আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাকে সব বলি

জানার আগ্রহ মানুষের চিরন্তন, বই হলো তার বাহন, আইনের মৃত্যু আছে কিন্তু বইয়ের মৃত্যু নেই। মাইশা তার মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। ঢাকার একটি নামি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে সে। মা মাহফুজা শিরিনের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সব সময়েই বন্ধুত্বের। তার সারাদিনের ভালোলাগা, মন্দলাগা সবকিছুই শেয়ার করে মায়ের সঙ্গে।

সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে সে তার মাকেই বোঝে। মুদ্রার অন্য পিঠ : মাঝরাতে পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিংয়ে যাচ্ছিলেন মিসেস জোবাইদা। হঠাৎ খেয়াল করলেন তার বড় ছেলে রাইয়ানের ঘরে আলো জ্বলছে। রাইয়ান এবার ক্লাস এইটে পড়ছে। এত রাত পর্যন্ত জেগে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা নয়।

ব্যাপার কী দেখার জন্য তিনি ছেলের ঘরে উঁকি দিতে চাইলেন। কিন্তু তাও সম্ভব নয়। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। উদ্বিগ্ন হলেন মিসেস জোবাইদা। ছেলের নাম ধরে ডাকতেই রুমের ভেতরের বাতি বন্ধ হয়ে গেল।

ছেলে নিশ্চয়ই কম্পিউটারে গেইমস খেলছিল। ভাবেন মিসেস জোবাইদা। তাই বলে একা একা রুমের দরজা লাগিয়ে। ছেলে কখন এত বড় হয়ে গেল! বড় হয়ে গেলেই কি মাকে সব লুকাতে হয়। বুক চিরে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।

সেই সঙ্গে শঙ্কা ছেলে বিপথগামী হচ্ছে না তো। টিনএজারদের ক্ষেত্রে মুদ্রার অন্য পিঠের ঘটনাটিই যেন বারবার ফিরে আসে। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেলেই বাবা-মা থেকে ধীরে ধীরে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের যে নিজ নিজ জগৎ তারা তৈরি করে নেয়, সেখানে বাবা-মা’র অনুপ্রবেশ যেন ঠিক কাম্য নয়। আর এমনই মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে পড়ে সন্তান আর বাবা-মা’র সম্পর্কের ভেতরে তৈরি হয় জটিলতা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, একটা বয়সে ছেলেমেয়েদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। পরিবর্তন না হওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এ সময়ে বাবা-মা’র উচিত তার সন্তানের সঙ্গে যতখানি সম্ভব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা। কারণ এ সময়েই ছেলেমেয়েরা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলগুলো করে।

হাঁটি হাঁটি পা পা : একটি শিশু যখন পৃথিবী নামক গ্রহটাতে একেবারেই নতুন তখন তার সব দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মা-বাবা। এ অপরিচিত পৃথিবীটাকে তার চোখের সামনে ধীরে ধীরে করে তোলেন পরিচিত। তাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, কি না করেন তারা। আর সেই ছোট্ট অসহায় শিশুটিও বাবা-মা’র কোলে নিজেকে সঁপে দিয়েই যেন নিশ্চিন্ত। সন্তান কীসে ভালো থাকবে তার সার্বক্ষণিক প্রয়াস যুগ যুগ ধরে এই যেন বাবা-মা’র চিরন্তন রূপ।

বাবা-মায়ের সার্বক্ষণিক øেহ-মমতায় তাদের আদরের সন্তানটি যেন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়ে ওঠে। হঠাৎ কৈশোর : শিশুটি যখন কৈশোরে পা রাখে, পরিচিত হয় নতুন আরেক ভুবনের সঙ্গে। নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা, প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধু। আর এতকিছুর জোয়ারে সে হারিয়ে ফেলে মা-বাবার সঙ্গে সেই সরল বন্ধুত্বটাকে। সে ভাবে, আমি এখন অনেক বড় হয়েছি।

নিজে নিজেই তো অনেক কিছু করতে পারি। তবে কেন আমার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্তই বাবা-মা নেবে? সব কথা কেন মা-বাবাকে খুলে বলতে হবে? ‘কৈশোরকাল বা বয়ঃসন্ধিকাল হল সেই সময় যখন একটা শিশুর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। সে বেড়ে উঠছে, তাকে সঠিকভাবেই বাড়তে দেয়া উচিত। কোনভাবেই তাকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়। শিশুটি যা চাইছে, যা করছে তা যদি অন্যথা না হয় তবে বাবা-মা’র উচিত সেটা মেনে নেয়া।

তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সে না চাইতেই সবকিছু পেয়ে না যায়। তাহলে তার উচ্ছন্নে যাওয়ার আশংকাই প্রবল। ’ বলছিলেন টাঙ্গাইল কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমীন জেনি। ও বন্ধু আমার : শিশু বয়সে যে বন্ধুত্বটা হয় তা অনেকটা না বুঝেই। তবে কিশোর বয়সের বন্ধুত্ব হয় বেছে বেছে।

সবার মধ্যে যে অনেকটা নিজের মতন মানুষ তাকেই বন্ধু হিসেবে পেতে চায়। কিশোর বয়সটাতে মানুষ নিজের ভালোলাগার মূল্যায়ন করতে শেখে, দিতে শেখে অন্যের ভালোলাগার দাম। তাই স্কুলে কিংবা কলেজে খুব সহজেই কিছু বন্ধু হয়তো জুটে যায়, তবে বাস্তবিক অর্থে তারা কে কতখানি বন্ধু তার খোঁজ কে রাখে। হঠাৎ চেনাজানা, হঠাৎ ভালোলাগা, হঠাৎ বন্ধুত্ব। সেই সব বন্ধুর সঙ্গে আবার মনের সব কথা শেয়ার।

সব কিছুই চলে স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু যে মা-বাবা সেই ছোট্টটি থেকেই বন্ধু হয়ে পাশে পাশে আছে সব সময়, হঠাৎ কৈশোরে এসে তাদের যেন আর বন্ধু বলে মানা যায় না। যে কোন ঘটনা বা অভিজ্ঞতা বলা না বলার দোটানা, অনেক বিষয় তাদের কাছে গোপন করা কিংবা এড়িয়ে যাওয়াÑ ঘটতে থাকে এমন অনেক কিছুই। হাত বাড়িয়ে দাও বন্ধুতায় : মা-বাবা যেমন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে সারাক্ষণ তেমনি সুযোগ বুঝে তাদেরও একটু চমকে দেয়া যায়। তাদের জš§দিন কিংবা বিয়েবার্ষিকীতে একটু সারপ্রাইজ তো তোমার কাছ থেকে আশা করাই যায়।

জমানো খুচরা পয়সায় কিনে দিতে পারও তাদের কোন প্রিয় লেখকের বই। মা হয়তো রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে ভালোবাসেন, কিনে দিতে পার তার একটা সিডি। উপলক্ষ ছাড়াও এসব করতে পার। তার একটা সিডি। উপলক্ষ ছাড়াও এসব করতে পারো।

ভালোবাসা প্রকাশের জন্য উপলক্ষের দরকার হয় না। প্রকৃতির নিয়মে সব মানুষই বেড়ে ওঠে, বড় হয়। এই বেড়ে ওঠাটা হয় যেন মা-বাবার হাত ধরেই। আর মা-বাবাকে ভালোবাসো ভালোবাসার প্রতিদানে নয়, প্রয়োজনে। মাকে সব বলি মানসুরা সিদ্দিক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।