আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শতাব্দির বিস্ময়ঃ মরহুম হযরত মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ)

খুব ভাল শতাব্দির বিস্ময়ঃ মরহুম হযরত মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ) গত শতাব্দীর শুরু থেকে আশির দশক পর্যন্ত সময়টুকু ছিল মুসলমানদের অত্যন্ত সংকটের কাল। এ সময় আজকের মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ছিল বিদেশীদের দখলে। ধর্মীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে মুসলমানরা হয়ে পড়ে কোনঠাসা। শ্বাশত ইসলামের আর্দশ ও প্রেরণা থেকে তাদের অবস্থান ছিল কিছু দূরে। জেিহলিয়াতের সর্বগ্রাসী হামলায় মুসলিম তামুদ্দুনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে।

ইসলামের বিপ্লবী চেতনার ধারক বাহক হিসেবে কোন উচ্চারণ ধ্বনি হচ্ছিল না। বিশ্ব মুসলিমের এই চরম সংকটকালে এ মহান সাধকের আর্বিভাব ঘটেছিল। নি¤েœ সংক্ষিপ্ত আকারে এই মহান সাধকের জীবনী তুলে ধরা হল- জন্ম ও পরিচয় ১৮৮০ সালে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের নাইক্যংখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলী-চান্দ ও মাতার নাম নুরুন্নিছা বেগম। শিক্ষাজীবন এ জ্ঞান সাধক মাওলানা নিজামুদ্দিন (পরবর্তীতে শ্বশুর হন) এর কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করেন।

এরপর মাওলানা মোজাহের আহমদের কাছ থেকেও কিছু দিন শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি তৎকালীন উপমহাদেশের অন্যতম জ্ঞান শিক্ষার বা চর্চার কেন্দ্র মীরাট ইলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি সেখানে ইলমে মারিফত অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য রত থাকেন এবং উর্দু, আরবী ও ফারসী ভাষায় সুপন্ডিত হয়ে উঠেন। তিনি হাদীস, তাফসীর, ফিকহ আদব আকায়েদ, বালাগাত,মানতিক, তারীখ নাহু ও তাসাউদ শাস্ত্রে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন। শেরে- বাংলা উপাধি লাভ তিনি ভারতের মীরাট রাজ্যে অবস্থান কালে “হাদিয়ায়ে জমির” বা “ওয়াজে বেনজীর” নামক একটি গ্রন্থ লেখে “শেরে বাংলা” উপাধি লাভ করেন।

বতমার্নে উক্ত গ্রন্থটি মাওলানা আব্দুর রহীম কর্তৃক বাংলায় অনূদিত হয়ে “অমূল্য রতœ” নামে বাজারে প্রকাশিত হয়েছে। কর্মজীবন অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেই তার কর্মজীবন আবর্তিত হয়। মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ) তার বৈচিত্রময় কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। মীরাটে আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন সমাপ্ত করে সেখানে অধ্যাপনা শুরু করেন। এরপর তিনি “ওংষধসরপ টহরাবৎংরঃু ড়ভ গরৎধঃ” এ মুহাদ্দিস ও মুফতির পদে সসম্মানে অধিষ্ঠিত হন।

দু’বছর চাকুরী করার পর চাকুরীতে ইস্তফা দেন এবং সমগ্র ভারত ভ্রমন করে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। সম্ভবতঃ তিনিই প্রথম বাঙালী যিনি মীরাট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দায়িত্বপূর্ণ ও সম্মনিত পদে অধিষ্ঠিত থেকে বাঙালী জাতির গৌরব উজ্জ¦ল করেছেন। প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব তিনি উঁচু মানের পীর হলেও তিনি কিন্তু অনমনীয় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ ছিলেন। বহুমুখী প্রতিভা ও গুনে শানিত মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ) ছিলেন প্রজ্ঞা আলিম, নিবিষ্ট-দিল, আল্লাহ প্রেমিক,বিরল প্রজাতির সাধক, দূরদর্শী নেতা সুযোগ্য শিক্ষক, সফল প্রশাসক,নিষ্ঠাবান মুবাল্লিগ দক্ষ সংগঠক, সমাজসেবী, শিক্ষা সেবী সংস্কৃতিবান, স্বাধীনচেতা চিন্তা নায়ক দার্শনিক, গ্রন্থ প্রনেতা- লেখক, রাজনীতি সচেতন নির্ভীক এক সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব। মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন সৎ, অনাড়ম্বর, নিরহংকার, সংযমী, নির্লোভ, নিঃস্বার্থ নিরপেক্ষ, অকৃত্রিম, উদারচেতা, মানবদরদী, সাম্যের প্রতীক ও আর্দশ মানুষ।

