অহন থিক্কা সব শয়তানরে দৌরের উপর রাখুম। পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০১
বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী এবং পরিবারের মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরী
বিয়ে একটি নব পরিবারের সূচনা সিড়ি। একটি ছেলে একটি মেয়ের একত্রে বসবাসের যে সুখময় সংসার, তার আবশ্যক পূর্বশর্ত বিয়ে। আর নিছক ভোগচাহিদা পূরণের জন্য তো বিয়ে নয় বরং এ এক অমূল বন্ধন। বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সুন্নতি মধুময় সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এখনকার পরিবার গুলো ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে একপায়ে রাজি থাকে কিন্তু কার হক্ব কতটুকু তা বেশির ভাগই বেখবর। যার দরুন দিনদিন পারিবারিক অশান্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্বি পাচ্ছে। সংসার ভাঙ্গনের হার এখন মুসলিম দেশ গুলোতেও ব্যাপক আকার ধারন করেছে। যেটা প্রকৃত মুসলমানের কখনও কাম্য নয়। সাধারন মানুষ তো দুরে থাক, বর্তমানে মাওলানা, মুফতি, ইমাম-খতিব তাদের মধ্যেও পারিবারিক বিভিন্ন ইলমের ঘাটতি থাকায় সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সবাইকে জানতে হবে, সচেতন হতে হবে এ অমূল্য বন্ধন সম্পর্কে। কেননা বিয়ে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দিন বা বছরের জন্য নয়। সারাজীবনের প্রশ্ন এখানে।
বিবাহ পরবর্তী সুখময় মধুর সম্পর্ক নিজেকে আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহওয়ালী হতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অপরদিকে আল্লাহ পাক না করুন কারও যদি অশান্তি সৃষ্টি হয় তাহলে আল্লাহওয়ালা বা আল্লাহওয়ালী হওয়া তো দুরের কথা নিজেকে জমিনে ঠিকিয়ে রাখা কঠিন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
আর কারও যদি অশান্তি অবস্থায় সংসার টিকে থাকে তবে সন্তান-সন্তুতি ভালোভাবে বেড়ে উঠা কষ্টকার হয়ে যায়। সামান্য অজানা বা অসচেতন পুরো জীবনকে জাহান্নাম বানিয়ে রাখে।
বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রী বা তাদের পরিবারগুলোকে মানসিক প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে নিতে হবে। বিয়ের পর কোনও ঝামেলা হলে ছেলে বা মেয়ে ডিরেক্টলি তার মা-বাবাকে জানিয়ে দেয়, আমি তো এখন প্রস্তুত ছিলাম না। তোমরা বিয়ে দিয়েছে তোমরা দেখে নাও।
তখন ফিৎনা দিন দিন বাড়তে থাকে। একসময় তালাকও দিয়ে ফেলে। অথচ দেখে যায় ফিৎনার বিষয়টা তেমন কিছু কঠিন বিষয় না। ছেলেটা বা মেয়েটা একটু সচেতন হলেই যথেষ্ট ছিলো। মুলত এখনকার পারিবারিক ফিৎনাগুলো সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করেই বেশি সৃষ্টি হয়।
অতএব পারিবারিক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য বিয়ের পূর্বেই মানসিক প্রস্তুতি নেয়া জরুরী। কেননা হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ প্রতিটি ভালো কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল”। বুখারী শরীফ। অর্থাৎ মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরী।
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০২
বিবাহের পূর্বে নব সংসারের জন্য সুন্নতী পরিবেশ আলাদাভাবে ব্যবস্থা করতে হবে।
যেন পরিবারের সদস্যদের সাথে সাংঘাষিক বা বেপদার জায়গা না হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছেন, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছেন ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন।
কাজেই পাত্রী এনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য।
পরিবারের সদস্যদের সাথে সাংঘার্ষিক হয় এমন পরিবেশে রাখলে, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার পরিবারের কর্তা বা পাত্র কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাক উনার কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন এবং শক্ত। কেননা পর্দার জন্য এবং ফিৎনামুক্ত উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ফরয। এ বিষয়ে পুরুষকে সহনীয় ভূমিকা রাখতে হবে।
দায় এড়ানোর সুজোগ ইসলাম কাউকে দেননি।
