প্রকৃতির স্নেহে ধন্য রাজধানী ঢাকা থেকে বাইশ কিলোমিটার উত্তরে জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজার পারিবারিক কাহিনীটি এক্সময় বাংলার ঘরে ঘরে লোকগাথা কাহিনী হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। আজ সেই ভাওয়াল রাজবাড়ীর কাহিনী অনেকের হৃদয়ে সুপ্ত হয়ে আছে। ভাওয়াল রাজবাড়ীটি এখন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা দেখার জন্য অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমে প্রতিদিন। ৩৬৫ কক্ষ বিশিষ্ট ভাওয়াল রাজবাড়ীর সৌন্দর্য গাজীপুরের ঐতিহ্য হিসেবে চিনহিত হয়ে আছে।
ভাওয়াল পরগনার রাজা ভাওয়ালের মেজরাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ন কে ঘিরে যে চাঞ্চল্যকর মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল টা ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা নামে পরিচিত। যার শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে এবং শেষ হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ১৬ বছর যাবত এ মামলার ফলাফল জানার জন্য সারা দেশের মানুষ শেষ দিন পর্যন্ত উদগ্রীব ছিল। এই মামলার নায়ক ছিলেন ভাওয়াল পরগনার জমিদার বংশের মেজকুমার রমেন্দ্রনারায়ন রায়। তিনি যখন ১৯০৯ সালে দার্জিলিং এ ছিলেন তখন তিনি মারা জান বলে গুজব ছরিয়ে ছিল তাকে ঘিরেই এই মামলা।
দীর্ঘ ১২ বছর পর একজন সাধু পরিচয়ে তিনি যখন ঢাকা এলেন, পরে ১৯২১ সালের ৪ মে তিনি নিজেকে কুমার রমেন্দ্রনারায়ন বলে ঘোষণা করলেন, সেই থেকে শুরু হল চাঞ্চল্যকর কাহিনী।
ভাওয়াল রাজবংশের ইতিহাসঃ
প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পন্ন পূর্ববঙ্গের ভাওয়াল পরগনার বিস্ত্রিতি ছিল ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার দুটি অঞ্চল জুরে। ভাওয়ালে বহু প্রাচীন মন্দির, প্রাসাদ, গড়, সরোবর ও মূর্তির ভগ্নাবশেষ আছে। ভাওয়াল রাজবংশীয় ইতিহাস একটি সুদীর্ঘ ও অবছিন্ন ধারাবাহিক ঘটনা। সুদুর অতীতে এই ভাওয়াল অঞ্চল যে সেন বংশীয় রাজাদের অধিকারভুক্ত ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সেন বংশ এদেশে পুরব্বং সহ ভারতীয় বেশ কিছু এলাকা নিয়ে রাজত্ব করত এবং এই রাজত্ব কাল প্রায় ১২০ বছর ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী তে পূর্ববঙ্গ মুসলমানদের অধিকারে আসে। তাদের কতৃত্ব ছিল পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, উত্তরে আড়িয়াল খাঁ ও দক্ষিন-পশ্চিম এ শিতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত। ভাওয়াল পরগনাও তাদের অধিকারে চলে আসে। এই পূর্ব বঙ্গ পূর্বে সেন বংশীয় মধু সেন ও অনুজ মাধবের অধিকার ভুক্ত ছিল এবং সেন বংশের পতনের পরেও সেনবংশিয় সেনাপতি প্রতাপ রায় ও প্রসন্ন রায় কিছুদিনের জন্য রাজবাড়ীতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এদের পতনের পর ভাওয়ালের বারভূঁইয়াদের অন্যতম ফজল গাজীর অধিনে আসে। তারা কালীগঞ্জ ও মাধবপুরে বাস করেন। তিনি মাধবপুর কে গাজীবাড়ি নামে পরিবর্তন করেন। ফজল গাজীর পর দৌলত গাজী ভাওয়ালের অধিপতি হন ও তার সময়েই নানা কারনে সম্পত্তি নিলাম হয়ে যায়। রাজ্যের সীমা নিয়ে ঢাকার নবাব্দের সঙ্গে বিরোধ হয় এবং মামলা চলে।
বিক্রমপুরের কেশব পন্দিতের রামচন্দ্র চক্রবর্তী নামে এক পুত্র ছিল যিনি বিদ্যাশিক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদের নিকটস্থ গোকর্ণ গ্রামের জনৈক অধ্যাপকের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে অই অধ্যাপকের কন্যার সাথে রামচন্দ্রের বিয়ে হয় এবং মুরশিদাবাদেই তারা অবস্থান করেন। কিছুদিন পরে রুদ্রচক্রবর্তী ও নারায়ন চক্রবর্তী নামে রামচন্দ্রের দুই ছেলের জন্ম হয়। তারাও বিদ্যা শিক্ষায় আগ্রহী ছিল।
উকিল কুশদ্ধজ রায় নারায়ন চক্রবর্তীর ছেলে ছিলেন।
তিনি বিদ্যাশিক্ষায় বেশি অগ্রসর না হয়ে মুর্শিদাবাদের উকিল পদে নিযুক্ত হন এবং নবাব সরকার তাকে ‘রায়নারায়ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। রুদ্র চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তার ছেলেদের সাথে কুশদ্ধজ রায়ের বিবাদ হলে তিনি দৌলত গাজীর নিকট আবাসন প্রার্থনা করেন। দৌলত গাজী তার উপর পূর্ব সন্তুষ্টির কারনে জয়দেবপুরের নিকটস্থ ‘চান্দনা’ গ্রামে একটি বাড়ি ও কিছু জমি প্রদান করেন। কুশদ্ধজ রায়ের মারা জাবার পর তার ছেলে বলরাম রায় দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হন।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।