আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকা মহাদেশের প্রথম আমেরিকানরা ছিল বাঙালির আদি পূর্বপুরুষ

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ অস্ট্রালয়েড শিশু; বাঙালির নিকট আত্মীয়। বাঙালি জাতির সঙ্গে আমেরিকানদের যে একটি নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে, কিছুকাল হল প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষনায় সেটি আবিস্কৃত হয়েছে। তার মানে বাঙালির আদি পূর্বপুরুষ এবং প্রথম আমেরিকান (অর্থাৎ প্রথম যারা আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছেছিল) অভিন্ন।

তথ্যটি অত্যন্ত বিস্ময়কর। কেননা, বাঙালির কাছে আমেরিকার হল স্বপ্নরাজ্য এবং সেই স্বপ্নরাজ্যের সঙ্গে নিজেদের ক্ষীণ হলেও একটি সর্ম্পক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই আবিস্কার বাঙালির শিকড়ের সঙ্গে সর্ম্পকিত বলেই একই সঙ্গে এই নৃতাত্ত্বিক আবিস্কারটি অত্যন্ত রোমাঞ্চকরও। এই পোস্টে সেই রোমাঞ্চকর বিষয়টিই উপস্থাপন করছি ... মানব অভিপ্রয়াণ বা হিউম্যান মাইগ্রেশনের মানচিত্র । ‘আউট অভ আফ্রিকা’ তত্ত্ব অনুযায়ী আধুনিক মানুষ আফ্রিকায় উদ্ভূত এবং বিবর্তিত হয়ে এককালে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল।

জেনেটিক এবং জীবাশ্মের ওপর ভিত্তি করেই ‘আউট অভ আফ্রিকা’ তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী হোমো সাপিয়ান্স বা আধুনিক মানুষ আজ থেকে ২ থেকে ১.৫ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় বিবর্তিত হয়েছে; তারপর হোমো সাপিয়ান্সদেরই একটি দল আজ থেকে প্রায় ৬০,০০০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে লোহিত সাগর অতিক্রম করে বেড়িয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এই মাইগ্রেশন সম্ভবত ১২৫,০০০ বছর আগেই ঘটেছিল । অবশ্য এ রকম মনে করার কারণও আছে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে ওই সময়কার হোমো সাপিয়ান্সদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র যেমন অস্ত্রশস্ত্র, হাতিয়ার এসব পাওয়া গিয়েছে।

হোমো সাপিয়ান্সরা পরবর্তীতে তারই গোত্রের অন্যান্য প্রজাতি অর্থাৎ নিয়ানডার্থাল এবং হোমো ইরেক্টাসকে পরাভূত করে সারা বিশ্বের নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। অস্ট্রালয়েড তরুণি। এই মেয়েটির চেহারার সঙ্গে বাঙালির মিল থাকার যথাযথ নৃতাত্ত্বিক কারণ রয়েছে। এবার বাঙালির আদি পুর্বপুরুষ প্রসঙ্গে আসি। একটু আগেই বললাম যে আজ থেকে ৬০,০০০ বছরের আগে হোমো সাপিয়ান্সদের একটি দল আফ্রিকা থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল।

পরবর্তীকালে এদেরই বংশধররা (আজ থেকে ৫০,০০০ বছর আগে) প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষে পৌঁছেছিল । তার মানে প্রাচীন বাংলায় পৌঁছেছিল। কেননা, প্রাচীন বাংলার অবস্থান প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের পূর্বকোণে। ভারতবর্ষের মানচিত্র। প্রাচীন বাংলার অবস্থান ছিল এই ভূখন্ডের পূর্ব প্রান্তে।

আধুনিক মানুষ এরপর ভারতবর্ষ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে পৌঁছেছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। তাদের যাত্রপথে পড়েছিল বর্তমানকালের মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দ্বীপরাষ্ট্র। সুদীর্ঘকালের এই মাইগ্রেশনের সময় আধুনিক মানুষ বিশেষ নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। অর্থাৎ, আধুনিক মানুষের Morphological পরিবর্তন হয়েছিল। জীববিদ্যায় Morphology হল study of structure of organisms: the study of the form and structure of organisms. মোটকথা, যারা ভারতে এসেছিল এবং ভারত থেকে এরপর অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে গিয়েছিল তাদের চেহারা পূর্বপুরুষ আফ্রিকানদের থেকে অনেকখানি বদলে গিয়েছিল।

