আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে

১৯৭০ সাল। দেশব্যাপী নির্বাচনের তোড়জোড়। আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ, তদবির। সারা দেশেই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায় সবাই ছিলেন দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অধিকারী, কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল। আমার জানা মতে, আমার নির্বাচনী এলাকা রামগঞ্জের আবদুর রশীদ এবং চৌমুহনীর নূরুল হক মিয়া ব্যতীত বৃহত্তর নোয়াখালীর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবাই ছিলেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল, এমনকি নির্বাচনের ন্যায্য খরচটা বহন করার ক্ষমতাও তাদের ছিল না। বৃহত্তর নোয়াখালীর দুই ধনাঢ্য ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন। পাকিস্তান আমলেই তারা কোটিপতি। দুজনই বঙ্গবন্ধুর পূর্বপরিচিত এবং ঘটনাচক্রে আমার নির্বাচনী এলাকার। কুশলবিনিময় এবং নির্বাচন নিয়ে দু-চার কথা বলার পর তারা আবেদন জানালেন বঙ্গবন্ধু যেন তাদের একজনকে জাতীয়, আরেকজনকে প্রাদেশিক পরিষদে মনোনয়ন দেন, বিনিময়ে তারা সমগ্র নোয়াখালীর সব আসনের নির্বাচনের ব্যয় নির্বাহ করবেন। বঙ্গবন্ধু মনোযোগ সহকারে তাদের কথা শুনলেন এবং বললেন, তোমরা ভেবেছ আমার দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাচ্ছে। তোমাদের ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। নির্বাচনে জয়ী হলেও পাকিস্তানিরা আমাকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না। সামনে আমার অনেক ঝড়ঝাঁপটা, বিপদ। তোমরা দু-চারজন বাঙালি কিছুটা ব্যবসা-বাণিজ্য কর, আমার দলের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে জড়িত হলে পাকিস্তানিরা তোমাদের শেষ করে ফেলবে। কাজেই তোমাদের এসব ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না, বলে বঙ্গবন্ধু তাদের বিদায় করলেন।

কিন্তু তারা হাল ছাড়লেন না। এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের থানা ইউনিয়ন পর্যায়ের কিছু নেতা-কর্মীকে প্রতিপক্ষের অর্থ, ক্ষমতার প্রভাব, প্রচার, জৌলুস আর আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের দৈন্যদশা ইত্যাদির কথা বলে রাজি করালেন এবং খাওয়া-দাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করে গাড়ি রিজার্ভ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে তাদের পক্ষে তদবির করার জন্য। নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে। প্রথমে তারা ওই দুই ব্যক্তির কথা কিছুই বললেন না। শুরু করলেন প্রতিপক্ষের প্রভাব-প্রতিপত্তি, প্রশাসন এবং টাকার জোর আর নিজেদের দৈন্যদশার কথা দিয়ে। বঙ্গবন্ধু বললেন, তোরা ঠিকই বলেছিস, আমিও জানি এগুলো। কিন্তু এখন কি করা যায়, কি করতে বলিস তোরা, তোদের পরামর্শ কি? তখন তারা বললেন ওই দুই ব্যক্তির কথা, তাদের মনোনয়ন দিলে কি কি সুবিধা হবে ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু যা বোঝার বুঝে ফেললেন।

এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দূর-দূরান্ত থেকে আসা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এভাবে কথা বলে একদিকে তাদের মনের কথা, আসল উদ্দেশ্য, কে কার বিরুদ্ধে বা পক্ষে, তার সমাধান ইত্যাদি জেনে নিতেন। অন্যদিকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও আনন্দিত, গর্ববোধ করতেন এই ভেবে যে বঙ্গবন্ধু তাদের মতামত, পরামর্শ চেয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। এ বৈঠকেই একজনের দিকে সরাসরি তাকিয়ে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বঙ্গবন্ধু বললেন, তুই ওলু খোন্দকার না? আমি তোর এলাকায় একবার গিয়েছিলাম। ভরা বর্ষা, রাস্তাও অনেক জায়গায় ডুবে গিয়েছিল। আমি নৌকা থেকেই মানুষের অভ্যর্থনার জবাব দিচ্ছিলাম দুই হাত তুলে। মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য। ঘাম গরমে গলাটা শুকিয়ে যেন কাঠ। কথা বলতে পারছিলাম না। তুই কোথা থেকে ঠাণ্ডা একটা ডাব কেটে এনে আমার মুখে ধরলি। খুবই আরাম পেয়েছিলাম, যেন দম ফিরে পেয়েছিলাম তোর ডাবটা খেয়ে। ওদের পক্ষে সুপারিশ করতে এসে তুই কি এখন তোর ওই ডাবের প্রতিদান নিতে এসেছিস? এভাবে উপস্থিত আরও কয়েকজনের নাম ধরে তাদের সম্পর্কে কিছু বললেন। সবাই একদিকে হতবাক, অন্যদিকে গর্বিত যে এত বছর পরেও নেতা শুধু তাদের নাম নয়, তাদের নিয়ে ছোটখাটো ঘটনার কথাও মনে রেখেছেন। '৫৪-এর নির্বাচনে স্থানীয় পীর গোলাম সারোয়ার মিয়ার কাছে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী পরাজিত হন। ওই নির্বাচনের উল্লেখ করে কেউ একজন ওই পীরের নাম বলতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, হ্যাঁ, এরপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতার কাছে পরাজিত হন। শুনে সবাই হতবাক। কারণ ইউনিয়ন পরিষদের ওই নির্বাচন যখন হয় বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। এরপর বঙ্গবন্ধু বললেন, শোন তোরা যাদের জন্য এসেছিস তারা আমার কাছে এসেছিল, আমি ওদের নিষেধ করেছি। একটা কথা মনে রাখিস, ওরা আসলে ব্যবসায়ী, রাজনীতিক নয়। আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওরা আমার দলে আসছে না। ওরা মনে করে আমার দল ক্ষমতায় যাবে, ওরা ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করবে। তাই ওরা আসতে চায়। আমি আমার কর্মীদের সংগ্রাম শিখিয়েছি, টাকার রাজনীতি নয়। টাকা ছিটিয়ে ওরা কর্মীদের নষ্ট করে ফেলবে। তোরা ওদের কথা শুনিস না, ওদের ব্যাপারে আর আসিস না। এলাকায় চলে যা। আমরা দলের পরীক্ষিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেব। টাকা-পয়সা যতটা পারি ব্যবস্থা করব। যাদের প্রার্থী করব ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের জন্য কাজ করিস, আল্লাহ তোদের সহায় হবেন।

ওদের বিদায় দিয়ে বঙ্গবন্ধু বের হলেন। গাড়িটা বাসা থেকে বের হতেই দেখলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত যাচ্ছেন তার বাসার দিকে। গাড়ি থামিয়ে তাকে ডেকে বললেন, তোর এলাকার ওরা এসেছিল। আমি ওদের বুঝিয়ে বলেছি, তুইও একটু বলিস। বেলায়েত বললেন, জি বঙ্গবন্ধু, কিন্তু আমি তো এ ব্যাপারে আসিনি, কিছু জানিও না। তিনি জানতেন বঙ্গবন্ধু এসব পছন্দ করেন না। তাই ওদের বঙ্গবন্ধুর কাছে আসার কথা যে তার জানা নেই তা পরিষ্কার করতে চাইলেন। মাহমুদুর রহমান বেলায়েত মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার মুজিব বাহিনী প্রধান, পরবর্তীকালে এমপি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি প্রায়ই বলেন এই কাহিনী। আর বলতেন মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান প্রয়াত একরামুল হক। মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসায়ীর রাজনীতি দখল, রাজনীতিকের ব্যবসা দখল, ভুঁইফোঁড় রাজনীতিক, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন এসব আজ আমাদের রাজনীতির পরিভাষা। রাজনীতির আলোচনায় এই বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায় এবং আলোচকরা এগুলো থেকে পরিত্রাণের কথা বলেন কিন্তু কোনো পথ দেখাতে পারেন না। অথচ এ জাতির মহান নেতা ৪৩ বছর আগে রোগের লক্ষণটা অাঁচ করতে পেরেছিলেন, প্রতিরোধ করেছিলেন এবং এর ভয়াবহ পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কর্মীদের এ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কে স্মরণ করে তার সেই অমোঘ বাণী। উল্টো তাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের নেতৃত্বে রাজনীতির পূর্ণমাত্রার দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়, চলে অবাধ গতিতে। দুঃখের বিষয়, একশ্রেণীর পণ্ডিত রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, বিশেষ করে মনোনয়ন বাণিজ্যের যারা হোতা, তাদের কাতারে তারা আওয়ামী লীগকেও যুক্ত করেন, সমানভাবে অভিযুক্ত করেন। কিন্তু তাদের অভিযোগটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য নয়, সত্য হলে বলার কিছু ছিল না। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেই প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আওয়ামী লীগের জন্ম এবং আজ পর্যন্ত টিকে থাকা। সে এক মহাকাব্যিক লড়াইয়ের কাহিনী। সে কাহিনী এ দেশের বিদ্বজ্জনরা জানেন না তা নয়। কিন্তু কেউ কেউ অব্যক্ত রহস্যজনক কারণে, কেউবা নিরপেক্ষতা, ভারসাম্য রক্ষার নামে সত্য বলা থেকে বিরত থেকে দোষী-নির্দোষ উভয়ের ওপর দায় চাপান। এ এক বড় ধরনের অবিচার নয়কি?

