পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর (রি-পাওয়ারিং) দরপত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২১০ মেগাওয়াটের ঘোড়াশাল-৩ নম্বর ইউনিটটির ক্ষমতা ৪১৬ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যে এ দরপত্র ডাকা হয়।
সরকারের রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের প্রথম উদ্যোগ এটি। এ প্রকল্পের লক্ষ্য জ্বালানির ব্যবহার সীমিত পরিমাণ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা।
সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দফায় দরপত্রে একটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও তা বাতিল করা হয়।
পুনঃ দরপত্রেও একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান (সুইজারল্যান্ডের অ্যালস্টম ও চীনের সিএমসির কনসোর্টিয়াম) অংশ নেয়। সেটিকেই কারিগরি ও আর্থিক দিক দিয়ে যোগ্য বিবেচনা করে কাজ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে।
কিন্তু একাধিক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করলেও তা বাড়ানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করায় তা প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য কিছু সময় বাড়াতে আইনগত বাধা ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. আবদুহু রুহুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পুনঃ দরপত্রের ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব হলেও সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী তা গ্রহণযোগ্য। সময় বাড়ালে প্রকল্প বাস্তবায়ন আরও বিলম্বিত হতো।
সূত্রগুলো জানায়, রি-পাওয়ারিংয়ের কাজটি হবে ঠিকাদারের অর্থায়নে। ঘোড়াশাল-৩-এর জন্য ঠিকাদারের প্রস্তাবিত দর প্রায় দুই হাজার ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করেছে।
ঠিকাদার এ সমুদয় টাকা এইচএসবিসি ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে। এ ঋণ শোধ করার জন্য সরকার ১৩ বছর সময় পাবে। এ সময়ে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে প্রায় তিন হাজার ৪৯ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৩৬৬ কোটি টাকার অপশনাল প্রাইসের প্রস্তাব করেছিল। এটি লাগবে কি না তা কাজ শুরু হওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়।
তবে সরকার এটা অনুমোদন করেনি। কিন্তু এটা যে লাগতে পারে তা ধরে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠিকাদারের প্রস্তাব অনুযায়ী রি-পাওয়ারিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ইউনিট প্রতি (এক কিলোওয়াট ঘণ্টা) ব্যয় হবে প্রায় ৬২৪ মার্কিন ডলার। এ ব্যয়ের হিসাব ‘অপশনাল প্রাইস’ ছাড়া।
এ ক্ষেত্রে ‘অপশনাল প্রাইস’ দরকার হলে ব্যয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ইউনিট প্রতি ব্যয় হয় ৬৫০ ডলারের মতো।
রি-পাওয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ঠিকাদার বিদ্যমান ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ইউনিটটির যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে, সেগুলোর জন্য দুই বছরের নিশ্চয়তা দেবে না। এর কোনো যন্ত্রপাতি বিকল হলে তা সরকারের নিজস্ব অর্থে কিনতে হবে। অথচ ১৯৮৬ সালে স্থাপিত এই ইউনিটটি এখনো ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম।
তৃতীয় ইউনিটটির রোটর (টারবাইন ঘোরানোর যন্ত্র) মেরামত করা দরকার হলে তা ঠিকাদার কোম্পানির ওয়ার্কশপে নেওয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক ও কর পরিশোধ করবে সরকার। ফলে ব্যয় আরও বাড়বে। তা ছাড়া মেরামতে নেওয়া ও আনার জন্য যে সময় ব্যয় হবে, তা যোগ করে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়াতে হবে।
ঠিকাদারের প্রস্তাবিত বয়লার দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোনো প্রকল্পে দুই বছর সন্তোষজনকভাবে ব্যবহূত হয়নি।
ট্রান্সফরমার ও অন্য কিছু যন্ত্র সরবরাহের জন্য ঠিকাদার দরপত্রে প্রস্তাবিত প্রস্তুতকারকের পরিবর্তে অন্য কোম্পানির সনদ জমা দিয়েছে। এসব কারণে ওই দরপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা।
জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি ব্যয় হবে ৭০০ ডলারের বেশি। ঘোড়াশাল-৩ ইউনিটের বিদ্যমান রোটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঠিকাদার ব্যবহার করবে। কিন্তু ভবিষ্যতে ঠিকাদার বলতে পারবে না যে, ওই সব যন্ত্রপাতির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে ঠিকাদারের অতিথি হয়ে নেদারল্যান্ডস সফরে যাচ্ছে উচ্চপর্যায়ের একটি সরকারি প্রতিনিধিদল। অথচ নেদারল্যান্ডসে রি-পাওয়ারিং করা কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। তাই সেখানে তেমন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখার কোনো সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।