আফ্রিকান নারী। অস্ট্রালয়েড তরুণি এবং আফ্রিকান নারীর চেহারার পার্থক্য সহজেই বোঝা যায়। এই পার্থক্য ঘটেছিল মোটামুটি কুড়ি হাজার বছরে। প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষ থেকে যারা আজ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে পৌঁছেছিল তাদের বংশধরেরা আজও অস্ট্রেলিয়ায় বেঁচে আছে; যাদের আমরা Australian Aborigines কিংবা Indigenous Australians বলি। অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী বা Australian Aborigines ।

এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা এরা আমাদের জ্ঞাতিভাই। অস্ট্রিলিয়ার আদিবাসীদের চেহারা এবং জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীর চেহারা একই রকম। নৃবিজ্ঞানীরা এটি প্রমাণ করেছেন। এই কারণে প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠীর (যারা বাঙালির পূর্বপুরুষের ) নাম হল প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা আদি-অস্ত্রাল। এই প্রোটো-অস্ট্রালয়েড বা আদি-অস্ত্রালই বাঙালির পূর্বপুরুষ।

মঙ্গোলয়েড শিশু। রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অবধি মঙ্গোলয়েড চেহারার মানুষজন ছড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন বাংলায় এদেরই বলা হত কিরাত। বাঙালির দেহে কিরাত রক্তের মিশ্রণ ঘটেছে। উদাহরণ লোকসংগীত শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় ... আধুনিক মানুষের মুখের চেহারা আরেকটিবার বদলে গিয়েছিল।

এই বিষয়টির আলোচনার পাশাপাশি আমরা দেখব এশিয়া থেকে কারা, কখন আমেরিকা মহাদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমালো। হোমো সাপিয়ান্সরা আজ থেকে চল্লিশ হাজার বছর আগে পূর্ব এশিয়ায় অর্থাৎ কোরিয়া, জাপান এবং সাইবেরিয়ায় পৌঁছায় । উত্তর-পূর্ব এশিয়ার তীব্র শৈত্য প্রবাহ, কম সূর্যালোক, খাদ্যাভাস এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হোমো সাপিয়ান্স এক বিশেষ মরফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এই মরফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যকে ‘মঙ্গোলয়েড’ বলা হয় । এই মঙ্গোলয়েডরা ছিল যাযাবর শিকারী এবং খাদ্য সংগ্রহকারী।

অর্থাৎ, নৃতত্ত্বের পরিভাষায় যাদের বলা হয়: হান্টার- গেদারার। তারা তুষারে ঢাকা অরণ্যে বলগা হরিণ বা রেইনডিয়ার শিকার করত। অস্ট্রালয়েড মেয়ে। এই ছবিটিই বলে দেয় মঙ্গোলয়েডরা হাজার বছরে কীভাবে পারিপার্শ্বিক কারণে আমূল বদলে গিয়েছিল। প্রাচীন বাংলার মেয়েরা দেখতে অনেকটা এরকমই ছিল ... আজ থেকে দশ/পনেরো হাজার বছর আগের কথা।

যখন নাকি সাইবেরিয়ার যাযাবর মঙ্গোলয়েড জাতি বলগা হরিণের পিছন পিছন সাইবেরিয়ার একেবারে পূর্ব প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তারপর তারা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে উত্তর আমেরিকায় পা রাখে। বেরিং প্রণালী আজ থেকে দশ/এগারো হাজার বছর আগে জমাট বরফে ঢাকা ছিল। যার ফলে সেখানে একটি ‘ল্যান্ডব্রিজ’ তৈরি হয়েছিল। যে কারণে সাইবেরিয়ার যাযাবর মঙ্গোলয়েডরা বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে আমেরিকার আলাস্কায় পৌঁছতে পেরেছিল।

আজ থেকে দশ/এগারো হাজার বছর আগে বেরিং প্রণালীতে বরফ জমে ল্যান্ডব্রিজ বা স্থলসেতু তৈরি হয়েছিল। এজন্যই বলা হয়েছে: Most scholars believe that these ancient ancestors of modern Native Americans were hunter-gatherers who migrated to the Americas from northeastern Asia. সেই সব সাইবেরিয়ার যাযাবর মঙ্গোলয়েডরা আমেরিকা মহাদেশে কালক্রমে যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল সেই সংস্কতিটি ‘ক্লোভিস সংস্কৃতি’ নামে পরিচিত। নিউ মেক্সিকোর ক্লোভিস অঞ্চলে বর্শাফলকসহ অন্যান্য হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে। ক্লোভিস সংস্কৃতি, প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, ১১,৫০০ বছরের পুরোন। প্রথম আমেরিকান ।

