আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশীথ সূর্যের দেশে- তিন

হ য ব র ল এর সেই যে গেছো দাদার কথা মনে আছে? ”তুমি যখন যাবে উলুবেড়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন মতিহারি । যদি মতিহারি যাও, তাহলে শুনবে তিনি আছেন রামকিষ্টপুর । আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেলেন কাশিমবাজার । কিছুতেই দেখা হবার যো নেই । “
পুরো নরওয়ে ভ্রমনে আমাদের সাথে সূর্যি মামারও হয়েছিল সেই অবস্থা।

আমরা যখন অসলোতে তখন সূর্যি মামা স্টাভাঙ্গার আর বারগেনের আকাশ মাতিয়ে বেড়ায়, আর আমরা যখন স্টাভাঙ্গারে নামলাম তখন ঠিক গেছো দাদার মতই সূর্যি মামা অসলো বেড়াতে চলে গেল। অথচ যখন অসলো ছিলাম আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখেছি সেদিন সূর্যি মামা স্টভাঙ্গারেয় ছিল।
যা বলছিলাম, গেছো দাদার কীর্তি কাহিনিতে স্টাভাঙ্গারে নামলাম মাথায় টিপটিপ বৃষ্টি নিয়ে।
মাঝে ফাঁকতালে বলে নেই ট্রেনে ভ্রমন কেমন ছিল। বেশ ভাল ছিল, আরও ভাল হতে পারত যদি না সারারাত ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ত।

রাতের ট্রেন, ট্রেনে উঠেই সিটগুলো বেশ পছন্দ হয়েছিল, পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে পা ছড়িয়ে আরাম করে হেলান দিয়ে বসার। আগে থেকেই টিকিট কাটা ছিল তাই টিকিট নিয়ে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। প্রতিটা সিটের উপরে দেখি একটা করে প্যাকেট রাখা আছে। খুলে দেখি বেশ তোফা, আরামে ঘুমানোর সব ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা রয়েছে। মুখের বাতাসে ফুলানো যাবে এমন একটা ছোট্ট বালিশ, ছোট আকারের কম্বল, চোখে আলো ঠেকানোর জন্য কালো পট্টি, কানে শব্দ ঠেকানোর ইয়ার নোড।


নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুক্ষন পরে ট্রেন ছাড়তেই যে যার মত কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টায় লেগে গেল। সারাদিনের প্রচণ্ড ক্লান্তি সত্ত্বেও শুধু আমার চোখে কোন ঘুম ছিলনা। ট্রেন তখন ছুটে চলেছে স্টাভাঙ্গারের দিকে। রাতের আলো আঁধারিতে বাইরের দৃশ্যাবলি অসম্ভব মন কাড়া, কিন্তু জানালার কাঁচ গড়িয়ে নামা পানির ধারাতে তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছু।
এইভাবেই আধো ঘুম আর আধো জাগরনে ভোর ৫ টা নাগাদ আমরা স্টাভাঙ্গার পৌঁছে গেলাম।

স্টাভাঙ্গারে রাত কাটানো হবে, আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল। ষ্টেশন থেকে হোটেলের দূরত্ব ছিল খুব কম, হেঁটে মিনিট দশেক হবে। ষ্টেশনে নেমে ষ্টেশনটা ঘুরে দেখলাম, ছোট ষ্টেশন তেমন আহামরি কিছু নয়। ষ্টেশন থেকে বের হতেই ভোরের বাতাসে স্টাভাঙ্গার খুব মিষ্টি লাগল, কেমন জানি আমাদের গ্রাম গুলোর মত, যদিও এটা পুরাদস্তুর বন্দর নগরী তাও কেমন একটা মায়া মায়া ভাব। আমাদের হোটেলের সামনের ভিউটা খুব চমৎকার ছিল।


আমরা শুরুতেই হোটেলে গিয়ে তাদের লকার রুমে আমাদের ব্যাগ ব্যাগেজ রেখে দিলাম। রুম পাবার কথা সেই দুপুর ১২টায় তাই রুমে আর ঢোকা হলনা কিন্তু কোন সমস্যা নাই, কারন আমরা তো ঘুরতেই এসেছি, নাকি।
হোটেলের লবিতে বসে সকালের নাস্তা করে বের হলাম। হোটেল থেকে অল্প দুরেই টুরিস্ট ইনফো, কিন্তু সেটা আবার সকাল ৯টার আগে খুলেনা। তাই আমরা আশে পাশে ঘুরছিলাম,তখন মাত্র বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু আকাশের মুখ তখনও গোমড়া।

