকেই লোকসান গুনতে হয়। এই লোকসান কোনোভাবেই আর পোষানো যায় না। ’
মালিবাগ সুপার মার্কেটের মিশি ফ্যাশনসে বিক্রি হয় পুরুষের পোশাক।

এই দোকানে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি হয়। কিন্তু হরতালে দোকানটি সারা দিনই বন্ধ থাকে বলে জানান এর স্বত্বাধিকারী রেজাউল ইসলাম।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।