আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজকন্যার কাছে বাবার কৈফিয়ত...

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

(দুদিন আগে রাজকন্যার তিনমাস পূরো হলো। মেয়েটা আল্লাহর রহমতে খুব হাসিখুশী হয়েছে। বাবা-মেয়ের প্রতিরাতে একটা গানের আসর হয়, দুজনই গলা ছেড়ে আ-আ-আ করি। ভালোবাসা রাগে চলে আমাদের সেই ধ্রুপদী আলাপ। এর বাইরে দুজনে নানা কথাও বলি।

এখানে তুলে দেয়া আলোচনাটা একদমই সাম্প্রতিক। ) -তোমার ওপর রাগ করেছি? -কেনোরে মা? -তোমার কারণে আজ আমার মতো দুধের শিশুকেও গালি শুনতে হচ্ছে ব্লগে। আমাকে অভিশাপ দেয়া হচ্ছে। আমি কি ব্লগার? তাহলে? তোমার লেখার দায় আমাকে কেনো নিতে হবে? কেনো আমাকে নিয়ে এসব লেখা হবে? -তাই নাকি! তুই কিভাবে জানলি এসব? তুই কি পড়তে জানিস? -আমাকে নিজে থেকে পড়তে হবে কেনো? তুমি পড়েছো, তোমার চোখেই আমার পড়া হয়ে গেছে। -হুমম।

ব্যাপারটা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু কি করবো বল মা, ভার্চুয়াল দুনিয়াদারিতে যেটুকু রিয়েলিস্টিক টাচ, তুই তো তারই অংশ। আমিতো তোকে আমার যতখানি ভাবি, ততখানিই ভাবি ব্লগের। -সেটা কিরকম? -এই যেমন ধর সামহোয়ার ইন ব্লগ দিয়ে আমার ব্লগিংয়ে হাতেখড়ি। এখানে আমার প্রথম যে পোস্টটি, সেটি ঠিক কবিতা নয়, তোর মাকে প্রেম নিবেদন করে আমার এসএমএস।

তোর মা পটেছিলো সেটা পড়ে। তারপর ধর আমরা যখন বিয়ে করলাম, সেটা ব্লগে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। লেখায়-ছবিতে। বাংলা ব্লগে এর আগে এরকম কখনোই হয়নি। তুই যেদিন হলি, সেদিন ব্লগে তোকে নিয়ে পোস্ট পড়েছে।

আমাকে গালি দিয়ে দিন শুরু করে এমন মানুষও সেদিন তোকে প্রাণভরে দোয়া দিয়েছে। তাহলে তুই আলাদা রইলি কই? -ও তুমি তোমার ব্যক্তিগত জীবন ব্লগে তুলে দেবে, আর তার জন্য ভুগতে হবে আমাদের? এর আগে মাকে নিয়েও একজন যা তা লিখেছিলো। -এই জায়গাটায় তোর ভুল হচ্ছে বুঝতে। ব্লগিং আসলে ইন্টারনেট ডায়েরি। নিত্যকার যাপনের রোজনামচা।

ইন্টারনেট আসার আগে মানুষ ডায়েরিতে যা লিখতো, তাই এখন আন্তর্জালে ব্লগিং। শুধু যাপনই নয়, মানুষ তার ভাবনার কথাও লিখে। দেশ-বিদেশ-রাজনীতি নানা বিষয়েই লেখে। এখন আমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে কেউ যদি আমার পরিবারকে সেখানে জড়িয়ে ফেলে সেটা অবশ্যই তার আচরণগত সমস্যা। -দ্বন্দ্বটা কিসের? -দ্বন্দ্বটা একান্তই দৃষ্টিভঙ্গীর এবং আদর্শের।

