উৎসর্গ ঃ বাংলা চলচ্চিত্রের আমার সমসাময়িক দর্শক ও প্রিয় ব্লগার রাইসুল জুলাহা ভাই
আগামীতে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন মেধাবী চিত্রগ্রাহক ব্লগার তন্ময় ফেরদৌস
এই প্রজন্মের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসার উদাহরন ব্লগার জুবায়েদ দীপ কে আমার এই পোস্টি উৎসর্গ করলাম । ।
পরিচালক দেওয়ান নজরুল ঃ বাংলা চলচ্চিত্রে সামাজিক অ্যাকশন ছবির এক অন্যরকম রুপকার পরিচালক দেওয়ান নজরুল । 'রংবাজ' ছবিতে পরিচালক জহিরুল হক বাংলাদেশের দর্শকদের অ্যাকশন এর সাথে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেই 'অ্যাকশন ' ধারাকে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় করেছেন এই দেওয়ান নজরুল। নজরুল এর ছবি মানেই অন্যরকম অ্যাকশন গল্পে ঠাসা চরম নাটকীয় উত্তেজনায় থাকা দর্শকদের আড়াই ঘণ্টা।
সেই 'দোস্ত দুশমন' নামক চরম একটি সিনেমা দিয়ে শুরু এরপর একে একে নজরুল তৈরি করেন 'বারুদ' 'আসামী হাজির', 'ওস্তাদ সাগরেদ', ' জনি', 'ধর্ম আমার মা' 'কুরবানী' 'মাস্তান রাজা' 'কালিয়া' 'বাংলার নায়ক' এর মতো সব বক্স অফিস কাঁপানো দুর্দান্ত ছবি । দেওয়ান নজরুল না থাকলে জসিম দুর্দান্ত ভিলেন থেকে গনমানুষের নায়ক হতে পারতেন কিনা জানিনা। এই দেওয়ান নজরুল এর হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের ৭০এর শেষ দিকে জসিম নামক এক দুর্দান্ত ভিলেনের আগমন । যাকে প্রথম দেখায় ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা আমজাদ খান প্রশংসা করেছিলেন। 'দোস্ত দুশমন ' ছবির সেই ভয়ঙ্কর ডাকু থেকে 'বারুদ' এর গদফাদার যিনি আজিম কে তৈরি করেন অপরাধ জগতের এক ক্ষমতাধর রাজারুপে, 'জনি ' ছবির ফেরারি ডাকাত দলের সরদার, 'ওস্তাদ সাগরেদ ' ছবির ভয়ংকর কালুগুন্ডা থেকে হয়ে যান 'মাস্তান রাজা' আবার কখনও বেবি ট্যাক্সি ড্রাইভার কালু থেকে হয়ে যান 'কালিয়া' যিনি অপরাধ জগতের কিং, আবা
র সেই অপরাধ জগতের কিং হয়ে যান বস্তিবাসী মানুষের 'বাংলার নায়ক ' ।
সবই দেওয়ান নজরুল এর এক একটি অমর সৃষ্টি । যারা দেখেছিলেন তাঁরা আজো সেই চরিত্রগুলো ভুলতে পারেননি। 'বারুদ' ছবিটি ছিল সেই সময়ে বিখ্যাত ও কালজয়ী হলিউড মুভি 'গডফাদার' এর বাংলা ভার্শন। যাকে গডফাদার ছবিটিকে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে চমতকারভাবে উপস্থাপন বলা যায়। বাংলা অ্যাকশনধর্মী ছবির মাঝে 'বারুদ' চিরকাল একটা ক্লাসিক হিসেবে ঠাই করে নিয়েছে।
দেওয়ান নজরুল ছবির শুরুতেই স্বীকার করেছিলেন ' একটি বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে তৈরি' । যে ছবিতে ছিল সেই সময়ের পর্দা কাঁপানো আজিম, সোহেল রানা, ওয়াসিম ও জসিম। যারা সকলেই অপরাধ জগতের বাসিন্দা। পিতা আজিম এর সহযোগী সোহেল রানা ঠিক পিতার মতোই ঝানু অপরাধী , ছোট ভাই ওয়াসিম বিদেশে পড়ালিখা করে দেশে এসেছে । পিতা আজিম চায়না ওয়াসিম অপরাধ জগতে জড়িয়ে পরুক।
