আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রীতিলতা

ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব । প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাঁকে “রাণী” ডাকতেন। অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাঁট দেওয়া, বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মাকে সাহায্য করতেন। ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন কল্পনা দত্ত (পরবর্তীকালে বিপ্লবী)। এক ক্লাসের বড় প্রীতিলতা কল্পনার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। স্কুলে আর্টস এবং সাহিত্য প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিলো। এই প্রীতিলতাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে যোগ দিয়ে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন অভিযানে অংশ নেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেকে গড়ে তোলার পাশাপশি অসংখ্য বিপ্লবীদের প্রশিক্ষিত, অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে গেছেন।

১৯২৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময় তিনি নাটক লিখেন এবং মেয়েরা সবাই মিলে সে নাটক চৌকি দিয়ে তৈরী মঞ্চে পরিবেশন করেন। আই.এ. পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ়ের ছাত্রী নিবাসের মাসিক থাকা খাওয়ার খরচ ছিল ১০ টাকা এবং এর মধ্যে কলেজের বেতন ও হয়ে যেত। প্রীতিলতার বি.এ. তে অন্যতম বিষয় ছিল দর্শন।

দর্শনের পরীক্ষায় তিনি ক্লাসে সবার চাইতে ভাল ফলাফল লাভ করতেন। ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে লীলা রায়ের সাথে প্রীতিলতার পরিচয় হয়েছিল। ঢাকায় যখন প্রীতিলতা পড়তে যান তখন “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠন ছিল। ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বহুদেশে মাতৃভূমিকে সাম্রাজ্যবাদের কবলমুক্ত করতে পুরুষের পাশাপাশি বহু নারী আত্মদান করে নারীর সংগ্রামী মর্যাদা ও বীরত্বের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। ১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা শুরু হয়।

প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর ১৩ জুলাই ১৯৩২ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে'।

তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ১৯৩২ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ হতে বিএ পাশ করার পর মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি বাড়িতে ফিরেন কিন্তু বাড়িতে এসে দেখেন তার পিতার চাকরি নাই। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন এবং অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (তৎকালীন নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) প্রধাণ শিক্ষকা পদে নিযুক্ত হন। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করতে যান প্রীতিলতা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুন্ডে যাওয়ার কথা বলেন।

কলকাতার এক গোপন কারখানায় তখন তৈরি হয় বোমার খোল। মাষ্টারদার নির্দেশ অনুযায়ী সেই বোমার খোল সংগ্রহ করেন প্রীতিলতা। একবার পুলিশ সূর্যসেনকে ধরার জন্য দেওয়ান বাজারে তাঁর এক আত্মীয় বাড়ি ঘেরাও করে। সূর্যসেন পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজের এক মেধাবী ছাত্রের বাসায় উঠেন। এই মেধাবী ছাত্রটি রানীর খুড়তুত ভাই পূর্ণেন্দু দস্তিদার।

তিনি শহরের ছাত্র-যুব বিপ্লবীচক্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এই তরুণ বিপ্লবী নেতা সূর্যসেনের পলাতক জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলেন। চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের যেসব গোপন বই-পত্র ছিল তা রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল এই তরুণ যুবকটির উপর। প্রীতিলতা মারা যাওয়ার আগে মায়ের কাছে লিখেছিলেন, 'মাগো, অমন করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উত্সর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?' আত্মপ্রত্যয়ী প্রীতিলতা মাত্র একুশ বছর বয়সে আত্মাহুতি দেন। এই বয়সে জীবন উৎসর্গ করা সহজ কাজ নয়।

তিনি একসঙ্গে দুটো কাজ করেছেন_ ১. বৃটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে অংশগ্রহণ এবং ২. দেশের জন্য জীবনদান। মহাসংগ্রামী সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেনের কাছে বিপ্লবমন্ত্রের যে দীক্ষা বিপ্লবীরা পেয়েছিলেন, তাই তাদের এই কাজে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। অসম সে যুদ্ধে মাস্টারদার যারা সঙ্গী সহযোদ্ধা ছিলেন তারা সবাই ছিলেন বয়সে ও মনেপ্রাণে তরুণ সতেজ। যে যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শক্তির ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। প্রাণভয় তুচ্ছ করে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারীদের তালিকায় শীর্ষভাগে একটি নাম খোদিত হয়েছে সে নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

যিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। ( তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.