শুরুতেই নজর কাড়ল একটা বিল্ডিঙের গায়ে বাঁকা হয়ে ঝুলে থাকা এক গাড়ির কাঠামো। সেটা একটা অফিস বিল্ডিং হবে মনে হল, ছুটির দিন থাকায় অফিস খোলার কোন সম্ভবনায় নাই, তাই আর জানা হলনা গাড়িটা কেন এমন ঝুলে আছে!
অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঝুলে থাকা গাড়ির মডেল।
[img=570x400][/img]
স্টাভাঙ্গারে একটা জিনিষ দেখলাম, শহুরের আশেপাশে বেশ কিছু ভাস্কর্য বানিয়ে রাখা হয়েছে, বেশ লাগছিল দেখতে।
টুরিস্ট ইনফোর পাশেই পেলাম নরওয়ের সবচেয়ে প্রাচীন ক্যাথেড্রালটির দেখা, স্টাভাঙ্গার ক্যাথেড্রাল। অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম , এটা নাকি সেই ১১২৫ খ্রিষ্টাব্দে বানানো হয়েছিল, যদিও দেখে বোঝার কোন উপায় নেই।


[img][/img]
ফাঁকতালে একটু ইতিহাস বলে যাই-
ইংল্যান্ডের ওয়েঞ্চেস্টার থেকে আগত বিশপ রেইনাল্ড ১১০০ সালে এটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেন যা শেষ হতে হতে ১১৫০ সাল হয়ে যায় । তবে স্টাভাঙ্গার নগরী এটির নির্মাণ সাল হিসেবে ১১২৫ সালকে ধরে থাকে।
শুরুতে এটা ছিল অ্যাংলো নরমান স্টাইলে বানানো, দুর্ভাগ্যর ব্যপার ১২৭২ সালে ক্যাথেড্রালটিতে আগুন ধরে এর ব্যপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। এরপর বিশপ আরনে ক্যাথেড্রালটির পুনর্নির্মাণ করেন এবার কিন্তু গথিক স্টাইলে। ১৮৬০ সালে সর্বশেষ রেনভেশনে এর সময় বাইরের এবং ভিতরের কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করা হয়।


ক্যাথেড্রালটির সামনে দাঁড়িয়ে খুব রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম, কত শত বছর আগে তৈরি।
[img][/img]
ভিতরে ঢোকার ইচ্ছে ছিল কিন্তু খুলবে সেই সকাল ১১ টায় তার আগেও আমাদের অন্য প্ল্যান। আসলে হাতে এত কম সময় নিয়ে গেছিলাম আর এত বেশি প্ল্যানিং ছিল যে সব কিছু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে ঘুরতে গেলে নরওয়ের প্রতিটা শহরে কমপক্ষে তিন দিন করে থাকা উচিত।
ক্যাথেড্রালের সামনে দিয়ে ঘুরে এসে আমাদের হোটেলের সামনের পুকুরপাড়ে বেশ কিছুক্ষন বসে রইলাম, সকালের ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাসে বেশ লাগছিল।

আশার কথা আবহাওয়া বার্তা বলছে দুপুর নাগাদ মেঘ কেটে যাবে, গেছো দাদা সূর্যি মামার দেখা পাবার সম্ভবনা অবশ্য কম।
পুকুরপাড়ে থুড়ি লেকপাড়ে দেখা মিলল এই মিস্টি বালকের।
[img][/img]
মায়াবি সেই পুকুর
[img][/img]
পুকুরজুড়ে এবার সত্যি হাঁসের ঝাঁক
[img][/img]
টুরিস্ট ইনফোর সামনেটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজান ছিল
[img][/img]
৯ টা বাজতে ইনফোতে গেলাম। সেই মহিলা খুব হাসিমুখে জানাল স্টাভাঙ্গারে আসলে অবশ্যই পাল্পিট রক দেখা উচিত। এটা ২০১১ সালে লোনলি প্লানেট এবং সি এন এন গো দ্বারা সবচেয়ে দর্শনিয় প্রাকৃতিক স্থান( Most spectacular view and natural attraction) হিসেবে খ্যাত।


