আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিতাসের পাড় কখনো ভাঙ্গে না

সবাই গবেষণা প্রস্তাবণা বা রিসার্স প্রোপোজাল জমা দিচ্ছে। আমিও জমা দিলাম কোনভাবে। প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলাম না কী নিয়ে গবেষণা করবো। আর প্রোপোজাল জমা দিতে গিয়ে মনে হলো কী কী বিষয় বাদ দেয়া যায়। এতো গবেষণার বিষয়! ক্লাসে দুইজন মেয়ে ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।

তাদের মধ্যে একজন পড়েছে আমাদের গ্রুপে। নাম হাজেরা বেগম। ওর গবেষণার বিষয়বস্তু হলো ‌'তিতাসের পাড় ভাঙা মানুষের জীবনচিত্র', নাহ্ বিষয়টা সাহিত্যিক টাইপের হয়ে গেলো। বোধ হয় এমন ছিলো: তিতাসের পাড়াভাঙ্গা মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা'। আমিও একটু উৎসাহি ছিলাম সত্যি তিতাসের পাড়ভাঙ্গা মানুষের জীবন কেমন! অদ্বৈত্যমল্ল বর্মণের সেই 'তিতাস একটি নদীর নাম' বইটির কথা বার বার মনে পড়তে লাগলো।

চতুর্থ বর্ষে আমাদের একটি কোর্স ছিলো রিসার্স মনোগ্রাফ। রিসার্স বুঝতে পারলেও মনোগ্রাফ মানে যে কী বুঝতে পারি নি অনেক দিন। কোন শিক্ষকও বিষয়টি নিয়ে বলেন নি কোন কিছু। তারা যে আমাদের কী বলেছেন কী পড়িয়েছেন মাঝে মাঝে ভাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা কত যে পানসে আর অর্থহীন কাজ তা আমি এঁদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

হাজেরা বেগমের সংক্ষিপ্ত নাম হাজু। চলাফেরা আর দেখতে যতটা স্মার্ট, হাজেরা বেগম নামটা মোটেই যায় না। হাজু পরিচয়ে কোন রকমে পুষিয়ে নিতো। হাজুকে দেখতে ভালই লাগে। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা হলেও চেহারার গঠন সুন্দর।

এবং এ বিষয়ে ও বেশ সচেতন বলেও মনে হয়। কথা বলার ধরণটা বেশ দৃষ্টি কাড়ে। এক ধরণের শিস দেয়া চাপা গলা। ছোট ছেলেমেয়েদের মতো হাত নেড়ে কথা বলা। ছোটাছুটি।

কথাবার্তায় আহ্লাদী আর আদুরী আদুরী ঢঙ। আমরা প্রোপোজাল জমা দেয়ার বেশ কিছু দিন পর আবার আমাদের গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ম্যাডামের সাথে বসলাম। ইতিমধ্যে যার যার গবেষণা এলাকা ঘুরে এসিছি। হাজু আজকেই তার গবেষণা এলাকা থেকে এসেছে। মানে বাড়ি থেকে বেড়ায়ে আসলো আর কি।

কেমন যেন উসখুস করছে। 'ম্যাডাম আমার গবেষণার বিষয় পরিবর্তন করতে হবে' হাজুর মধ্যের উৎকন্ঠা। সেই ফ্যাসফ্যাসে শিস দেয়া চাপা গলা। 'বলেন কি? এতো দিন পরে!' ম্যাডাম বিস্মিত। 'জ্বী' 'কী ব্যাপার' 'তিতাসের পাড় কখনো ভাঙ্গে না!' আমি বসেছিলাম পেছনের চেয়ারে স্বশব্দে হেসে উঠলাম।

দেখেন কত্তবড় গবেষক। হাজু তার গবেষণার বিষয় পরিবর্তন করে ফেললো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর কাজের খাতিরে অনেকবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছি। অদ্বৈত্যমল্ল বর্মণ, আল মাহমুদের তিতাসকে দেখতে দেখতে হাজুর কথাও মনে পড়তো। তিতাসের কখনো পাড় ভাঙে না।

সত্যি তিতাস একটি শান্ত নদী। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.