ইস্পাত ব্যবসায়ী নওয়াজ এবার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইমরান খানের তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। রয়টার্স বলছে, নির্বাচনের আগে ইমরানের জনপ্রিয়তা এত প্রবল হয়ে উঠছিল যে, একসময় মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি মুসলিম লিগ ও পিপলস পার্টির আধিপত্য আর থাকছে না। কিন্তু নির্বাচনের ফল থেকে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানে বেসামরিক সরকার গঠনের ক্ষেত্রে মুসলিম লিগ ও পিপলস পার্টির মধ্যে হাতবদলের যে প্রথা, তা এবারও বজায় থাকল। তবে ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জয়লাভ করে অনেক দিনের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছে।
যে কারণে জয়
নওয়াজ শরিফ ও মুসলিম লীগের জয় অনেকটা বিস্ময়কর।
এর আগে নওয়াজ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর শাসনামলেও দেশটিতে দুর্নীতি, কালোবাজারি ও খুনোখুনি কমেনি, বরং বেড়েছিল। তাই নিন্দা ছিল নওয়াজের সাথি। প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান বিভিন্ন জনসভায় এবং সাক্ষাত্কারে নওয়াজের নিন্দা করেছেন। বেনজির, জারদারি ও নওয়াজকে ইমরান প্রায় জনশত্রু হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন।
তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ, জারদারিসহ তাঁদের দলের সব নেতার বিচার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু এর পরও নওয়াজের জয় ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়।
রয়টার্স বলছে, ধৈর্যই নওয়াজের জয়ের মূল কারণ। ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ক্ষমতায় ফিরতে তিনি উদগ্রীব ছিলেন, এমনটি দেখা যায়নি। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে পিপলস পার্টির সরকারকে তিনি বিব্রত করেননি, বরং বিপদে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এ ছাড়া তাঁর সতর্ক আচরণও অনেককে মুগ্ধ করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় নওয়াজ বড় বেশি অস্থির ছিলেন। হুটহাট করে এমন কাজ করেছিলেন, যাতে সরকার বিপদে পড়েছিল। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে রেষারেষির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নওয়াজ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরিল আলমেইদা রয়টার্সকে বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় যেমন দমনমূলক ছিলেন, তেমন আর নেই।
এখন তিনি (নওয়াজ) পুরোপুরি ভিন্ন ব্যক্তি। পাকিস্তানে একটি আলোড়ন তৈরির জন্য যা প্রয়োজন, তিনি সঠিকভাবে তা করতে পারবেন। ’
নওয়াজের দায়িত্ব
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই কোনো একটি সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করেছে এবং এখন আরেকটি রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে। তবে এ নির্বাচন অনেককে হতাশ করেছে।
ধারণা করা হচ্ছিল, পাকিস্তানে কুশাসন ও দুর্নীতির মূল উত্স যে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি, এবার সেটির অবসান ঘটবে। কিন্তু মুসলিম লীগের জয়ে জনগণের কাঁধে পুরোনো জোয়াল নতুন করে জেঁকে বসল।
৬৩ বছর বয়সী নওয়াজের জয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। পাঞ্জাবে জনপ্রিয়তা অর্জন মানেই পাকিস্তানের শাসক শ্রেণীর মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করা।
ফলে তা নওয়াজকে সরকার পরিচালনায় বিশেষ সুবিধা দেবে।
তবে নওয়াজকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের দিকে। দেশটির পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা কৌশল সেনা কর্মকর্তারাই নির্ধারণ করে দেন। তাই তাঁদের নিয়ন্ত্রণের ওপর নওয়াজের সাফল্য অনেকখানি নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তা-ও নতুন করে ভাবতে হবে নওয়াজকে।
তবে নওয়াজ মনে করেন, মুসলমান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইয়ে পাকিস্তানের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা উচিত। নওয়াজ তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর পক্ষপাতী।
নওয়াজ শরিফ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী। বেসরকারীকরণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপরে সরকারি খবরদারি কমানো তাঁর অন্যতম নির্বাচনী এজেন্ডা। তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত, তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার পর।
যে কারণে ইমরানের হার
ইমরানের সমর্থকদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ ও শহুরে জনগণ। শহুরে তরুণদের মাঝে সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে ইমরানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও, পুরো দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর নিজের বা দলের প্রভাব এখনো খুব জোরালো নয়।
রাজনীতিতে নামার পর থেকেই ইমরান দুর্নীতি ও মার্কিন ড্রোন হামলার ঘোরতর বিরোধী। তিনি মনে করেন, মার্কিন হামলার কারণে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে। এটা দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত।
হয়তো ইমরানের মার্কিনবিরোধী ভূমিকার জন্যই শহুরে পাকিস্তানিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।