আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধু খাদ্যে নয়, ভেজাল সব ক্ষেত্রেই

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতিবাজদেরকে অপসারন করুন আসলে জিনিসটা একধরনের বিষ। কেউ বলেন একে ভেজাল। কেউ বলেন রাসায়নিক সন্ত্রাস, আবার কেউ বলেন খাদ্যে দূষণ। ভেজাল ছাড়া বাংলাদেশে কোনো কিছু পাওয়া যায়Ñ এখন সাধারণ নাগরিকেরা আর তা মনে করেন না। রাজনীতিতে ভেজাল, নিয়োগপত্রে ভেজাল, পদোন্নতিতে ভেজাল, রাষ্ট্র পরিচালনায় ভেজাল, সমাজজীবনে ভেজাল, পারিবারিক সম্পর্কে ভেজাল, শিক্ষাপদ্ধতিতে ভেজাল, ভালোবাসায় ভেজাল, বন্ধুত্বে ভেজাল, জ্ঞানীগুণীদের মধ্যেও ভেজাল।

সব কিছুতেই যখন ভেজাল তখন খাদ্যে ভেজাল থাকবেই। রোগ সারাবে যে ওষুধ সেই ওষুধেও ভেজাল। সুতরাং আমাদের পুরো শরীরটাই যেন ভেজাল। ভেজাল কথা শুনতে শুনতে, ভেজাল খেতে খেতে এখন শাস্ত্রীয় ন্যায়নীতির কথা যেমন ভালো লাগে না, তেমনি ভালো বা সুষম খাবার খেতেও ভালো লাগে না। ফাস্টফুডের দোকানে বা কাবাব হাউজে দৈনিক একবার যেতে না পারলে অনেকেরই মনে হয় সেই দিনটাই মাটি।

বাসাবাড়ির রান্না করা খাবার অনেকের ভালো লাগে না। অফিসগামী লোকদের বিরাট একটা অংশই দুপুরে বাধ্য হয়ে হোটেলমুখী। ফুটপাথের খাবার খান এমন মানুষের সংখ্যাও কম নন। এরা বিশেষভাবে ভেজালের শিকার। কেউ কেউ বলেন, বাসা থেকে অফিসে খাবার আনা একটা বড় যন্ত্রণা।

এক দিকে রাস্তায় ঠেলাঠেলি বাসে উঠতে কষ্ট, দীর্ঘক্ষণ যানজটের দুর্ভোগ। এসব জ্বালা-যন্ত্রণা ছাড়াও ঘরের গিন্নিকে কষ্ট দেয়াও আরেকটি যন্ত্রণা। এসব নানাবিধ কারণে সব ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েছে ভেজালের সাথে সখ্য স্থাপন করতে। গোটা জাতি যেখানে বহুরূপী ভেজালের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত সেখানে শুধু খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই যে ভেজালমুক্ত খাবার আমরা খেতে পারব, এটা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারবে না। ভেজাল অন্তর দিয়ে ভেজালমুক্ত খাবার আশা করা অবান্তর।

আমরা নিজেরা যখন ভালো হয়ে যাবো তখন দূষণীয় যত বিষাক্ত জিনিস আছে, তার সবই অন্তর থেকে পালাবে। যিনি ভেজালবিরোধী অভিযান চালাবেন তিনি যদি সৎ না হন তাহলে ওই ব্যক্তি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন। অন্য দিকে যদি সৎ হন, তাহলেও শঙ্কামুক্ত হওয়া যাবে না এ কারণে যে, ভেজালের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়েছে তিনি যদি দলীয় সরকারের হোমরা-চোমরা কেউ হন, তাহলে উল্টো ওই সৎ ব্যক্তিটিরই বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং ভেজাল থেকে রেহাই পাওয়া বর্তমানে সত্যি কঠিন একটা ব্যাপার। যারা দেশে বড় বড় ইমারত তৈরি করছেন, তারা বলেছেন, ইট সুরকি, সিমেন্ট, রড, বালু, অর্থাৎ ইমারত নির্মাণে যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয় তার ৫০ শতাংশই ভেজাল।

একটি ইমারতের আয়ুষ্কাল ন্যূনতম শত বছর হওয়ার কথা। কিন্তু বুয়েটের ইমারত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিল্ডিং নির্মাণের কোড ও নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ বাড়িঘর ও নির্মিত হয় কি না তাতেও সন্দেহ। অর্থাৎ ৫০ বছরের মধ্যেই ওই সব ইমারত ধসে যাবে বা ভেঙে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। আর যদি ৭ থেকে সাড়ে ৭ মাত্রায় ভূমিকম্প হয় তাহলে খোদ ঢাকা শহরে ৬০ শতাংশ বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং প্রাণ হারাবে লক্ষ মানুষ। এখন কথা হলো, এই বড় বড় অট্টালিকা যারা নির্মাণ করছেন তাদেরও অনেকে ভেজাল মিশ্রিত অর্থাৎ দূষিত অন্তরের মানুষ।

