আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া সামান্য চোখের পানি কাল কিয়ামতে অভিশাপের পর্বত হয়ে না দাড়ায়।

মামার বাড়ি নাম টা শুনতে সবার কাছেই খুব মধুর লাগে। কি যেন একটা কথায় আছে না মামার বাড়ি মধুর হাড়ি হাতে আছে ফল বাহারি। মামাদের কাছে আমাদের আবদারের যেমন কমতি নেই, মামাদের পক্ষ থেকে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের জন্য স্নেহ ও ভালোবাসারও শেষ নেই। কিন্তু এমন সুপ্রিয় ও মমতাময় মামাদের একটি কুৎসিত চিত্র সামাজিকতার আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে যুগ যুগ ধরে। আর সেটি হচ্ছে তাদের পরম আদরের বোনদের কে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে রাখা।

শুধু মাএ মামাদের কে দোষ দিলে ভুল হবে, আমাদের বাবা চাচারাও এই প্রতিযোগিতায় সমান ভূমিকা পালনে ব্যস্ত। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে আমাদের সমাজের অনেক ওলামায়ে একরাম ও খতীবরাও নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছেন। দিন দিন এর ব্যপকতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু মাএ গ্রামেই নয় শহরাঞ্চলেও এর ব্যপকতা লক্ষ করা যা্য। সামান্য কিছু সম্পওির জন্য আজ ভাই বোন কে এবং বোন ভাই কে মেরে ফেলতেও দিধাবোধ করছে না।

ভাবতে খুব অবাক লাগে এসব ক্ষেএে বাবা-মামা-চাচাদের কে জিঙেস করলে তাদের যুক্তিতর্ক শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা হয়ে যাবে তবুও তাদের যুক্তিতর্ক শেষ হয় না। বোনকে পড়া শুনা করিয়েছি, বি্যে দি্যেছি, আদর ভালোবাসা দি্যে মানুষ করেছি ইত্যাদির আজুহাত দি্যে তারা বোঝাতে চান, বোনরা কোন অংশেই বঞ্চিত নন। ভাইদের সাথে সুসম্পর্কের কথা চিন্তা করে আমাদের মায়েরাও মুখ বুজে সয্য করে থাকেন জীবনভর। পাশা পাশি স্বামী ও স্বজনদের কটু কথা তো আছেই। নিজেদের অংশের আপচয় দেখা সত্বেও সম্পর্কের খাতিরে কৃত্রিম হাসির মাধ্যমে সবকিছু ভুলে থাকেন আজীবন।

পরিবার পরিজনের চোখের আড়ালে তারা এ অপমানের আঘাতে কাদেন নীরবে। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে তাদের এ কান্না ঘরের কোন এক কোনেই চাপা পরে থাকে। এ কান্না শোনার যেন কেউ নেই। মায়েদের এ কান্না ঘরের কোনে চাপা পরে থাকলেও মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের কাছেও কি চাপা পরে থাকবে? এ ব্যাপারে আল্লাহ পাকের কাছে কি জবাব দেব আমরা তা কি কখনো ভেবে দেখেছি? বোনদের কে যে ভাবে বুঝিয়ে চুপ করিয়ে রাখি ঠিক তেমনি ভাবে মহান আল্লাহ পাককে বুঝাতে পারবো তো? ইসলামে সম্পত্তির উওরাধিকারের ব্যাপারে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা আছে। বোনদের অধিকার হরন এবং উত্তরাধিকারের সম্পত্তি নিয়ে কোন রকম টালবাহানা করা ইসলামে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ।

আমাদের সমাজে এমন অনেক পরহেজগার দানখয়রাতকারী নামাজি বুজুর্গ রয়েছেন, যারা আজও তাদের বোনদের বাবার সম্পত্তির ভাগ বুঝিয়ে দেননি, নিজের স্ত্রীদের দেনমোহরটুকুও আদায় করেননি। এরা হয়তো ভুলে বসে আছেন, কিয়ামতের মাঠে সামান্য এক ইঞ্চি সম্পত্তি গ্রাসের কারণে কত মানুষের সারাজীবনের সঞ্চিত পূণ্যগুলো নিমিষে হাওয়া হয়ে যাবে। সেসব চলে যাবে বঞ্চিতের ভাগে, জাহান্নামের অতল গর্ত ছাড়া তার আর কোনো গতি নেই সেদিন। পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, নারীদেরও অংশ রয়েছে তাদের মা বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে (সূরা নিসা-৭)। অন্যত্র রয়েছে, আল্লাহ পাক তোমাদের ওসিয়ত করছেন তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে (সূরা নিসা-১১)।

বাবার সম্পত্তি থেকে নারী ও পুরুষের অংশীদারিত্বের পরিমাণে তারতম্য থাকলেও গুরুত্ব এবং আবশ্যকতায় কোনো পার্থক্য নেই। আজকের এ সামান্য সম্পত্তির লোভ আপনার পরকালে সর্বগ্রাসী পাপ হয়ে কেড়ে নেবে জীবনের সব সঞ্চিত পূণ্য ও নেক আমল। মানুষের হক নিয়ে যেসব সতর্কবাণী ও ভয়াবহ শাস্তির বিবরণ এসেছে রাসূলের (সা.) পবিত্র হাদীসের কিতাবসমূহে- সেসব পড়লে গা শিউরে ওঠে যে কোনো পাষাণের। জীবনভর পড়ে গেলাম পবিত্র কুরআন কিন্তু আদৌ কি এর মর্মকথা নিয়ে আমরা ভেবেছি। এ কুরআন তো কেবল হাতে নিয়ে পড়ার জন্য নয়, নিজের ভেতরটাকে এর রঙে সাজাতে না পারলে এর মুল্য যে শুধুই সামান্য, তাও আজ ভুলে বসে আছি আমরা।

নারীদের বিষয়ে সতর্ক করার জন্যই পবিত্র কুরআনের একটি বৃহৎ সূরা নামকরণ করা হয়েছে তাদের নামে, তাদের অধিকার সম্পর্কে সতর্কবার্তা এসেছে বারবার, তবুও কেন আমরা এত উদাসীন তাদের অধিকার ও প্রাপ্য সম্মানটুকু প্রদানের বেলায়? একটু ভেবে দেখুন তো আমরাও কি আমাদের বোনদের হক সঠিক মত আদায় করছি কি না। অন্যের হক নষ্ট করা সামান্য একটু সম্পওিই হয়তো আমাদের কে অনন্তকালের জন্য জান্নামের টিকেট ধরিয়ে দিতে পারে। সে যাএা শেষ হবার নয়। প্রিয় পাঠক আপনারা নিজেরাই একবার নিজেদের কে প্রশ্ন করুন, উওর আপনা আপনি চলে আসবে। আপনার বোনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া সামান্য চোখের পানি কাল কিয়ামতে পর্বত সমান অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে- সে কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।