আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'আম-আঁটির ভেঁপু' এবং অন্যান্য

http://profiles.google.com/mshahriar

দৈনিক কালের কণ্ঠের শিলালিপির চতুর্দশ সংখ্যায় প্রকাশিত মৃত্যুঞ্জয় রায়ের "বিশেষ রচনা" "বাংলার উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি" পড়তেছিলাম৷ রচনাটার শুরু হয়েছে এভাবে- 'চড়কের আর বেশি দেরি নাই। বাড়ি বাড়ি চড়কের সন্ন্যাসীরা নাচিতে বাহির হইয়াছে। দুর্গা ও অপু আহার-নিদ্রা ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসীদের পিছনে পিছনে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরিয়া বেড়াইল। অন্য গৃহস্থদের বাড়ি হইতে পুরাতন কাপড়, সিধা, পয়সা দেয়_কেউবা ঘড়া দেয়; তাহারা কিছুই দিতে পারে না দুটি চাল ছাড়া। দশ-বারো দিন সন্ন্যাসী নাচনের পর চড়কের পূর্বরাত্রে নীলপূজা আসিল।

নীলপূজার দিন বৈকালে একটা ছোট খেজুর গাছে সন্ন্যাসীরা কাঁটা ভাঙে। প্রতি বৎসরই একই খেজুর গাছে কাঁটা ভাঙা হয় না। কাঁটা ভাঙার নাচ হইয়া গেলে সকালে চড়কতলাটাতে চড়ক পূজার আয়োজন করা হয়। খেজুরের ডাল দিয়া নীলপূজার মণ্ডপ ঘিরিয়াছে। চড়কতলার মাঠের মধ্যে কুমির বানিয়ে সন্ন্যাসীরা শ্মশান জাগাইতে যাইবে।

একজন মড়া হইবে। তাহাকে বাঁধিয়া নিয়া যাইবে শ্মশানে। তাহাকে আবার বাঁচাইবে। তাহার পর মড়ার মুণ্ডু নিয়া আসিবে, ছড়া বলিতে বলিতে আসিবে, উহার সব মন্তর আছে। ছড়াটি হইল_ স্বগগো থেকে এলো রথ, নামল খেতু তলে।

চব্বিশ কুটি বাণবর্ষা শিবের সঙ্গে চলে। সত্যযুগের মড়া আর আওল যুগের মাটি। শিব শিব বলরে ভাই ঢাকে দ্যাও কাঠি। ' বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত 'আম আঁটির ভেঁপু' উপন্যাসে চড়কপূজা ও নীলের গাজনের এই চমৎকার চিত্রটি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। এই পর্যন্ত এসে ভ্রূ আপনি কুঁচকে এলো৷ 'আম আঁটির ভেঁপু' নামে বিভূতিভূষণের কোনো উপন্যাস আছে বলে আমার জানা নাই৷ নাকি আমি ভুল জানি? কাহিনী কি? অতএব কাহিনীর খোঁজে বিভূতিভূষণের রচনাবলী টেনে বের করতে হলো৷ স্কুল ছাড়ার পর পথের পাচালী আর পড়া হয় নি, স্মৃতিতে অনেক মরিচা পড়েছে (যদিও বিভূতিভূষণের অন্য লেখাগুলো স্কুল ছাড়ার পরই পড়া)৷ তবু অপু-দুগ্গার নাম আছে বলেই সন্দেহ হলো, এই অংশটা পথের পাঁচালীর কোনো অংশ হবে৷ পথের পাচালীর পাতা উল্টে দেখলাম, সেটার প্রথম পরিচ্ছেদ শুরু হয়েছে "বল্লালী-বালাই" নামে, চলেছে ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পর্যন্ত৷ এরপর সপ্তম পরিচ্ছেদ শুরু হয়েছে "আম-আঁটির ভেঁপু" নামে, এটা চলেছে ত্রিংশ পরিচ্ছেদ পর্যন্ত৷ তো এখন এই যে মৃত্যুঞ্জয় রায়ের লেখায় আম-আঁটির ভেঁপুকে স্বতন্ত্র উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করা, এটা কি লেখকের জানার ভুল নাকি কি ভালো বুঝলাম না৷ এটা যদি লেখকের কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলেও শিলালিপির সম্পাদক পর্ষদের তো এটা চোখে পড়ার কথা৷ নাকি সম্পাদক পর্ষদ আদতে কোনো লেখাই পড়েন না? বিভূতিভূষণের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়লো, বিভূতিভূষণ আসলে উপন্যাস লিখতেই জানতো না৷ প্রিয় পাঠক, আগেই আমার উপর ক্ষেপে উঠবেন না৷ এই কথা আমার বলা না৷ শিলালিপির ত্রয়োদশ সংখ্যায় মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের রচনা "এলোমেলোভাবে মনে এলো"তে উল্লেখ আছে- "ইউনেস্কোর বিশ্বসাহিত্য বিভাগে 'অনুগ্রহ করে' বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী তর্জমা করে দিয়েছিলেন 'আর্থার সি ক্লার্ক' ও 'তারাপদ মুখার্জি'- লন্ডনের সোয়াসের দুই মাতব্বর৷ তারা ভূমিকায় বলেছিলেন- বিভূতিভূষণ ঠিক নভেল লিখতে জানতেন না- তাই দূর্গা মারা যাওয়ার পর হরিহর রায় যখন গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখনই সত্যি সত্যি নভেল শেষ হয়ে গেছে- সেই জন্য তারা আর 'পথের পাঁচালী'র শেষটুকু তর্জমা করেন নি৷ তারা বিভূতিভূষণকে শুধরে নভেলটি যেমন হওয়ার কথা ছিলো তেমন করে দিয়েছেন৷' এই কথা পড়ার পর বলার আর কিছু থাকে না৷ শুধু এইটুকু বলতে চাই, তারাপদ মুখার্জি কে আমি চিনিনে, কিন্তু আর্থার সি ক্লার্কের কাছ থেকে এরকম কিছু কখনো আশা করিনি৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদ ১০০১ টি অবশ্য পাঠ্য বইয়ের তালিকা তৈর করছেন৷ তালিকার প্রথম অংশ প্রকাশ করেছেন তিনি৷ অবশ্যপাঠ্য বইয়ের প্রথম তালিকা- লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা: ১. পথের পাঁচালী ২. দৃষ্টি প্রদীপ ৩. আরণ্যক ৪. ইছামতী ৫. দেবযান (এই তালিকা থেকে 'অপরাজিত' বাদ গেলো কি করে আমার জানা নাই৷)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।