আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রীতিলতা - পর্ব -১ জীবনের এক নতুন মুক্তির স্বাদ

আমার জগত শুধুই তোমার

পটভূমি ঃ এই উপন্যাস এর কোন চরিত্র ,কোন ঘটনা কারও ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে মিলে গেলে আন্তরিক ক্ষমা চাইছি। গল্পের মূল চরিত্র ঃ ১। দীপ , ভালবাসার ডাক বুবুন ( আমি না কিন্তু) ২। মিত্রা , ভালবাসার নাম মিত্রা ( আসল নাম সঞ্চিতা ) মুল গল্পে আসা যাকঃ সময়টা ২০০৬-২০০৭ সালের , বুবুন কেন যেন সবকিছুতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তার অফিস , বাসা সব কিছুতেই একটা পরিপূর্ণতার ছোয়া , ভাল জব , ভাল স্যালারি ,কাজের ছেলে তাই সবাই কেমন যেন সমীহ করে চলে তারপর একদিন ঃ সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়ে গেল। আজ অফিসে একটা জরুরি কাজ আছে অমিতাভদা বলেছিল একটু তাড়াতাড়ি আসিস তোকে এক জায়গায় পাঠাব।

দূর চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল, আজ নির্ঘাত অমিতাভদার কাছে ঝাড় আছে। মোবাইলটা বার করে বড়মাকে একবার ফোন করলাম। বড়মা ফোন ধরে বলল, কিরে এত বেলায় ! ঘুমোচ্ছিলি নাকি ? আমি বললাম হ্যাঁ রাতে শুতে একটু দেরি হয়ে গেল, বলিস কিরে তোর বস তো সেই সাত সকালে চলে গেছে তোর নাকি কোথায় যাওয়ার কথা। তোকে ফোন করে নি।

করেছিল হয়তো আমি তো ফোন বন্ধ করে রাখি। ভাল করেছিস তুই যা, আমি একবার ফোন করে দিচ্ছি। এই জন্যই তো তোমাকে ফোন করা। সেকি আমি জানিনা। যা তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিস।

আমি দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেবো। ঠিক আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম ১০ টা বেজে গেছে। আমার ৯.৩০ মিনিটের মধ্যে অফিসে পোঁছানোর কথা।

কি আর করা যাবে। অফিসে ঢুকতেই রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলেন, আমিও হাসলাম। লিফটের সামনে দাঁড়াতেই আমাদের ডিসাইনার অশোকদা বললেন, এই দীপ তোকে অমিতাভদা খুঁজছিলেন, আমি হুঁ বলে লিফটের মধ্যে সেঁদিয়ে গেলাম, নিউজ রুমে ঢুকতেই মল্লিকদা বললেন কি হে বৎস আজ মনে হয় একটু বেশি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, যান আপনার জন্য সমন অপেক্ষা করে আছে, আগে গিয়ে একটু মুখটা দেখিয়ে আসুন, তারপর না হয় মুখে চোখে জল দেবেন। মল্লিকদাআজ একটু বাঁচিয়ে দিন। হ তা ঠিক, ফাঁনদে পরলে মল্লিকদা, আর কচিগুলানরে নিয়ে যখন ঘোরা ঘুরি কর, তখন মল্লিকদারকথা মনেপরে না।

আচ্ছা আচ্ছা এরপর তোমায় ভাগ দেবো তবে ছোটমার পারমিশন নিয়ে। এই তো আবার ঘুটি বসালি । ঠিক আছে ছোটমাকে বলবনা তুমি একটা ফোন করে দাও আমি এসে গেছি। মল্লিকদা ফোন থেকে মুখ তুলে বললেন যে কাজে তোমার যাওয়ার কথা ছিল তা হয়ে গেছে তুমি এখন যেতে পার, আর একটি গুরু দায়িত্ব তোমার প্রতি অর্পন করা হবে তুমি এখন কনফারেন্স রুমে যেতে পার। আবার কি গো।

গেলেই জানতে পারবে। ঠিক আছে। অমিতাভদা থাকেন গুলশান আর আমি থাকি ধানমন্ডির কাছে , মল্লিকদা থাকেন আরাম্বাগ, আমার প্রত্যেক দিন ডিউটি অফিস থেকে ফেরার পর কিংবা আগে একবার বড়মার সঙ্গে দেখা করে আসতে হবে, নাহলে বিপদ আছে। আমি বিগত ১০ বছর ধরে এই অভ্যাস পালন করে আসছি। হরিদা অমিতদার খাস বেয়ারা গেটের সামনে বসে ঝিমুচ্ছিলেন আমি একটা ঠেলামারতেই চোখ খুলে বললেন কিহল আবার| সাহেব আছেন| হ্যাঁ, তুমি কোথায় ছিলে এতোক্ষন কেন! তোমার আজ পিট্টি হবে| তোর খুব মজা তাই না? হাসি| দরজা খুলে ভেতরে এলাম, একরাস ঠান্ডা হাওয়া আমায় গ্রাস করে বসলো, দেখলাম একটা চেয়ার দখল করে বসে আছেন আমাদের এ্যাডম্যানেজার চম্পকদা, আর একটিতে চিফ রিপোর্টার সুনিতদা আমাকে ভেতরে আসতে দেখেই বলে উঠলেন এইতো ছোট সাহেব চলে এসেছেন।