খেয়াল করে দেখবি, এই ব্লগে কিছু ব্লগার একদম ফিক্সড একটা প্যাটার্নের প্রোডাক্ট। তাদের কাজ ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রকাশনাগুলো কপি করা। এসব তাদের নিজেদের ভাবনা নয়। সামহোয়ারের শুরুতে আমরা যখন গল্প-কবিতাসহ সৃজনশীল ব্লগিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখনই এই ব্লগারদের আগমন। এদের ৯৯ভাগের সৃজনশীলতা বলতে জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক মেনিফেস্টো কম্পোজ করে ব্লগে দেয়া।

তারা ইসলামের কথা বলে। কিন্তু সেই আড়ালটা নিয়ে প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্মভূমির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলে। আদর্শের দ্বন্দ্বটা ঠিক এখানেই। আমাদের স্বাধীনতার অর্জনগুলো নিয়ে বিতর্কিত কথাবার্তা যখন তারা ব্যাপকহারে প্রচার করা শুরু করলো, তখন স্বাভাবিক ব্লগিং বাদ দিয়ে আমি ও আমার মতো অনেকেই এগুলো তথ্য-উপাত্তসহ মিথ্যে প্রমাণ করার দায় নিলাম। কিন্তু একপর্যায়ে দেখলাম কোনো কাজ হচ্ছে না।

কারণ এরা সেভাবেই প্রোগ্রামড। ভ্রান্তি স্বীকার করবে না। প্রমাণেও কাজ হবে না। -কিভাবে জানো তারা জামাত-শিবির? -আচরণে এবং ভাবনার প্যাটার্নে। সবগুলো একই মৌলিকতা নিয়ে বিরাজ করছে।

দুঃখ এই যে আমাদের ধর্মীয় পরিচিতি তারা স্বীকার করে না। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমরা আগে বাঙালী, পরে মুসলমান। এ কারণেই হয়তো আমার দেশ, আমার সংস্কৃতি, আমার শেকড়ের সঙ্গে একাত্ম হতে কষ্ট হয় না। কিন্তু এরা সেই ধারণায় নেই। এদের ভাবনাটা আমাদের আচরণ ও সাংস্কৃতিগতভাবেও আরবদেশীয় হতে হবে, যেটা আমাদের ধর্মপুস্তকেও নেই।

তাদের কাছে পহেলা বৈশাখ পালন, শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে যাওয়া বেদাতি কাজ, হিন্দুয়ানী। দেশপ্রেমকে সেখানে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতে তাদের ঈমান অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মধ্যে নেই অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুললেই তারা ধর্ম নিরপেক্ষ, নাস্তিক ইত্যাদি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেবে। ঠিক এই ভণ্ডামিটাই আমি এক্সপোজ করেছিলাম আমার সর্বশেষ পোস্টে।

-তুমিও তো তাদের রাজাকার বলো -বলিইতো। বলবো না? সেই ১৯৭১ সালে গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদের মতো ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতকরা যেসব কথা বলেছিলো, সে ভাষাতেই তারা এখনো কথা বলে। ব্যাপারটা চেতনার। তারা ইসলামের লেবাসে স্বাধীনতা বিরোধী চেতনা লালন করে। সেটাই রাজাকারী চেতনা।

একটা মজার ব্যাপার খেয়াল করবি। এরা নয়াদিগন্ত আর সংগ্রাম ছাড়া কোনো পত্রিকা পড়ে না। স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি তাদের নগ্ন পক্ষপাত কখনোই লুকোয় না, আবার মুখে স্বীকার করবে না তারা জামাত-শিবির করে। উল্টো যারা এদের দলীয় প্রচারণার বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা সবাই ঢালাওভাবে আওয়ামী লিগের কর্মী এবং ভারতের দালাল হয়ে যায়। এ তালিকায় জেবতিক আরিফের মতো ঘোর আওয়ামী বিদ্বেষীও আছেন।