স্টাভাঙ্গারের একটি প্রধান আকর্ষণ হল লুসে ফিয়র্ড আর অন্যটি পাল্পিট রক যাকে স্থানীয়রা ডেকে থাকে প্রেইকেস্তলেন বলে। পাল্পিট রকটা আসলে কি, সেটা আসলে প্রেইকেস্তলেন পর্বতের চূড়ায় যাবার আগেই লুইস ফিয়র্ডের দিকে মাথা বাড়িয়ে থাকা বিশাল এক প্রস্তর খণ্ড, পানি পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
হয় পানি পথে লুসে ফিয়র্ড দিয়ে প্রেইকেস্তলেন পর্বতের নিচ দিয়ে পাল্পিট রকের তলা দিয়ে লুসে ফিয়র্ড পুরোটা ঘুরতে হবে, সেক্ষেত্রে পুরো সময়টা পানিপথে ঘুরতে ঘুরতে খাড়া উঠে যাওয়া দুই পাশের পাহাড় আর হাইকিং করা মানুষ দেখতে হবে। অথবা প্রথমে নৌ পথে প্রায় ৪০ মিনিট ভ্রমন করে তাউ নামক এক জায়গায় পৌছাতে হবে অতঃপর ২৫ মিনিটের বাস ভ্রমন করলে রুফল্কে শহরে প্রেইকেস্তলেন পর্বতের গোড়ায় নামিয়ে দেবে, সেখানে প্রেইকেস্তলেন পর্বত লজ নামের এক ছোটোখাটো মোটেল মত আছে, সেখান থেকে চিহ্নিত পথে হেঁটে হেঁটে পাল্পিটের মাথায় উঠতে হবে।
বন্ধুদের বেশ আগ্রহ হাইকিং করে পাল্পিটের চূড়ায় উঠার ব্যপারে, আমি বেশ দোনোমনো করছিলাম।

পাহাড়ে চড়া তো দূরের কথা একদম পাহাড়ের তলদেশেই যাইনি কখনও। আর তাছাড়া আমরা একদম নরমাল জুতা পড়েছিলাম, হাইকিং করতে তো শুনেছি অন্যরকম জুতা দরকার। কিন্তু ওদের এত আগ্রহ দেখে আমি আর না করতে পারলাম না।
যাই হোক, শুনলাম ৯.৩০ এই একটা ফেরি ছাড়বে তাও এর উদ্দেশে। একটা ব্যাক প্যাকে কিছু হালকা খাবার, ছোট দুই বোতল পানি আর গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে শেষ মুহূর্তে ফেরিটা ধরতে পারলাম।

তারপর দুই পাশের অতি মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে তাও যাওয়া। ফাঁকতালে বলে নেই, আমাদের খাওয়াদাওয়ার কিন্তু কোন কষ্ট হয়নি। ফেরীতে বসে বসে আমরা আলুপুরি আর ডালপুরি খাচ্ছিলাম বেশ তারিয়ে তারিয়ে।
তাউতে নেমে দুপাশের আকাশ ছোঁয়া পাথুরে দেয়াল দেখতে খুব ভাল লাগছিল। ওখানে বাস অপেক্ষা করছিল, চড়ে বসলাম।

বাসে মাত্র মিনিট পঁচিশ সময় লাগল যেতে, তখনও আকাশে মেঘ কিন্তু কিছুটা উজ্জ্বল আলো ছিল, রাস্তার দু পাশের দৃশ্য সাংঘাতিক মন কাড়া।
তাউ থেকে রুফল্কে শহরে যাবার পথে রাস্তার দুপাশের দৃশ্যাবলি
দৃশ্য ১ :
[img=600x400][/img]
দৃশ্য ২ :
[img=600x400][/img]
দৃশ্য ৩ :
[img=600x400][/img]
মুগ্ধ চোখে চারিপাশ দেখতে দেখতে হুট করে পৌঁছে গেলাম রুফল্কে প্রেকেইতেলেন পর্বতের গোড়ায় লজে।
চেয়ে দেখলাম লজের অপর পাশ দিয়ে সবাই কাঁধে ব্যাক প্যাক নিয়ে আস্তে ধীরে জঙ্গুলে পথে পাহাড়ের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই মোটামটি হাইকিং ড্রেস হাইকিং শু পড়েছিল। সবাই কে দেখে একটু ভয় ভয় লাগছিল, মনে মনে নিজেকে অভয় দিচ্ছিলাম- ওকে তেমন কোন কঠিন ব্যাপার না মাত্র তো ৬০৪ মিটার, হাফ কিলোমিটারের অল্প কিছু বেশি দূরত্ব, হায় যদি আসল সত্যি জানতাম!
যা বলছিলাম, আমরা পাহাড়ে উঠা শুরু করলাম, উঠছি তো উঠছি, চারিপাশে গাছপালা, পাথুরে পথ, মাঝে মাঝেই পা স্লিপ কাটে, খুব সাবধানে উঠতে হচ্ছে, গাছের কারনেই কিনা জানিনা ভ্যাপসা গরম আর মশা।

