শিরোনাম দেখে হয়তো ভাবছেন এটা কি ধরনের শিরোনাম। বিষয় বস্তু সন্মন্ধে কোন ধারনাই পাচ্ছেন না। তাহলে বলি, প্রথম টা হচ্ছে সম সাময়িক প্রেক্ষাপট আর ২য় টা হচ্ছে এর প্রভাব।
প্রথমে একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। রাজা মসায়ের কোন ছেলে হচ্ছে না।
অনেক কবিরাজ , ঝাড়ফুঁক করে , অন্য দেশ থেকে মস্ত বড় কবিরাজ এনে চিকিৎসা শুরু হল। ফলাফল স্বরূপ , রানি গর্ভধারণ করলো। যেদিন বাচ্চা হবে সেদিন সবাই উদগ্রীব। রাজার ছেলে নাকি মেয়ে হয়। তাদের রাজকুমার দেখতে কেমন হবে? যথা সময়ে বাচ্চা হল।
তবে বাচ্চা দেখতে কিছুটা কালো হয়েছে। গল্প টা এতোটুকুতে থাক। সবার শেষে গল্পটা সম্পূর্ণ করব।
এবার আসি শিরোনামের প্রথম অংশে। অনন্ত জলিল নামটা চলচিত্র রিলেটেড।
বাংলাদেশের চলচিত্রকে ভাগ করতে গেলে ৩ টা যুগ পাওয়া যাবে। ৮০’র দশক, ৯০’র দশক, ২০০০’র দশক। ৮০’র দশক ছিল চলচিত্রের স্বর্ণ যুগ। এই ব্যাপারে কিছু না বললেও চলে। ৯০ দশকের মধ্যখানে এসে বাংলা সিনেমা তার পট পাল্টাতে শুরু করে।
অশ্লীল আর রুচিহীন ছবিতে সয়লাব হয়ে যায় চলচিত্র জগত। নগ্নতা আর কাটপিসে ভরে উঠে বাজার। কোথায় যেন শুনেছি চলচিত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ। তাই এসব কাটপিসের প্রভাব পড়তে শুরু করলো সমাজে। প্রথম দিকে এইসব নগ্ন ছবি ভালো চললেও ধীরে ধীরে রুচিহীন নায়ক নায়িকার প্রতি রুচিহীন দর্শকরাও রুচি হারাতে লাগলো।
তাই তারা পরবর্তীতে রুচি পরিবর্তনের আশায় ঝুঁকল ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের দিকে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন ইন্ডিয়ান সিরিয়াল গুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে ঠিক এই সময় টাতে। একে একে বন্ধ হতে থাকে বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো। ধ্বস নামে চলচিত্র শিল্পে। মাঝে কিছু ভালো ভালো মুভি যেমন হুমায়ন আহমেদের, তারেক মাসুদের বেশ কিছু মুভি এক ঝলক দেখিয়ে দিলো ভালো সিনেমার দর্শক প্রিয়তা এবং ব্যবসা সফলতা।
তাই দেখে আমরা আশায় বুক বাঁধতাম আবার একদিন বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরে আসবে।
এবার আসি আরব আমিরাতের ভিসা প্রসঙ্গে। বিদেশি অর্থ উপার্জনের জন্য আমিরাত অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সুগম। এই খাত থেকে বাংলাদেশ প্রচুর রাজস্ব উপার্জন করে যা দিয়ে পদ্ধা সেতু নির্মাণ সম্ভব। যাক, এই প্রসঙ্গটা বাদ দেয়।
সরকারের উচিত এই খাতগুলো চিহ্নিত করা এবং কিছু নিতিমালা তৈরি করে এই খাত গুলো নিরাপদ ও শক্তিশালী করে তোলা। শক্তিশালী বলতে বুঝাচ্চি যাতে দক্ষ ও যোগ্য লোকরা পারমিট পায়। যাচাই বাছাই হীন ভাবে লোক নেয়ার ফলে তারা সুস্থ চিন্তা ধারার অভাবে যুক্ত হয় খুন, ধর্ষণ, মারামারি এ রকম আরও অনেক অপরাধে। আর তাছাড়া বিদেশ আসাকালিন যথাযথ ট্রেনিং এর অভাবে, পারিপার্শ্বিক জ্ঞানের অভাবে তার মস্তিষ্কের সেই ক্ষুদ্র জ্ঞানটুকু সবার সাথে প্রয়োগ করে। যার দরুন বাঙ্গালিদেরকে মোটামুটি অসহায় ভাবে অবহেলিত হয়ে থাকে।
