আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা…

তোকে দেখিনা, কতো হাজার বছর হয়ে গেলো...
রাতে মাত্রই বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছি অমনই শুরু! আমার টিনের চালে ঘরে তো তখন স্বর্গীয় ছন্দ! আর মনে তখন ফেলে কিংবা রেখে আসা দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন… সেই ছো্ট্টবেলা যখন কেবলই ছুটে বেড়ানো আর দস্যিপনা তখন থেকেই বৃষ্টির সাথে আমার অন্যরকম সখ্যতা- প্যান্ট-ট্যান্ট খুলে কাদাজলে সে কি মাখামাখি! এরপর কৈশরে এসে বৃষ্টির জলে ভিজে ফুটবল হাডুডু খেলে খেলে কতোবার যে মা’র বকুনি খেয়েছি তার কোনো ইয়ত্তাই নেই। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজেছি আর রাতে জ্বরে কেঁপেছি। স্পষ্ট মনে আছে- আমি জ্বরে কাঁপতাম আর আমার মা আমাকে বকে বকে বলতেন- তোর যেন দৈনিকই জ্বর হয়। জ্বরেই তুই মরিস… আমি মা’র কথা শুনতাম আর অমন জ্বরের মধ্যেও খিলখিলিয়ে হাসতাম। মা তো তখন রেগে যেতেন আরো… স্কুলের দুষ্টুমিভরা দিনগুলো শেষ করে কলেজের নতুন জীবন যখন আমার চোখে রঙীণ চশমা পরিয়েছে তখনও আমি সেই আগের মতোন বৃষ্টিপাগল।

মাঝে মাঝে পুরোপুরি ভিজে জুবজুবে হয়েও ক্লাস করেছি, ইউনিফর্মের কারণে স্যাররা বুঝতে পারতেন না সব সময়। ‘সব সময়’ এ কারণেই বললাম- আমি একবার এই ইচ্ছাকৃত ‘বৃষ্টিস্নাত’ অবস্থায় ক্লাস করার দায়ে মার খেয়েছিলাম! কোন স্যারের কাছে যে মনে নেই। তা ছাড়া এটা তো আর মনে রাখার মতো কিছু নয়! বৃষ্টিতে ভেজার গল্পে যেটা মনে রাখার মতো, সেটা বলছি এবার- ওই কলেজ থেকেই একবার ক্লাস শেষে বাড়ী ফিরছিলাম। হালকা ইলশেগুড়ি বৃষ্টি ছিলো তখন। আমার পরণে কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট।

গাড়ীতে মাত্র মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে আমাদের বাড়ী এবং বাসা উভয়টা। তো আমি গাড়ীতে সিট পাচ্ছিলাম না। একেবারে পিছনের দিকে দুই সিটের একটা খালি আরেকটাতে একটি মেয়ে বসা! তাকে ইংগিতে আমি কর্ণারের সিটটাতে যেতে অনুরোধ করলাম। মেয়েটা গেলোও! আমি আশ্চর্য হলাম খুব। কারণ- আমি হলে জীবনেও..! যা হোক- গাড়ী ছাড়ার পরই খেয়াল করলাম মেয়েটার পরণের হলুদ কামিসটা ভেজা।

আরো খেয়াল করলাম তার চুলও ভেজা। মানে- বৃষ্টিতে ভেজা। মেয়েদের দিকে আমি কখনো এভাবে খেয়াল করিনা। কিন্তু ওই মেয়েটাকে খেয়াল করার কারণ হলো- ওর শরীর থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ বেরুচ্ছিলো। হয়তো দামী কোনো পারফিউম স্প্রে করেছিলো সে।

এখানে যে কথাটা মনে রাখার মতো- পাঁচ মিনিটের পথ শেষে আমি নেমে গেলাম। নামার পর খেয়াল করলাম- আমার ডান পাশে কোমর থেকে কাঁধ পর্যন্ত হলুদ রঙের আবছা দাগ। সাদা শার্টের উপর স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অনেক্ষণ ভাবার পরও যখন বুঝতে পারছিলাম এই রং কোত্থেকে এলো তখনই মনে পরলো হলুদ রঙের ভেজা কামিস পড়া মেয়েটার কথা!! রাতে বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমার ঘরে বাজছিলো শাহানার কন্ঠে আমার নিশীথ রাতের বাদলধারা আর মনে পরছিলো খুব ছোটবেলার কথা এবং হলুদ কামিস পড়া মিষ্টি গন্ধের মেয়েটার কথা।

আসলে বৃষ্টি এমনই- ঝুম করে এসে আমাদের নিয়ে যায় স্মৃতির ফেলে আসা পথে। সেখানে আমরা ভাবনার জগতে কল্পনার বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে খুজে ফিরি স্মৃতির নুড়িপাথর। কি, ঠিকনা?!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।