সকালে উঠেই আব্বার ঝাড়ি খাইলাম, ''চুল কাটাস না ক্যান?'' এই পর্যন্ত চুল কাটার কথা বলে যে কত টাকা নিছি, তা আব্বা আর আল্লাহই জানেন...যাইহোক, আজকেও চুল কাটান হল না... (i won ) বনানীতে গেলাম একটা জরুরি কাজে। বাসায় আসলাম ৩ টার দিকে। গোসল করে খেয়েই বিছানায় শরীর এলিয়ে শুয়েছি, কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টের ই পাইনি... হঠাৎ যখন ঘুম ভাঙল, তখন ঘড়িতে ৫ টা! ভুলেই গেছিলাম আজ কোচিং এ ক্লাস নিতে হবে...চোখে মুখে পানি ছিটিয়েই দৌড় দিলাম।
মামা, সায়েদ গ্র্যান্ড যাবেন?
মহাশয়ের উত্তর ''২০ টাকা''
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি? আর মহাশয় উত্তর দিলেন কি?!!
অগত্তা উত্তর দক্ষিণ বিবেচনা না করে উঠে পড়লাম তার যানবাহনে(!) কিছুক্ষণ পর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।
রাস্তা পার হতে গিয়ে আরেক বিপত্তি! এই সময় গাড়ির যে এত চাপ, পার ই হতে পারছি না।
একটু উনিশ-বিশ হলেই বুঝি ঠ্যাং টা যাবে! আমি বুঝি না, প্রতিদিন কম করে হলেও কয়েক হাজার মানুষ সায়েদ গ্র্যান্ড এর সামনে দিয়ে নিজ নিজ ঠ্যাং এর ঝুকি নিয়ে রাস্তা পার হয়, আর এদের অধিকাংশ হয় উত্তরা হাই স্কুল অথবা রাজউক কলেজের বাচ্চা! তারপরও এখানে যে কেন একটা ওভারব্রিজ করে দেয় না , আল্লাহই জানে!
যাইহোক, আর চিন্তা বাড়ালাম না, কোচিং এ লেট হচ্ছে।
কোচিং এ ঢুকেই একসাথে অনেক গুলো মুখ বলে উঠলো ‘’আসসালামু আলাইকুম , স্যার’’। শুনেই প্রানটা ভরে গেল! দুনিয়াতে শুধু মীনা বাজারের সেলস গার্লস আর এই পিচ্চি গুলো ছাড়া আর কেও তো আমাকে ‘‘স্যার’’ সম্বোধন করে না!
ক্লাস নিচ্ছি, এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠলো, অপর প্রান্ত থেকে বলে উঠলো, ‘’ভাইয়া , আমি নাবা বলছি, কেমিস্ট্রিতে একটু প্রবলেম আছে, আপনি কি ৮ তার সময় আসতে পারবেন? আমার তো এক্সাম চলছে...”
ছাত্রীর এক্সাম বলে কথা! কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেললাম ,’’ওকে, আমি আসব’’
পরে মাথায় আসলো , আজ তো গীটার ক্লাস আছে!
ধুর! গীটার পরে, আগে ছাত্রীর এক্সাম... :’(
কোচিং থেকে বের হয়ে হাটতে হাটতে আজমপুর রেলগেটের জহির ভাইয়ের টং এ গেলাম, কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৭.৪৯! দ্রুত পা চালিয়ে গেলাম ছাত্রীর বাসায়। তার সব প্রবলেম সলভ করে যখন বের হব, ছাত্রীর মা, মানে আনটি রুমে আসলেন, এসেই হাত বাড়িয়ে দিলেন , আমিও আর দেরি করলাম না, হাশি মুখে বললাম থাঙ্কস...সবাই বুঝতে পারছেন, কি ঘটে গেল! হুম... ঠিকই ধরেছেন... আমার জীবনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। পেয়ে গেলাম আমার জীবনের প্রথম উপার্জন! খুবই গুনতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে আর করলাম না।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে গুণে নিলাম কয়েকবার করে ঐ এরিয়া পেরিয়েই কয়েকটা লাফ দিলাম, আকাশটা ধরার বেশ চেষ্টা করলাম... পারলাম না আকাশ ছুঁতে, কিন্তু আকাশ ছুঁয়েছে আমার আনন্দ সীমা... এই ফাকে কয়েকটা চিৎকারও দিয়ে দিলাম... রাত বাজে তখন সাড়ে ৯ টা। হাটতে হাটতে গেলাম নর্থ টাওয়ারের সামনে, সব দোকান অলমোস্ট বন্ধ। মিষ্টিমুখটা খোলা পেলাম,ঢুকে পড়লাম। দাড়িয়ে দাড়িয়ে ৩ মিনিট চলে গেছে কখন, টেরই পাইনি। সেলসম্যান এসে হাঁক ছাড়ায় সম্বিত ফিরে পেলাম, “স্যার, কি কিনবেন?” আমার উত্তর, “মিষ্টি ছাড়া আর কিছু বেচো তোমরা?” তার উত্তর “না , স্যার” বললাম, “তাইলে মিষ্টি ছাড়া আর কি নিব?’’ দাম দেয়ার সময় ১০০০ টাকার নোটটা দিলাম।
“স্যার, ভাংতি হবে না?’’ খুব গর্ব করে বলেও ফেললাম , “না, ভাংতি নেই”
বের হয়ে পাশেই আরেকটা দোকানে ঢুকলাম, একটা ব্রেড নিলাম, ছোট বোনটার জন্য একগাদা চকলেট কিনলাম,কি মনে হল এক বড় কফিও কিনে ফেললাম... ডিমও কিনলাম..ক্যান কিনলাম নিজেও জানি না.... একটা বড় দেখে চকলেট বিস্কুট কিনলাম, ড্রিঙ্কস নিলাম , আরও কি কি জানি কিনলাম, ভুলে গেছি, চোখের সামনে যা দেখেছি ঐদিন , সবই কিনে ফেলতে ইচ্ছে করছিল... আমার লাইফের প্রথম ইঙ্কাম বলে কথা !
তারপর সারা রাস্তা দুইহাত ভরে জিনিস নিয়ে হাটতে হাটতে বাসায় ফিরলাম। নর্থ টাওয়ার থেকে ১৪ নাম্বার! একটুও কষ্ট হল না! এক কেজি মিষ্টির ভর কত, ঐদিন বুঝতে পেরেছিলাম...। অসাম একটা ফিলিং... নেভার ক্যান এক্সপ্লেইন... নেভার ক্যান শেয়ার... বাসার নীচের দোকান থেকে একটা আইসক্রিম আর একটা মিরিন্ডা কিনলাম... নিজের টাকা খরচ করার যে এত মজা!!
লিফটে বাটন প্রেস করতে একটু কষ্ট হল, কিন্তু বাসার কলিংবেলটা চাপার পর সব ভুলে গেলাম... সবার মুখে এত হাসি, এত আনন্দ! শুধু আম্মার মুখ থেকে ফুটল, “ এগুলো ক্যান কিনতে গেলি?’’
কখন যে আমার চোখ ভিজে গেছে, টেরই পাইনি... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।