আমরা মুসলমান। কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নারীদেরকে যে অভাবনীয় সম্মান দিয়েছেন, সেটা রক্ষা করতে হবে। নব পরিবারে ফিৎনা সৃষ্টি হবে এমন কোনও কাজ বা পরিবেশ রাখা যাবেনা। একটা মেয়ে সমস্ত কিছু ত্যাগ করে স্বামীর খেদমতে চলে আসেন।
এখানে থাকেনা তার নিজস্ব পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা আত্বীয়-স্বজন। একান্তই একটা অপরিচত জায়গায় তার আগমন ঘটে। আর একটা নতুন জায়গায় একটা মানুষ প্রথম আসলে তার অনেক কিছু বুঝতে বাকি থেকে যায়।
অতএব পরিবারে মধুময় সুখের সুন্নতি সংসারের জন্য ফিৎনামুক্ত এবং পর্দাবেষ্টিত পরিবেশ নিশ্চিত করা পুরুষের জন্য অবশ্যই দায়িত্ব-কর্তব্য। কেননা কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘‘নারীদের তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই তোমরা বিবাহ করো এবং তাদের অধিকারটুকু ভালোভাবে আদায় করে দাও।
’’ (সূরা নিসা-২৫)
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৩
পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম উনার দৃষ্টিতে বিশেষ একটি গুণ দ্বীনদারী বা পরহেজগারী যাচাই করে দেখা আবশ্যক।
বিবাহের একটি অন্যতম গুণ হচ্ছে, ‘বর-কনের দ্বীনদার ও ধার্মিক হওয়া’। এ সম্পর্কে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘চারটি গুণের কারণে একটি মেয়েকে(বা ছেলেকে) বিবাহ করার কথা বিবেচনা করা হয়। তার ধন-সম্পদ, তার বংশ গৌরব-সামাজিক মান-মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং দ্বীনদারী। কিন্তু তোমরা দ্বীনদার মেয়েকে(বা ছেলেকে) বিবাহ করে সফলতা অর্জন কর।
’(বুখারী শরীফ)
উল্লেখিত হাদীস শরীফে চারটি গুণের মাঝে সর্বশেষ গুণটাই মূখ্য। প্রথম তিনটি গুণ বিদ্যমান থাকার পরেও যদি শেষের গুণ-দ্বীনদারী তথা পরহেজগারী না থাকে, তাহলে প্রথমোক্ত তিনটি গুণ মূল্যহীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ বর-কনের মধ্যে অবশ্যই দ্বীনদারী তথা পরহেজগারী থাকতে হবে। যদি বরের দ্বীনদারী না থাকে তাহলে পিতার কখনই ঠিক হবেনা মেয়ে দেয়া, আর যদি মেয়ের পরহেজগারী না থাকে তাহলে ছেলের উচিত হবেনা মেয়েকে গ্রহন করা। উভয় পরিবারকে মধুময় সুন্নতি সংসারের জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা লক্ষ রাখতে হবে।
কোনও ভাবেই হালকা করে দেখার এতটুকু সুযোগ দেয়নি ইসলাম-এটা মনে রাখতে হবে।
আরো হাদীস শরীফ উনার মধ্যে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,- ‘তোমরা মেয়েদের (বা ছেলেদের) কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না। কেননা, এ রূপ-সৌন্দর্য অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-সম্পদের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না। কেননা এ ধন-সম্পদ তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে।
বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্ত্তত একজন দ্বীনদার দাসীও(দাসও) অনেক ভাল। (ইবনে মাযাহ শরীফ)।
পবিত্র কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে খুব ভাল ব্যবহার(সুন্নতি আচরন) ও সৎভাবে তথা দ্বীনদারীর সাথে বসবাস করো। তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর, তাহলে হতে পারে যে, তোমরা একটা জিনিসকে অপছন্দ করছ, অথচ আল্লাহ পাক তার মধ্যে বিপুল কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।
(সূরা ৪ নিসা, আয়াত শরীফ-১৯)
এখানে বর-কনে উভায়কে দ্বীনদারী বা শরীয়ত সম্মত বিধিবদ্ধ জীবন-যাপনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ জান্নাতের ছোয়ায় থাকতে চাইলে পৃথিবীতে নিয়ম-মাফিক শরীয়ত সম্মত জীবন-যাপন করতে হবে। তবেই না বাধাহীন চির সুখের সুন্নতী মধূময় সংসার পাওয়া যাবে। কিন্তু আমরা এখন বিবাহ দেয় টাকা-পয়সা বা রুপ দেখে। ফলে আজকের সংসারে সুন্নতের কোনও প্রতিফলন ঘটছে না।
সঙ্গতকারনেই সেই সংসার গুলো ফিৎনায় পূর্ণ থাকছে । ছেলেমেয়ে কখনও নেক সন্তান হয়না। পিতা-মাতার কথা সন্তানরা ঠিকমত শুনেনা, যেমন পিতা-মাতা নিজেরাই এক অপরের কথাই আনুগত্য রাখেনা। আর একমাত্র দ্বীনদারী বা পরহেজগারী দ্বারাই সুখকর,জান্নাতি,মধুময়,শান্তির নীড় হবে নব দম্পত্তির সংসার। অন্যকোনও ভাবে কল্পনা করা যেতে পারে কিন্তু বাস্তবে সুখের হবেনা, হবে দু:খের নীড়।
