আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেরারি বিএনপি

গ্রেফতার ও মামলা আতঙ্কে ফেরার বিএনপি নেতারা। ২৬ নভেম্বর প্রথম দফা অবরোধের পর থেকেই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন অভিভাবকশূন্য। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও সুনসান নীরবতা। নেতা-কর্মীশূন্য জেলা ও উপজেলা বিএনপি কার্যালয়গুলো।

অধিকাংশ নেতাই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। কথোকপথন রেকর্ডের ভয়ে নেতারা মোবাইলে 'ভাইবার' কিংবা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বার্তাবাহকের মাধ্যমে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতারের পর বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। অবরোধ কর্মসূচিসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে অজ্ঞাতস্থান থেকে বিবৃতি ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। ঢাকা মহানগর বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের সব নেতারা আত্দগোপনে।

এমনকি জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতারাও অবরোধে মাঠে নেই। এ নিয়ে তৃণমূলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও কয়েকজন দলীয় পদধারী সাবেক সামরিক-বেসামরিক আমলা ছাড়া বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা অজ্ঞাতস্থানে থাকছেন। ওই আমলাদের ফোনও খোলা রয়েছে। তবে দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিভিন্ন মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অবরোধ সফল করতে মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। তৃণমূলে এ নিয়ে হতাশা থাকলেও দলের ফেরারি নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশেই তারা এ কৌশল অবলম্বন করছেন। আড়ালে থেকেও অবরোধ সফল করতে নেতা-কর্মীদের নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাজনৈতিক আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। নেতাদের আড়ালে থাকা এটাও এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল।

তবে এটা ক্ষণস্থায়ী। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি টানা আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। সরকার যত কঠিন হবে, আমরাও তত কঠোর আন্দোলন করব। সরকারকে বুঝতে হবে বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, জমির উদ্দিন সরকার, বেগম সরোয়ারী রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, শমসের মবিন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনার রশীদ খান মুন্নু, রিয়াজ রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, ড. এম ওসমান ফারুক, ফজলুর রহমান পটল, শামসুজ্জামান দুদু, মুশফিকুর রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, এজে মোহাম্মদ আলী, নূরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, এ এস এম আবদুল হালিম, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, জহুরুল ইসলাম, এম এ কাইয়ুম, খন্দকার শহিদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দিন প্রমুখ নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনো মামলা না থাকলেও তাদের দেখা যায় না কোনো কর্মসূচিতে। অবশ্য এদের অনেকেই বাসা ছাড়া হয়েছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পর্যায়ের নেতাদের অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থান করলেও তাদের অবস্থান জানেন না নেতা-কর্মীরা। অধিকাংশ নেতা ব্যক্তিগত মোবাইল বন্ধ রেখে বাসা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করছেন। বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরও একই অবস্থা।

ঢাকা মহানগর বিএনপি বিশেষ করে ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতারাও আন্দোলনের মাঠে অনুপস্থিত। এর আগে হরতাল ও অবরোধে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একজন মুখপাত্র উপস্থিত থাকতেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কয়েক মাস আগেও রিজভী আহমেদ গ্রেফতার হলে তার স্থলে যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামলান। এক সময় তাকেও গ্রেফতার করা হলে দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুকে।

অতীতের কর্মসূচিগুলোতে এভাবেই বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে কেউ না কেউ দায়িত্ব নিতেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। দলের মুখপাত্র ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে একাধিক। হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা আড়ালে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন। রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতারের পর বিএনপির কোনো নেতাই কার্যালয়ে আসেননি।

ফলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন অনেকটাই বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভাঙচুর হওয়া কার্যালয়ের আসবাবপত্রগুলো সেভাবেই পড়ে রয়েছে। জানা গেছে, অবরোধ ঘোষণার দুই দিন আগে ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলনকে জোরদার করতে সিনিয়র ৮ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতার নির্দেশনায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও প্রত্যেককে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথম দফা ৬০ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন শনিবার পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতা ছাড়া কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় দফা অবরোধে কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও সরকারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের মতো বিরোধী দলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ কোথাও নেই। তিনি থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী আন্দোলনের উদাহরণ টানেন।

বলেন, এত বড় ধরনের বিক্ষোভ হলেও সেখানে সরকার কোনো গুলি করছে না। বিএনপি আত্দগোপনে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আড়ালে থেকেও শীর্ষ নেতারা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।