যাদের অতিকায় ম্যামথ এর মোকাবেলা করতে হয়েছিল। এসব কারণেই এতকাল মনে করা হত যে সাইবেরিয়া থেকে বেরিং প্রণালী অতিক্রম করে ক্লোভিস জাতিই প্রথম আমেরিকা মহাদেশে গিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ অন্য রকম ভাবছেন। তার কারণও আছে। ১৯৭৫ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যানি লামিং ইম্পেরাইর ব্রাজিলের পূর্ব প্রান্তের লাপা ভেরমেলহা অঞ্চলের একটি শৈলগুহায় (রক সেল্টার) একটি খুলি আবিস্কার করেন।

তিনি খুলিটির নাম দেন ‘লাপা ভেরমেলহা ফোর হোমিনিড ওয়ান। ’ সে যাই হোক। প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যানি লামিং ইম্পেরাইর খুলির ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন নি। তার আগেই তিনি মারা যান। ব্রাজিলিও অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস।

ইনি প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যানি লামিং ইম্পেরাইর-এর অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। ব্রাজিলিও অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস লাপা ভেরমেলহায় পাওয়া খুলিটি বিশ্লেষন করেন। তার আগে তিনি খুলিটির নাম বদলে রাখলেন: ‘লুজিয়া’। তার কারণ হল: ১৯৭৪ সালে আফ্রিকার ইথিওপিয়ায় একটি কঙ্কালের ৫২টি হাড় আবিস্কৃত হয়েছিল। কঙ্কালটি একজন তরুণির।

মৃত্যুর সময় যার বয়স ছিল কুড়ি বছর । প্রত্নতাত্ত্বিকরা কঙ্কালটির নাম রাখেন:‘ লুসি’। লুসি থেকে অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস খুলির নাম রাখেন লুজিয়া। নাম লুজিয়া রাখার আরও একটি কারণ ছিল। তা হল ব্রাজিলের লাপা ভেরমেলহায় পাওয়া খুলিটিও একটি মেয়ের এবং মৃত্যুর সময় মেয়েটির বয়স ছিল কুড়ি! লুজিয়া।

লুজিয়া নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কেবল তাই না- লুজিয়া প্রত্নতাত্ত্বিকদের আগেকার সব হিসেব এলোমেলো করে দেয়। অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বলেন যে লুজিয়া আজ থেকে ১২,৫০০ বছর আগে বেঁচে ছিল। এই বিষয়টিই ঝড় তুলেছে। কারণ এতদিন মনে করা হত যে প্রথম আমেরিকানরা ছিল মঙ্গোলয়েড।

যারা ১১,৫০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক আমেরিকায় ক্লোভিস সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। তার মানে লুজিয়া আরও ১০০০ বছর প্রাচীন। অধ্যাপক ওয়াল্টার নেভেস এর গবেষনায় আরও প্রমাণ হয় ... লুজিয়া মঙ্গোলয়েড নয়- অস্ট্রালয়েড! অর্থাৎ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যারা ভারতবর্ষ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে পৌঁছে ছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে। সাইবেরিয় মঙ্গোলয়েডরা আমেরিকায় পৌঁছনোর আরও ১০০০ বছর আগেই লুজিয়ার পূর্বপুরুষ পূর্ব এশিয়া থেকে সাইবেরিয়া অতিক্রম করে আমেরিকায় এসেছিল এমন একটা সময়ে যখনও তারা মঙ্গোলয়েড বৈশিষ্ট্য অর্জন করেনি। তার মানে লুজিয়ার পূর্বপুরুষ ছিল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অস্ট্রালযেড।

আর এই অস্ট্রালয়েডই বাঙালির পূর্বপুরুষ ... উত্তর আমেরিকায় মাইগ্রেশন এর মানচিত্র। আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছবার সম্ভাব্য পথের মানচিত্র। অস্ট্রেলিয়ার গুহায় অস্ট্রেলয়েডদের আঁকা তিরিশ হাজার বছর পুরনো নৌকার ছবি। বর্তমান কালের গবেষকরা অস্ট্রেলয়েডদের নৌপথে আমেরিকা যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। ছবি।

ইন্টার নেট। স্বীকার করছি ... এই পোস্টটি লেখার সময় তথ্যের জন্য প্রধানত নির্ভর করেছি বিবিসি প্রচারিত এবং ডক্টর এলিস রবার্টস পরিচালিত পাঁচ পর্বের প্রামাণ্যচিত্র ‘ইক্রিডিবল হিউম্যান জার্নি’ থেকে। নীচে অন্যান্য তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হল। http://www.bradshawfoundation.com/journey/ http://en.wikipedia.org/wiki/Australoid_race Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Proto-Australoid http://www.crystalinks.com/clovis.html Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।