অতএব বিয়ের আগে বর কনের দ্বীনদারী তথা পরহেজগারীতা দেখেই বিয়ে ঠিক করতে হবে। নইলে নই।
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৪
‘মোহরে ফাতেমি’ বা ’যাহরা ই মোহর’ হচ্ছে খাছ সুন্নত। বিয়ের আগে এটা নিয়ে তথা মোহরানা নিয়ে ফয়সালা হওয়া অবশ্যই কর্তব্য
মানুষ সামাজিক জীব। ঘর-সংসারে যে মায়া ও ভালোবাসার বন্ধনে আমাদের বসবাস তা পরম করুণাময় আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য নেয়ামতের অন্যতম একটি।
সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি নারী ও পুরুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী আবদ্ধ হয় বিবাহবন্ধনে এবং তৈরি হয় সুখময় সংসার, তারপর সন্তান-সন্ততি। এভাবেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।
যে মহান দয়াময় অদৃশ্য থেকে এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের এ নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কুরআন শরীফে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন , ‘‘এই যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন- যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তির আশ্রয় নাও।
তিনিই তো তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা এবং মায়া গেঁথে দিয়েছেন, এটা তো উনারই নিদর্শন। ’’ (সূরা রূম-২১)
এ বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনায় মহান আল্লাহ পাক নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে নারীর জন্য মোহরানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা আদায় করা পুরুষের জন্য আবশ্যক। ইসলাম উনার পরিভাষায় দেনমোহর বা মোহরানা একান্তই কনের অধিকার ও প্রাপ্য, যা আদায় করা বরের জন্য ফরজ। প্রতিটি বিবাহিত পুরুষের ওপর অবশ্য আদায়যোগ্য আমল।
হোক তা নগদ কিংবা বাকি। আজ কিংবা কাল।
মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। এটা নারীর মূল্য নয় যে তা পরিশোধ করার পর মনে করতে হবে, এ নারী এখন স্বামীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আবার তেমনিভাবে তা শুধু কথার কথাও নয়, যে শুধু মুখে মুখে নির্ধারণ করা হলো কিন্তু জীবনভর তা দেওয়ার কোনো তাগিদ থাকলো না।
বরং স্ত্রীকে নিজের ঘরে আনার সময় উপহার হিসেবে তাকে এ মোহর দিতে হবে এবং সম্মান জানিয়ে তাকে নিজের ঘরে তুলতে হবে।
এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফে বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও স্বেচ্ছায়, তবে তারা যদি তা থেকে কোনো অংশ মাফ করে দেয়, তখন তা তোমরা ভোগ করতে পার। ’’
আল্লাহ পাক তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন , ‘‘নারীদের তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই তোমরা বিবাহ করো এবং তাদের অধিকারটুকু ভালোভাবে আদায় করে দাও। ’’ (সূরা নিসা-২৫)
একই প্রসঙ্গ মহান আল্লাহ পাক আরও উল্লেখ করেছেন সূরা মুমতাহিনার ১০ নং আয়াত শরীফে এবং আরও কয়েক জায়গায়।
বারবার তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নারীর অধিকার ও সম্মান যেন আদায় করা হয়।
বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মোহর আদায় করা উচিত। তবে কারণবশত তখন অপারগ হলে কবে আদায় করবে- তা নির্ধারণ করতে হবে। নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাহিরীভাবে অবস্থানের সময় এবং সাহাবা ই ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সময়েও সাধারনত কেউ নারীর মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করতেন না। নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে যেসব বিয়ে দিয়েছেন, হাদীস শরীফ উনার কিতাবসমূহে সেসবের বিবরণে দেখা যায়, তিনি নগদ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করিয়েছেন- হোক তা লোহার আংটি কিংবা যুদ্ধে ব্যবহৃত বর্ম।
বাকিতে মোহরানা দেওয়ার প্রচলন তখন তেমন ছিলনা।
