আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মীয় লম্ফঝম্ফ এবং এদেশের মালালা ইউসুফজাই

মালালা ইউসুফজাই--- প্রথমেই তাকে স্যালুট; বর্বর একটি দেশের নিকৃষ্ট পশুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার জন্য। এই বর্বর, মূর্খ, পশুরা বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে চিরতরে থামিয়ে দিয়েছে, নিজদের বর্বরতাকে নিকৃষ্ট পশুর থেকেও উন্নত করেছে। ধর্মান্ধ পশুগুলোর বিরোধিতার জন্য পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে এবং মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ধর্মান্ধ পশুগুলি হত্যাকারীদের বিচারের বদলে বীরের মর্যাদা দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে তাঁদের সংবর্ধনা দিয়েছে। এই বর্বর দেশটিতে ধর্ষণ অভিযোগ প্রমাণের জন্য তিন জন সাক্ষীর প্রয়োজন হয়, তিন জন সাক্ষী যোগাড় না করতে পারলে ধর্ষণের অভিযোগকারীনির উপরে ধর্ষণের থেকেও ভয়াবহ নির্যাতন নেমে আসে।

এই বর্বর দেশটিকে খুব বেশি চিন্তা করতে চাই না কিন্তু যখন দেখি আমাদের এই দেশে ধর্মান্ধ মানুষগুলি যখন একি ধরনের কাজ করে এবং সমাজ, রাষ্ট্র যখন তার বিরুদ্ধে কিছু না বলে চুপচাপ থাকে তখন শঙ্কিত না হয়ে পারি না। এদেশে আজ বড় রাজনৈতিক দলগুলি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করে এমন দলগুলির সাথে জোট করছে। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ভোট পেতে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ বলে মানে এমন একটি রাজনৈতিক দলও নির্বাচনের আগে পীর, শায়খুল হাদিসদের সাথে জোট করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, ওলামা মাশায়েখ নামে অঙ্গ-সংগঠন সৃষ্টি করে।

এদেশে আজ মুফতি আমিনী আর চরমোনাই পীরদের জয় জয়কার। সরকার নারীনিতী কিংবা শিক্ষানীতি কিংবা বিবাহ আইন করতে চাইলে এইসব মুফতি সাহেব এবং পীর সাহেবদের গ্রিন সিগন্যালের প্রয়োজন পড়ে। দেশে আজ সংখ্যালঘু, ব্লাসফেমি নামক শব্দগুলির ব্যাপক প্রচলন। একটা দেশ কতখানি নির্বোধ হলে ধর্মের ভিত্তিতে দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলতে পারে। হিটলার ইহুদিদের গলায় আইডি কার্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিল; নিজের দেশের মানুষকে সংখ্যালঘু বলা হিটলারের থেকেও কম বর্বরতা নয়! আতঙ্কিত হয়ে উঠি যখন দেখি বছরের পর বছর যে সংস্কৃতির লালন পালন আমরা করছি তাকে যখন বিধর্মীদের সংস্কৃতি বলে যখন কেউ চিৎকার করে এবং সেই চিৎকারের সমর্থনে আরো হাজার হাজার শিক্ষিত ছেলেপেলে চিৎকার করে।

আতঙ্কিত হয়ে উঠি যখন দেখি আমার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ক্লাসে ধর্মীয় নোট ছড়ানো হয়, এবং বাকি সবাই সেটাকে ধর্মীয় ইস্যু বলে এড়িয়ে যায়। ধর্মের নামে যখন দেশে যখন ইউটিউব কিংবা ফেইসবুক বন্ধ থাকে তখন আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। যাহোক এখন সময়, একবার ভেবে দেখুন। আপনি কি চান? আপনার এই দেশ কোন বর্বর রাষ্ট্রে পরিণীত হউক?রামুর ঘটনা, মূর্তি পড়ানোর ঘটনা আপনার চোখের সামনেই ঘটছে। এভাবে যদি চলতে থাকবে তবে এদেশ একদিন পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান হয়ে যাবে।

তখন দেখা যাবে এদেশের কোন মেয়ে মালালা ইউসুফজাই এর মত খবরের শিরোনাম হচ্ছে। ধর্ম আমাদের বাপ দাদারাও পালন করেছে। তাদের ধর্মের অধিকার রক্ষার জন্য কোন মুফতি কিংবা পীরদের রাজনীতি করতে হয়নি, তাদের ধর্ম রক্ষার জন্য মিছিল মিটিং করতে হয়নি,তাদের ধর্ম রক্ষার জন্য রামুর মত ঘটনা ঘটাতে হয়নি, তাদের ধর্ম রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ধর্মীয় নোট বিলি করতে হয়নি। তাদের ধর্ম রক্ষার জন্য মন্দিরে আগুন দিতে হয়নি। তাই কিছু ধর্মান্ধের পাল্লায় পরে এতদিন ধরে চলে আসা অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করবেন না।

আর যদি মনে করেন এতদিন যা হয়েছে ভুল তবে এদেশেও একদিন তৈরি হবে পাকিস্তানের মত দোযখ, প্রস্তুতি নিতে থাকেন! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.