জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই সেখানে শেষ কথা নয়। গতকাল সকালে লিখেছিলাম অদ্ভুত মাতৃত্ব নিয়ে । সেদিনই রাতের বেলা এক ভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন। পড়া শেষ করে খাবারের উদ্দেশ্যে গেলাম নীলক্ষেত। সেখানে বঙ্গবন্ধু হলের বাবু আর সাথে মিশুও উপস্থিত।
পকেট ছোট তাই তিন জন চলে গেলাম বঙ্গবন্ধু হলে খেতে। খাওয়ার পর গল্প করতে করতে দেখি ১২ টা বেজে গেছে। একা একা হলে ফিরতে ভাল লাগছিল না দেখে তাদের বললাম আমাকে এগিয়ে দে। হাটা শুরু করলাম ফুলার রোড ধরে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাষ্কর্যের সামনে এসে বললাম চল পলাশী থেকে চা খেয়ে যাই।
তোরা রিক্সা নিয়ে চলে যাস। আসলাম পলাশী।
মিলনের দোকানের চা খেয়ে রওনা হলাম আবার। তিন জনই ক্লান্ত কিন্তু হই হুল্লোর বন্ধ নেই। রিক্সাওয়ালারা কেউই যাবে না।
কি বিপদ! হঠাৎ প্রায় ৬০ বছর বয়সী একজন চাচা যেতে রাজি হলেন। বলে রাখছি আমি শুকনো হলেও আমার অপর দুই বন্ধু পাহাড়তুল্য। তিনজনই ভাবনায় পড়ে গেলাম , বৃদ্ধ মানুষ , কষ্ট হবে ওনার। চাচা বললেন চলেন বাবা , পারব। উপায়ন্ত না দেখে উঠে বসলাম তিনজন।
হঠাৎ এস এম হলের সামনে আসতেই চাচা ডুকরে উঠলেন। বললেন বাবা গেছিলাম মোহম্মদপুর এক লোকেরে নিয়া। ঐ লোক ভাড়া দেয় নাই। উল্টা আমার সব টাকাও রাইখা দিসে। টাকা দিতে চাই নাই।
হাতে কামড় দিয়া ছিনাইয়া নিসে। ব্যাথা করতেসে বাবা । মাইরা আমার শার্টও ছিড়া ফেলসে। কত কষ্ট কইরা শ তিনেক টাকা আজকে জমাইছিলাম। সব নিয়া গেসে বাবা সব।
বেটা মাতাল ছিল , কত কষ্ট কইরা এই শরীর নিয়া টাইনা দিয়া আসছি। গরীবের টাকা মাইরা ও কী শান্তি পাইল বাবা আল্লাই জানে।
আমরা তিনজন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বললাম চাচা থাকেন কোথায়? তিনি বললেন সেকশনের কাছে কলার আরতের পাশে। আমি জগন্নাথ হলের সামনে নেমে গেলাম।
মনে হচ্ছিল বুকে আজ পাহাড় নিয়ে ফিরছি। তাকে সেই মুহূর্তে সাহায্য করার মত সামর্থ্য তখন আমার ছিল না। আর করলেও তিনি নিতেন কী না আমার সন্দেহ।
মানুষ এমন কেন হয়? লোকটির এমন প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারিনি। শুধু মনে হয়েছে ”পাপ কোনদিন পিছু ছাড়বে না , যে ভাবেই হোক সে তার খন্ডন করিয়েই ক্ষান্ত হবে।
সেই মানুষরূপ পশুটি অবশ্যই তার কৃতকর্মের শাস্তি এই পৃথিবীতেই ভোগ করে যাবে। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তা দেখেছেন।
অনেক কেই দেখি রিক্সা ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করতে , অনেকে ভাড়াও দেয় না , পত্রিকায় পড়ি একটাকার জন্য রিক্সাওয়ালা নিহত। জোয়ান চালকদের জন্য রাগারাগি ঠিক আছে , কিন্তু যারা দুবেলা দুমুঠো ফেন ভাত নিজের আর নিজের স্ত্রীর মুখে তুলে দেবার জন্য এই ষাট বছর বয়সে রিক্সার স্টিয়ারিং ধরেছে তাদের প্রতি কেন আমাদের এই ব্যবহার।
আমাদের জন্য যুদ্ধ করে , ইট পাথর বয়ে বিল্ডিং বানিয়ে , কাঞ্চন বর্ণের দেহ কয়লা রঙ করে , জীবনের সর্বস্ব দিয়ে এই সভ্যতার ভিত্তি প্রস্তুতকারী বৃদ্ধরা আজ গরীব ও অসহায় রিক্সা চালক এই কী তাদের অপরাধ ! ধিক সভ্যতা ধিক তোমায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।