আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোগল হেরেমের দুনিয়া কাঁপানো প্রেম (১৩তম পর্ব)

এদের মধ্যে একজন নারী সম্রাটও ছিলেন। কিছুদিন রোমানদের অধীনও ছিল। আলেকজান্ডার এই অঞ্চলে এসে মিসর ও ব্যাবিলন জয় করেছিলেন। বাকিটা সময় তারা পারস্য রাজের অধীন ছিল। বহু বছর ধরে পৃথিবীর দুটি পরাক্রমশালী সাম্রাজ্য একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছিল।

আল্লাহর রাসূল (স.)-এর জন্মের পূর্ববর্তী ৫০ বছরে বিশ্বরাজনীতিতে ঘটে যায় কতগুলো যুগান্তকারী ঘটনা। এই সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর দুজন মহান সম্রাট দুই পরাক্রান্ত সাম্রাজ্যের প্রতিভূ ছিলেন। একজন হলেন রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান, অন্যজন পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজ। দুটো সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি দেশের মালিকানা নিয়ে অবিরত যুদ্ধ চলে আসছিল ৫৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। ৫৬২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাস্টিনিয়ান ও সম্রাট খসরু পারভেজ পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মধ্যে ৩২ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটান।

ককেশীয় অঞ্চলের একটি দেশ নিয়ে ছিল সেই বিরোধ (আর্মেনিয়া)। আমার প্রিয় শাহেন শাহ! আমি ওই সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে খুব কমই জানি। কিন্তু আমার ভয় হয় আমার অতিকথন না আপনার বিরক্তির উদ্রেক করে। কিংবা আমার সন্দেহ হচ্ছে যে আমার বকবকানী মূলত কোনো কাজেই আসবে না, বরং আমরা আমাদের মূল্যবান রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো হারিয়ে ফেলছি। সম্রাজ্ঞীর কথা শোনার পর শাহেন শাহ ঘাড় ফিরিয়ে শিয়রে বসা স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালেন।

তারপর প্রবল এক টানে স্ত্রীকে বুকের ওপর ধারণ করলেন। বললেন, এতক্ষণ তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়েছ। এবার আমি তোমার মাথায় হাত বোলাব আর সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তোমার চুলের ভেতর থেকে একটি উকুন খুঁজে বের করার জন্য। ফাঁকে ফাঁকে চুলের সুভাস নিয়ে নিজের ফিরে পাওয়া ঘ্রাণশক্তিকে উপভোগ করব। অন্যদিকে তুমি আমার হৃৎস্পন্ধন শুন এবং তোমার কাহিনী বর্ণনা করতে থাক সেই পর্যন্ত যতক্ষণ হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনতে পাও।

শাহেন শাহের আশ্বাস এবং আগ্রহ দেখে সম্রাজ্ঞী পুনরায় শুরু করলেন তার বক্তব্য_ আপনি নিশ্চয়ই সম্রাট জাস্টিনিয়ান সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তবুও বলছি আপনাকে কেবল স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য। তার রাজত্ব কাল ছিল ৫২৭ সাল থেকে ৫৬৫ সাল অবধি। ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো তিনি দখল করে সেখানে সুশাসন স্থাপন করেছিলেন। তাকে বলা হয়, শেষ রোম সম্রাট যিনি আজকের দিনে বিলুপ্ত ল্যাটিন ভাষায় কথা বলতেন।

প্রজা সাধারণদেরকে উত্তম শাসন উপহার দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে তিনিই প্রথম আইন গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন। তার সেই বিখ্যাত বইয়ের নাম হলো- কর্পাস জুরিস সিভিলেস। এ বইটি হলো সারা দুনিয়ার দেওয়ানি আইনের ভিত্তি। আপনার সাম্রাজ্যেও সম্রাট জাস্টিনিয়ান প্রণীত দেওয়ানি আইনই বলবৎ রয়েছে। তিনি কেবল সুশাসক, কিংবা মহান বিজেতাই ছিলেন না- ছিলেন অতিশয় নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী প্রকৃতির মানুষ।

তার রাজ্যে ছিল নামকরা সব পণ্ডিত, আইনবেত্তা, সাধক, বিজ্ঞানী, সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার এবং রাষ্ট্রাচারের মাধ্যমে তিনি মানুষের প্রতিভা ও সম্মানকে লালন করতেন। তিনি কেবল নিজেকেই বড় করেননি আরও অনেককে বড় হতে সাহায্য করেছেন। তার সেনাপতি বেলিসারিয়াস সম্রাটের আনুকূল্য পেয়েই পৃথিবীর বিখ্যাত হয়ে আছেন। দক্ষিণ সাইবেরিয়া, স্পেনসহ ভূমধ্য সাগরের পশ্চিমের অনেক দেশই জয় করে তিনি ইউরোপের সর্বকালের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক হয়ে গেলেন।

শুধু কি তাই, সাগর এবং মহাসাগরেও তিনি একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করলেন। ওই আমলেও আটলান্টিক মহাসাগর ছিল তার দখলে। অন্যদিকে পারস্যের খসরু পারভেজের শ্রেষ্ঠত্ব, বিক্রমাদিত্য কিংবা আভিজাত্য পৃথিবীর অন্য কারও সঙ্গে তুলনীয় নয়। তিনি ছিলেন সাসানিদ বংশের শাসক যারা কি না গত প্রায় ৩০০ বছর ধরে পারস্য সাম্রাজ্য শাসন করছিলেন। খসরু নিজে ৫৩১ থেকে ৫৭৯ খ্রি. পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

পারস্য, ব্যাবিলন (ইরাক), লিভান্ত (সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন, জর্ডান, ইসরায়েল), ককেশীয় দেশগুলো (আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, দাগেস্তান), তুরস্কের কিয়দাংশ মধ্য এশিয়া (আফগানিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান, উজবেকস্তান, তাজিকিস্তান), পারস্য উপসাগর তীরবর্তী দেশগুলো (ইয়েমেন, ওমান, সৌদি আরব, কুয়েত), এবং পূর্ব ভারত (পাকিস্তান) নিয়ে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল খসরু পারভেজের অধীন। ৫৬২ খ্রিস্টাব্দে পারস্য ও রোম সম্রাটের মধ্যে ৫০ বছরব্যাপী শান্তিচুক্তি হওয়ার পর কার্যত মারামারি হানাহানি বন্ধ হয়। কিন্তু নতুন উৎপাত শুরু হয়ে যায় ধর্মমত নিয়ে। রোমানরা রাষ্ট্রীয়ভাবে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী ছিল। এদেরকে বলা হতো রোমান ক্যাথলিক।

অন্যদিকে পারসিকরা ছিল অগি্ন উপাসক। কিন্তু পারস্যের বাইরের বিশাল ভূখণ্ডে ছিল বহু ধর্মমতের মানুষ পৌত্তলিক, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাস্তিক বিশ্বাসীসহ নানা মত ও উপমত। ঠিক এই সময়েই অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেন ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ (স.)। [চলবে]

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে ১০৫ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.