আচ্ছা, বান্দা ইবাদত করুক এটাই তো আল্লাহ পাক চান। এখন, কুরআন শরীফেই তো সব বলেই দেওয়াই হয়েছে। তাহলে আর পীর সাহেবের কি দরকার? বাজার থেকে কুরআন শরীফ কিনে নিলেই কি যথেষ্ট নয়?
- জি তা তো বটেই, কুরআন শরীফ এ আল্লাহ পাক বান্দাকে সকল পথ দেখিয়েছেন কিভাবে ইবাদত বন্দেগী করতে হবে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার জন্য। যেমন, আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং ছাদিক্বীন অর্থাৎ সত্যবাদী উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও। ” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ ১১৯)।
অর্থাৎ শুধু কুরআন শরীফ পড়লেই হবে না, আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে হলে ছাদিক্বীনদের সঙ্গী হতে হবে। এখন, একটু চিন্তা করে দেখুন তো- আমি বা আপনি কি সত্যিকার অর্থেই ছাদিক্বীন হতে পেরেছি। তাহলে, এই ছাদিক্বীন কারা? সহজ জবাব হল- ওলী-আল্লাহগণ। তার মানে- আমাদের কুরআন শরীফ পড়তে হবে এবং ছাদিক্বীন ব্যক্তিদের সঙ্গী হতে হবে।
আচ্ছা, একটু চিন্তা করুন তো।
মানুষকে হেদায়েত করার জন্য শুধু কিতাবই যদি যথেষ্ট হত, তাহলে আল্লাহ পাক তো শুধু কিতাব নাযিল করলেই পারতেন। কিন্তু, আল্লাহ পাক যুগে যুগে, গোত্রে গোত্রে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম পাঠালেন লাখের উপর, অথচ কিতাব নাযিল হল মাত্র ১০৪টি। নিশ্চয় এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আপনার আমার চেয়ে অসীম জ্ঞান রাখেন, তাই নয় কি? কিতাবে আল্লাহ পাকের আদেশ মুবারক তো রয়েছেই যা মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণকে পাঠিয়েছেন। এখন, নবী-রসূল আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, এর মানে কি আমরা হেদায়েতের ব্যাপারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। সেটাই যদি হত, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ছাদিক্বীনদের সঙ্গী হতে বলতেন না।
আবার দেখুন, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে কোন কিছুর বর্ণনাই বাকী রাখেন নি। এখন, আমি কুরআন শরীফ বাজার থেকে কিনে পড়তেই পারি। কিন্তু কুরআন শরীফ পড়লেই কি আমি সব কিছু অনুধাবন করতে পারব, আয়ত্ত্ব করতে পারব? আল্লাহ পাক বললেন, “আর তোমাদের তো অল্প জ্ঞান ব্যতীত দেওয়াই হয় নি। ” ( সূরা বনী ঈসরাইল-৮৫)। তাহলে, আমি যদি কুরআন শরীফের মর্ম অনুধাবনে অক্ষম হই, তবে কি আল্লাহ পাকের ইবাদত করা থেকে বঞ্চিত থাকব, আল্লাহ পাক কি সেটাই চান? জি না, সেটা নয়।
আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)।
আশা করি, কুরআন শরীফ এ স্বয়ং আল্লাহ পাকের নির্দেশ মুবারক পাওয়ার পর কেউ আর আলিম ও আহলে যিকির বা ওলী-আল্লাহগণের নিকট শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।
আচ্ছা, বুঝলাম যে, না জানলে আলিমগণের কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তাহলে তো মসজিদ মাদ্রাসার মাওলানা সাহেবদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাসয়ালা জেনে নিতে পারি।
পীর সাহেব কেন জরুরী?
- আচ্ছা, আমরা তো জানি যে, সুদ-ঘুষ হারাম, বেগানা মেয়েদের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হারাম, গান-বাজনা খেলাধুলা হারাম (Click This Link)। সেটা কিন্তু মুখস্থ বিদ্যার ন্যায়। কিন্তু বাস্তবে কি আমরা এসব হারাম থেকে বাচতে পারি? যদি না পারি, তবে কেন পারি না। সেটাই আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বললেন, “যারা আল্লাহ পাকের যিকির থেকে বিরত থাকে, তাদের জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তাদের সঙ্গী হয় এবং তাদেরকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়।
অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে”। (সূরা যুখরূফ-৩৬,৩৭)। মূলত সাধারণ মানুষ হোক আর মাওলানা হোক যদি কেউ আল্লাহ পাকের জিকির থেকে বিরত থাকে তখনই শয়তান তাকে পাপে লিপ্ত করে। তাই তো দেখা যায়, অনেক মাওলানা ও ভন্ড-পীরেরাও হারাম কাজ স্বেচ্ছায় করে বসে। একটা বিষয় হল, জানলেই মানা যায় না।
তবে মানার জন্য অবশ্যই জানা দরকার। এখন, না জানলে মাওলানা সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ কর না, যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই, সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”। (সূরা কাহাফ-২৮)।
এখন, অনেক মাওলানাই পাওয়া যাবে, যারা কিতাবাদি পড়ে হয়ত শরীয়ত (নামায, রোযা, ওযু, গোসল ইত্যাদি বিভিন্ন মাসয়ালা) এর কিছু জ্ঞান অর্জন করেছে। কিন্তু ক্বলবে যিকির না থাকায় অহরহ হারাম কাজ করে থাকে। তাই বাজারে যে দুই-তিনটা লেকচার দেওয়া যে কোন মাওলানাকেই অনুসরণ করা যাবে না। অনুসরণ করতে হবে আহলে যিকিরদের বা ওলী-আল্লাহদের, কেননা উনাদের ক্বলবে ও সমগ্র দেহ মুবারকে সার্বক্ষণিকভাবে যিকির জারী থাকে। সুবহানাল্লাহ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।