দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতা (ভারতবর্ষের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী মাদ্রাসা) জাকির আব্দুল কারিম নায়েকের বিরুদ্ধে একটি আনুষ্ঠানিক ফতোয়া দিয়েছেন। ২০০৮ সালে এরা নায়েকের সম্বন্ধে বলেছেন—
“…একজন গাইর মুক্বাল্লিদীন প্রচারক …তার কথার উপর নির্ভর করা উচিত নয়”১
“…তিনি নির্ভরযোগ্য নন, এবং মুসলমানদের তার কথা শোনা উচিত নয়। ”২
এরা আরো বলেন যে—
“…ভুল ধারণা ছড়িয়ে তিনি ইলম ও হিকমতের পথ থেকে সরে গেছেন এবং সরল মুসলমানদের ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছেন। ”৩
আরো অনেক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন। ৪ জুন ২০১০ সালে জাকির নায়েকের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছে যুক্তরাজ্যের ২০লক্ষ সুন্নি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব British Muslim Forum সংগঠন।
মাওলানা আহমাদ নিসার বেগ কাদরি, ব্রিটিশ মুসলিম ফোরামের ভাইস-চেয়ারমান বলেন—
“Dr. Zakir Naik is a very controversial figure. He openly supports Al Qaeda and the Talibans. He openly ridicules other faiths as well as the beliefs of the Ahl-us-Sunna (Traditional Sunnis)… Dr Zakir Naik is medical doctor by professional training and not an Islamic preacher or scholar. He has no degree in Islamic studies and gives speeches designed to mock and incite hatred of other faiths as well as create divisions amongst Muslim sects. Those Muslims who support Naik are in the minority. They are either Wahhabi-influenced or, English-speaking Muslim enthusiasts wanting, with the right intentions, to learn about their religion but from the wrong guy”
[ ডাঃ জাকির নায়েক বেশ বিতর্কিত একজন ব্যক্তি। তিনি প্রকাশ্যে আল-কায়েদা ও তালেবানদের সমর্থন করেন। তিনি প্রকাশ্যে অন্যান্য ধর্ম এবং আহ্ল-উস-সুন্না সম্পর্কে টিটকারি করেন … ডাঃ জাকির নায়েক পেশা হিসেবে একজন ডাক্তার, ইসলামী প্রচারক বা পণ্ডিত নন। ইসলামি স্টাডিসে তার কোনো ডিগ্রী নেই। অন্য ধর্মকে ব্যঙ্গ করা ও এদের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তিনি বক্তৃতা দেন, তা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন মুসলমান দলের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেন।
যারা নায়েকের সমর্থন করেন তারা সংখ্যালঘু। এরা হয় ওয়াহাবী-প্রভাবিত মুসলমান আর হয় ইংরেজি-ভাষী মুসলমান যারা ভাল উদ্দেশ্যে ভুল ব্যক্তির কাছে ধর্মের দীক্ষা পাচ্ছে। ]৫
নায়েকের বিরুদ্ধে আরো বলেছেন লখনউ শহরের কাজী মাওলানা মুফতি আব্দুল ইরফান কাদভী, উত্তর প্রদেশের মুফতি মুহাম্মদ আশরাফ কাদভী, এবং মাওলানা আশরাফ রাজা।
টেলিভিশনের এই “শান্তি”প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েকের উপর সুশিক্ষিত মুসলমানরা এত অসন্তুষ্ট কেন? এই প্রবন্ধে আমরা এর বিভিন্ন কারণ বিশ্লেষণ করে দেখব।
নায়েকের অনর্গল ইংরেজি, আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গি, এবং অন্যান্য ধর্মের অপব্যাখ্যা, ব্যঙ্গ ও তামাশা করার দক্ষতা দিয়ে তাঁর ভক্তদের কাছে এই টেলিভিশন বক্তা একজন বিনোদনধর্মী প্রচারক হিসেবে রক্-স্টারের মত আভা লাভ করেছেন।
কিন্তু অন্যদের কাছে তিনি শুধু একজন দক্ষ বক্তা ও মেমরী ড্রাইভ্; তার যুক্তি দুর্বল, তিনি প্রায়ই ভুল তথ্য দেন, এবং তার চরমপন্থী মতবাদ বিপদজনক। জাকির নায়েকের মিথ্যা পরিসংখ্যান প্রসঙ্গবহির্ভূত অসত্য-উদ্ধৃতি এবং সুচিন্তিত ভুলব্যাখার জন্য টেলিভিশন মাধ্যম অতুলনীয়। এই পুস্তিকাটিতে আমরা রূপকভাবে “টেলিভিশন রিমোট কন্ট্রোলের পজ বাটন” টিপে জাকির নায়েকের যুক্তি ও তথ্যগুলো ভালভাবে বিশ্লেষণ করব।
কিন্তু নায়েকের যুক্তির দুর্বলতা দেখার আগে তার বিভিন্ন ভাল দিকও উল্লেখ করা উচিত। তিনি তার শ্রোতাদের কোর’আন শরীফ মাতৃভাষায় পড়তে উৎসাহিত করেন, যেটা সমাজে আজকাল খুব দরকার।
টাকা-পয়সা অথবা বলিউড তারকাদের পিছনে না ছুটে তিনি যুব-সমাজদের আল্লাহ্র খোঁজ করতে উৎসাহিত করেন। তিনি মদ-খাওয়া, অশালীনতা, ব্যভিচার, এবং কৃপণতার বিরুদ্ধে কথা বলেন। এই সবই প্রশংসার যোগ্য। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।