আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূগোল বদলের শঙ্কা

অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি

মানচিত্র নতুন করে অাঁকতে হবে! খুব বেশি দূরঅস্ত নয় সে সময়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্র তলের উচ্চতা। উপজাত হিসেবে হচ্ছে প্রবল ঝড়, ভূমিক্ষয়। শঙ্কা জাগছে বাংলাদেশ নিয়ে।

আর এক শতাব্দী বড় জোর! বড় এক ভৌগোলিক পরিবর্তনের অপেক্ষায় এই বদ্বীপ। তবে অভিজ্ঞতাটা খুব একটা সুখকর হতে যাচ্ছে না তা নিশ্চিত। উদাহরণ হয়ে হাতের কাছেই আছে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণকোণে লেজের ডগায় একটি বিন্দু হয়ে আছে প্রবাল দ্বীপটি। তবে কতদিন থাকবে সেটাই প্রশ্ন।

দিনকে দিন ক্ষুদ্রতর হয়ে আসছে এর পরিসর। প্রতিবছর সাগরে জমি হারাচ্ছে সেন্টমার্টিন। ভঙ্গুর সৈকতে ঝড়ের প্রকোপও তীব্রতর হচ্ছে খুব। প্রবাল বাগানও বিলীন হচ্ছে ঢেউয়ের তালে। বাসিন্দারা আবহাওয়ার এই জাদুকরীতায় বিভ্রান্ত।

থই পাচ্ছেন না ভেবে, আসলে ঠিক কেন হচ্ছে এমনটা। স্থানীয় পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী ফিরোজ আহমেদের বৈশ্বিক উষ্ণতা সম্পর্কে কোনো অক্ষরজ্ঞান নেই। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের ভৌগলিক ভবিতব্য নিয়ে যে ভয়ঙ্কর আশঙ্কার ছবি এঁকেছেন, সেটাও তার অজানা। শুধু জানেন কি একটা হচ্ছে। যা হচ্ছে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়াই উচিত।

"কেউ তো আমার লোকদের বলেনি আগামী 50 বা 100 বছর পর কি হবে। কিন্তু এই দ্বীপ কিভাবে ছোট হয়ে আসছে তার সাক্ষী আমি নিজেই। 20 বছর আগেও 12 বর্গ কি.মি ছিল এর আয়তন, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে 8 বর্গ কি.মিতে"- বলছেন ফিরোজ। বিভ্রান্তি নিয়েই যোগ করেছেন, "প্রবাল ক্ষয়ে যাচ্ছে, জমি সংকুচিত হচ্ছে। আমরা এটুকুই দেখতে পাচ্ছি... সেই সঙ্গে অবাক হয়ে ভাবছি এই সাগর আমাদের মাছ দিচ্ছে, খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে- তার কেন এই রূদ্র রূপ! গত কিছুদিন ধরেই ডলফিন এবং কচ্ছপের মতো সামুদ্রিক প্রাণীগুলো মরে পড়ে থাকছে তীরে।

কিন্তু কারণটা কেউ জানি না আমরা। " শুক্রবার ফিরোজ আহমেদ তার বিস্ময়ভরা অভিব্যক্তি নিয়ে কথাগুলো বলছেন যখন, তার ঘণ্টাকয় পরেই জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক গবেষণা সংস্থা কাইমেট প্যানেল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী মানবীয় কর্মকাণ্ডগুলোকে দোষারোপ করে ভয়াবহ এক হুঁশিয়ারি জানানো হয়েছে। পরিণতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হবে বিশ্বের যেটুকু ভুগোল, তাতে অন্যতম নামটি বাংলাদেশ। 14 কোটিরও বেশি মানুষের বাসভূম এই দেশটি এখনও বৈরি প্রকৃতির হামলা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট তৈরি নয়।

দক্ষিণে বিশাল উপকুলীয় অঞ্চল জুড়েই বাস করছে লাখো মানুষ। কিন্তু তাদের এই অবস্থান হুমকির মুখে বলেই জানাচ্ছেন বোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞরা। সাগর তল উঠে আসছে এবং সামুদ্রিক ঝড় সংখ্যায় বাড়ছে, বাড়ছে তীব্রতায়ও। পরিণামে বিশাল ভুখন্ডের অনেকখানি আক্ষরিক অর্থেই জলে যাবে। ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি আইনুন নিশাত জানিয়েছেন সে আশঙ্কার কথা, "লাখো বাংলাদেশি তাদের জমি এবং ঘরহারা হবে।

এমনিতেই দারিদ্র ও জনসংখ্যার চাপে হিমশিম খাওয়া দেশটির বিপর্যয়ে নতুন এক মাত্রা যোগ করবে তা। " সাগর তল যে হারে উঠছে তাতে যদি আগামী 50 থেকে 100 বছরে 1 মিটার বাড়ে, 11 ভাগ স্থল হারাবে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতার এগিয়ে আসা কালো ছায়া নিয়েই নিশাত বলেছেন, "বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব পড়বে আবহাওয়ার নানামুখী বৈরিতায়। খরা, বন্যার তীব্রতা বাড়বে। ঝড়ের প্রকোপ হবে বিশেষ করে উপকুলীয় অঞ্চলগুলোতে।

নোনা পানি বাড়বে, সেই সঙ্গে ভুমিধ্বস। " বঙ্গোপসাগরের এই চরিত্রবদল শুধু সেন্ট. মার্টিন নয়, অন্য উপকুলেও অাঁচ পাচ্ছেন সাগরপারের মানুষজন। দক্ষিণ পশ্চিমে বরিশালের জেলেরাও টের পেয়েছেন বদলেছে তাদের চিরচেনা সাগর। এদেরই একজন 62 বছর বয়সী মোসলেম মিয়া বলেছেন, "গত বছর (2006) কমপক্ষে 10টি বড় ধরণের ঝড় হয়েছে উপকুলে। আগের যে কোনো বারের চেয়ে এর তীব্রতা ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক।

" জানাচ্ছেন অন্য পরিবর্তনও, "সেই ছেলেবেলা থেকে মাছ ধরছি। ইলিশ মাছই বেশি ধরি। কিন্তু আগের মতো জালে তাদের ঝাঁক পাই না। কোথায় গেল তারা?" সমতলে ধীরে ধীরে বাড়বে লবনাক্ততা। মূল ভুখন্ডের চাষাবাদের জন্য সর্বনাশা এক কুলক্ষণ তা।

পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী উদ্বেগ জানিয়েছেন এ নিয়ে, "বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি সাগর তল বাড়তে থাকে। এতে নোনা পানির পরিমান বাড়বে। " সরকার একেবারেই অপ্রস্তুত নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি, "বাংলাদেশ সরকার জলবায়ুর এই পরিবর্তনে করণীয় নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্যের অভাবে তার বাস্তবায়ন এখনও হচ্ছে না। " বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা।

প্রস্তুতি স্বল্পতার পাশাপাশি সচেতনতার অভাবটাও যথেষ্টই। ভয়ঙ্কর এক আগামীকে রুখতে এর পরিবর্তন আনাটা তাই ভীষণ জরুরি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।