আশেপাশে আমার মতো যারা ‘আমজনতা’ আছেন তাদের এই মর্মে সাবধান করা যাচ্ছে যে, আপনার চামড়া যদি মোটা (গন্ডারের মতো না হলেও চলবে) না হয়ে থাকে তবে আপনার জন্য হয়তো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে। এতোদিন ‘রাম-শ্যাম-জদু-মধু’দের ধমক হয়তো আপনার নি:শঙ্ক চিত্তকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি কিন্তু এইবার যখন স্বয়ং কর্তা চোখ রাঙানি দিয়েছেন, আপনার বোধ হয় পিঠে মোটা কাপড় বাঁধার সময় হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা আবশ্যক ‘বাঘে ছুঁলে সাত ঘা আর কর্তা ছুঁলে আঠারো ঘা’। হ্যাঁ মশাই, এইবার কর্তাই আপনাকে ছুঁতে চলেছেন। বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে কর্তা বলেছেন, “কীভাবে কঠোর হতে হয় আমাদের জানা আছে” ।
বড়ই আতঙ্কের বিষয়। কর্তা যদি তার (কর্তার নামের সর্বনামে আর চন্দ্রবিন্দু দিতে ইচ্ছে করলো না) ‘সোনার ছেলেদের’ কিংবা ‘কালো বিড়ালদের’ বিরুদ্ধে এমন কঠোর বাণী উচ্চারণ করতেন, তাহলে বোধ হয় ভালো হতো। কর্তার চোখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘বেয়াদব’ বলে মনে হয়েছে। কারন, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে নিজেদের প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করতে চাইছে। আর যারা কর্তার সামনে বসে তার অমৃত বাণী শুনে ‘জ্বী কর্তা, জ্বী কর্তা’ করছিলেন তারা সবাই চরমভাবে ‘আদব’।
যেহেতু , তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দলবাজি, ধর্ষণ, হল-ক্যাম্পাস দখল, ‘কালো বিড়াল’ মার্কা দুর্নীতি, অনিয়ম, ইত্যাদি মহৎ (!) গুণাবলি অর্জন করেছেন। কেউ কেউ আবার স্বীকৃতি স্বরূপ ইতিমধ্যে ‘দেশ প্রেমিক’ মর্যাদা লাভ করেছেন।
এই মরার দেশে আপনাকে অনবরত পায়ে পিষতে থাকলেও আপনার কাজ হলো মুচকি হাসি (দাঁত বের করতে পারলে ভালো) দিয়ে ‘জয় কর্তা, জয় কর্তা’ বলে শোকরিয়া আদায় করা। মনে মনে বাবুদের পিন্ডি চটকালেও প্রকাশ্যে আপনার কাজ হলো তাদের কর্মের গুণকীর্তন করে ধন্য হওয়া। অথবা আপনার চারপাশে যা কিছুই ঘটুক না কেনো, সবই চোখ বন্ধ করে হজম করা।
আপনার চামড়া গন্ডারের মতো না হলেও ভয় নেই, এক সময় হয়ে যাবে। এখন শুধুমাত্র সবকিছুতে ‘জ্বী কর্তা, জ্বী কর্তা’ বলে যান। এতেই আপনার মঙ্গল নিহিত রয়েছে। কী দরকার বাপু, অযথা কর্তার বিরাগভাজন হয়ে চোখ রাঙানি খাওয়ার।
অনেক দিন থেকে আন্দোলন চলতে থাকলেও গত কয়েক দিনের বাড়াবাড়ি কর্তার ভালো লাগেনি।
তাই তিনি এইবার তাদের শাসিয়ে দিলেন। কর্তা আরও বলেছেন, “সবচেয়ে জঘন্য কাজ হচ্ছে একটি ছেলে একটি মেয়ের গা থেকে রক্ত নিচ্ছে। এর মধ্যে কী বাহবা আছে আমি বুঝতে পারি না। সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিয়ে সিঁড়িতে ঢেলে দেয়া হচ্ছে- এ ধরণের বিকৃত মানসিকতা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কীভাবে আসে?” তিনি বোধ হয় ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের ‘স্পিরিট’ অনুধাবন করতে পারেননি তাই তার কাছে তা ‘জঘন্য’ ও ‘বিকৃত’ মনে হয়েছে। কর্তা বিষয়টিকে তার দৃষ্টিতে দেখবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
ছাত্রছাত্রীদের সাথে আন্দোলনে সামিল হওয়ায় তিনি শিক্ষকদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তার সাথে বৈঠকের সময় শিক্ষকেরা ‘জ্বী কর্তা’ বলে পরে এসে কথা না রাখার জন্যেই কর্তা তাঁদের উপর রাগ করেছেন। হয়তো তার সেই কঠোরতা তাঁদের জন্যও প্রযোজ্য। কোথায় ‘জ্বী কর্তা’ বলে তার সব কাজের প্রশংসা করে ধন্য হবে, তা না করে আন্দোলনে নেমেছে; কর্তার কী আর কঠোর না হয়ে উপায় আছে।
কর্তা ও তার বহরের লোকজন যেভাবে কথা বলা আর হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন তাতে আমজনতার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ারই কথা।
তবে আশার কথা হচ্ছে আমজনতার চামড়া দিনকে দিন মোটা হতে শুরু করেছে। এতে সব কিছুই সয়ে যাবে। কর্তাও তার সময়কাল নির্বিঘ্নে পার করে দিতে পারবেন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধবে তখনই যখন ‘বিটকেলে’ টাইপের কিছু লোকজন কর্তার ধমকে ভয় না পেয়ে বরং রুখে দাঁড়াবে। চারিদিকে যখন বজ্রনিনাদ ধ্বনিত হবে, তখন কর্তাও পিছু হটতে বাধ্য।
অন্তত পুরনো ইতিহাস এটাই শিক্ষা দেয়। সর্বত্র যেখানে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠবে, সেখানে কর্তারও বোধ হয় শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ঠ কারন আছে। মনে রাখা দরকার নগর পুড়লে দেবালয়ও রক্ষা পায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।