তাদের ধারণা আমাদের এই যে কাজ-কাম ফেলে কষ্ট করে যোগাড় করা স্বাধীনতার পক্ষের রেফারেন্সগুলো হয়তো আওয়ামী লিগ জোগান দেয়। আর তা প্রচার করার জন্য তাদের মতো আমাদের জন্যও বিশেষ ভাতা বরাদ্দ আছে। তেমনটা যদি হতো, তোমার বাবা যে পাগলের মতো নির্ঘুম কটা রাত কাটালো, এই যে তোমার বুবুর সঙ্গে বাড়িভাড়া দিতে না পারা নিয়ে ঝগড়া হলো, এগুলো কি হতো? -তাহলে ফারজানা আন্টির সঙ্গে তোমার কি সমস্যা? -সমস্যা ওই আদর্শগতই। তবে তার সঙ্গে আমার সরাসরি সংঘাত কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের কুকুর ডেকে নিজের নামে চিরতরে ব্যান হওয়া ওয়ামীর পক্ষে সে যখন ফারজানা মাহবুবা নিকে জ্বালাময়ী প্রতিবাদ জানালো, সেই পোস্টেও আমার মন্তব্য যথেষ্টই ভদ্রোচিত ছিলো।

ব্যাপারটা অন্য জায়গায়। তুই তো জানিস কদিন আগে আমি ওরিয়ানা ফালাচিকে নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছি। এটা একটা মজার নিরীক্ষা ছিলো। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস নিশ্চয়ই, এসব স্বাধীনতা বিরোধী ব্লগারদের কাছে আমাদের জাতির জনক ও স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একজন ঘৃণ্য পুরুষ। ঠিক যেমন আমরা ঘৃণা করি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে মীর জাফর গোলাম আযমকে।

এই শেখ মুজিবকে নিয়ে কেউ যদি কোথাও গালিগালাজ করে, সেটা তারা সংগ্রহ করে ব্লগে তুলে দেয়। এমনকি সেটা তাদের চোখে ঘৃণ্য হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ হোক, আহমদ ছফা হোক কিংবা অন্য কেউ। এটা নিয়েই সেদিন মেসেঞ্জারে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিলো। তখনই ফালাচির কথাটা আমার মাথায় আসে। শিবিরের সাপোর্টাররা কথায় কথায় ফালাচির নেয়া শেখ মুজিবের সাক্ষাতকারের রেফারেন্স দেয়।

তারা সম্ভবত এই তথ্যটাই জানে, কিন্তু জানে না ফালাচি এমন একজন মহিলা যার স্টাইলই ছিলো যার সাক্ষাতকার নিবে তাকে আনসেটেল করা এবং যা তা বলা। এবং ভদ্রমহিলা প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী। এখন সেটা শিবিরের ব্লগাররা জানে না। তাদের কথা হলো ফালাচি মুজিবকে নিয়ে যখন যা তা লিখেছে, তখন তাকে মাথায় নিয়ে নাচা উচিত। এখন ফারজানা কয়েকদিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন ইসলামের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণার জবাব দিয়ে।

সম্ভবত নাম ছিলো ছিঃ ছিঃ ইসলাম এত খারাপ। যিনি এমন একটা পোস্ট লিখতে পারেন, তার ইসলামের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কিন্তু একইজন যখন একজন প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষীকে রোলমডেল বানাতে চায়, তখন ব্যাপারটা অবশ্যই ভণ্ডামী। কারণ প্লিজ ইরান আমাদের মাথা হেট করো না নামের পোস্ট লিখতে পারে যিনি, তার নিশ্চয়ই জানা উচিত এই ফালাচি ইরানের আধ্যাত্মিক নেতা ও বর্তমান বিপ্লবী ইরানের জনক ইমাম খোমেনীর নেয়া সাক্ষাতকারের পটভূমিতে তার বিরুদ্ধে এক মহিলার স্তন কাটার মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন। আমি ঠিক করলাম সেটাই এক্সপোজ করবো।