অপ্রিয় হলেও সত্য, এ মোহরানা আদায়ের বেলায় আমাদের সমাজের পুরুষ ব্যাক্তিরা নানান ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকে। বিয়ের মজলিসে হয়তো সবাইকে শোনানোর জন্য মোহরানা ধরা হয় লাখ টাকা- অথচ সারা জীবন স্ত্রীর হাতে এর অর্ধেকও তুলে দেওয়ার সৎসাহসটুকু তারা দেখাতে পারেন না। অনেকে আবার কৌশলে মাফ চেয়ে নেন। এর সঙ্গে উল্টো যোগ হয়েছে লোভ লালসায় ঘেরা আজকের এ সভ্যতার নতুন অভিশাপ ‘যৌতুক’।
মেয়ের বাবার কাছে ‘জামাই’কে খুশি করার জন্য উপঢৌকনের নামে ‘যৌতুক’ দাবি করে বরপক্ষ। আর এ অভিশাপে বিষাক্ত হচ্ছে কতো সুখের সংসার। আমাদের নীচু মানসিকতার এ বহিঃপ্রকাশ শুধু দুঃখজনক নয়, চরম অপরাধও।
যেসব বিবাহিত পুরুষ আজও নিজেদের জীবনসঙ্গিনীর দেনমোহর আদায় করতে পারেননি কিংবা আদৌ তা পরিশোধের ইচ্ছা নেই, তাদের ব্যাপারে বায়হাকী শরীফে রয়েছে, নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে পুরুষ বিয়ে করলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সে স্ত্রীর মোহরানা আদায়ের ইচ্ছাও করেনি, তবে সে অবৈধ ব্যভিচারকারী (ধর্ষণকারী) হিসেবে গণ্য হবে।
ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে, নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, মোহর আদায় করার নিয়ত ছাড়া যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ে করে আর আল্লাহ পাক তো ভালো করেই জানেন যে তার মনে মোহরের নিয়ত নেই, তবে এই লোক যেন আল্লাহ পাক উনাকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখালো এবং অন্যায়ভাবে তার স্ত্রীকে ভোগ করলো।
কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারকারী পুরুষ হিসেবে উপস্থিত হবে।
ফক্বীহ উলামায়ে ক্বিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সর্বসম্মত মত হলো, যে পুরুষ তার জীবদ্দশায় এ মোহরানা আদায় করেনি, মৃত্যুর পরও তা অন্যান্য ঋণের মতো তার কাঁধে রয়ে যাবে। ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য ফক্বীহ উনারা এমনও রায় দিয়েছেন, মোহরানা না পাওয়ার কারণে স্বামীর কাছে যেতে অস্বীকার করা কিংবা তাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অথবা তার সঙ্গে কোথাও যেতে না চাওয়ার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। এমন অবস্থায়ও তার খরচাদি স্বামীর ওপরই বর্তাবে। কারণ মোহরানা এবং নিজের ভরণপোষণ দাবি করা স্ত্রীর অধিকার।
যে কোনোভাবেই স্ত্রী তা চাইতে পারে। (দুররে মুখতার)
এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, পাত্রীদের পক্ষ থেকে যদি পাত্রের সাধ্য অনুযায়ী মোহরানা ধরা হয়, তবে তা সবচেয়ে উত্তম। একথাও সত্য যে, মোহরানার ব্যাপারে ইসলাম সর্বনিম্ন কিংবা সর্বোচ্চ অংক বেঁধে দেয়নি। বরং তা সুন্নত এবং সাধ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এটাও বলেছেন যে, সাধারণ আয়োজনের বিয়েই সর্বোত্তম বরকতময়।
তার মানে এই নয় যে এতো সামান্য পরিমাণ মোহর ধরা হলো, যা স্ত্রীর সম্মান উপযোগী নয় কিংবা এতো চড়াও নয় যা স্বামীর সাধ্যের বাইরে।
ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে, দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে দশ দিরহাম বা ৩০ গ্রাম রূপার সমমূল্য।
নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজের মেয়ে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম এবং উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেলায়ও যে মোহরানা ধরেছিলেন তার পরিমাণ পাঁচশ’ দিরহাম বা ১৩১ তোলা ৩ মাশা রূপার সমমূল্য। (ইবনে মাজাহ-১৫৩২)
নুরে মুজাসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেলায়ও এ পরিমাণ মোহরানা আদায় করেছেন। তবে উম্মে হাবিবা আলাইহাস সালাম উনার বেলায় এর পরিমাণ ছিল চার হাজার দিরহাম।
(আরও বিস্তারিত জানতে মুসলিম শরীফ-১৪২৬, আবু দাউদ-২১০৫, নাসায়ী-৬/১১৬-১১১৯)
