আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্যময় গ্রীক দেবতা ( Mythology )

ইতিহাস তো নির্মাণের বিষয়। প্রতি মুহুর্তে সে নির্মিত হয়। কখনো ব্যাক্তির দ্বারা, কখনো সমষ্টি আবার কখনো রাষ্ট্রের দ্বারা। গত তিনশো বছরে আমরা এই ইতিহাসের নির্মাণ ও ধ্বংস নিয়ে যা যা দেখে ফেললাম এবং এখনো যা যা দেখে চলেছি আমাদের এই উপমহাদেশে তা প্রতিদিন প্রতিমুহুর্তে আমাদের মনে পড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট যে এ সকলই নির্মাণ । মার্ক টোয়েন বলেন- “The very ink with which history is written is merely fluid prejudice.”পৃথিবীর প্রতিটি প্রাচীন মিথোলজির ক্ষেত্রে দেখা যায় যুদ্ধ দেবতাদের ছাঁচটা অনেকটা একই রকম।

শত্রুদমন, পররাজ্য দখল, সুরাসক্তি এবং নারী আসক্তিতে ভরপুর তাদের আখ্যান। গ্রীকরাই ভারতে সভ্যতা বলতে যা বোঝায় তার সূত্রপাত করেছিল। গ্রীকরা ভারতের কথা জেনেছে এশিয়া মাইনরের সূত্রে। জেনেছে পারসিক সাম্রাজ্যের সূত্রে। এক সময় বৃষ্টি, ফসল, খাদ্যের জন্য মানুষকে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে থাকতে হত।

স্বর্গের দেবতাদের কখন কৃপা হয়, তারা কখন করুনা করে কিছু সাহায্য দেবে তার অপেক্ষায় তাদের থাকতে হত। ভৌগোলিকভাবে হেডিসের রাজ্য পাতালপুরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আরিকন(The Acheron), লীথি(The Lethe), ককাইটাস(The Cocytus), ফ্লেগেথন(The Phlegethon), স্টিক্স (The Styx) নামের পাঁচটি নদী। এই পাঁচটি নদীকে পাঁচ নাম দেয়া হয়েছে। আরিকন হলো অশ্রু নদী (river of woe); লীথি হলো বিস্মৃতির নদী((river of forgetfulness); ফেগেথন অগ্নি নদী (river of fire); ককাইটাস বিলাপনদী (river of lamentation) এবং স্টিক্স হলো পবিত্র শপথের নদী (river of unbreakable oath by which the gods swear)। জিউস হল অলিম্পিয়াসের প্রধান দেবতা।

জানা যায় যে খ্রিস্টপুর্ব ২১০০ এর দিকে বলকান এলাকার মানুষেরা আবহাওয়ার দেবতা হিসেবে জিউসের পূজা করত। জিউস মুলত আকাশের দেবতা ও সে সুত্রে বৃষ্টিপাতের দেবতা। হোমারের ঈলিয়াডে জিউসকে তার বিরুদ্ধাচয়ারীদের দিকে বাজ মারতে দেখা যায়। সুতরাং ধারণা করা হয় জিউস বজ্রপাত ও আলো ও নিয়ন্ত্রন করত। জিউস নাম টা মূলত গ্রীক শব্দ Dios থেকে যার মুল অর্থ হল bright.অলিম্পাসের দেবতা জিউস এর আদেশে তৈরী করা হয় ''প্যান্ডোরা'' নামের এক নারীকে।

গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী তাকে পৃথিবীর প্রথম নারী বলা হয়ে থাকে। জিউস জানত যে জ্ঞান অর্জন করলে মানুষ স্বর্গের দেবতাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তাদের দোষত্রুটি নিয়ে ভাবতে শিখবে। তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে, সভ্যতা আর বিজ্ঞানের সুচনা করে শক্তিমান হয়ে উঠবে। হেলেন হচ্ছে জিউসের কন্যা । মিথের বর্ণনামতে তার মাতার নাম লেডা ।

কোন কোন বর্ণনায় তার মাতার নাম প্রতিশোধের দেবী নেমেসিস । প্রমিথিউস মানুষকে আর সব প্রাণি থেকে শ্রেষ্ঠতর করার জন্য তাদের সোজা হয়ে হাটতে শেখালেন এবং অন্যান্য জীব থেকে মানুষকে মহত্তর বলে ঘোষনা দিলেন। তিনি নিজে স্বর্গে যান এবং মানুষের জন্য সূর্যের কাছ থেকে মশাল জ্বালিয়ে আনেন এবং মানুষকে আগুন উপহার দেন। মানুষকে প্রমিথিউসের এই উপহার মেনে নিতে পারেননি দেবতা জিউস। একটি ঈগল রোজ এসে প্রমিথিউস এর কলিজা খেয়ে যেত আর সেখনে জন্ম নিত নতুন আরেকটি কলিজা।

