বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত উদ্যান হলো ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্যের কারণে এ উদ্যানটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যে কয়টি প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় একটি। রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-(১৯৭৪) অনুযায়ী ৫,০২২ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি গড়ে তোলা হয়।
এ প্রাকৃতিক বনভূমিটি ১৯৮২ সালের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত হয়নি। প্রাণীবৈচিত্র্যের দিক দিয়ে এই উদ্যান অনন্য।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালো চিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। এ বনে এক সময় খেকশিয়াল, বাগদাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যেত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।
এ উদ্যানে গড়ে প্রায় ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বন বিভাগ এই বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও এ বন বিশেষভাবে আলোচিত।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান মূলত ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি। এ বনে শালগাছের আধিক্য রয়েছে।
গজারি বনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শীতকালে এই বৃক্ষের পাতা ঝরে যায়। গ্রীষ্মকালে আবার নতুন পাতা গজায়। এ বনে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির লতা, ২৭ প্রজাতির তৃণ, ৩ প্রজাতির পাম জাতীয় বৃক্ষ, ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ। শাল এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে কাঁঠাল, আজুলি, কুম্ভী, গান্ধী গজারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া এই বনে কৃত্রিমভাবে ইউক্যালিপটাস আর রাবারের বনায়ন করা হয়েছে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। স্পটগুলোর হলো আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার কটেজগুলো হলো বকুল, মালঞ্চ, মাধবী, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি।
এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউস রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। পিকনিক বা পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান। ঢাকা-ত্রিশাল-ময়মনসিংহ সড়কে অর্থাৎ ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে এই জাতীয় উদ্যানটি অবস্থিত।
সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত বনানী পরিবেশের জন্য এ উদ্যান বিখ্যাত।
এই জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে জলাশয়। এসব জলাশয়ে শৌখিন পর্যটকরাও নৌকা করে বেড়াতে পারেন। এ ছাড়া বনভোজনের সেরা আকর্ষণ হচ্ছে এই ভাওয়ালের ন্যাশনাল পার্কটি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।