মনে রাখা প্রয়োজন, ‘মোহরে ফাতেমি’ বা ’যাহরা ই মোহর’ হচ্ছে খাছ সুন্নত। যা পাঁচশ’ দিরহাম বা ১৩১ তোলা ৩ মাশা রূপার সমমূল্য। আর এ পরিমাণকে বরকতময় মনে করে তা হিসাব করা অবশ্যই জরুরী। এই মোহরের জন্য রয়েছে আলাদা রহমত ও বরকত। এটা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরেকটি বিষয় সবার জানা থাকা প্রয়োজন, বিয়ের সময় নববধূকে যেসব গহনা দেওয়া হয় তা যদি তাকে সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে যেন স্ত্রী চাইলে তা বিক্রি কিংবা কাউকে উপহার অথবা যা খুশি করতে পারেন এবং স্বামী তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আমি তোমাকে এগুলো মোহর হিসেবে দিচ্ছি- তবে তা মোহরানা হিসেবে ধরা যাবে এবং কখনোই তা স্ত্রীর কাছে ফেরত চাওয়া যাবে না, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের পরও নয়। নতুবা যদি তা তাকে শুধু ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, তবে তা মোহরানা হিসেবে আদায় ধরা হবে না। মোহরানা নারীর একচ্ছত্র অধিকার, তিনি এ দিয়ে যা খুশি তা করতে পারেন। স্বামী, বাবা কিংবা অন্য কারোর এ থেকে কিছু নেওয়ার অধিকার নেই। সমাজে প্রচলিত যেসব রীতিনীতি রয়েছে, সেসবের ফাঁক ফোকরে যেন মোহরের অধিকার থেকে স্ত্রী বঞ্চিত না হন, তা খেয়াল করা সব সচেতন মুমিন পুরুষের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য।
জীবনভর যে নারীর ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে সুখী ও নিশ্চিন্ত জীবন পার করে দিচ্ছেন স্বামীরা, এমন ভালোবাসার মেয়েটিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কিয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে ‘ব্যভিচারকারীদের’ সঙ্গে উপস্থিত হওয়া নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৫
হে আমার ছেলে, প্রথমেই আমি আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করছি এ জন্য যে তিনি আমার জীবনটাকে এতটুকু প্রলম্বিত করেছেন যে আমি তোমার বিয়ের রাত দেখতে পাচ্ছি। তোমাকে আল্লাহ পাক তোমার পুরুষত্বের পূর্ণতায় পৌঁছেছেন। আজ তুমি তোমার দীনের অর্ধেক পুরো করতে যাচ্ছো। হ্যাঁ, এখন তুমি সেই জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি একটি মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছিলে।
কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া যা ইচ্ছে তা-ই করেছো এতদিন। কোনো চিন্তা ছাড়াই সমুদ্রে গিয়ে লাফিয়ে পড়েছো। সেখান থেকে তুমি যাচ্ছো এখন এক কর্তব্যপরায়ণতা ও পূর্ণতার জগতে।
একজন পিতা সেদিন নিজেকে সুখী মনে করেন যেদিন তিনি নিজের সন্তানকে পুরুষ হয়ে উঠতে দেখেন। তুমি এক নব্য জগতে এবং এক নতুন জীবনে পা রাখতে যাচ্ছ।
তাতে অনেক কল্যাণ ও সৌন্দর্য রয়েছে, সুন্দরভাবে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারলে তুমি তা দেখতে পাবে। আবার তাতে অনেক অপ্রিয় ও তিক্ত দিক রয়েছে যা তোমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা ও উত্তরোত্তর উন্নতি করতে শিখতে হবে। এক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামী জীবন তথা সুন্নতি সংসার ই তোমাকে যথাযথ পরিচালনা করতে শিখাবে। সুন্নতি জীবনেই আছে একমাত্র কল্যান।
আর অবশ্যই তোমাকে জীবন সঙ্গীনি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তুমি দশটি বিষয়ে লক্ষ্য না রাখলে নিজ ঘরে শান্তি পাবে না। নিজের স্ত্রীর জন্য তুমি এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখবে। অতএব কথাগুলো মনে রেখ এবং এসব অর্জনে সচেষ্ট থেকো :
প্রথম বিষয় হলো : কখনই সুন্নতের বাইরে স্ত্রীর কাছে কিছু আসা করবে না। সব সময় সুন্নতকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলবে।
স্ত্রীকেও সুন্নত অনুযায়ী চলার গুরুত্ব বুঝাবে। সুন্নতের মধ্যেই প্রকৃত সুখী সংসার। তাছাড়া সাব ভন্ডামী।
দ্বিতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা প্রেম ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। এবং তারা চায় ভালোবাসার সুস্পষ্ট উচ্চারণ শুনতে চায়।
অতএব তোমার স্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কার্পণ্য দেখাবে না। এ ব্যাপারে যদি কার্পণ্য করো, তবে তুমি তার ও নিজের মধ্যে নির্দয়তার দেয়াল টেনে দিলে। স্বামী-স্ত্রীর নির্মল ভালোবাসার ব্যকরণে ভুল করলে।
তৃতীয় বিষয় হলো : স্ত্রীরা কঠোর ও অনড় স্বভাবের পুরুষদের অপছন্দ করে, আর দুর্বল ও কোমল চিত্তধারী পুরুষদের ব্যবহার করে। অতএব প্রতিটি গুণকে স্বস্থানে রাখবে।
