আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্তর্বর্তী সরকারের যত রূপরেখা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংবিধানের আওতায় একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সুপারিশ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিক ও দাতা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সর্বদলীয় এ অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় সরকার ও বিরোধী দলের সমানসংখ্যক সদস্য থাকবে, যাদের নির্বাচিত করা হবে বর্তমান (নবম) জাতীয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুসারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন যথারীতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এ আভাস দিয়েছে।

এদিকে, সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা হলে সে ক্ষেত্রে ১১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে।

আর এ সরকারের জন্য সরকারি দল থেকে পাঁচ এবং বিরোধী দল থেকে পাঁচ- এ ১০ জন মন্ত্রী মনোনয়ন করা হবে। সরকারি দলের মন্ত্রীদের নাম প্রস্তাব করবেন প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলের বিরোধীদলীয় নেতা। সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই কেবল নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবেন। এ রকম একটি ফর্মুলা নিয়ে এগোচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। তারা এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অনেকটা কাছাকাছি আনতে পেরেছেন বলে মনে করছেন।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিয়ে এ দুই দল এখনো যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে। এর পরও হাল ছাড়েননি কূটনীতিকরা। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে এখনো বিএনপির অসম্মতি থাকলেও আশা ছাড়েননি কূটনীতিকরা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ কূটনীতিকদের এমন ফর্মুলায় রাজি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না তারা।

অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ৫ঃ৫ মন্ত্রিত্বের প্রতি সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও তারা চাচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তির হাতে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হোক। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীরা কেবল রুটিনওয়ার্ক করবেন। নির্বাচনসংক্রান্ত সব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনই সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করবে। নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়াতেও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

নির্বাচনকালীন সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের সমসুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেও কাজ করবে নির্বাচন কমিশন। কূটনীতিকরা সরকারের এই চিন্তাভাবনার প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সংবিধানের আওতায় সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের ফর্মুলা নিয়ে দূতিয়ালি অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী দল মেনে নিলে সম্ভাব্য এ সরকারের কাঠামো গঠনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে আলোচনার ভিত্তিতে। বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন রূপরেখার সঙ্গে বিএনপি একমত নয় তবে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাব এলে তারা বিবেচনা করবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলকে এর চেয়ে বেশি ছাড় দিতে প্রস্তুত নয় তারা। এমনকি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান করার প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি নয়। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলে আওয়ামী লীগ অন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচনে যাবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বিদেশিরা এমন ধরনের কোনো প্রস্তাব দিতে পারে না। কারণ পররাষ্ট্রনীতিতে এমন নীতি নেই।

এর পরও যদি এমন কোনো প্রস্তাব দেয় তাহলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি এককভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আওয়ামী লীগের অন্য প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশি বন্ধুরা আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। তাদের আমরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করি।

তারা এমন কোনো প্রস্তাব দিয়েছে কি না আমার জানা নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিরোধী দল আসতে চাইলে তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। বিএনপি যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আসতে চায়, তাহলে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব দিলে তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.