তাঁর একমাত্র ভরসা বড় ছেলে সোহেল রানা যিনি পিতার সাথে ছায়ার মতো থাকে। শুরু হয়ে যায় জসিম ও আজিম এর বিচ্ছেদ ও অপরাধ জগতের লড়াই। যেখানে পিতা আজিম এর পক্ষে সোহেল রানা আর বিরুদ্ধে জসিম ও তাঁর বাহিনী। এইরকম টানটান উত্তেজনায় নির্মিত ছিল 'বারুদ'। দেওয়ান নজরুল কোনদিন দর্শকদের নিরাশ করেনি।
তাঁর সিনেমা মানেই উপচে পড়া ভিড় আর আড়াই ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। ছবিতে বিনোদনের কোন কমতি ছিলনা, দর্শকদের পয়সা ১৬ আনা উসুল করে দেয়াই ছিল দেওয়ান নজরুল এর লক্ষ্য। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে ততদিন বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ছবির পিতা হিসেবে পরিচালক দেওয়ান নজরুল এর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
পরিচালক এ জে মিন্টু ঃ ১৯৭৮ সালে শুরুতে 'মিন্টু আমার নাম ' ছবি দিয়ে পরিচালনায় আসেন পরিচালক এ জে মিন্টু। এ জে মিন্টু শুধু একজন গুণী পরিচালকই ছিলেন না তিনি ছিলেন একধারে কাহিনিকার, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা এবং একজন সফল প্রযোজকও ছিলেন।
মিন্টুর প্রযোজনা সংস্থা 'সানফ্লাওয়ার মুভিজ' একধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত ছবির একটি সফল প্রযোজনা সংস্থা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় এ জে মিন্টুর ছিল একটি অতি পরিচিত নাম । মিন্টুর ছবি মানেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জন্য মনোনীত হওয়া ছবি। মিন্টুর ছবি মানে হলে দর্শকদের ভিড়। এই পরিচালক এতো বেশি যত্ন নিয়ে ছবি তৈরি করতেন যে প্রতিটা দৃশ্য বাস্তবের সাথে মিল থাকতো।
তাই মিন্টুর ছবি বছরে ১/২ টি পাওয়া যেতো। যেটি বানাতেন তা খুব যত্ন নিয়ে বানাতেন যার কারনে বাংলা চলচ্চিত্রে মিন্টুকে 'মাস্টার মেকার' উপাধি দেয়া হতো। প্রতিজ্ঞা, বাঁধনহারা প্রতিহিংসা ,চ্যালেঞ্জ, মান সম্মান , অশান্তি , লালু মাস্তান , সত্য মিথ্যা , ন্যায় অন্যায় , পিতা মাতা সন্তান , বাংলার বধূ, প্রথম প্রেম , বাপের টাকা কোন ছবিটা দর্শকের ভালো লাগে নাই কেউ বলতে পারবে না। আর তাই অশান্তি - বাপের টাকা পর্যন্ত প্রতিটি ছবি কোন না কোন শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিল। একধিক শাখায় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবিগুলো হলো লালু মাস্তান, সত্য মিথ্যা, ন্যায় অন্যায়, পিতা মাতা সন্তান, বাংলার বধূ , প্রথম প্রেম ও বাপের টাকা।
মিন্টুর ছবি দেখে দর্শকরা কখনও নিরাশ হয়নি। পুরোটা সময় হলভর্তি মানুষ চরম উত্তেজনা নিয়ে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অপেক্ষা করতো । মিন্টুর ছবির কারনে চিত্রনায়ক আলমগীর একাধিকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। মিন্টু শুধু বাংলা বাণিজ্যিক ধারার অসাধারন সব ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেননি , তৈরি করেছেন একাধিক গুণী ও মেধাবী পরিচালক যারা আজো বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। মিন্টুর মেধাবী ছাত্রদের