কারণ এটি ভালোবাসা ডেকে আনে এবং প্রশান্তি ত্বরান্বিত করে।
চতুর্থ বিষয় হলো : মেয়েরা স্বামীর কাছে তা-ই প্রত্যাশা করে স্বামীরা স্ত্রীর কাছে যা প্রত্যাশা করে। যেমন : ভদ্রোচিত কথা, সুন্দর চেহারা, পরিচ্ছন্ন বসন ও সুগন্ধি। অতএব তোমার প্রতিটি অবস্থায় এসবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীকে নিজের মতো করে কাছে পেতে তার কাছে এমন অবস্থায় ঘেঁষবে না যখন তোমার শরীর ঘামে জবজবে।
তোমার কাপড় ময়লা। কারণ, তুমি তা করলে যদিও সে তোমার আনুগত্য দেখাবে; কিন্তু তার অন্তরে তুমি এক ধরনের বিতৃষ্ণা তৈরি করে দিলে। ফলে তার শরীরই তোমার ডাকে সাড়া দেবে। তবে অন্তর তার পালিয়ে বেড়াবে তোমার থেকে।
পঞ্চম বিষয় হলো :ঘর হলো নারীদের রাজত্ব।
ঘরের মধ্যে তারা নিজেকে নিজের আসনে সমাসীন ভাবে। নিজেকে সেখানকার নেতা মনে করে। অতএব তার সাজানো এই প্রশান্তির রাজ্যটিকে তুমি তছনছ করতে যাবে না। এ আসন থেকে তাকে নামাবার চেষ্টাও করবে না। তুমি যদি তা-ই করো, তবে তাকে যেন তার রাজত্ব থেকে উচ্ছেদ করলে।
আর কোনো রাজার জন্য তার চেয়ে বড় শত্রু আর কেউ হতে পারে না যে কি-না তার রাজত্ব নিয়ে টানাটানি করে। যদিও সে প্রকাশ্যে তোমাকে হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু এতে করে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভালোবাসার পরিবেশ দূষিত হবে।
ষষ্ঠ বিষয় হলো :নারী যেমন চায় তার স্বামীকে পেতে; তেমনি তার পরিবারকেও সে হারাতে চায় না। অতএব তুমি কিন্তু তার পরিবারের সঙ্গে নিজেকে এক পাল্লায় মাপতে যাবে না।
যদি এমন চাও যে সে হয়তো তোমার হবে; নয়তো পরিবারের। তবে সে যদিও তোমাকেই অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বিষণ্ন হবে। যার ভার সে তোমার দৈনন্দিন জীবন পর্যন্ত বয়ে আনবে।
সপ্তম বিষয় হলো : নিশ্চয় নারীকে সবচেয়ে বাঁকা হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এটি তার দোষ নয়। বরং এ তার সৌন্দর্যের রহস্য। তার আকর্ষণের চাবিকাঠি। যেমন ভ্রুর সৌন্দর্য তার বক্রতায়। অতএব সে কোনো ভুল করলে তার ওপর এমন হামলা চালাবেনা যাতে কোনো সহমর্মিতা বা সদয়তা নেই।
বাঁকাকে সোজা করতে গেলে তুমি তা ভেঙ্গেই ফেলবে। এ ক্ষেত্রে তা হলো তাকে তালাক প্রদান। পক্ষান্তরে ভুলগুলোয় প্রশ্রয় দিলে তবে তার বক্রতা বেড়েই যাবে। সে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেবে। ফলে সে তোমার জন্য যেমন নরম হবে না।
তেমনি শুনবে না তোমার কথা।
অষ্টম বিষয় হলো : নারীদের সৃষ্টিই করা হয়েছে স্বামীর অকৃতজ্ঞতা এবং উপকার অস্বীকারের স্বাধীনতা দিয়ে। তুমি যদি যুগযুগ ধরে তাদের কারো প্রতি সহৃদয়তা ও সদাচার দেখাও তারপর শুধু একটিবার তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার কর তবে সে বলবে, তোমার কাছে আমি জীবনে ভালো কিছুই পেলাম না। অতএব তাদের এ বৈশিষ্ট্য যেন তোমায় তাকে অপছন্দ বা ঘৃণায় প্ররোচিত না করে। কারণ, তোমার কাছে তার এ বৈশিষ্ট্যটি খারাপ লাগলেও অনেক গুণ দেখবে তার ভালো লাগার মতো।
নবম বিষয় হলো : নানাবিধ শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক ক্লান্তির মাঝ দিয়ে নারী জীবন বয়ে চলে। এ দিকে লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য কিছু ফরয পর্যন্ত ক্ষমা করে দিয়েছেন যা এ সময় কর্তব্য ছিল। যেমন রক্তস্রাব ও সন্তান প্রসবকালে তার জন্য পুরোপুরিভাবে সালাত মাফ করে দিয়েছেন। এ সময়দুটোয় রোজা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। যতক্ষণ না তার শরীরিক সুস্থতা ফিরে আসে এবং তার মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে যায়।
অতএব এ সময়গুলোয় তুমি আল্লাহ পাক ও ইবাদতমুখী হয়ে যাবে। কারণ, তার জন্য আল্লাহ পাক যেমন ফরযকে হালকা করে দিয়েছেন তেমনি তার থেকে তোমার চাহিদা ও নির্দেশও হালকা করে দিয়েছেন।
দশম বিষয় হলো : মনে রাখবে স্ত্রী কিন্তু তোমার কাছে একজন বন্দিনীর মতো। অতএব তার বন্দিত্বের প্রতি সদয় থাকবে এবং তার দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। তাহলে সে হবে তোমার জন্য সর্বোত্তম সম্পদ।
