আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেরারি জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা এখন ফেরারি আসামি। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা নিজেদের এলাকায় থাকতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় হতাশ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা রাজপথে দাঁড়াতেই পারছে না। যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও মাঠ ধরে রাখতে সচেষ্ট জামায়াত-শিবির।

এ জন্য তারা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছেন। এক এলাকার নেতা-কর্মীরা অন্য এলাকায় গিয়ে থাকছেন। সুযোগ পেলেই মেতে উঠছেন ভাঙচুর, অগি্নকাণ্ড, নাশকতায়। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করা এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে জামায়াত-শিবিরের চালানো সহিংসতায় অন্তত ৬০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে জানানো হয়েছে। জামায়াতের দাবি, তাদেরই প্রায় সাড়ে চারশ নেতা-কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

মামলা হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতা এখন বিভিন্ন অভিযোগে জেলে আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১৭ জনের বিরুদ্ধে ঝুলছে ১০০ মামলা। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের ৫৮ সদস্যের ৪৭ জনের বিরুদ্ধেও রয়েছে শতাধিক মামলা। অনেক নেতাই দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পলাতক রয়েছেন।

দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক। নায়েবে আমিরের মধ্যে এ কে এম নাজির আহমেদ দুই মামলার আসামি। আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪টি। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক রয়েছেন দলের নায়েবে আমির আবদুস সোবহান ও মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ১২ মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে আটক আছেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ৮ মামলার আসামি। এ ছাড়া মুজিবুর রহমান ৭, এ টি এম আজহারুল ইসলাম ৭ ও অধ্যাপক তাসনীম আলমের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। তারা সবাই কারাগারে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ ৪ মামলার আসামি।

তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেরারি আসামি হিসেবে দল চালাচ্ছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলী ৩, মাওলানা রফিউদ্দিন আহমদ ২, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ২, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ১৬, ডা. শফিকুর রহমান ৪, ইজ্জত উল্লাহ ৪, মাওলানা এ টি এম মাসুম ২ মামলার আসামি। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ছাড়া অধিকাংশই পলাতক, কেউ কেউ আটক। দলের মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পল্টনের ঢাকা মহানগরী কার্যালয়ও এখন নেতাশূন্য। গ্রেফতার ও পুলিশি হামলার ভয়ে অধিকাংশ নেতা শুধু গাঢাকাই দেননি, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অহরহ সেলফোন নম্বর পরিবর্তন করছেন এবং বন্ধ রাখছেন।

ফলে আন্দোলনের মাঠ গরম করা তো দূরের কথা, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে তারা রাজনীতির মাঠ ছেড়ে অনেকটা গর্তে ঢুকে গেছেন। শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়েও কোনোটাই সফল করতে পারেনি দলটি। ফেরারি অবস্থানে থেকেই চোরাগোপ্তা হামলা অব্যাহত রেখেছে জামায়াত-শিবির। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), পলিশ ও বিভিন্ন এনজিওর পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় এবং বছর শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী জোটের অবরোধ কর্মসূচির নামে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে সারা বছরে ৫০৭ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ২২ হাজার ৪০৭ জন। গত বছরের অধিকাংশ সময় জামায়াত-শিবির মারমুখী অবস্থানে থাকলেও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বর্তমানে অধিকাংশ নেতা-কর্মীই ফেরারি জীবন যাপন করছেন।

সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে জোটের বড় সঙ্গী বিএনপিকেও পাশে পাচ্ছে না তারা।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।