১.
হঠাৎ গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি এল সুজনের নামে। সে তড়িঘড়ি করে রাওনা হল বাড়ির উদ্দেশ্য । তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার অদূরে মুন্সিগন্জ জেলার এক মফস্বল শহরে। বাড়ি পৌছতে তার অনেক রাত হয়ে গেল। সুজন তার বাড়ির দরজায় করাঘাত করলো।
তার মা সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো। সুজন তার মাকে সালাম করে ঘরে প্রবেশ করল। সুজনকে তার হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে খাবার খেতে আসতে বলল। সুজন খাবার খেতে খেতে জিঙ্গাসা করল, মা কি এমন সমস্যা জুরুরি তলব করলে? তার মা বলল: কালকে সকালে বলবো। এখন ঘুমাতে যা।
অনেক রাত হয়েছে। সুজন খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে গেল। খুব ভোরে তার মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করতে বসল। আজকে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করছে সুজনের মা।
সুজনের মা বলল, দেখ আমি এখন বুড়ো হয়ে গেছি । আর সংসারের গানি টানতে পারছি না। তোর ও বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে । আমি চাই তুই এই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করবি। আমি মেয়ে দেখে রেখেছি।
উত্তর পাড়ার মেয়ে রিমা। মেয়ে শিক্ষিত। না বললে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। আমি আর পারছি না । এই বলে কাদতে শুরু করলো।
সুজন তার মায়ের দিকে চেয়ে বলল, মা তুমি কাদছো কেন? আমি না বলেছি নাকি? তুমি যায় বল তাই হবে। এর এক সপ্তাহ পর রিমা আর সুজনের বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর ১৫ দিন চোখের পলকে কেটে গেল। একদিন ডাকপিয়ন এসে সুজনকে চিঠি দিয়ে গেল। চিঠি পড়ে সুজনের মাথায় ভাজ পড়লো।
সুজন রিমা ও তার মা ঢাকায় যাচ্ছি বলে বের হয়ে গেল। তারপর এক সপ্তাহ কেটে গেল। তারপর খবর এল, ভাষা আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে সুজন নিহত। সুজনের মৃত দেহ লাশের গাড়িতে করে তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হল। তাকে তার বাবার পাশেই তাকে শায়িত করা হল।
এটি ১৯৫২ সালের ঘটনা।
২.
এরপর রিমা আর বিয়ে না করে তার স্বামীর ঘরকেই আকড়ে থাকল। প্রায় ৯ মাস পর সে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দিল। ছেলের নাম দিল ‘ভাষা’। রিমার ইচ্ছা ছেলেকে লেখা পড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবে ।
ভাষা হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পদার্পন করলো। কলেজে ভাল মার্ক নিয়ে ইন্টার পাশ করল। এবার তার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া । লেখা পড়া শেষ করে ঢাকাতে থাকতে লাগল। একদিন বাসায় ফেরার পথে দুটি রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হল ভাষা।
তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হল। এর একদিন পরই মৃত্যু তাকে হারিয়ে দিল। তাকেও গ্রামের বাড়িতে তার বাবার খবরের পাশে শায়িত করা হল। রিমাকে তার স্বামী ও ছেলের কবর দেখতে হল।
বি: দ্র: দুটি মৃত্যুই ঢাকাতে ।
অথচ, কতটুকু দুরত্ব? একটি মৃত্যুকে জাতি মনে রাখবে চিরদিন । আর দ্বিতীয় মৃত্যুটি প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে চিরজীবন। প্রথম মৃত্যুটি জাতি সম্মান করবে সারা জীবন আর দ্বিতীয় মৃত্যুটি রাজনৈতিক ঘটনা বলবে আজীবন। জানি না কতশত ভাষা আর মুক্তি যোদ্ধা, সুন্দর স্বপ্নদেখা তরুন চলে যায় অকালে। “ভাষা”র মৃত্যুর দায় কে নেবে এর দায় ভার আপনাদের হাতে কিন্তু আমি এতটুকু বলতে পারি ভ্যবিষ্যত প্রজন্ম কোনদিনও ক্ষমা করবে না এই প্রজন্ম কে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।