মনের চেয়ে বড় মসজিদ, মন্দির নেই
একজন জনপ্রিয় চিত্রশিল্পী হাশেম খান। পাশাপাশি প্রচ্ছদ শিল্পী, বইয়ের নকশাকার, পোস্টার ডিজাইনার, শিশু সংগঠক এবং লেখক। ১৯৬৩ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান গ্রন্থ অলংকরণের প্রধান শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ ১৯৭৯ উপলক্ষে জাপানে শিশু পুস্তক শিল্পীদের সম্মেলনে, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৯ সালে টোকিও, চেকেস্লোভাকিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় নাট্যশালা এবং জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের বাস্তবায়নের স্টিয়ারিং কমিটির (৩ সদস্যের) বিশেষজ্ঞ সদস্য। চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য তিনি ১৬ বার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃক পুরস্কৃত হন এবং ৩ বার অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৭ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন।
তিনি কচি-কাঁচার মেলা, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও নগর জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিখ্যাত এই ব্যক্তির প্রথম উপার্জনের অনুভূতি সম্পর্কে আজ কথা বলেছেন। সাথে ছিলেন মরিয়ম সেঁজুতি
কবে, কখন প্রথম টাকা উপার্জন করেছেন?
এখন হয়তো অনেকেই আমার প্রথম উপার্জনের কথা শুনলে অবাক হবে। আবার ঠাট্টাও করবে। ১৯৫৭ সালে যুক্ত হই শিশু-কিশোর সংগঠন কচিকাঁচার আসর গড়ায়।
জীবনের প্রথম উপার্জন আসে এখানে কাজ করেই, রোকনুজ্জামান দাদাভাইয়ের হাত ধরে। তখন ইত্তেফাকের দুটি গল্পের ইলাস্ট্রেশন ও একটি লেখা বাবদ বিল তুলেছিলাম বারো টাকা। যদিও সে সময় ১ টাকা দিয়ে ১ কেজি রসগোল্লা, ১২ আনায় ১ কেজি গরুর মাংস এবং ১ টাকায় কেজি খাসির মাংশ পাওয়া যেত।
প্রথম উপার্জিত টাকা দিয়ে কী করেছিলেন?
ঢাকায় আমার ফুফাত বোন রুমেন্নেছার বাসায় আমি থাকতাম। সে বুবু আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো।
টাকা হাতে পেয়ে সাথে সাথে দুই কেজি গরুর গোশত কিনে বাসায় যাই। বুবু, দুলাভাই দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন।
প্রথম উপার্জনের অনুভূতি কেমন ছিল ?
আমার কাছে মনে হয়েছিল তখন থেকেই আমি স্বাধীন। অনেক কষ্টের মধ্য থেকে বেড়ে ওঠা আমি নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করেছি তখন। মনে হচ্ছিল আমি উড়ে উড়ে বাসায় যাচ্ছি।
কত টাকার নোট আপনার প্রিয়?
আমার কাছে সব টাকার নোটের মূল্যায়ণ একই রকম। কারণ জীবনে অনেক কষ্টের মাঝে যখন নিজের উপার্জিত টাকা হাতে পেয়েছি, তার আনন্দটাই মূল বিষয়। কত টাকা ছিল সেটা কিন্তু প্রধান ছিল না।
কী পরিমাণ টাকা থাকলে আপনি স্বস্তি বোধ করতেন?
স্বস্তির সাথে টাকার কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ প্রথম উপার্জনের কয়েক মাস পরে আমার আরেকজন প্রিয় ব্যক্তি কবি হাবিবুর রহমান টঝওঝ - এর জন্য কাভার ডিজাইন করান।
সেখান থেকে এককালীন ভাবে ২১০০ টাকা পেয়েছিলাম। আমার এক আত্মীয় আমাকে ১৮০০ টাকা দিয়ে বাড্ডাতে তৈরি বাড়িসহ ৫ কাঠার একটি জমি কিনতে বলেন। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি ১৮০০ টাকা দিয়ে অনেক রঙ, তুলি, কাগজ ইত্যাদি কিনেছিলাম। সুতরাং আমার কাছে টাকার চেয়ে আমার আনন্দ, ভাললাগাকে জীবনে বেশি প্রধান্য দিয়েছি।
অনেকে হয়তো বলবে আমি অর্থনীতি বুঝি না। এ ধারণা আসলে সম্পূর্ণ ভুল।
জীবনে চলার পথে কত টাকা হলে একজন মানুষ স্বচ্ছলভাবে চলতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
আমি ১৯৬১ সালে যখন চারুকলা থেকে পাস করে বের হলাম, তখন মনে হয়েছিল ৫০০ টাকা বেতনের একটা চাকরি পেলেই চলবে। মনের সে ইচ্ছা পূরণও হয়েছিল। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি।
আমার ইচ্ছাশক্তি প্রবল ছিল বলেই হয়তো আজ সফল একজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছি। সুতরাং জীবন চলার জন্য নির্ধারিতভাবে টাকার হিসাব না করে ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
টাকা নিয়ে কোনো মজার ঘটনা বলুন?
চাকরি পাবার পরে আমার ভাই-বোন নিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেই। ওদের পড়ালেখার খরচ আর সংসার চালানোতে অনেক সময়ই হিমসিম খেতাম। যে কারণে মাঝে মধ্যেই টাকার প্রয়োজন হতো।
আবার সমাধানও হয়ে যেত। একবার শ‘দুয়েক টাকা প্রয়োজন হলো। ভাবলাম ৪/৫ বন্ধুর কাছে ৫০ টাকা করে নিয়ে ২০০ টাকা করবো। বাসা থেকে বের হতেই আমার গ্রামের একজন এসে আমার হাতে আড়াইশ টাকা দিয়ে বললো,আপনার কাছে রেখে গেলাম। ২-৩ মাস পরে এসে নিয়ে যাব।
আমি তো অবাক! এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। গ্রামের লোকজন কেন যেন আমাকে বিশ্বাস করতো। নিরাপদ মনে করতো। তাদের টাকা আমার কাছে গচ্ছিত রাখতো।
টাকার চিন্তায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে কী করেন?
টাকার চিন্তায় কখনও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইনি।
কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ হয়ে গেছে।
টাকা উপার্জনে তরুনদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আমি ছবি আঁকি। ছবি আকার পাশাপাশি আমি অন্য অনেক কাজও করতাম। তবে আমি সময় অনুযায়ি কাজ শেষ করে দিতাম। সুতরাং আমি মনে করি সময়ানুবর্তিতা, বিশ্বাস এবং সততা থাকলে জীবনে কখনো কষ্ট হবে না।
সব কিছুকেই নিজের হাতের মুঠোয় বলে মনে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।