যাক লম্বা ইতিহাস বাদ দিয়ে শুধু বিভিন্ন শাসকের আমলে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দিকটার প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। '৪৯-এ জন্মের পর '৫৪ থেকে এ পর্যন্ত ১টি ছাড়া এমনকি আইউব ইয়াহিয়া জিয়া এরশাদের লৌহকঠিন সামরিক শাসনের জাঁতাকলে অতি সীমিত সুযোগের মধ্যেও সব সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাদের প্রার্থী করেছিল তারা সবাই মূলত রাজনীতির লোক, এ দেশের রাজনীতিতে অনেকের ভূমিকা ছিল কিংবদন্তির মতো। '৯১-এর সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখে। এটা ইতিহাসের বিষয়, রেকর্ডের বিষয়। ইচ্ছে করলেই যে কেউ দেখে নিতে পারেন। যেমন '৯১-এর সাধারণ নির্বাচন। সারা দেশ বাদ দিয়ে শুধু ঢাকা শহরের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ হাসিনা ২টি আসন, সাজেদা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাইফুদ্দিন মানিক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ যাদের ছিল সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অতীত, কিন্তু সবাই পরাজিত। '৯৬-এ শেখ হাসিনা নিজেসহ ঢাকা শহরের আগের সব প্রার্থী বাদ। মনোনয়ন পেলেন সম্পূর্ণ নতুন এক সেট। ফলাফল সব বিজয়ী। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। দেশে জ্ঞানীগুণীদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, এরপর শেখ হাসিনা কি করবেন, কি শিক্ষা নেবেন এ থেকে? কি পরামর্শ তাদের? ১৫ বছর দেখেছেন, আর কত?

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, অপরাজনীতি, মনোনয়ন বাণিজ্য, নির্বাচন প্রহসন যাই বলি না কেন, শুরু হয়েছিল ১৫ আগস্ট '৭৫ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং জঘন্যতম অপরাধমূলক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। খোদ রাষ্ট্রকে জিম্মি করে এবং আজও তার অবসান ঘটেনি। যারা বিভিন্ন বিষয়ে ভালো ভালো পরামর্শ দিচ্ছেন তারা এই দালিলিক সত্যগুলো বলছেন না কেন? রাষ্ট্রক্ষমতায় কারা, সংবিধানের কোন ধারায় বসলেন, কোন আইনে একই ব্যক্তি যুগপৎ সামরিক বাহিনী প্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, রাষ্ট্রপতি, রাজনৈতিক দল গঠন করে তার নেতা হন, টাকার উৎস কি, দল ভাঙিয়ে লোক ভাগিয়ে কাদের নেতা, এমপি, মন্ত্রী বানানো হয়, তাদের অতীত কি, '৭১ ও '৭৫-এ ভূমিকা কি, কীভাবে পুরনো রাজনৈতিক দলকে প্রতীকসহ গিলে ফেলা হয়, কখন কেবল ক্ষমতার লোভে দলবদল বা হর্স ট্রেডিং শুরু হয় এই প্রশ্নগুলো সুধীমহল কোনো দিন করেছিলেন? তারা তো দেশে ছিলেন, ভালো ছিলেন, মর্যাদাপূর্ণ পদে ছিলেন। সাফ জবাব করেননি। না করার কারণ কি এই নয় যে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে রাজনীতিকে নীতিহীন করার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের অনেকেই জড়িত ছিলেন, সুবিধাভোগী ছিলেন?

