আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেউই আইনের ঊধের্্ব নয়

এ লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আমার যুদ্ধাপরাধ

মানব সভ্যতায় বিচারের ইতিহাসে য়িশু, এরিস্টেটল বা গ্যালিলিওর ঘটনা নিঃসেন্দেহ মমস্পর্শী, বেদনাদায়ক। তবুও ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, সব স্বেচ্ছাচারী শাসককেই শেষতক বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে_ নয়তো জনরোষেই মরতে হয়েছে। না। যিশু, এরিস্টেটল বা গ্যালিলিও শাসক ছিলেন না। বিচারের ইতিহাসের এ ভুলটুকু বাদ দিলে, সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এর অবদানকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করতে পারবেন না আপনি।

সোজা কথায়, কেউই আইনের ঊধের্্ব নয়। এটাই বারবার প্রমাণ করেছে সামাজিক বিচার ব্যবস্থা। পলাশীর প্রান্তরে রবার্ট কাইভের অবদান আমাদের জন্য নেতিবাচক হলেও, ব্রিটেনকে সমৃদ্ধশালী করতে তা' যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অথচ সেই কাইভকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল খোদ ব্রিটেনে। তাও আবার অবৈধ অর্থ উপার্জনের দায়ে।

কাইভের শেষ জীবন মোটেই ভালো কাটেনি। শেষতক আত্দহত্যা করে তাকে ঝামেলা এড়াতে হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে 1973 সালে ক্ষমতায় আসেন পিনোশে। চিলিতে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই তার সিংহাসন অধিগ্রহণ। অগাস্টো হোসে রামোন পিনোশে উগার্তে ক্ষমতায় এসেই পিনোশে যে কোনো মূল্যে দুর্নীতিবাজদের বিচারের প্রতিজ্ঞা করেন।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সালভাদারো আলেন্দে এবং তার পরিবারকে দুর্নীতির অভিযোগে দেশ ছাড়াও করেছিলেন পিনোশে। তারপর এক সময় দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রকাশে বা গোপনে কথা বলার শাস্তি ছিলো মৃতু্যদণ্ড। অভিযোগ রয়েছে, তার শাসনামলে নিঃখোঁজ হযেছে 30 হাজারেরও বেশি লোক। ক্ষমতাচূ্যত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে।

নব্বই দশকের শুরু দিকে বিচারে তারও শাস্তির রায় হয়েছিল। নব্বই দশকে নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর 2005-এ রাজা জ্ঞানেন্দ্র যখন নেপালের রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিগ্রহণ করলেন, তখন মনে করা হচ্ছিল_ তার কোনো ধরনের জবাবদিহিতাই করতে হবে না। তবে সেখানের রাজনৈতিক পটভূমিতে আবারো পরিবর্তন এসেছে। কৈরালা সরকার রাজার সম্পত্তির হিসেব চেয়েছে। প্রাসাদের কর্মচারি সংখ্যাই এরই মধ্যে কমিয়ে ফেলা হয়েছে।

এদিকে, হিটলারের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব উঠেছে খোদ জার্মানিতে। মৃতু্যর 62 বছর পর হিটলারকে যে এ খেসারত দিতে হবে, তা' কি ভাবতে পেরেছিলেন তিনি? জার্মানির একচ্ছত্র একনায়ক হিটলারের এ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনাটিকে এখন ইহুদি গণহত্যা এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে দেখছে বর্তমান জার্মানি। সাদ্দামেরও একই পরিণতি হয়েছে। 1982 সালে দুজাইলে হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি ছিলেন ইরাকের একনায়ক শাসক। হয়তো তিনিও কোনো দিন ভাবতে পারেননি, এ গণহত্যার জন্যই তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে।

এদিকে, 1971 সালে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ওবোতে সিঙ্গাপুরে একটি সম্মেলনে যোগ দিলে সে সুযোগে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইদি আমিন রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহন করেন। ইদি আমিন এমনই কঠিন শাসক ছিলেন যে, তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলার শাাস্তি ছিল মৃতু্যদণ্ড। তার আমলে নিহত বা অপহৃত লোকের মোট সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। 1979 সালে দেশত্যাগে বাধ্য হলে তাকে আজীবন নির্বাসনে থাকতে হয়। ইংল্যান্ডের রাজা আন্থনি ভন ডাইক প্রথম চার্লস হিসেবে ইতিহাসে বেশি পরিচিত।

ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন তিনি। 1625 সালে মতা গ্রহণের পর তিনি পার্লামেন্টের মতা হ্রাস করতে শুরু করলেন। পার্লামেন্টের মতা কমে যাওয়া মানে তার মতা বেড়ে যাওয়া। চার্চ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তিনি এক ক্যাথলিক রাজকন্যাকে বিয়ে করেন এবং চার্চের প্রতিনিধিকে তার মন্ত্রীসভায় অন্তভর্ূক্ত করেন। যার ফলে তার জবাবদিহিতার সব পথ আটকে যায়, আরো বেশি স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ পান প্রথম চার্লস।

তার শাসনামলেই ইংল্যান্ডে দুবার গৃহযুদ্ধ হয়েছিল। স্বেচ্ছাচারিতার খেসারতও দিতে হয়েছে তাকে। 1649 সালে তারই বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ আনা হয় এবং প্রচণ্ড মতাশালি এ রাজাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়া করানো হয়। তাকে মৃতু্যদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ফ্রান্সের লুই সাম্রাজ্যের শেষ রাজা ছিলেন ষোড়শ লুই।

1774 সালে যখন তিনি মতায় এলেন, তখন তার জনসমর্থন ছিল অনেক। রাজ্যে তার প্রভাব যতোই বাড়তে থাকে, ততোই স্বেচ্ছাচারি হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। 7 বছর শাসনামলেই তার প্রতি জন সমর্থন জনরোষে পরিণত হয়। বিদ্রোহের কারণে তাকে মতা ছাড়তে হয়। ফ্রান্সের সাধারণ অপরাধীর মতোই গিলেটিনে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।

পতন ঘটে লুই সাম্রাজ্যের। রিচার্ড নিক্সন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 37তম প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নিক্সনই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য বেশ কিছু পদপে গ্রহণ করলেও ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্য তাকে মতা ছাড়তে হয়। মনিকাকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.