কি বাবা ঘুমিয়ে পরেছিলে, এমন ভাবে কথা বললেন আমার মাথা নত হয়ে গেল। অমিতাভদা এবার ওর একটা বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন অনেক নামডাক হয়েছে। টাকা পয়সাও তো খুব একটা কম পায় না, দেখবেন বিয়ের পিঁড়িতে চরলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। অমিতাভদা মুচকি হসে বললেন, হ্যাঁ ওর মাকে কয়েকদিন আগে বলছিলাম সেই কথা তা বাবু বলে এসেছেন বিয়ের নাম ধরলেই ঐ বাড়িতে আর পদার্পন করবেন না উনি সন্ন্যাস নেবেন। সকলে হো হো করে হেসে উঠল| আয় বোস তোর কথাই হচ্ছিল।

আমি একটা চেয়ারে বসলাম। তোর মা ফোন করেছিল ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছিস, কিছু খাওয়া দাওয়া করেছিস। না। সঙ্গে সঙ্গে বেলের দিকে হাত চলে গেলো। এখন একটু চা আর টোস্ট খেয়ে নে।

তারপর কয়েকটা কপি লিখে দিয়ে বাড়ি চলে যা, তোর মাকে বলা আছে, আজ তোকে গাজীপুর শ্রীপুর যেতে হবে রিকোয়ারমেন্টস এর জন্য, দিন পনেরো থাকতে হবে। সেরকম ভাবে গোছগাছ করে নিস। ওখানে তোর সমস্ত ব্যবস্থা করা থাকবে ৭.৩০টায় ট্রেন মাথায় রাখিস আবার ঘুমিয়ে পরিসনা। আবার সকলে হেসে উঠল। ঘুমটা একটু কমা, অতো রাত জাগতে তোকে কে বলে, যতদিন আমার বাড়িতে ছিলি ঠিক ছিলি, যে দিন থেকে ঐ বাড়িতে গেছিস বিশৃঙ্খল হয়ে গেছিস।

চা টোস্ট খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১টা বাজে, মোবাইলটা বেজে উঠল, তনুর ফোন, কানে ধোরতেই খিল খিল করে হেসে উঠল কি সাহেব, টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে, কিসের টিকিট। গাজীপুর। বাঃ বাঃ তুমি কি এখন অফিসে না বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছ। এই মাত্র অমিতদার ঘর থেকে বেরোসাম।

বাঃ আমি এখন ধানমন্ডি তেই আছি, ফ্ল্যাটে গিয়ে একটা মিস কল মেরো তুমিতো আর ফোন করবেনা, যাওয়ার আগে একবার…… আমার যাবার ব্যাপার তুমি জানলে কি করে। আরে বাবা তুমি হচ্ছ সুপার বসের কাছের লোক তোমার প্রতি কতজনের নজর আছে তা জান, হাঁদারাম। ঠিক আছে। বড়মাকে ফোন করলাম| হ্যাঁ বল, সব শুনেছি, তোকে একেবারে খাটিয়ে খাটিয়ে মারলে, দাঁড়া আজ আসুক একবার দেখাচ্ছি মজা, তোদের অফিসে তুই ছাড়া কি আর কেউ নেই রে। তুমি বলো।

তুই কখন আসছিস। আমি পাঁচটার সময় যাবো অফিসে কিছু কাজ আছে, করে একটু ফ্ল্যাটে যাব তারপর তোমার কাছে যেতে যেতে ৫টা হবে। কি খাবি। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি গিয়ে তোমার কাছে ভাত খাব।

ঠিক আছে। এডিট রুমে আসতেই মল্লিকদা বলল, হল সব কথা। হ্যাঁ। মুখটা ওরকম গোমড়া কেন। ভাল লাগে বলো, এই দুদিন আগে ফিরলাম, আজই বলে তোকে যেতে হবে।

হক কথার এক কথা, আমি একটা তোকে কথা বলি, আমি মল্লিকদারমুখের দিকে তাকালাম, নিশ্চই কোন বদ বুদ্ধি আছে। দুই একটা সিস্টেম খারাপ কইরা দে। বেশ কেল্লা ফতে। তোমার সব তোলা থাকছে ঠিক জায়গায় নালিশ হবে মনে রেখো। এই দেখো গরম খাইলি।

কি আছে দাও তাড়াতারি লিখে দিয়ে কেটে পরি। ঐ মেয়েটা কি যেন নাম????….. আবার…. ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুমি এখন আইতে পার। আমিতাভদা বলল কি কাজ আছে। ছিল ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে।