মধ্য অন্যতম হলেন - সোহানুর রহমান সোহান (বেনাম বাদশা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত (সালমান শাহ ও মৌসুমি) ,স্বজন, আমার ঘর আমার বেহেস্ত (শাকিল খান ও পপির প্রথম ছবি) আখেরি রাস্তা, বিদ্রোহী কন্যা, অগ্নিসাক্ষী, অনন্ত ভালোবাসা (শাকিব এর প্রথম ছবি), স্পীড ইত্যাদি), মনোয়ার খোকন (জ্যোতি , সংসারের সুখ দুঃখ, ঘাত প্রতিঘাত, স্বামী কেন আসামী, সত্য মিথ্যার লড়াই, সত্যর বিজয় ইত্যাদি), শাহ আলম কিরন ( প্রতিশোধের আগুন, বিচার হবে, আসামী বধূ , শেষ ঠিকানা ইত্যাদি) যারা গুরু মিন্টুর মতো বাংলা বাণিজ্যিক ছবিকে করেছে সমৃদ্ধ।
'অশান্তি' ছবির মাধ্যমে জননন্দিত অভিনেত্রী শাবানাকে অ্যাকশন লেডী হিসেবে প্রথম সামনে আনেন তিনি। ৮০র দশক থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে এ জে মিন্টু আলাদা একটি অধ্যায় হয়ে ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আরেক সফল ও জনপ্রিয় পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন বলেছিলেন '' আমাদের সমসামিয়ক পরিচালকদের মাঝ থেকে আমাকে যদি সেরা ৩ পরিচালকের নাম বলতে হয় তাহলে আমি ১ নম্বর নামটি রাখবো এ জে মিন্টু ভাইয়ের নাম। এই একজন পরিচালকের ছবি দেখলে মনে হয় যে সিনেমার কোন কল্পিত গল্পের দৃশ্য দেখছি না। সব দৃশ্যকে তিনি বাস্তবের সাথে মিল রেখে করার চেষ্টা করেন।
এমন একজন পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্র থেকে সরে যাওয়া কত যে দুর্ভাগ্যজনক তা বলে বুঝানো যাবে না''। মিন্টুর মালিকানাধীন 'খতীব খামার বাড়ী' বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের শুটিং স্পট হিসেবে আজো একটি জনপ্রিয় শুটিং স্পষ্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সবশেষে পরিচালক খোকনের কথার মতো বলতে হয় জীবিত অবস্থায় এমন একজন মেধাবী, সফল ও জনপ্রিয় পরিচালক এর বাংলা চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়ানো এই শিল্পের জন্য খুব দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক। ।
পরিচালক শিবলি সাদিক ঃ
শিবলি সাদিক নামটা বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের কাছে বহুবার শোনা ও জানা।
৮০র দশকের শুরুর দিকে 'নোলক ' নামক একটি ক্লাসিক ছবি দিয়ে যার ছবি পরিচালনা শুরু আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিচালনার সমাপ্তি হয়েছিল। এই পরিচালক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন যুগেই চলচ্চিত্র শিল্পকে ছেড়ে যাননি। যত দুঃসময় আসুক শিবলি ছিলেন নিয়মিত। বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পী, প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শক ও দর্শক সব শ্রেণীর কাছে শিবলি ছিলেন একটি আস্থার নাম। একটি ভরসার নাম।