আবার ঈগল এসে খেয়ে গেলে নতুন কলিজা জন্মাতো প্রমিথিউস এর। এভাবেই জিউস তাকে শাস্তি দিতেন। প্রমিথিউসরা ছিলেন তিন ভাই। তার এক ভাইয়ের নাম এটলাস। মানবতার মুক্তির জন্য স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে প্রমিথিউস।

এ মানবতাবাদী তৎপরতাকে রুখবার জন্য দেবরাজ জিউস তার চরম শাস্তির বিধান করে। প্রমিথিউসের এই মর্মান্তিক কাহিনী নিয়ে গ্রিক নাট্যকার ঈঙ্কিলাস তাঁর বিখ্যাত ট্রাজেডী প্রমিথিউস বাউন্ড রচনা করেন। আফ্রোদিতে গ্রীক সীমানা ছাড়িয়ে পুরা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া এক দেবী। হোমারের মতে আফ্রোদিতে হল জিউসের মেয়ে। গ্রীক ভষায় আফ্রোস শব্দের অর্থ ফেনীল ঢেউ।

এই ফেনা থকেই জন্ম হয় বলে তার নাম রাখা হয় আফ্রোদিতে। জিউস সবসময় ভয়ে থাকতেন এই বুঝি অলিম্পাসের দেবতারা নিজেদের মাঝে যুদ্ধে নেমে যায় আফ্রোদিতের জন্য। আফ্রোদিতে বিয়ে করেন দেবতা হেফেস্টাসকে। পরিশ্রমী হেফেস্টাসকে নিইয়ে সুখী ছিলেননা বা সন্তুষ্ট ছিলেন না আফ্রোদিতে। তাই তার সাথে প্রেম হয় অনেক দেবতা আর মানুষের।

হেফেস্টাস হল আফ্রোদিতের স্বামী । হেফেস্টাস অন্যান্য দেবতার চেয়ে আলাদা আর সে প্রচুর পরিশ্রমী ছিল। আফ্রোদিতেকে সন্তূষ্ট রাখার জন্য সে তার জন্য সবচেয়ে মুল্যবান সব পাথর আর মুক্তা-মনি দিয়ে অলংকার বানিয়ে দিত। রোমানদের কাছে তিনি ভেনাস নামে জনপ্রিয়। গ্রীক পুরাণের আরেক বিখ্যাত দেবতা এপোলো।

এপোলো হল জিউসের পুত্র। এপোলো গ্রীক পুরাণে আমার দৃষ্টিতে এক আশ্চর্য চরিত্র। বহু নারী আর দেবীর সাথে তার প্রণয় ছিল। গ্রীকেরা মনে করত বহুদূর পশ্চিমে, যেখানে আকাশ মাটিতে গিয়ে মিশেছে এবং শক্তিশালী মহাবীর এ্যাটলাস বা আতলান্তোস (এই মহাবীরের নামানুসারে আটলান্টিক মহাসাগরের নামকরণ করা হয়েছে) পৃথিবীর উপর অর্ধবৃত্তকার ছাদ স্বরূপ বিশাল মহাকাশ নিজের কাঁধের উপর ধরে রেখেছে, সেখানে সমুদ্রোপকূলের এক উদ্যানে স্বর্ণ আপেল ফলে। হারকিউলিস ঐ স্বর্ণ আপেলের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল।

দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সে অবশেষে সেখানে পৌঁছেছিল। এথিনা যুদ্ধ আর শিল্পকলার দেবী ছিল। জিউসের প্রথম স্ত্রী মেটিসের গর্ভে জন্ম এথিনার। জিউস যেমন তার পিতাকে হত্যা করেছিল তেমনি ভবিষ্যতবাণি ছিল জিউসের ব্যাপারে। ‘নিক্স’ নামের একটা পাখি, ফিনিক্স না, একটা সোনালী রঙের ডিমে তা দিচ্ছিলো।

একসময় ডিম ফোটার সময় হয়ে গ্যালো, ডিম ফুটে বের হলো এক দেবতা, ইরস। ইরস হচ্ছে প্রেমের দেবতা। মহান গ্রীক দার্শনিক প্লেটো ছিলেন সেই সব সীমিত সংখ্যক মানুষের একজন, যিনি ঈশ্বরের অকৃপণ করুণা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন- তার জন্ম হয়েছিল সম্ভান্ত ধনী পরিবারে। অপরূপ দেহ লাবণ্য না থাকলেও ছিলেন সুস্বাস্থের অধিকারী, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ, সক্রেটিসের মতো গুরুর শিষ্যত্ব লাভ করা, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান। গ্রীস ইউরোপের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ২৫,০০০ বর্গমাইল পর্যন্ত বিস্তৃত একটি দেশ।

গ্রীকরা হেলেন নামক একজন পূর্বপুরুষের বংশধর বলে, নিজেদের হেলেনিজ ও নিজেদের দেশকে হেলাস বলতো। পরবর্তীতে রোমানরা তাদের গ্রীস ও গ্রীক নামকরন করেন। প্রাচীনকালে গ্রীস একদেশ ছিল কিন্তু এক রাষ্ট্র ছিল না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.