সে তোমার সর্বোত্কৃষ্ট সঙ্গী হবে। আল্লাহ পাক তোমার কল্যাণ করুন।
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৬
বিয়ের সময় মেয়েকে নসীহত করতে হবে । যেন ছেলের প্রতি আনুগত্যের খিলাফ করে সংসার না হারায়
আদরের নন্দিনী মেয়েকে চিরতরে একজনের কাছে তুলে দিতে একজন মায়ের কী কষ্ট লাগে, মমতাময়ী মায়ের তখন কী আবেগের ঢেউ খেলে যায়, উনার চোখে তখন কত আনন্দ-বেদনার ভাবনা ভীড় করে তা একমাত্র ওই মা জননীই জানেন। কিন্তু শুধু চোখের পানি ফেলে কলিজার টুকরা মেয়েকে শুধু বিদায় জানানোই নয়, তখন যদি তাকে এমন কিছু উপদেশ শুনিয়ে দেয়া যায় যা তার সারা জীবনের সম্বল হবে, যা তার আগামীর দিনগুলোকে উজ্জ্বল সুখময় করবে তবে তা বড্ড ভালো হয়।
সে থেকেই নিচের এই অমূল্য রত্নতুল্য উপদেশগুলো সংগ্রহ করে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ পাক আমাদের প্রতিটি বোনের এবং মেয়ের জীবনকে করুন বর্ণিল ও সুখময় সুন্নতি চাদরে ঢাকা একটি সংসারের রাজরানী।
হে আমার মেয়ে, তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছো। আরও ছেড়ে যাচ্ছো যেখানে তুমি জন্মেছিলে এবং যে বাসস্থানে তুমি প্রতিপালিত হয়েছো। যাচ্ছো এমন পরিবেশে যার সঙ্গে তুমি মোটেও পরিচিত নও।
মিলিত হবে এমন সঙ্গীদের সঙ্গে যাদের তুমি চেনো না।
অতএব তুমি তার প্রতি নরম হয়ে যাও। সে তোমার প্রতি নরম হয়ে যাবে। আর তার জন্য তুমি ১০টি বৈশিষ্ট্য ধারণ করো, তবে সে তোমার জন্য সঞ্চিত ধন হয়ে যাবে।
প্রথমটি হলো: কখনই সুন্নতের বাইরে স্বামীর কাছে কিছু আসা করবে না।
সব সময় সুন্নতকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে মেনে চলবে। স্বমীকেও সুন্নত অনুযায়ী চলার গুরুত্ব বুঝাবে। সুন্নতের মধ্যেই প্রকৃত সুখী সংসার। তাছাড়া সব ভন্ডামী। আজীবন মনে রাখবে।
দ্বিতীয়টি হলো : স্বামীর সঙ্গে থাকবে অল্পে তুষ্টির সঙ্গে। এবং জীবনযাপন করবে আনুগত্য ও মান্যতার ভেতর দিয়ে।
তৃতীয় হলো: স্বামীর নজরে পড়ার জায়গাগুলো দেখাশোনা করবে। তার দুই চোখ যেন তোমার কুৎসিত কিছুর প্রতি পতিত না হয়। সুপ্রসিদ্ধ সুন্দরের সর্বোত্তম হলো চোখের সুরমা।
চতুর্থটি হলো : তোমার স্বামী উনার নাকে লাগার স্থানগুলো খুঁজে ফিরবে। আর সুবাস ছাড়া তোমার কাছে যেন কোনো গন্ধ না পায়। আর পবিত্র সুবাসগুলোর আদি ও সেরা হলো সাবান ও পানি।
পঞ্চমটি হলো: স্বামীকে খাওয়াবার সুযোগ তালাশ করবে। কারণ ক্ষুধার তাপ মানুষকে তাতিয়ে দেয়।
ষষ্ঠটি হলো : তোমার স্বামীর নিদ্রার সময় নিরব থাকবে। কেননা ঘুম থেকে কেঁপে ওঠা তাকে ক্ষেপিয়ে দেয়।
সপ্তম ও অষ্টম হলো :স্বামীর বাসা ও সম্পদের যত্ন নেবে। এবং উনার ও উনার পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। পরিপাটি যেন থাকে সবকিছু।
নবম ও দশম হলো : স্বামীর কোনো নির্দেশ অমান্য করবে না। এবং তার কোনো দোষ খুঁজে বের করবে না। কারণ, তুমি তার নির্দেশের অবাধ্য হলে অর্থ তার মনটাকে চটিয়ে দিলে। যদি তার কোনো দোষ প্রকাশ করলে তো তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করায় অনিরাপদ হয়ে গেলে। বরং স্বামীর খারাপ কিছু দেখলে সুবিধা সময়ে বুঝিয়ে বলবে।
রাগারাগি করবে না।
এরপর আরও মনে রাখবে, উনার বিষণ্নতার সময় আনন্দ প্রকাশ করবে না। আবার উনার আনন্দের সময় বিষণ্নতা প্রকাশ করবে না। কারণ প্রথমটি তার কাছে অবহেলা মনে হবে এবং দ্বিতীয়টি তাকে বিরক্ত করবে। তাকে সবচে মর্যাদা তুমি তখনই দেবে যখন উনাকে সবচে বেশি সম্মান করবে।
আর এ অবস্থায় তুমি ততোখন পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, যতখন না তোমার পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়ে তোমার স্বামীর সন্তুষ্টিকে তোমার সন্তুষ্টির ওপর এবং উনার চাওয়াকে তোমার চাওয়ার ওপর অগ্রাধিকার না দাও। অবশেষে দুয়া করি, আল্লাহ পাক তোমার সার্বিক কল্যাণ করুন। তোমাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করুন। আমীন।
পারিবারিক অশান্তির কারণ এবং উত্তোরনের কতিপয় দিক-০৭
যৌতুক নেয়া বা দেয়া সম্পূর্ণ হারাম।
মেয়ের থেকে বরপক্ষকে এ হিন্দুয়ানী কু-প্রথা ও হারাম থেকে বের হয়ে আসার সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে।
যৌতুকের পরিচয়:
