আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে আমি 'ছাগলমার্কা আস্তিক' দের ঘৃণা করি............।

তরল মৃত্যু পান করে সক্রেটিস যে'দিন অমর হলেন, সে'দিন থেকে আমি দার্শনিক ! আমার বন্ধু রাজীব। শুধুই রাজীব, আগে পাশে কিছু নেই । বছর দুয়েক আগে সে ঢাকায় এল পড়ালেখা করতে । হোটেল ম্যনেজম্যান্ট বিষয়ে ভর্তি হল একটা কলেজে। শুধু কলেজে ভর্তই হলেইতো হয় না, থাকার জন্য একটা জায়গাও চাই।

ওর ভাগ্যটা ভালই , কলেজের পাশেই একটা মেস পেয়ে গেল । মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলেই সেদিন উঠে পড়ল মেসে । রাজীব ঠিক গ্রামের ছেলে নয়। বান্দরবান শহরের ছেলে । শহরের একেবারে ভোদাই প্রকৃতির ছেলেও সে নয় ।

বান্দরবানে সে কবিতা আবৃত্তি করত ,নাটকের দল করত। বলা যায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল সে । শোনা যায় একটা বাম দলের সাথেও হালকা যোগাযোগ ছিল। সুতরাং , ঢাকা শরে এসে কালচারাল শক খাবার মত ছেলে সে নয় । কিন্তু সে শক খেল ।

মেসে ওঠার দুইদিন পরের কথা। রাতেরবেলা। তার পরদিন শুক্রবার । তাই মেসের সবার ক্লাস , অফিস সব বন্ধ। তাই সবাই মিলে উঁচু ভলিউমে শিলার জওয়ানি শুনছে,দেখছে আর চাটছে মনশ্চক্ষে ।

একদিকে বসেছে তাসের আসর। মেসের সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে দূরত্বটা প্রকট নয় । তাই এক জুনিয়র সদস্য মিন মিন করে বল্ল- তার পেনড্রাইভে লুকানো ক্যমেরায় তোলা লেটেস্ট একটা বাংলাদেশী মডেলের ........। এক বড়ভাই সদ্য কেনা ভ্যাট ৬৯ এর বোতলটার ছিপি খুলতে খুলতে চোখটিপে অনুমোদন করল তার প্রস্তাব । এমন হইচই পরিবেশে মেসের একজন যেন নেই- রাজীব।

তাকেও ডাকা হল । এইধরণের পরিবেশে রাজীবের ঠিক অভ্যস্ততা নেই। তবু, যস্মিন দেশে যদাচার । বসে পড়ল সে, যোগ দিল আড্ডায় । বড়ভাই তাকে অফার করল ৬৯।

কৌতুহলে দুয়েকবার সে বাংলা দোচোয়ানি কিংবা আরো দু'চারটে ড্রিংসের স্বাদ নিয়েছে, কিন্তু জিনিসটা তার ঠিক পছন্দ নয়। তাই ফিরিয়ে দেয় অফারটা। ততেই তার খ্যতপনা আর সম্ভাব্য সেকেলে ধর্মভিরুতা নিয়ে বেশ একটা হাসির শোরগোল উঠে । রাজীবও হেসে বিদায় নেয়। পরদিন রাজীবের ঘুম ভাঙে একটু বেলা করে।

আসর ক্লান্ত ঘুম শেষে অন্যরাও উঠতে শুরু করেছে। বাথরুমের সামনে ভিড়, সবাই গোসলসেরে জুমার নামাজ পড়তে যাবে। সপ্তাহে অন্তত এই দিনটা নামাজ না পড়লেই নয়। রাজীব নাস্তা সেরে টিভিটা ছেড়ে দেয় খবর দেখবে বলে। বাইরে তখন যহুম বৃষ্টি।