দিলাম তিন লাইনের পোস্ট। ওরিয়ানা ফালাচিকে আমাদের ঘৃণা করা উচিত, তাকে তালেবানী স্টাইলে পাথর ছুড়ে মারা উচিত। লোকজন এসে জানতে চায় আমি কেনো এমন কথা বলছি। আমি চালাকি শুরু করলাম, লিখলাম মুজিবকে গালি দিয়েছে। শিবিরের ব্লগারদের প্যাটার্ন আমি জানি বলেই ফাদটা পাতলাম।

মাঝে ম্যাসেঞ্জারে কৌশিককে বললাম আমি কি করতে যাচ্ছি, সে জানালো এই মজাটায় সে আছে। আর রাগিবকে অনলাইন দেখে নিষেধ করলাম যেনো কোনো মন্তব্য না দেয়- এটা ছাগুদের জন্য একটা ফাঁদ। অপেক্ষা করতে হলো না। মুক্তি নামে এক স্লিপার (বিশেষ সময়ের জন্য ব্যবহৃত নিক) পোস্ট দিলো ওরিয়ানা ফালাচিকে স্বাধীনতা পুরষ্কার দেয়া উচিত। আমি পোস্টে যা লিখিনি তা লিখছিলাম মন্তব্যে।

একটু একটু করে। সেখানেই তুলে দিলাম ইসলাম নিয়ে ফালাচি কি বলেছেন। কিভাবে মক্কা-মদিনা, মোহাম্মদ ও মসজিদ নিয়ে আপত্তিকর কথাবার্তা লিখেছেন। শিরোনাম বদলালাম, এডিট করে লিখলাম একজন মুসলমান হিসেবে ফালাচিকে আমাদের ঘৃণা করা উচিত। মুক্তির পোস্ট পড়লো মুসলমান হিসেবে তাকে সম্মাণ করা উচিত।

মজাই মজা! আর বোকাটা সেই কথাগুলোতে নাকি আপত্তিকর কিছুই পায়নি যেখানে স্পষ্ট ভাষায় ফালাচি লিখেছেন আমি তাদের মসজিদে পেশাব-পায়খানা করতেও যাই না। সবচেয়ে বড় বোকাটা বনেছিলো দিদারুল আলম বাননা। সে পুরো পোস্ট না পড়েই মুজিবকে গালি দিয়ে ফালাচি কত বড় বীরত্বের কাজ করেছে সেটা তুলে দিলো। সেখানে তার মুখ থেকে স্বীকার করালাম এইসব তাদের রাজনীতির অংশ। ইসলাম নয়, তাদের প্রতিপক্ষ স্বাধীনতা।

সে পোস্ট মুছেছে, কিন্তু কনটেন্ট আমার ব্লগে রিপোস্টেড আছে, পড়লেই বুঝবে কিরকম ধরা খেয়েছিলো ছাগুরা। এখন ফারজানা সন্ধাবাতির এক পোস্টে ওরিয়ানা ফালাচিকে নিয়ে যে উচ্ছসিত কথাবার্তা বলেছে, সেটাই স্ক্রিনপ্রিন্ট করে আমি ইমেজ হিসেবে মূল পোস্টে দিয়েছি। সেখানে মুজিবের সাক্ষাতকারের কথাও উল্লেখ করেছে সে। একজনের চিন্তা-চেতনার স্টাইল তোমার ভালো লাগে, তুমি তার আদর্শকে মেনে তার মতো হতে চাও, অথচ সে ইসলাম বিদ্বেষী আর তুমি ইসলামের রক্ষক সাজো। আমার অপরাধ আমি চোখে আঙুল দিয়ে এই ভন্ডামীটা ধরিয়ে দিয়েছি।

রাগ তার হতেই পারে। -এরপর কি হলো? -এরপর উনি সেই পোস্টে এসে কমেন্ট করলেন আমি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। আমাকে উনি ঘৃণা করেন। আমি একা না, কৌশিককে নিয়েও আপত্তিকর কথা বললেন। এবং সেগুলোর পরতে পরতে ছিলো ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য।