যৌতুক বাংলা শব্দ। এর প্রতিশব্দ পণ। দু’টোই সংস্কৃত থেকে এসেছে। হিন্দীতে বলে দহীজ (উবযরল) ইংরেজিতে Dowry (ডাওয়ারি)।
ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে-
`Dowry’ : The Property that a wife or a wifes family give to her husband upon marriage. যৌতুক হল বিবাহ উপলক্ষে কন্যা বা কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে বরকে প্রদেয় সম্পদ। (The New Encyclopedia Britannica V. 4, P. 205)
যৌতুকের উৎপত্তি:
যৌতুকের উৎপত্তি প্রাচীন হিন্দুসমাজে , এটি প্রায় স্বীকৃত। যৌতুক প্রথার উৎপত্তি হিসাবে ‘কন্যাদান’ অথবা ‘স্ত্রীদান’ নামক বৈদিক যুগের একটি ধর্মীয় রীতিকে গণ্য করা হয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী পিতার সম্পত্তিতে কন্যার কোন অধিকার নেই। বিয়ের পর থেকে কন্যার দায়-দায়িত্ব আর পিতার থাকে না, যা কন্যার স্বামীর উপরে বর্তায়।
এজন্য বিয়ের সময় পিতা কন্যাদান রীতির মাধ্যমে কন্যার স্বামীকে খুশী হয়ে কিছু উপহার বা দক্ষিনা দেয় (সামর্থ অনুযায়ী)। আবার পিতার দক্ষিনা ছাড়া কন্যাদান তথা বিবাহ ধর্মীয়ভাবে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বৈদিক সময়ের সামর্থ্যানুযায়ী দক্ষিনাই কালাতিক্রমে বর্তমানে বাধ্যতামূলক ও সাধ্যাতিরিক্ত যৌতুকে বিবর্তিত হয়েছে । শুরুর দিকে কন্যাদান উচ্চবর্ণের হিন্দু তথা ব্রাহ্মণ সমাজেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে নিম্নতর বর্ণের হিন্দুরাও তা অনুসরণ করা শুরু করে।
প্রসংগত হিন্দু ধর্মে বিয়ে হয় চিরজীবনের জন্য। এজন্য ধর্মীয়ভাবে বিবাহবিচ্ছেদ ও পুনঃবিবাহের প্রচলন নেই। বিবিসি’র রিপোর্টে দেখা যায় ভারতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বিধবা মানবেতর জীবনযাপন করে। অনেক গবেষকের মতে যৌতুক প্রথার সাথে এই বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।
এক গবেষণায় দেখা যায় ১৯৬০ সালে ভারতে যৌতুকের হার ছিল ৯৪% ।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার টিভির ডকুমেন্টারীর তথ্য অনুযায়ী ভারতের ৯৯% পুরুষ বিয়েতে যৌতুক নিয়ে থাকে। বর্তমানে ছেলে পক্ষের বিত্তশালী হওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে যৌতুক। এটা রীতিমতো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, যা আর শুধু বিয়েতে সীমাবদ্ধ নেই। বাচ্চা গর্ভধারণ, বাচ্চা প্রসব, প্রতিটি পূজা-পার্বনেও যৌতুক দিতে হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের এক কন্যাকে বিয়ে দিতেই পুরো পরিবারকে হতে হয় নিঃস্ব ও সহায়-সম্বলহীন।
গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে যৌতুকে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে এক পরিবারের সমস্ত অর্থের ৬৮% অথবা ছয় বছরের বাৎসরিক আয়ের সমান । শিক্ষিত সমাজে উচ্চ হারে যৌতুক নেয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায় ( Dowry Market)। সমাজের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে যৌতুক ক্যালকুলেটর (Dowry Calculator) এর মাধ্যমে।
হিন্দুসমাজের কালক্রমে বরপণে রূপান্তরিত হওয়ার পিছনে যেসব কারণ রয়েছে তা হল :
শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্ব:
প্রাচীনকালে অনার্যরা সমাজে মর্যাদা পাওয়ার আশায় আর্যদের নিকট তাদের কন্যা সম্পাদন করত। বিনিময়ে মোটা অংকের সম্পদ দিত।
তখন থেকেই যৌতুক প্রথা কালক্রমে একটি সামাজিক রূপ নেয়। (ইসলাম ও যৌতুক, প্রাগুক্ত)
হিন্দুসমাজের এই শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্বের কারণে হিন্দুসমাজে আজো যৌতুক প্রথা বেশি। বিশেষ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মাঝে এর প্রচলন অনেক। উনবিংশ শতাব্দিতে দেখা যায়, উচ্চবর্ণের বাহ্মণরা প্রচুর যৌতুক পাওয়ার আশায় শতাধিক বিবাহ করত। এসব স্ত্রী তাদের পিতৃগৃহেই থাকত।
স্বামীরা বছরে একবার দেখা করতে আসত এবং প্রচুর আতিথেয়তা ভোগ করে যাওয়ার সময় অনেক যৌতুক নিয়ে যেত। (বাংলা পিডিয়া ৮/৪৫৫)
শ্রেণীবৈষম্য বা কুলিনত্বে নতুন মাত্রার সংযোজন:
উনবিংশ শতাব্দী থেকে ব।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।