আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজকন্যার সাদা রুমাল (শেষ পর্ব)



১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব সকাল বেলায় মন্ত্রীপুত্র রাজকন্যা স্যাক্রেডের পাঠানো পোষাক এবং নামাঙ্কিত সাদা রুমাল নিয়ে রওয়ানা হল। কৃষকপুত্র শুভকামনা করল। মন্ত্রীপুত্রও খুব আত্মবিশ্বাসী, তার জয় হবেই! যথারীতি প্রথমেই সুনয়নার সাথে দেখা। সে পরামর্শ দিল কর্মচারী খুজে বেরাক রাজকন্যাকে, ততক্ষন দুজনে একটু গল্পগুজব করি। মন্ত্রীপুত্র বুদ্ধিমান, সে বলল, "তারচেয়ে আমরা দুজনেই খুজে বেরাই, তুমি তো চেনই, একই সাথে গল্প করা যাবে।

" দুজনে চলল, মন্ত্রীপুত্র মজার মজার সব কথা আর চুটকি বলতে লাগল, সুনয়না তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে, মন্ত্রীপুত্র তাকে ঘরে সামলায়। শেষ কৗতুকটা ছিল এত হাসির যে তার চোখে পানি চলে এল। সেই পানিতে কাজল ধুয়ে একাকার। কিন্তু রাজকন্যা স্যাক্রেডকে খুজে পাওয়া গেল না। বিদায় বেলায় রুমালে সুনয়নার কাজল মুছে দিল তারপর, থুতনিতে একটু আদর করে বিদায় নিল।

দ্বিতীয় প্রাসাদে টকটকে লাল ঠোট নিয়ে সুহাসিনী তাকে আমন্ত্রন জানালো। মন্ত্রীপুত্র সুহাসিনীর অনুরোধ রক্ষা না করে স্নান ঘরের দিকে রওয়ানা হল। কিন্তু স্নান ঘরে রাজকন্যা স্যাক্রেডকে পাওয়া গেল না। তিনি আজ স্নান করতে আসবেন না। তাই মন্ত্রীপুত্র ফিরে চলল।

কিন্তু বিদায় বেলায় সুহাসিনীর লাল ঠোটের আবেদন ফেরানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। লাল রং টুকু সে তার রুমালে মুছে নিল। সুরাধুনীর কাছেও রাজকন্যাকে পাওয়া গেল না। তবে মন্ত্রীপুত্রের যত্নের কোন অভাব হল না। এবারও সুরাধুনী তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিল, রুমালে মুখ মুছিয়ে দিল।

তারপর দেখিয়ে দিল কোন প্রাসাদে যেতে হবে। বিদায় বেলায় সুরাধুনী মন্ত্রীপুত্রের কানে কানে বলল, রাজকন্যাকে বাদ দিয়ে যদি আমাকে বিয়ে করো তবে সবসময় এভাবেই আদর করে খাওয়াবো। মন্ত্রীপুত্র আশ্বাস দিয়ে চলল অন্য প্রাসাদের দিকে! চতুর্থ প্রাসাদে এবার আর সুগন্ধি মাখা রমনীকে পাওয়া গেল না, তার পরিবর্তে রয়েছে আকর্ষণীয় এক তন্বী মেয়ে, সুগঠিত তার দেহ, রূপ যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। নাম তার রূপীনি। মন্ত্রীপুত্রের কোমর জড়িয়ে সে নিয়ে গেল বিশ্রাম কক্ষে।

দুপুরের রোদে বেরানোর জন্য কিছু অনুযোগও করল, তারপর চুলে বিলি কাটতে কাটতে মন্ত্রীপুত্রকে ঘুম পারিয়ে দিল। ঘুম ভেঙ্গে মন্ত্রীপুত্র দেখল রূপিনী অঘোরে ঘুমোচ্ছে, বিকেল পর হয়ে গেল বলে। মন্ত্রীপুত্র ঝুকে তাকে আলতো করে চুমু খেল...তবে রে... ঠোটে কি লাগল! এত রং!সাদা গুড়ো! তবে কি রূিপনী সত্যিকারের রূপবতী নয়? রুমাল দিয়ে একটু ঘষে দিল মন্ত্রীপুত্র। কিছু রং উঠে এল। মনটাই খারাপ হয়ে গেল তার।

এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এল। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীপুত্র রাজকন্যা স্যাক্রেডের দেখা পেয়েছিল, কিন্তু স্যাক্রেড তাকেও পছন্ধ করে নি। কি হয়েছিল কেউ জানে না, শুধু জানে মন্ত্রীপুত্র রাজকন্যা স্যাক্রেডের ইচ্ছেনুযায়ী তার এক পরিচারিকাকে বিয়ে করেছে। সবশেষে কৃষকপুত্রের পালা। সেও পরদিন সকাল বেলা রাজকন্যা স্যাক্রডের সাদা রুমাল আর সুসজ্জিত রাজপেষাক পড়ে রওয়ানা হল।

তাকে বিদায় দেয়ার মত কেউ ছিল না, কিন্তু তাই বলে তার আত্মবিশ্সাসে ঘাটতিও ছিল না। সুনয়না তাকেও একই বুদ্ধি দিল। কিন্তু কৃষক পুত্র রাজী হল না। সে বলল, "এটা একটা পরীক্ষা নিশ্চয়ই। আমি তোমার কিংবা অন্য কারও সাহায্য নিলে তবে রাজকন্যা নিশ্চয়ই খুশি হবেন না।