ভরসা হবেই না কেন? যিনি নোলক, নীতিবান , ভেজা চোখ, অর্জন , অচেনা,বন্ধন, মা মাটি দেশ , মাটির কসম, ত্যাগ , অনুতপ্ত , অন্তরে অন্তরে , অনন্দ অশ্রু , মায়ের অধিকার এর মতো সব ব্যবসাসফল ছবির পরিচালক ছিলেন তার উপর আস্থা রাখাটাই স্বাভাবিক। একেবারে আনকোরা ,অপরিচিত শিল্পী থেকে শুরু করে যুগের সুপারস্টারদের নিয়ে ছবি পরিচালনা করে সফল হয়েছিলেন শিবলি। বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা কে একসঙ্গে এক ছবিতে তিনিই প্রথম ও শেষবারের মতো দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে চমকে দিয়েছিলেন। ৮০ র দশকে যেখানে ন
নায়ক প্রধান আকশন ছবিগুলোর জয় জয়কার ও প্রাধান্য ছিল সেখানে শিবলি একমাত্র পরিচালক যিনি নারীপ্রধান ছবি দিয়ে বক্সঅফিসে তোলপাড় করেছিলেন। সেই থেকে বাংলা চলচ্চিত্রে নারী প্রধান অ্যাকশনধর্মী ছবি বানানোর সাহস পরবর্তীতে অনেকেই করেছিলেন।
কিন্তু শিবলি ছিলেন সবার প্রথম। উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পী কুমার শানুর চলচ্চিত্রের প্রথম প্লে ব্যাক গান ছিল শিবলির 'তিনকন্যা ' ছবির টাইটেল গানটি যা আজো দর্শকদের কানে বাজে। শিবলির ছবির আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির এর লিখা ও আলম খানের সুর করা অসাধারন সব গান যা বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী গানের তালিকাকে দীর্ঘ করেনি শুধু সমৃদ্ধও করেছিল। তার পরিচালিত প্রথম ছায়াছবির গানগুলো ছিল ভাওয়াইয়া গান প্রধান ছবি। ' ও কি ও কাজল ভ্রমরারে ' , ও মোর বানিয়া বন্ধুরে এর মতো সব অসাধারন গান আর নান্দনিক চিত্রায়ন ছবিটিকে দিয়েছে একটা ক্লাসিক বাংলা ছায়াছবির মর্যাদা।
যৌতুক না দেয়ার কারনে একটি গ্রাম্যবধুর মৃত্যু নিয়ে যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে 'নোলক' হলো বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম প্রতিবাদ এর ছবি। একজন পরিচালক কতটা সাহসী, মেধাবী ও সৃষ্টিশীল মানসিকতার হলে এমন ঝুকি নেয়ার সাহস করতে পারে তা যারা 'নোলক' ছবিটি দেখেছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন। ক্লাসিক, সামাজিক অ্যাকশন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, দেশপ্রেম, রোমান্টিক অ্যাকশন সহ সব ধারার গল্পের ছবি নিয়ে শিবলি সফল হয়েছিলেন যা বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচালকদের মধ্য বিরল। শিবলির মতো এতো বৈচিত্র্যময় পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্রে আর একজনও নেই। তাকে কখনও কোন বিশেষ একটি ধারার পরিচালক এর কাতারে ফেলা যেতো না।
আজ শিবলি নেই কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন বাংলা চলচ্চিত্রে যুগ যুগ ধরে...............অনন্তকাল । ।
পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকন ঃ বাংলা বাণিজ্যিক ধারার ছবির মধ্য 'অ্যাকশন' ধারার মাঝে 'কংফু অ্যাকশন' কে জনপ্রিয় করার পেছনে যে মানুষটির সবচেয়ে বেশি অবদান তিনি হলেন শহিদুল ইসলাম খোকন । খোকন হলেন গত ৩ দশক ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিচালকদের অন্যতম একজন। খোকন এর ছবি মানেই নতুন কিছু, ব্যতিক্রম কিছু , বুদ্ধিদীপ্ত কিছু আর জমজমাট কংফু অ্যাকশন বা মার্শাল আর্ট।