স্ত্রী, পুত্র, প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে মানুষের হক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তার দৃষ্টান্ত এ যুগে বিরল। সমাজ সেবামূলক কার্যাবলী তিনি কেবল শাস্ত্র চর্চা ও আধ্যাত্মিক চিন্তাতেই নিমগ্ন থাকতেন না বরং দেশ ও দশের জন্য চিন্তা করতেন এবং কাজ করতেন। প্রায় অর্ধশত কাল যাবত অক্লান্ত ভাবে তিনি নানাবিধ জনডিহতকর কাজ করে গেছেন। নাইক্যংখালী গ্রামের এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে তার প্রতিষ্ঠিত মক্তব, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং স্কুল। এছাড়া জনগরে কল্যাণার্থে তার নামানুসারে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সবই তার সমাজ-সেবা ও অপরিসীম শিক্ষানুরাগের ফলশ্রুতি। ধর্মীয় কার্যাবলী প্রখ্যাত জ্ঞান পিপাসু মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ) ছিলেন একজন বড় মাপের ওয়ায়েজ ও মুফতি। ইবাদত ও পরহেজগারীর দিক দিয়ে তিনি হচ্ছেন একালের শ্রেষ্ঠ আবেদ। আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য ও দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সদা নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে ইসলামের শ্বাশত চিন্তার ঐশ্বী বাণী পৌঁছে দিতেন এবং মুসলিম সমাজের ভুলভ্রান্তি ও সামাজিক কুসংস্কার সমূহ সংশোরেন চেষ্টা চালাতেন।

এমন কি তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা বা মায়ানমারের আকিয়াব, মংডু, বুচিধং ও আরাকান প্রভূতি এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতেন। তিনি বিদআত ও শিরক কাজ থেকে মুসলমানদেরকে দূরে থাকার উপদেশ দিতেন। এছাড়া তিনি মাসাজিক বিভিন্ন্ সমস্যার সমাধান কল্পে ফতোয় দিতেন। তার ফতোঢা অনেক সময় কঠোর হত্ ইসলামী আদর্শ ও শরীয়াতের বরখেলাফ তিনি মোটেও সহ্য করতেন না। তিনি আজীবন ধর্মীয় নক্ষত্র স্বরুপ বিবেচিত ছিলেন।

দর্শন ও দার্শনিক চিন্তাধারা তার দার্শনিক চিন্তাধারা সমকালীন দার্শনিক, দর্শনবিদদের যেমন বিস্মিত করেছে; তিনি নিজেও তেমন দার্শনিক অভিহিত হতে পছন্দ করেছেন। তার জীবন ব্যাপী সমগ্র কর্মকান্ড, আলোচনা বক্তব্য সবই ছিল একটি নিজস্ব দর্শন ও দার্শনিক চিন্তাধারার কৌশলী প্রকাশ। গ্রন্থ প্রণয়ন মাওলানা জমির উদ্দিন (রহঃ) এর লেখনি শক্তি ছিল অতন্ত্য প্রবল। তিনি ছিলেন ক্ষুরধার কলম সৈনিক। জ্ঞান-বিজ্ঞানে র বিভিন্ন শাখায় তিনি গ্রন্থ রচনা করেন।

দীর্ঘ জীবনে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যাও অনেক। কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার লিখিত পান্ডু লিপিগুলো হারিয়ে যায়। তিনি শুধু লিখতেন প্রকাশের চেষ্ঠা করেন নি। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলয়- ১. ওয়াজে বেনজীর ২. আহছানুল মাকাল। ইন্তেকাল জগত বিখ্যাত এ মহান সুফী সাধক চিরন্ত নিয়মানুসারে একদিন দুনিয়ার জীবনকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলেন।

হাজার হাজার মানুষকে শোক সাগরে ভাসিয়ে বিগত ১৭ ই রমজান/ ২০ শে জুলাই সোমবার ১৯৮১ সালে নিজ বাস ভবণে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। এই মহান সুফীকে তারই প্রতিষ্ঠিত মৌলভী বাজার জামে মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। (সংকলিত) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.