হাহাহাহা হেসেছেন উনি নাকি আমার পোস্ট পড়ে, আমার বুদ্ধির দৈন্য ও লেখার কনটেন্ট নাকি লাল মসজিদের মৌলবাদীদের মতো (যারা তার দলের মতোই ইসলাম নিয়ে মৌলবাদী প্রচারণা চালায় বায়তুল মোকাররমের দখল নিয়ে)। আমি সেটার জবাব দিলাম। স্বীকার করি খুব একটা শোভন ছিলো না কথাগুলো। -সেটা ওনার মা পড়েছেন বলে উনি লিখেছেন। আর এই ক্ষোভে উনি ব্লগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন? -হাহাহাহা- আমার তো উনার মতোই হাসি পেলো।

তার মানে দাঁড়ায় উনার মা আমার পোস্ট পড়েন, না হলে তো এই মন্তব্য উনার দেখার কথা না। আর পড়লে নিশ্চয়ই উনি তার মেয়ের মন্তব্যও পড়েছেন। তার মেয়ের উগ্র মানসিকতা যদি উনি মেনে নিতে পারেন, তাহলে প্রতিক্রিয়াটাও তার মেনে নেয়ার কথা। এসবই আসলে লেখার মধ্যে এক চিমটি ইমোশন ঢোকানোর জন্য। আর ব্লগ ছাড়ার ঘোষণা অনেকেই দেয়।

ছাগুরাম ব্যান হওয়ার পর সামহোয়ারের পতন কামনা করে ব্লগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এক জামাতি মহিলা। দুদিন পর কিছু হয়নি এমন ভাব করে আবার ঠিকই লিখছে। আর দেখ তার সর্বশেষ পোস্টে আমাকে একজন ফ্রিক ও পারভার্ট বলে গালি দিয়েছে সে, সেটাও নাকি সে ব্লগের শুরু থেকেই জানে। বিশ্বাস কর, আমার পারভার্সনের পরিচয় পাওয়ার মতো ঘনিষ্টতা আমার সঙ্গে উনার হয়নি। এটা আমার বিরুদ্ধে অপবাদ।

-হাহাহা। কিন্তু উনি সেখানে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে -নেয়া হয়নি কে বললো। আমার পোস্টের সেই কমেন্টটা মোছা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনদিনের জন্য কমেন্ট ব্যান করা হয়েছে। -তাহলে উনি ব্যান হলেন কেনো? -উনাকেও নিশ্চয় কমেন্ট ব্যান করা হয়েছে।

কারণ আমি বিবিএ টিমের মেইলের জবাবে লিখেছি ফারজানা আমার ব্লগে এই কমেন্টটি করেছেন যেটার প্রতিক্রিয়ায় আমি ওই কমেন্ট করেছি। তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা সেটাই করেছে। -কিন্তু দেখো, তোমার এই খেলায় আমাকেও জড়ানো হয়েছে -তাতো বটেই, এই নোংরামী তাদের করতেই হবে। একজন মেয়েকে আমি এই কথা বলেছি বলে আমার মেয়েকে জড়ানো হয়েছে।

এখন আমি তাকে মেয়ে হিসেবে যতটা না আক্রমণ করেছি, তারও বেশী করেছি একজন ব্লগার হিসেবে তার মন্তব্যকে। তার ভাবনার নোংরামীকে নোংরামী দিয়ে জবাব দিয়েছি। এখন তার পক্ষের ব্লগারদের ধারণা ফারজানার একজন মেয়ে হিসেবে যে কোনো পুরুষের কাপড় ধরে টান দেয়ার অধিকার আছে, কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়ায় পুরুষটি তার যৌন উত্তেজনার কথা জানাতে পারবে না। জানাতে হলে নিজের মেয়ের কথা মাথায় রাখতে হবে। দেখো রাজকন্যা।

তুমি যেমন আচরণ করবে, তেমন আচরণ ফেরত পাবে। সে আচরণের দায় একান্তই তোমার নিজের, তোমার বাবার নয়। -হুমম, গালিবাজ ব্লগারের মেয়ে। -আবার হাসালি। আরে আমি কি ঢালাও ব্লগারদের গালি দিই নাকি।