'৮১-তে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন তখন তার পরিবারের অবস্থা কি, দলের অবস্থা কি, সংসদ, সরকার, প্রশাসন, আদালত, নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সশস্ত্র বাহিনী, বেতার, বিটিভি, '৭১ ও '৭৫-এর খুনিরা, অর্থনীতি ইত্যাদি কি অবস্থায় ছিল বিবেচনায় না নিয়ে তার কোনো বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডের ওপর বিরূপ মন্তব্য করলে তার প্রতি সুবিচার করা হবে কি? শুরু করেছিলাম নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন বিষয়টা নিয়ে। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত আদর্শ পথ তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা চুরমার করে দিয়েছি। আগেই বলেছি '৯৬-র নির্বাচনে ঢাকা শহরসহ কয়েকটি স্থানে মনোনয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে কিছুটা সরে গিয়ে প্রতিপক্ষ যে ধরনের খেলোয়াড় মাঠে নামায় সে ধরনের খেলোয়াড় নামিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য, ফল হয়েছিল ইতিবাচক। কাজটা তো শেখ হাসিনা হুট করে করেননি। ১৫ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসহ ২১ বছর দেখেছেন, ক্ষমতায় যেতে না পারার জন্য খোটা, কটাক্ষ, অপবাদ সয়েছেন। প্রকাশ্যে বলা হয়েছে অমুক বাহিনী চায় না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাক, তাদের একজন সদস্য বেঁচে থাকতেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যেতে দেবে না। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? সংসদের কার্যবিবরণীতে এগুলো আছে কারণ, সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়েও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে এসব বলা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কি করবে? আওয়ামী লীগ তো আর ষড়যন্ত্র, ক্যু বা গুপ্ত হত্যার বিপ্লবী রাজনীতিতে দীক্ষিত দল নয়। চিরাচরিত ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী দল হিসেবে সীমিত সুযোগ আর প্রতিকূল অবস্থার নিরিখে আইনের আওতায় থেকে যেটুকু করা সম্ভব তাই করেছে। সুতরাং অপরাজনীতির যারা হোতা তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে এককাতারে ফেলা সুবিচারের পরিচায়ক কি? এতে প্রকারান্তরে মূল হোতাদের সমর্থন করা হয় না?

প্রশ্ন হতে পারে, আওয়ামী লীগ এভাবে ক্ষমতায় এসে কি লাভ হলো? সব ফিরিস্তি বাদ দিয়ে শুধু এটুকু বলব '৭১-এ এদেশে একজন নেতার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ নামে একটা ঘটনা ঘটেছিল। '৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো ২১ বছর মিথ্যাচার করে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিকৃত করা এবং মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার সব ব্যবস্থা করেছিল। এ সময় জন্ম নেওয়া প্রজন্মকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিকৃত তথ্য দেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশেই বেতার-টিভিতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী না বলে বলা হতো শুধু হানাদার বাহিনী। বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতা প্রাণ ফিরে পায় এবং সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু এই একটি মাত্র কারণে আওয়ামী লীগের বার বার ক্ষমতায় আসা দরকার। স্বাধীনতা অটুট, অবিকৃত থাকলে অন্য সব কিছু হবে। মনোনয়নের কথায় ফিরে আসি। অনেকেই বলছেন, কেবল তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, তৃণমূলও সব সময় অপশক্তির থাবামুক্ত নয়। তাই প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তৃণমূলের মতামত, মাঠ বাস্তবতা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের বিচক্ষণতা_ এ সব কিছুর সমন্বয়ের মাধ্যমে।

লেখক : অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.