তারচে' তুমি এখানে দাড়াও, আমি একটু কষ্ট করে খুজে আসি। " কৃষক পুত্র সুনয়নাকে ছাড়াই ঘুরতে লাগল। অর্ধেক প্রাসাদ ঘোরার পরই তার মনে হল, 'আরে রোদ চড়ে গেছে। রাজকন্যা নিশ্চয়ই এখন রোদ পোহাবেন না। ' সুতরাং সে সুনয়নাকে বিদায় দিয়ে অন্য প্রাসাদে রওয়ানা হল।

পেছনে সুনয়না কত কাদল, চোখের কাজল পানিতে ধুয়ে গেল, কৃষক পুত্রের মন গলল না। টকটকে লাল ঠোটের সুহাসিনী তাকে স্নান ঘরে যেতে নিষেধ করল, "কৃষকপুত্র রাজী হল, তবে সে বলল, রাজকন্যা যখন গোসল করছে তখন এখানে অপেক্ষা করার কোন মানে নেই। আমি বরং পরের প্রাসাদে গিয়ে অপেক্ষা করি। " সুতরাং কৃষকপুত্র বিদায় নিল। সুরাধুনীর কাছে যখন সে উপস্থিত হল তখনও দুপুর হয়নি।

সুতরাং সুরাধুনির অনুরোধ সহজেই উপেক্ষা করতে পারল। রূপিনীর প্রাসাদে কৃষকপুত্র পৌছানোর পর রূপিনী তাকে বিশ্রাম নিতে বলল। কিন্তু কৃষক পুত্র জানালো সে এখনো ক্লাস্ত হয়নি। বরং রাজকন্যা স্যাক্রেডকে বিয়ে করেই সে বিশ্রাম নেবে। তাই সে তখনই বিদায় নিল।

এবার সে পৌছুল নতুন এক প্রাসাদে। এখানে রাজকন্যা স্যাক্রেড দুপুরে বিশ্রাম নেয়। এখানে তাকে অভ্যর্থনা জানালো অনিন্দ্য সুন্দরী এক রমনী। সে তাকে অপেক্ষা করতে বলল। কিন্তু কৃষক পুত্র রাজী হল না, সে তাকে বলল, যাও রাজকন্যাকে গিয়ে বল, কৃষক পুত্র এসছে দেখা করতে।

পরিচারিকা দোনামোনা করল কিন্তু কৃষকপুত্রে অনমনীয় ভাবের কাছে নতি স্বীকার করতে হল। কিছুক্ষন পরেই রাজকন্যা স্যাক্রেডের পক্ষ থেকে ডাক এল। কৃষকপুত্র ভেতরে গেল। সেখানে রাজকন্যা সখীদেরকে নিয়ে বসে আছে, সখীরা কেউ তার পুলে বিলি কাটছে, কেউ পায়ে মালিশ করে দিচ্ছে, কেউ বা বাতাস করছে। "স্বাগতম হে কৃষকপুত্র" রাজকন্যা স্যাক্রেড বলল।

"ধন্যবাদ রাজকন্যা, এই অসময়ে িবরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। " "আমার দেয়া রুমালটা দেখি" "অবশ্যই রাজকন্যা,তবে তার আগে যদি আপনি সবাইকে যেতে বলেন তবে খুশী হই। " "কেন?" আপনি জানেন আমি খুব গরীব রাজ্য মাইক্রোকান্ট্রি থেকে এসেছি। আপনি সেখানকার রানী হলে এত সুখ ভোগ করতে পারবেন না, তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ভালো। " রাজকন্যা স্যাক্রেড হাত নড়ে সবাইকে বিদায় করে দিলেন।

তারপর কৃষকপুত্রের কাছ থেকে রুমালটা নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, "সুনয়না, সুহাসিনী কিংবা সুরাধুনরি সাথে দেখা হয়নি?" "হয়েছিল, তারা সবাই আমাকে আকৃষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম তারা সবাইকেই এভাবে স্বাগত জানায়। আমি একজন ভালো মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তাই তাদেরকে এড়াতে সমস্যা হয়নি" কৃষক পুত্র বলল হাসিমুখে। রাজকন্যা স্যাক্রেড হাসিমুখে উঠে দাড়ালো।

"ধন্যবাদ হে কৃষকপুত্র! তুমিই প্রথম প্রতিযোগিতায় এত দ্রুত আমার কাছে এসেছ। তোমার রুমাল সম্পুর্ণ সাদা, যেরকমটা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। বাকীদের রুমালে ছিল নানা রকম ময়লা, যার শাস্তি তারা ভোগ করছে। তারা তাদের মত চরিত্রের মেয়েকেই স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে। আর তোমার জন্য রয়েছি আমি।

আমি তোমাকে সুন্দর হাসি উপহার দেব, তোমার হাসিতে হাসব কিংবা কাদবো, তোমাকে খাইয়ে দেবো, তুমি দেবে আমাকে, তোমাকে ঘুম পারিয়ে দেবো, অনেক সুখের সংসার হবে আমাদের, তুমি হবে আমার রাজা, আমি হবো তোমার রানী!" রাজকন্যা স্যাক্রেডকে জরিয়ে ধরল কৃষকপুত্র। "উহু... ... তুমি হবে আমার স্ত্রী আর ... ...সকল প্রজার রানী!" অতঃপর কি হল সে গল্প হবে আরেকদিন!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।