আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"পলাশী থেকে ধানমন্ডি"

সযতনে খেয়ালী!

1757 সাল। পলাশীর আম বাগান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে ফিরীঙ্গি বাহিনী এবং বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উ-দ্দৌলার বাহিনীর মধ্যে। সিঁ ফ্রেঁ, মোহনলাল দের অসাধারণ বীরত্বেযখন ফিরিঙী বাহিনী কোনঠাঁসা, পর্যুদস্ত - তখনই এগিয়ে এল মীর জাফর আলী খাঁ, জগৎ শেঠ, রাজ ভল্লবরা। মেরুদন্ডহীন এই মানুষগুলো মাথা উঁচু করে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে, মাটি ও মানুষের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে গোড়াপত্তন করে বাঙালী ইতিহাসের জঘণ্যতমন অধ্যায়ের।

বস্তুত লক্ষন সেনের রাজ্য ছেড়ে পলায়নের সাথে সাথেই বাঙালী দাসত্ব বরণ করে নিলেও কার্যত: পলাশীর প্রান্তর থেকেই সূচিত হয় গোলামীর শৃঙ্খল গলায় ঝুলিয়ে বাঙালীর পথচলা। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলার শেষ সবাধীন নবাবকে। এরই সাথে পুরো জাতির ভাগ্যাকাশে নেমে আসে চির অন্ধকার, গভীর আমানিশা...। কারা হত্যা করলো, কীভাবে হত্যা করলো, কেনই বা হত্যা করলো নবাব সিরাজ উ দ্দৌলা কে? কী ভুল ছিলো নবাবের? কেনো বাংলার সবাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হলো? - একটি-দুটি বা দশ-বিশ না, প্রায় দুইশটি বছর ফিরিঙীদের গোলামি করা বাংলার মানুষের প্রানের দেয়ালে বারবার প্রতিধ্বণিত হয়েছে এই প্রশ্নগুলো উত্তর খুঁজে পাবার আশায়। ================================================== 1975 সাল।

আগামুসি লেনের একটা বাড়ি। বৈঠক চলছে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের খুব কাছের কিছু লোকের। গোঁপন বৈঠক, দুশ বছরের কিছু বেশি সময় আগে ঘষেটি বেগমের বৈঠকখানায় যারা মিলিত হয়েছিল। তারাই আবার পূনর্জন্ম নিয়ে মিলিত হচ্ছে আগামুসি লেনের সেই বাড়িটিতে। উদ্দেশ্য সেই একই : ইতিহাসের আরেক মহানয়াক কে তার কক্ষপথ থেকে চু্যত করা।

যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটা দেশকে সবাই মিলে গড়ে তোলার সময়, ঠিক তখন ই ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে মীর জাফরের নব্য সংস্করণ খন্দকার মোশতাক-কে, লর্ড ক্লাইভের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ঢাকায় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. বুস্টার পরিণত করলেন তুরুপের তাসে। উঁমিচাঁদ, রাজবল্লভ, জগৎ শেঠের ভূমিকায় নেমে এল- শাহ্ মোয়াজ্জেম, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রা। নিজেকে পাকিস্তানের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রদানকারী কর্ণেল ফারুক ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নীল নক্সার মূল হোতাদের একজন। জেনারেল জিয়ার ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। সিঁ ফ্রেঁ, মোহনলালের ভূমিকায় থাকা নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন রা অনেক কিছু জেনেও কিছুই করতে পারছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত এলো সেই কালো রাত। 15ই আগস্ট। আরো একবার দুষ্কৃতকারীরা সফল হলো। তাদের সেই সফলতায় বাংলার ইতিহাসে রচিত হলো আরেকটা পলাশী ট্র্যাজেডি। বাঙালীর গলায় নতুন করে বেঁধে দেওয়া হলো আরও শক্ত পরাধীনতার জাঞ্জীর।

ছিন্ন করতে গিয়েও গোলামীর শৃঙ্খল ছিনণ করতে পারলো না বাঙালী। প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো সেই স্বপ্নে উদ্্বুদ্ধ করা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এক বাঙালীর। রবার্ট ব্রুস (চতুর্দশ) বলে গেছেন, আমি ইতিহাস বলবো না। তাহলে ইতিহাসবিদেরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। কারণ ইতিহাস তারাই লিখেছে যারা ইতিহাসের মহানায়কদের হত্যা করেছে।

রবার্ট ব্রুসের অমর এই বাণী কে উপেক্ষা করে আব্দুল গাফফার চৌধুরী নির্মান করেছেন বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে ডকুড্রামা [রং=ৎবফ][গাঢ়]"পলাশী থেকে ধানমন্ডি"[/গাঢ়][/রং]। খুব সুন্দর করে বাঙালী জাতির দুইটা 'ক্রুশিয়াল মোমেন্ট'-এর তুলনা উপস্থাপনকারী গাফফার চৌধুরী-র এই একটি কাজের জন্যই তার প্রতি "হ্যাটস অফ" জানাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.