আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি জিতেও যেন হেরেগেছি...!

নিরপেক্ষভাবে লিখেযেতে চাই..

(২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ইং এর পোস্ট)
প্রায় সাতদিন পর আজ চবি ক্যাম্পাসে গেলাম। বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে নয়। কেবল ক্যাম্পাসের চেহারা দেখবো বলে। আজ চাচাতো ভাইদের অনুষদে নবীন বরণ অনুষ্ঠান হবে। তিনি আমাকে অংশ নিতে বল্লেন।


তখন বেলা বারোটা প্রায়। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লোকপ্রশাসন বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব চলছে। ডুকতে মন চাইছিলোনা।

তবুও ডুকলাম। মিলনায়তন হলটা অনুষদ ভবনের প্রধান গেটের সামনেই ছিলো। তাছাড়া হলের প্রবেশদ্বারের সাজ সজ্জ্বা অনুষ্ঠানের কথাই জানান দিচ্ছিলো। সামনে এগিয়ে গেলাম। ভেতরে ডুকতে গিয়েও ডুকলামনা।

কেমন যেন অনীহা হলো। ভাবলাম, একটু ঘুরে আসি। তাই করলাম। হেঁটেহেঁটে ভবনটা ঘুরে দেখলাম। আগাগোড়া বিচরণ করলাম।

তখনো গোটা ভবনজুড়ে ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা ছিলো। বেশ কয়েকটা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানও চলছিলো। মোটামুটি সবখানেই প্রাণ ছিলো। কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও পরিবেশটাকে আপন করে নিতে পারছিলামনা। এইযে পরিবেশ আর আমার অন্তরের মাঝে যে দুরত্ব তা রয়েই গেলো।

কোথাও যেন বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছিলো। ভেতরটা বারবার হাহাকার করে উঠছিলো। এইযে ছাত্র ছাত্রীদের কোলাহল, উত্তপ্ত রোদের মাঝে কোমল ছায়ার পরশ আর নিজকে খুঁজে পাওয়ার মতো দারুণ অনুভূতি কিছুতেই সইতে পারলামনা। অভিমান হচ্ছিলো এসবের সাথে। দ্রুত পাশ কাটতে মন চাইছিলো।

কিন্তু কেন? ক’দিন আগেওতো এই পরিবেশটা ছিলো আমার মুখ্য। ঢাবি ক্যাম্পাসে আমি দিনের বিশাল একটা অংশ কাটাতাম। চবি ক্যাম্পাসেও যে বহু আড্ডা দিয়েছি। ক্যাম্পাসগুলো যে ছিলো আমার আড্ডাখানা। সেই আমার মাঝে আজ কেন এতো পরিবর্তন।

এই প্রশ্নের উত্তর আজ আমার কাছে নেই।

যাইহোক, অবশেষে নেমেগেলাম। বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম ভাই যখন বলেছে অনুষ্ঠানটায় একটু বসি। নিজকে খুব ছোট ছোট মনেহচ্ছিলো।

অনুষ্ঠানটায় বসার যোগ্য মনেহলোনা নিজকে। সবার সাথে দুরত্ব বজায় রেখে পেছন দিকটায় গিয়ে বসলাম। এটা ছিলো সফলতা আর প্রাপ্তির সর্বোচ্ছ স্বীকৃতিমূলক অনুষ্ঠান। সে একই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করলাম আমি ব্যর্থ আর বঞ্চিত এক প্রাণ। সেখানে ছিলো তারুণ্যের জোয়ার।

উপস্থিত সব ছাত্রই আত্মপ্রত্যয়ী ছিলো। পরিবেশটা ছিলো প্রাণবন্ত। কিন্তু সবগুলো ইতিবাচক দিকই আমার কাছে নেতীবাচক হয়ে ঠেকলো। তাদের সেই হাঁসি আর আত্মপ্রত্যয় আমাকে তলে তলে ধিক্কার দিচ্ছিলো যেন। আর বারবার বলছিলো, কেন চবিতে ভর্তি পরীক্ষাটা দিলিনা? খুব রাগ হচ্ছিলো কোচিং এর প্রতি।

