আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

সুখীমানুষ নদীর ধারে কাঁশবন। শাদা কাঁশবন পিছনে ফেলে ছোট দু’টি ভাইবোন খোলা মাঠের মধ্য দিয়ে সামনে এগোচ্ছে। অজানা পৃথিবী যতই আবিষ্কার করছে ততই যেন উত্তেজনা বাড়ছে। আজ তারা যে মিশনে বের হয়েছে সেই মিশন আরো উত্তেজনাময়। আজকের মিশনের নাম ট্রেইন দেখা মিশন! ব্যাস, আর বলতে হবে না।

আপনার মাথায় এরইমধ্যে একটা পরিচিত গল্প চলে এসেছে, এইতো? আর গল্পের সেই ভাই বোনের নাম অপু, দূর্গা? দেখলেনতো লেখকদের কতবড় ক্ষমতা! কল্পনা থেকে তৈরী করলেন কাঁশবন, খোলা মাঠ। আর আপনার চোখের সামনে সব ভেসে ওঠতে শুরু করলো। আপনি হয়ত বহুবার নদীর ধারে কাঁশবন দেখেছেন, খোলা মাঠ দেখেছেন। হয়ত ট্রেন দেখেছেন, খোলা মাঠের মাঝখানের সরু রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে কু ঝিকঝিক করে সেই ট্রেন। কিন্তু যেই আপনি পথের পাঁচালী পড়ছেন, আপনি কিন্তু আপনার সব অভিজ্ঞতা ভুলে গিয়ে নিজেও অপু দূর্গার সাথে শিশু হয়ে বসে আছেন।

পড়ছেন আর যেন অপু দূর্গার সাথে নতুন পৃথিবী দেখছেন। কি রোমঞ্চ সেই যাত্রায়! যিনি তার কল্পনার চরিত্রগুলোকে এমন সহজ করে পরিচিত ভুবনে নামিয়ে আনতে পারতেন তাঁর নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে ইনিই নিয়ে এসেছিলেন নতুন আর এক উপস্থাপনার ঢং। লেখনীযে কত সহজ হতে পারে, কত বাস্তব হতে পারে তা বিভূতি না পড়লে সত্যিই টের পাওয়া যায় না। প্রত্যেকটি চরিত্র মনে হবে এইতো আপনার দেখা কোন একটি চরিত্র।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। মহানন্দ ছিলেন বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত। পান্ডিত্যের জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধী পেয়েছিলেন। মায়ের নাম ছিলো মৃণালিনী দেবী।

মা বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বিভূতির পড়াশুনা শুরু হয় পিতার কাছে। পরে নিজ ও পাশের গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়ার পর তিনি বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসাবে পড়াশোনার সুযোগ পান। পড়াশোনার শুরু থেকে শেষ অবধি তিনি তার পখড় মেধার পরিচয় রেখেছেন।

বার বার প্রথম শ্রেনীতে পাশ করা বিভূতি তার অনার্সও ডিসটিংশন সহ পাশ করেন। পরে এম.এ তে আইন বিষয়ে ভর্তি হলেও তা আর শেষ করেননি। পেশা হিসাবে প্রধানত শিক্ষকতাই বেছে নিয়েছিলেন। মাঝে কিছুদিন খোলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়ীতে গৃহশিক্ষক ও সেক্রেটারীর কাজ করেন। পরে তাঁর ভাগরপুর এষ্টেটের সহকারী ম্যানেজার হিসাবেও বেশ কিছু দিন কাজ করেন বিভূতিভূষণ।

১৯২১ সালে প্রবাসী পত্রিকায় উপেক্ষিতা নামক গল্পের মাধ্যমে তিনি তাঁর লেখালেখি শুরু করেন। পরে ভাগলপুরে থাকার সময় তিনি ১৯২৫ সালে পথের পাঁচালী লেখা শুরু করেন। প্রায় তিন বছর সময় ধরে তিনি লেখেন এই উপন্যাস। এই উপন্যাসটিকেই তার শ্রেষ্ট সৃষ্টি ধরা হয়। যদিও ইছামতী লোখার জন্য তিনি ১৯৫১ সালে তিনি মরনোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান।

পথের পাঁচালীর পরবর্তী কাহিনী নিয়ে তিনি অপরাজিত নামের আর একটি উপন্যাস লিখেন। সবকয়টি লেখনিতেই লেখকের নিজস্ব জীবনের প্রতিচ্ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত উপন্যাস ছাড়াও তাঁর লেখা প্রায় ২০ টি গল্পগ্রন্থ, বেশ কিছু ভ্রমন কাহিনী ও দিনলিপি রয়েছে। ১৯৫০ সালের আজকের দিনে বাংলা সাহিত্যর এই মহান লেখকের দেহাবসান হয়। অমর সেই লেককের জন্য অসীম শ্রদ্ধাঞ্চলী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।