সবাই ততক্ষণে পা্য়জামা-পান্জাবী পরে রেডী, শার্ট প্যান্ট পরে ঠিক জজবা আসে না। ৬৯ এর বোতল খোলা বড়ভাই আতর মাখতে মাখতে চলে আসে রাজীবের রূমে। 'কী রাজীব ভাই, নামজ পড়তে যাবেন না' 'আপনারা যান' রাজীব বলে । 'কেন যাবেন না' বড়ভাইয়ের বোধহয় একটু দাদাগিরির শখ হয়। 'আমি নামাজ পড়ি না' রাজীবের সরল উত্তর ।

'মানে?'বড়ভাই'র যেন একটু খটকা লাগে 'আপনার পুরা নামটা একটু বলেনতো' 'রাজীব' 'আরে ভাই আগে পিছে কী আসে সেইটা বলেন' ক্ষেপে উঠে বড়ভাই। 'বল্লামতো রাজীব' রাজীবের অসহিঞ্চু গলা । ততক্ষণে মেসের সবাই জড়ো হয়েছে নাটক দেখার জন্য। বড়ভাই এইবার চেঁচিয়ে উঠে সবার সামনে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে থাকে 'আমাগো মেসে একটা ডান্ডির পোলা কেমনে উইঠা পড়ল? তোরা কেউ খেয়াল করস নাই? ম্যানেজার কই? এই ডান্ডির পোলারে অক্ষণি বাইর কইরা দেওন লাগবো।

এই শালা পরিচয় গোপন কইরা মেসে উঠসে ' রাজীব মাথা নিচু করে বসে থাকে । আসলে সে পরিচয় গোপন করে মেসে উঠেনি। আসল ব্যাপার হচ্ছে, তাকেতো কেউ ধর্ম জিজ্ঞেস করেনি । সেও ভাবেনি এইরকম কোনো নিয়ম আছে যে মুসলমানের মেসে হিন্দুরা উঠতে পারবে না। আর সে অবশ্য ঠিক হিন্দুও নয়।

তার পুরো নাম রাজীব চক্রবর্তী। তার বাবা বান্দরবানের হিন্দু মন্দিরের প্রধাণ পুরোহিত- সবই সত্যি। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসে সে হিন্দু নয়, আজ্ঞেয়বাদী। সে যেমন নামাজ পড়ে না, তেমন পূঁজোও করে না । নামের ধর্মিয় অংশটা তাই ছেঁটে নিয়েছে।

ইশ্বর আছেন কী নেই এইব্যপারে সে নি:সন্দেহ নয়। তার টেবিলে পড়ে আছে হাবিবুর রহমানের কোরানের বংগানুবাদ, বাইবেল সোসাইটির পাঠানো একটা বাংলা বাইবেল । এখন ঈশ্বরের স্বরূপ সন্ধাণ করছে রাজীব। তখনো বড়ভাই চেঁচিয়ে যাচ্ছে 'অই , এই মালোয়ানের বাচ্চার গাট্টি-বোঁচকা সব বাইর কর। আইজকা এই মেসে মিলাদ পড়ানো লাগবো।

ঘরটা অপবিত্র হইয়া গেসে'' সবাই বড়ভাইয়ের আদেশ পালন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নামজের ওয়াক্ত অবশ্য চলে যাচ্ছে । তা যাক , ঘর পবিত্র করা মহা জরূরী । বড়ভাই সবাইকে ডিরেকশন দিতে ব্যাস্ত । তাঁর চোখ লাল - ধর্মীয় জোশে নাকি গতরাতের অ্যালকোহলের প্রভাবে তা ঠিক বুঝা যায় না।

(বি: দ্র:- এইটি একটি সত্য ঘটনা । আমি ব্যাক্তিগতভাবে আস্তিক। সবদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজ আমার পড়া হয়না,নিজেকে খুব মডারেট মুসলিম বলেও আমি দাবী করিনা। কিন্তু একই ঘরে অন্য ধর্মের লোককে আশ্রয় না দে্যার মত 'ছাগলমার্কা আস্তিকতা' বা অন্ধ আস্তিকতা আমি ঘৃণা করি। আমাদের মহানবী(স কাবাঘরেও বিধর্মীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে শুনেছি ।

সেখানে 'ছাগলমার্কা আস্তিক'দের বাড়াবাড়ি আমি ক্ষমা করতে পারি না। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.