ইয়া বড় বড় মশার কামড়। গেছো দাদার একটু দয়া হচ্ছিল প্রানে, মেঘের আড়ালে দেখা যায়না এমনভাবে উঁকি দেবার চেষ্টা।
আমার মনে হল অনন্তকাল ধরে পাহাড়ে উঠার পরে হাঁপাতে হাঁপাতে অবশেষে চুড়ার মত একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে চারপাশে তাকিয়ে ভাবলাম, ও আচ্ছা এই সেই পাল্পিট রক, এ আর এমন কঠিন কি, যাই হোক, উঠতে পেরেছি এটাই বড় কথা। কিন্তু সমস্যা হল, ছবিতে যেমন দেখেছিলাম আর পড়েছিলাম তাতে তো আশেপাশে ফিয়র্ডের পানি দেখা যাবার কথা, চারিপাশ খুব খোলামেলা হবার কথা, এমন পাথুরে আর জংলা হবার কথা না।

না পারতে এক সময় ফয়সাল কে বলেই ফেললাম -"এই হল গিয়া এত বিখ্যাত পাল্পিট রক,ফুহ টাইম নষ্ট টাকা নষ্ট... " মুখের কথা মুখেই থাকল, ফয়সাল আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে এক সাইনবোর্ডের সামনে দাড় করিয়ে বলল-”ওলেত তাসসা”, পাশে দেখি বাকি দুজন হাসছে। ফিনিশে ”ওলেত তাসসা” মানে হল ইউ আর হিয়ার, অর্থাৎ তুমি এখানে। ম্যাপে তাকিয়ে দেখি পাল্পিট রকের হাঁটুর কাছেও পৌঁছাইনি তখনও। দেখেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ, একি কাহিনি।
এইবার শুরু হল আসল ভ্রমন।

পাল্পিট রক যাবার পায়ের কাছে পৌঁছেই গলা শুকিয়ে কাঠ সামনে তো পুরাটাই পড়ে আছে। কি আর করা, লাইনে এসে আগে বাড়লাম।
আগে বাড়তে গিয়ে থমকে গেলাম, আরে আরে আমরা তো রকের মাথায় উঠব, পথ এবার নিচের দিকে নামে কেন। শুরু হল নিচে নামা, যতদূর কষ্ট করে উঠেছিলাম তার অর্ধেকের বেশি পথ নামতে হল, আবার উঠা, আবার নামা...সামনে এল এক উপতাক্যা। এভাবে কতবার উঠলাম আর নামলাম আমি হিসাব রাখিনি, শেষে ফয়সাল আর মৌ বলেছিল ওরা নাকি ১১ বার গুনেছে, সঠিক কত আসলে জানিনা।