এ বছর চবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার জন্য আমি তাদেরকেই দায়ী করব। তারা শিখিয়েছিলো ঢাবি ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোন মূল্য নেই। অন্য কোথাও আইন নিয়ে পড়ার চেয়ে ঢাবিতে পালী, নাট্যকলা আর চারুকলা নিয়ে পড়া অনেক ভালো। আর মনে সেই বিষটা থাকার কারণেই চবিতে ফরম তোলা সত্ত্বেও পরীক্ষাটা দেইনি। ভাগ্যিস্, চবিতে আরবি বিভাগে গতবছরের ভর্তিটা ছিলো।

এক বছর লস দিয়ে হলেও পুঃণ ভর্তি হয়েছি।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যেই আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়া আজ তা আর আমার নিকট ভালো ঠেকছেনা। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও যেন আমি নিজকে আগের সেই বাঁধাধরা আর গন্ডিবদ্ধ জীবনে বন্ধি করলাম। দৈনিক ৪-৫ টা ক্লাস করতে হবে, গদ বাঁধা পড়া দেয়া নেয়া আর আদিম সেই বাঁধাধরা চিন্তা ধারার চর্চা। যেখানে নেই তারুণ্যের ঝলকানী।

নেই কোন উদ্যম আর উদ্যোগ। নেই সারাজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতিময় কোন আয়োজন। যদিও আমি আমার প্রত্যাশিত বিষয় নিয়েই পড়ছি, তবুও বারবার মনেপড়ে আমি ঢাবিতে চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারিনি। লিখিত পরীক্ষায় আমার চেয়ে ১ নাম্বার কম পেয়েও সহপাঠী জহির আমার চেয়ে ১২০০ সিরিয়াল এগিয়ে। কারণ, আমি প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার ফলাফলে খারাপ (৭১/৮০) করেছি।

চবিতে ফরম তোলা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেইনি। টুমচর মাদরাসা থেকে একই ব্যাচের আমরা যারা ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি ৪জন ঢাবিতে, ২জন জবিতে আর ১জন জাবিতে পড়ছে আইন, বাংলা, লোকপ্রশাসন আর শান্তি ও সংঘর্ষ নিয়ে। শুধু আমিই যেন ছিটকে পড়েছি অনেক দূরে। সব মিলিয়ে যেন আমি জিতেও হেরেগেছি। তাই আজ মনটা খুব ভালো নেই।



ক্যাম্পাসের জীবনটা হবে প্রাণবন্ত, উদ্যম আর উদ্যোগেভরা। কর্ম জীবনে এমনকি শেষকালেও স্মুতিময় হয়ে থাকবে এই খন্ডকালীন সময়টুকু আর আলো চড়াবে সারাজীবন। নিজকে চিনতে পারবো যেখান থেকে। সর্বোপরী উপভোগ করবো সময়টাকে। এমনটা ছিলো আমার প্রত্যাশা।

কিন্তু আজ সবকিছু হয়েও যেন কিছুই হলোনা। কী আর করা, এখন বোধহয় অবস্থা অনুসারেই আমাকে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্য আজকাল মনোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে পুণরায় ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার কথাও ভাবছি। জানিনা, শেষ পর্যন্ত কী হবে।
যখন মনোযোগ ফিরে পেলাম ততক্ষণে ২/৩জন বক্তা তাদের কথা বলে গেলেন।

এবার মনোযোগ দিয়ে শুনতে শুরু করলাম। কিন্তু এক একটা কথা আমার কানে তীর হয়ে বিঁধছিলো। কিছুই ভালো লাগছিলোনা। উপায়ান্তর না দেখে বেরিয়ে গেলাম। ভীষণ পিপাসা পেয়েছে।

ক্যান্টিনরুমে গিয়ে তৃষ্ণা মেটালাম। আয়নায় চেয়ে দেখি মুখটা কেমন যেন মলিন হয়েগেছে। মুখটা ধুয়ে নিলাম। পানির ছিটা দিয়ে চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলাম। তবুও নিজকে মলিন, অসহায় আর দীন মনেহলো।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.