এর বিভিন্ন কলা কৌশলের চমৎকার প্রদর্শন । জনপ্রিয় নায়ক রুবেল এর আবিস্কারক এই খোকন। শুধু রুবেল নয় মার্শাল আর্ট কে জনপ্রিয় করতে তিনি মার্শাল আর্ট জানা অভিনেতা ড্যানি সিডাক, সিরাজ পান্না, ইলিয়াস কোবরা, চায়না, কবির খাঁ ও অভিনেত্রী মিশেলার আবিস্কারক । এরা সবাই ছিলেন খোকনের ছবির নিয়মিত শিল্পী যার ফলে মার্শাল আর্ট যে একটি শুধু আত্নরক্ষার কৌশলই নয় একটি শিল্পও বটে সেটা বাংলা ছবির মাধ্যমে খোকন চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন। খোকনের ছবির কাহিনী সবসময় একটু আধুনিক থাকতো।
দর্শক কে একই জিনিস বারবার তিনি দেখাতেন না। তাই সেই সময় আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকতাম খোকনের ছবি কবে মুক্তি পাবে? খোকনের ছবি মানেই হিট আর উপচে পড়া দর্শকের ভিড়। খোকনের ছবি দেখেই সেই সময় কিশোর তরুণদের মাঝে মার্শাল আর্ট শেখার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। খোকনের ছবির অ্যাকশন দৃশ্য গুলো ছিল দুর্দান্ত , দারুন । ৮০র দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের পুরোটাই ছিল খোকন এর নিত্যনতুন ছবির বাজার।
খোকন ছিলেন টপ লিস্টেড ব্যস্ত পরিচালকদের একজন। টেলিভিশন এর জনপ্রিয় অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদি কে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে খল চরিত্রে নিয়ে আসেন এই খোকন যার ফলে বাংলা চলচ্চিত্র পায় ফরিদির মতো একজন অসাধারন অভিনেতার অভিনয় সমৃদ্ধ শখানেক ছবি। সেই ৮৫ তে 'লড়াকু' ছবি তে তিনি যে কাহিনী তুলে ধরেছেন আজ ২৭ বছর পরেও এমন কাহিনী নিয়ে কেউ কাজ করতে পারেনা। 'লড়াকু ' দিয়ে খোকন -রুবেল - আলম খান ত্রয়ীর সম্পর্ক শুরু এরপর একে একে মুক্তি পায় 'বীরপুরুষ , 'বজ্রমুসঠী , 'বিপ্লব' ' উত্থান পতন' 'সন্ত্রাস ' ' টপ রংবাজ ' 'শত্রু ভয়ংকর ' 'অপহরণ' 'সতর্ক শয়তান ' 'দুঃসাহস' 'বিশ্বপ্রেমিক ' ঘাতক ' ' 'কমান্ডার' 'রাক্ষস ' 'লম্পট' 'পালাবি কোথায়' 'নরপিশাচ' 'ভণ্ড ' 'ম্যাডাম ফুলি' 'পাগলাঘণ্টা ' 'ভেজা বিড়াল ' র মতো সব দুর্দান্ত ও ব্যবসা সফল ছবি । কমান্ডার , ম্যাডাম ফুলি, ভেজা বিড়াল ছাড়া সবগুলো ছবিতে ছিল রুবেল।
উপরের উল্লেখিত ছবিগুলোর মধ্য 'পালাবি কোথায়' ছবিটি ছাড়া আর একটি ছবি ফ্লপ হয়েছে বলে কারো জানা নেই। বীরপুরুষ, বিপ্লব, টপ রংবাজ, সতর্ক শয়তান, অপহরণ, বিশ্বপ্রেমিক, ঘাতক, কমান্ডার, ভণ্ড ছবিগুলো ছিল বছরের সেরা ১০ টি ব্যবসাসফল ছবির তালিকায়। খোকন না থাকলে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অপূর্ণতা রয়ে যেতো চিরকাল যা তাঁর সব ছবি না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না । বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্য খোকন নিজেই একটা স্বতন্ত্র ধারা , একটি আলাদা অধ্যায় হয়ে চিরকালের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছেন । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।