আমি আমিরাতের বিশাল লেবার শ্রেণীর কথা বলছি। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আর মূল ফ্যাক্ট হচ্ছে বাংলাদেশিদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা নাই। একজনের সমস্যা আরেকজন বড় করে তুলে। ছোট খাটো সমস্যা সাপোর্ট দেয়ার বদলে হিংসা বিদ্বেষের কারনে আরেকজনের কাছে রসালো ভাবে তুলে ধরে।
যে রকম কথা-ই হোক, বাঙ্গালির সমালোচনা থাকবে-ই। যার ফলে কথাটা বড় হয়ে যায়। আর বিপত্তিটা এখানেই।
আমি আবার বলছি, বিপত্তিটা এখানেই। এইসব কথা, সমালোচনা বাঙ্গালির পাশাপাশি ইন্ডিয়ানরাও ছড়াতে থাকে।
তাতে হয় কি, বাঙ্গালির বদনামটা বেড়ে যায়। আপনি গালফ নিউজ খুললে প্রতিদিন-ই বাংলাদেশের একটা না একটা নিউজ পাবেন। অথচ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যত ঘটনা বাঙ্গালিদের মধ্যে হয় , টিক তত ঘটনা অন্য দেশের মানুষের মধ্যেও হয়। কিন্তু তারা প্রকাশ করে না অথবা নিজেরা মিটিয়ে ফেলে। আমার ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানি বন্ধুদের আমি কখনো বলতে শুনিনি তাদের কোন অপবাদের কথা।
ঠিক এই কারনে বাঙ্গালিরা সবার কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব হচ্ছে আজকের এই আমিরাতে ভিসার উপর নিষেধাজ্ঞা।
ব্যাপার হচ্ছে আমরা সব বুঝি , আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার, অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজের সমালোচনা করা দরকার, আমরা সব-ই মানি। কিন্তু যখন জলিলকে দেখি আমাদের আর কিছু মনে থাকে না। আমরা ভুলে যায় জলিল আমাদের-ই লোক।
আমরা আমাদের-ই দোষ খুজে বেড়াই। বুঝতে চাই না যে, বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে দর্শক আগের চাইতে বাড়ছে ,নগ্ন আর অশ্লীল সিনেমা বন্ধ হচ্ছে। আমাদের সেই আগের আশায় বুক বাধার দিন শেষ হচ্ছে।
এবার সেই গল্পটার বাকি অংশে আসি। রাজার ছেলে হয়েছে তবে দেখতে কিছুটা কালো হয়েছে।
এই খবর দাত্রী অন্দরমহল থেকে বৈঠকখানায় বলল। বৈঠকখানার সবাই যার যার বাসায় গিয়ে বলল,রাজার একটা কালো ছেলে হয়েছে। বাড়ির মহিলারা তাদের পাশের বাড়ির মহিলাদেরকে বলল, রাজার একটা কুচকুচে কালো ছেলে হয়েছে। ধীরে ধীরে রাজ্যের সবাই জানলো যে, রাজার কাঁকের মত কালো একটা ছেলে হয়েছে। এবং অতিশেষে এভাবে রটতে রটতে আরও পরের রাজ্যের সবাই শুনতে পেল যে , রাজা নাকি একটা কাক জন্ম দিয়েছে।
অনন্ত জলিল আমাদের-ই দর্পণ। আমরা আপাতত জলিলকে নিয়ে যা বলি না কেন , যতোটুকু মজা করি না কেন , আমরা অজান্তে আমাদেরকে এভাবে ডেভেলপ করে ফেলছি। আমাদের অজান্তেই এগুলো আমাদের স্বভাবে রূপ নিচ্ছে।
আজ তো আরব আমিরাতে ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে, এই স্বভাবের কারনে একদিন হয়তো আমরা নিজের দেশেই পরাধীন হবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।