বাঃ বেশ বেশ। কবে আসা হচ্ছে। দিন পনেরোর জন্য যেতে হবে। ও। তাহলে আমি এখন আসি।

হ্যাঁ যাও বিকেলে দেখা হবে। ঠিক আছে। এডিট রুম থেকে বেরোতেই হরিদার সঙ্গে দেখা। কোথায় যাচ্ছ? কোন| বাবু একবার ডাকছেন| আবার কি হল ? আমি কেমন করে জানবো| এডিটর রুমে ঢুকতেই দেখলাম অমিতাভদা আমাদের ফার্মের আজকের কাভারেজ পড়ছেন, আমাকে দেখেই মুখটা তুললেন, একটু আগে যারা ছিল তারা সবাই বেরিয়ে গেছে| আমাকে বললেন তুই বোস তোর সঙ্গে একটু দরকার আছে| আমি একটু অবাক হলাম, আমার সঙ্গে আবার কিসের গোপন বৈঠক ! সরাসরি মুখের দিকে তাকালাম, একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলে বললেন একটু চা খাবি ? মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলাম| হরিদা দুকাপ চা দিয়ে গেলো, তোর কোন তাড়াহুরো নেই তো| মনে মনে ভাবলাম আজ কপালে আমার দুঃখ আছে। নিশ্চই তানিয়ার ব্যাপারটা সাহেব জেনে ফেলেছে।

কে জানাল ব্যাপারটা। তানিয়া নিশ্চই নয়। তাহলে ! না গতকাল যে ডেমো জমা দিলাম সেই লেখার ব্যাপারে কিছু। চায়ের কাপে দীর্ঘ চুমুক দিয়ে আমাকে বললেন, তুই সংঘমিত্রা ব্যানার্জ্জীকে চিনিস ? আমি অমিতাভদার চোখে চোখ রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম চিনি, কেনো ? সেদিন ফোন করে তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল, তখন তুই খুলনা তে ছিলি, আমাকে তোর ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করলো, আমি বলতে পারলাম না | আর কি বললো ? না আর কিছু নয় এই আর কি…… অমিতাভদা কথাটা বলে আমার চোখে চোখ রেখে একটু থেমে গেলেন| তোর বড়মা জানে ? না| ওর সঙ্গে যে তোর পরিচয় আছে আগে তো কখনো বলিস নি | ও কে যে ওর কথা তোমাদের বলতে হবে ? আরি বাবা বলিস কিরে, ওর জন্যই তো আমরা দুটো খেয়ে পরে বেঁচে আছি রে ? তার মানে ! আরে পাগল ও আমাদের এই কোম্পানীর ৭৫ শতাংশ শেয়ার হোল্ড করে আছে, আমাদের মালিক তোরও মালিক| মাথাটা বারুদের মতো গরম হয়ে গেলো, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে| আমি সরাসরি অমিতাভদার চোখে চোখ রাখলাম| আর কি বলেছে ? না আর কিছু নয়, বললো তুই এখানে কার সোর্সে এসেছিস তোকে কে রিক্রুট করেছে এই সব আর কি | তুমি কি বললে ? আমি বললাম তুই শুভঙ্করের থ্রু দিয়ে এসেছিস, শুভঙ্কর আমার বন্ধু, তা দেখলাম ও শুভঙ্করকেও চেনে | ও, আর কি বললো? বাবাঃ, তুই আমাকে এ ভাবে জেরা করছিস কেনো, আমি তো তোকে খালি জিজ্ঞাসা করলাম মাত্র| ব্যাপারটা যখন আমাকে নিয়ে তখন আমাকে ভাল করে জানতে হবে তাই| অমিতাভদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, জানে আমি ভীষণ হুইমজিক্যাল আমাকে এই পৃথিবীতে একমাত্র কন্ট্রোল করতে পারে বড়মা, বড়মা ছারা আমি কাউকে এই পৃথিবীতে পাত্তা দিই না, এরকম একবার হয়েছিল একটা লেখা নিয়ে আমি অমিতাভদার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম, এমনকি রিজাইন দেবারও মনস্থির করে ফেলেছিলাম, সে যাত্রায় বড়মা শিখন্ডী হয়ে সব সামাল দিয়েছিলেন| অমিতাভদা ঐ ব্যাপারটা জানেন| আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, সংধমিত্রা আমার ক্লাশমেট কলেজের বন্ধু আমরা একসঙ্গে পড়াশুনো করেছি।

শুভঙ্করবাবুর কাছেও এক সঙ্গে পরেছি। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছন ফিরে তাকায় নি। সোজা লিফ্টের কাছে চলে এলাম। দেখলাম লিফ্ট এখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নীচে নেমে এলাম।

মনটা ভীষণ খারাপ লাগল, মিত্রা শেষ পর্যন্ত এখানে ফোন করল কেন ও এই হাউসের মালিক এইটা বোঝাতেই কি অমিতাভদাকে ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞাসা করলো না অন্য কোন অনুসন্ধিতসা। পায়ে পায়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম ভীষণ খিধে পেয়েছে, পেটে ছুঁচো ডন-বৈঠকি মারছে| হীরাঝিল রেস্তোরাতে ঢুকলাম , অফিসের পাশে বলে প্রায়ই এখানে আসা হয়, ওয়েটাররা সবাই চেনে জানে। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১টা বাজে, তনু বলেছিলো একবার ফোন করতে, ওয়েটার কাছে এসে দাঁড়াল, ( চলবে )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.