রাগ করে আমি পাল্পিট রকের নামকরন করে ফেললাম কালপ্রিট রক, বাকি তিনজন ও সাদরে নাম গ্রহন করল, কালপ্রিট ই বটে।
সে যাই হোক, এই চড়াই উৎরাইয়ের মাঝে দুইপাশে প্রকৃতি অসাধারণ বললে আসলে কম হবে, কোথাও উপতাক্যা তো কোথাও বা পাহাড়ের খাঁজ বেয়ে পানি নেমেছে, সামনে দুই পাহাড়ের মাঝে একটা শান্ত নিরিবিলি পুকুরের দেখা পেলাম, কি যে অসম্ভব মায়াবি বর্ণনার ভাষা নেই। খুব দুঃখ হচ্ছিল কেন যে একবারও একটু ভাল আলোর দেখা পেলাম না।
[img][/img]
সামনে পথ বহুদূর
[img][/img]
গেছো দাদার প্রানে খুব সামান্য দয়া হল ক্ষণিকের জন্য
[img][/img]
পাহাড়ের মাঝে টলটলে হ্রদ
[img][/img]
এই হ্রদের ধারে পাথরে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়েছি
[img][/img]
মাঝে মাঝেই জিরিয়ে নিচ্ছিলাম, চারজন মানুষ আমরা ছোট বোতলে মাত্র দুই বোতল পানি, ভ্যাপসা গরমে কেবলই পানি পিপাসা পাচ্ছে, পথিমধ্যে বিশুদ্ধ পানির বা টয়লেটের কোনই ব্যবস্থা নাই, তাই খুবই হিসাব করে পানি খাওয়া শুরু করলাম। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল, তারই মাঝে আমাদের লজ্জা দিয়ে দেখি প্রায় বছর সত্তুরের এক জুটি গটগট করে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে।

অথবা কাঁধে খুব ছোট বাচ্চা কোলে কোন মা, মালিকের পিছন পিছন প্রহরীর মত আদরের কুকুর। আশে পাশের সবার সামনে নিজেদের খুব আনফিট লাগছিল, অবশ্য আমাদের পোশাক এবং জুতো, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব অন্যতম কারন হতে পারে।
দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড় সারি
[img][/img]
আমাদের মত আরও অনেকে এগিয়ে চলেছে পাল্পিটের চূড়ায়
[img][/img]
হয়ত এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছে কেউ
[img][/img]
কৌতূহলী কোন পথিক পথ ছেড়ে এলোমেলো দিকে
[img][/img]
কিছুদুর এগানোর পর পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠল মনে হচ্ছিল কোনভাবেই পৌঁছাতে পারবনা, শুধু মাত্র জেদের বসে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। হায়, আগে কেন খেয়াল করিনি সমুদ্রপৃষ্ঠ/ফিয়র্ড পৃষ্ঠ থেকে এই ৬০৪ মিটার দূরত্বে পৌঁছানর আগে পাহাড়ি পাথুরে রাস্তায় ৪ কিমি পথ পাড়ি দিতে হবে।
যাই হোক, যা বলছিলাম,উঠতে নামতে, নামতে আর উঠতে যখন হাল প্রায় ছেড়ে দিয়েছি, পা ব্যাথায় টাটাচ্ছে, শরীর ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে তখন মনে হল বহুদুরে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে যা দেখতে কালপ্রিট রকের মতন।

এই বার মনে কিছুটা উৎসাহ আসল।
যেতে হবে ঐ মাথায়
[img][/img]
আবছা ভাবে ঐ দেখা যায়
[img][/img]
যাত্রাপথে নিচ দিয়ে যাওয়া কোন বোট, যদি আমরা ফিয়র্ডে বেড়াতাম হয়ত এমন কোন বোট থেকে উপরপানে চাইতাম
[img][/img]
পাল্পিটের খুব কাছাকাছি
[img][/img]
শেষ পর্যন্ত কোনমতে কালপ্রিটের চূড়ায় উঠতে পারলাম। কি যে অপার্থিব সুন্দর বলার ভাষা জানা নেই, মুহূর্তেই সব কষ্ট, ক্ষুধা, পানি পিপাসা, সারা গায়ে ব্যাথা সব দূর হয়ে গেল। মনের আনন্দে চেঁচিয়ে বললাম- আমি পাইলাম, উহারে পাইলাম।
এবার কালপ্রিট রকের চূড়া থেকে তোলা কিছু ছবি দেই-
ছবি এক :
[img][/img]
ছবি দুই :
[img][/img]
ছবি তিন (মুঠোফোন কাউকে কোথাও শান্তিতে থাকতে দেয়না):
[img][/img]
ছবি চার (আমি পাইলাম, উহারে পাইলাম...... ) :
[img][/img]
(উঠলাম তো বটে কিন্তু আবার নামতেও তো হবে, শুধু সুড়সুড় করে নেমে যাওয়া তো নয়, আবার উতরায়, চড়ায়,উতরায়, চড়ায়, ...
চলবে... )


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।