প্রমাণের পর প্রমাণ দেয়ার পরও যখন স্বাধীনতা বিরোধী ব্লগারগুলো সেই উল্টোপাল্টা লিখে, তখন কি মাথার ঠিক থাকে। স্বাধীনতার ঘোষণা, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আপত্তিকর কথা লিখবে আর তোর বাবা সেটা মেনে নেবে? দিয়েছি গালি। আর শোন, জামাতিরা যখন আমার নিন্দা করে, আমি তখন নিশ্চিত হই যে আমি ঠিক পথে আছি। তাদের প্রশংসা যে কারো জন্য সন্দেহজনক। বুঝতে হবে যার প্রশংসা তারা করছে, সে কোনো না কোনো ভাবে তাদের পারপাজ সার্ভ করছে।

-আমাকে বদদোয়া দিয়েছেন উনি -মা, তুমি নিশ্চিত থাকো খোদা কখনোই নিষ্পাপকে শাস্তি দেন না। আমার পাপের শাস্তি ইহকাল ও পরকালে আমিই পাবো, তুমি নও। তাছাড়া ঢের বেশী ব্লগার তোমার জন্য দোয়া করেছে। -সন্ধ্যাবাতি আন্টি বলেছেন... -হাহাহা। এটা অন্যভাবে পড়তে পারো।

বাবার মুখোশ খুলে দেয়ার ক্ষমতা তুমি যেনো পাও। তোমার বাবা যেহেতু মুখোশ পড়ে না, বরং অন্যদের মুখোশ খুলে দেয়, তুমি যেনো সেই ক্ষমতা পাও সেই দোয়াই উনি করেছেন। -রাগ ইমন আন্টির বদদোয়ার রেফারেন্স দিয়েছেন উনি? -দেখেছিস ওদের প্যাটার্ন! তোর ইমন আন্টি এক মন্তব্যে রাজাকারি মনোভাবের জন্য জাস্ট ধুয়ে দিয়েছেন তোর সন্ধ্যাবাতি আন্টিকে। কিন্তু তারই রেফারেন্স এখন উনার দরকার হয়েছে আমার আর তোর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। -মামু নামে একজন আমার জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? -আরে আমার দেশের জন্মই মেনে নেয় না, তুই আছিস তোর জন্ম নিয়ে।

ঠিকাছে কখনো ডিএনএ টেস্টের দরকার হলে করে ওকেও এক কপি পাঠিয়ে দেবো। -ফারহান দাউদ আংকেলও বলেছেন কমেন্টটা করার আগে আমার কথা তোমার ভাবা উচিত ছিলো -কি বলবো বল। তার পছন্দের ব্লগারকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছি, তার তো খারাপ লাগবেই। তবে একদিক থেকে বেঁচেছি যে তুই ছেলে হসনি। হলে কি জ্বালাতেই না পড়তাম।

কাউকে কিছু বললেই লিখে দিতো এমন কিছু বলার আগে নিজের ছেলের কথা মনে রাখার দরকার ছিলো আমার! [শেষকথা : রাজকন্যার হাসিতেই বোঝা গেলো আমার যুক্তি তার পছন্দ হয়েছে। তারপর তাকে আশীর্বাদ করে বললাম- তোমার নাম রাজকন্যা রাখা হয়েছে, কারণ রাণী হওয়ার জন্য তোমার জন্ম। নিজের যোগ্যতায় তুমি বিখ্যাত হবে, নিজের গুণেই গুণবতী হবে। বাবাকে নিয়ে ভেবো না। বাবা জায়গামতো ঠিকই প্রশংসিত, সেটা নিজের যোগ্যতাতেই।

নিশ্চিত থেকো তার কারণে তোমাকে ছোট হতে হবে না। মেয়েটা মিষ্টি করে আবার হাসলো। ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।