তাদের উদ্দেশ্য, স্বল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জন। মানুষ ভালো থাকল নাকি খারাপ থাকল, সেটা তাদের ভাবার বিষয় নয়। যারা নিজেকে নির্ভেজাল বলে দাবি করে তাদের কথা কতটা সত্য? আজকাল মিথ্যা কথাকে সত্যিরূপে প্রচার করার জন্য ভেজাল মিশ্রিত করা হয়। মনটাকে আগে শুদ্ধ করতে হবে যদি ভেজাল থেকে সত্যিকার অর্থে আমরা মুক্তি পেতে চাই। ১১ আগস্টে একটি জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম ভেজাল খাদ্য খেয়ে পুরো দেশটাই রোগীর দেশ হয়ে যাচ্ছে।

১০ আগস্ট বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র সেমিনারে বক্তারা এর ওপর দীর্ঘক্ষণ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেছেনÑ ভেজাল প্রতিরোধে এখনই বৃহত্তর আকারে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ রকম বক্তব্য প্রায় সময়েই পাতা ভরে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু ভেজাল অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়েই চলেছে। দেশের কোনো সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে না যত দিন পর্যন্ত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত না হবে।

স্বয়ং আল্লাহপাক তার পবিত্র ধর্ম গ্রন্থে বহু সূরায় একই কথা বার বার বলেছেন, পৃথিবীতে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটছে সবকিছুই মানুষের হাতের কামাইÑ অর্থাৎ কর্মের ফল। ইংরেজিতে যাকে বলা হয়As you so, so you reap AsAsAAAs you so, so youAs you so, so you reap reap you so reap যেমন কর্ম তেমন ফল। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে সব কিছু পাল্টে যাবে। মানুষের পরিবর্তন না হলে কোনো কিছুর পরিবর্তন ঘটবে না। ডাক্তার রোগীদের বলে থাকেন।

ফলমূল শাকসবজি বেশি খাবেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে ভেজালবিরোধী যে ঝটিকা অভিযান হয় সেখানে দেখা গেছে, প্রায় সব ফলেই এখন নিয়মিত ফরমালিন ও কার্বাইড অথবা অন্য কোনো রাসায়নিক ¯েপ্র করা হয়। একটি ইংরেজি দৈনিকে লিখেছেÑ The another name of Lariste is cancer. There is no answer of cancer. প্রতিদিন মানুষ এই ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মরছে। সুদূর আমেরিকায় গিয়েও নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বাঁচতে পারেননি। ‘কুইনাইনে রোগ সারাবে বটে কিন্তু কুইনান সারাবে কে।

’ আমাদের অবস্থাটা সে রকমই। বাংলাদেশে ফলের মাস জ্যৈষ্ঠ ছাড়াও বৈশাখ থেকে আষাঢ়-শ্রাবণ পর্যন্ত ফল মূল পাওয়া যায় বেশি। আবার কলা পাওয়া যায় সারা বছর। এসব ফলে দীর্ঘদিন ধরে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। জমির ফসল রক্ষা করার কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে ফলে।

যে রাসায়নিক দ্রব্য জমিতে ছিটালে পোকামাকড় নিধন হয় তা যদি খাদ্যদ্রব্য ও ফলফলাদিতে মেশানো হয় তাহলে আমরাও তো নিধন হবো। কীটপতঙ্গের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম আছে বলেই তারা তাৎক্ষণিক মৃত্যুবরণ করে আর মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বলেই রোগ নিয়ে কিছু দিন বেঁচে থাকে বটে। কিন্তু এক সময় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তাকেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। কিছু দিন বেঁচে থাকা বাবদ ডাক্তারকে দিতে হয় লাখ টাকা। বিষাক্ত খাদ্য খেয়ে মুমূর্ষু রোগীর মতো আমাদের বেঁচে থাকতে হবে কেন? যে খাদ্য খেয়ে মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে, একজন মানুষের বিবেকে কতটা পচন ধরলে সেই খাদ্যে বিষ নামক রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করতে পারে।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে কি গাছে ফল ধরত নাÑ মানুষ সেই ফল খেতো না? খেতো, কিন্তু আজকের মতো সেই ফল বিষাক্ত ছিল না। কারণ সে সময়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ এতটা নিম্নগামী ছিল না। তখন মানুষ ভাবত, মানুষ মানুষেরই জন্য। অকল্যাণ চিন্তাটা আজকের মতো এতটা ব্যাপক ছিল না। অধিক মুনাফা-তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার বাসনায় বিবেকহীন ব্যবসায়ীরা আজ বিষাক্ত কেমিক্যাল খাদ্যদ্রব্যে মেশাচ্ছে।

অসুস্থ রোগীতে পরিণত করছে গোটা জাতিকে। এর মতো বড় পাপ আর কী হতে পারে? খাদ্যে বিষ মেশানো যেমন বড় পাপ, তদ্রƒপ কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বা বহির্বিশ্বে মূল্য বেড়েছে এই ধুয়া তুলে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষের যারা পকেট কাটে, তারাও একেক জন বড় অপরাধী। এই দুনিয়ায় অর্থের বিনিময়ে পার পেয়ে গেলেও আখেরাতের শেষ বিচারের দিনে তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করা হবে। সেই আদালতে জামিন পাওয়া যাবে না। বিষ দিয়ে মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি জাহান্নামÑ যেখানে কোনো মৃত্যু নেই; আছে শুধু মৃত্যুযন্ত্রণা।

আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। পচন ধরা এই বিবেকটাকে পরিশুদ্ধ করি। ॥ হারুন-অর-রশিদ ॥ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.