আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালে বিপর্যস্ত ১০ লাখ পরীক্ষার্থী

ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে হাসিবুল হক। পরীক্ষার আগের পরিকল্পনা কাজে না লাগায় হয়তো তার আশানুরূপ ফল নাও হতে পারে। হাসিবের পরীক্ষা-প্রস্তুতি ওলটপালট করে দিয়েছে বিরোধী দলগুলোর হরতাল। হরতালের কারণে বারবার পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
হরতালের কারণে এবার উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১০ লাখের বেশি পরীক্ষার্থীকে হাসিবের মতো বেগ পেতে হচ্ছে।

গত ১ এপ্রিল শুরু হওযা এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৮ মে। কিন্তু হরতালের কারণে গত ৯, ১১, ২৩ ও ২৪ এপ্রিল এবং ৯, ১২ ও ২৬ মের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী ৩ জুন পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে হরতালের মতো আরও কর্মসূচি এলে পরীক্ষা আবার পেছাতে পারে।
বিএনপির নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক স্বীকার করেছেন, পরীক্ষার মধ্যে হরতালে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।

তবে হরতাল ডাকার সব দায় তিনি সরকারের ওপর চাপিয়ে দেন।
এদিকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুটহাট করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করায় শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণার পর সে অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়। বিশেষ করে যেসব বিষয়ের পরীক্ষার আগে টানা কয়েক দিনের ছুটি থাকে, শিক্ষার্থীরা সেসব বিষয়ের পূর্বপ্রস্তুতি একভাবে নেয়। আর যেসব পরীক্ষার আগে বন্ধ কম থাকে, সেগুলোর প্রস্তুতি আরেক রকম থাকে।

কিন্তু হরতালের কারণে সময়সূচি বারবার পরিবর্তিত হওয়ায় পরীক্ষাগুলোর মধ্যে ছুটি পাওয়া গেছে কম। পরিকল্পনাও স্থির থাকেনি। পরীক্ষার সূচি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনাও বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে।
আবার দেখা গেছে, একটি পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার আগমুহূর্তে শিক্ষার্থীরা জানতে পেরেছে, সেই পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে।


ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, হরতালের কারণে পরীক্ষা বারবার পেছাতে হয়েছে। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। কারণ, তাদের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী গণিত প্রথম পত্রের জন্য প্রস্তুতি শেষ করেছে, হঠাত্ করে ঘোষণা এল গণিত প্রথম পত্র পরীক্ষা হচ্ছে না। তাকে আবার আরেক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তা ঠিক থাকছে না। পরীক্ষার ফলাফলে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। বারবার পরীক্ষা পেছানোর কারণে পরীক্ষার্থী ছাড়াও যাঁরা পরীক্ষা নিচ্ছেন, তাঁদেরও বাড়তি বেগ পেতে হচ্ছে।
গফরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষক তামান্না সুলতানা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বারবার পরীক্ষা পেছানোর কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হলে কখনো দেখা যায়, দুটি পরীক্ষা পাশাপাশি পড়ে গেছে।

ফলে পরীক্ষার্থীরা মানসিকভাবে চাপের মধ্যে থাকে। কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা মিসও করে ফেলতে পারে। গ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা বেশি। পাশাপাশি পরীক্ষা পরিচালনার সামগ্রিক কার্যক্রমও কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

দায় সরকারের, বললেন ওসমান ফারুক
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ওসমান ফারুক বলেছেন, হরতাল ডাকতে সরকার তাঁদের বাধ্য করছে।

তাই শিক্ষার্থীদের অসুবিধার দায় সরকারকেও নিতে হবে। প্রথম আলো ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি স্বীকার করেন, হরতালে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে।
ওসমান ফারুক বলেন, বিরোধী দলকে সারাক্ষণ বেকায়দায় ফেলতে চাইছে সরকার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপিকেও তাই হরতাল ডাকতে হচ্ছে। আজকের হরতাল ডাকা হয়েছে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে।

সরকার ইচ্ছে করে অকারণে এই ইস্যু তৈরি করেছে। তাঁর মতে, ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার কথা চিন্তা করে সরকার এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে পারত। কিন্তু তারা দায়িত্বশীল আচরণ করছে না।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর মতে, কোনো দিকেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই বলে কেউ ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে না। কেউ কখনো ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে কর্মসূচি দিয়েছে বলে তিনি মনে করতে পারেন না বলে জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি হরতাল ডেকেও জাতির প্রয়োজনে প্রত্যাহার করেছে। সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকায় বিএনপি স্বেচ্ছায় হরতাল কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে এসেছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।