আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যবিত্ত স্মৃতিচারণ

অতি সাধারণ। বলার মত তেমন কিছুই নাই। পূরা শহরটা আবছা অন্ধকারে ডুবে আছে, বিদ্যুৎ নেই মনে হচ্ছে। রাতের কুমিল্লা অতটা বেস্ত নয়, সেই ছোটবেলা থেকেই শহরের স্কুল কলেজে পড়ে এসেছি, অলিগলি সবই চেনা। আমার বেশীরভাগ বন্ধু শহরে থাকে।

মোবাইলটা আবার কেঁপে কেঁপে উঠছে, - ভাই কান্দিরপার হয়ে যান। - এদিক দিয়ে তো রাস্তা বেশি, ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু। - তোমাদের এই এক সমস্যা, ভাড়া বাড়ানোর উছিলার শেষ নাই। একটাকাও বেশী দেবনা, যেখান দিয়ে যেতে বলি সেখান দিয়ে যাও। - এইডা কি কন? আমরা গরীব মানুষ, দুই একটাকা চাইতেই পাড়ি।

- ব্যাটা আর লেকচার দিছনা, সামনে তাকিয়ে চালা। বেচারা ড্রাইভার ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলো। মোবাইলটা কাঁপতেই লাগলো, এটা এখন একটা আলাদা উৎপাত! - হা, বল। - ফাজলামির একটা সীমা থাকা দরকার! তুই এতো ফালতু হয়ে গেছিস সেটা জানলে তোকে আমি কক্ষনো ডেকে আনতাম না। মনে রাখিস কথাটা, যত্তসব ফাউল! - এই শোন শোন, , , যাহ্‌ শালা ফোনটা কেটে দিলো।

মোবাইল ফোনে উৎপাতের কিছু বিব্রতকর ঘটনা সবার জিবনেই ঘটে, আমার তেমন কিছুই নেই তবে একবার ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র মেয়ে ফোন নাম্বার চেয়েছিল কি মনে করে দেইনি নাম্বার এখনো সেটা ক্লিয়ারনা তবে মেয়েটা অপমান বোধ করছিল বেশ। আজ রাতটা শাহদাতের খুব খারাপ যাবে, এটা আমি বুঝতেই পারছি। ফোনটা আবার কেঁপে উঠছে। - এই ভাই একটু থামাও তো চা খাবো, টং এর সামনে থামাও। সারা রাস্তায় মানুষজন না থাকলেও টং গুলোর সামনে মানুষ থাকেই দুই একজন।

একজন আধা বয়স্ক মহিলা টং এ বসে চা বানাচ্ছেন। এই দোকানটা আমার চেনা, এখানেই বেশীরভাগ চা খাই। তবে মহিলাকে আজই প্রথম দেখলাম। - খালা দুইটা চা দেন তো। এই দোকান কি আপনিই চালান নাকি? - না বাবা আমার স্বামী চালায়, আজ দুইদিন অসুস্থ, জ্বর।

কাল সারাদিন বন্ধ আছিলো আজ দুপুরের পর খুললাম, কি কইরাম কন, অভাবী মানুষ আমরা দিনে আনি দিনে খাই। তাই খুললাম। - হুম, আমারটায় দুধ চিনি বাড়িয়ে দেবেন, আলগা পাত্তি মেরে। আর চাচাকে আমি চিনি, তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে করবেন না।

- না না। - এই আপনি চায়ের কি খাবেন খান। ঝাড়ি খাবার পর থেকেই মুখ গোমড়া করে আছে রিক্সাওয়ালা। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে একান্ত অনিচ্ছায় চা গিলছে। - খালা উনাকে দুটা বিস্কুট দেন তো।

- না, লাগবেনা। একটু আগে নাস্তা করছি আমি। - আরে ভাই লন তো। সারাদিন রিক্সা চালান, কি খান না খান। পেট ভর্তি করে রাখবেন সব সময়।

একটা বিনয়ের হাসি দিয়ে বিস্কুট নিল রিক্সাওয়ালা। কতো সহজ সরল মানুষ এরা, কতো অপ্লে তুষ্ট। একটু ভালো কথায় ভুলে যায় সব। আর আমরা হিংসার বীজ অন্তরে পুষে রাখি। সারাদিন খাটা খাটুনী যেই হাড়ে করে সেই অনুপাতে তাদের খাবার পেটে যায়না।

রাস্তার পাশের কমদামি পচা বাসি খাবারের উপর এদের উদরফুর্তি চলে। স্বাস্থ্যহীন হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয় শুধু অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে। আজ যদি সরকার আইন করে সব কমদামি নিম্নমানের খাবার বন্ধ করে দেয় তাহলে আরও বিপদ এই সব নিম্নআয়ের লোকগুলো তাহলে না খেয়েই থাকতে হবে কারন তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকে ৫০ টাকা খরচ করে একটা বার্গার খাওয়া। ফলে তারা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরবে উপবাস থেকে পরিশ্রম করতে গিয়ে। এছাড়া অর্থনীতির চাকার সাথে এই নিম্নমানের খাদ্যও জড়িত।

এগুলো বন্ধ করলে অনেক বেকারি, পাইকারি বিক্রেতা, টং দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে ফলে বৃহৎ সংখ্যায় একটা জনগুষ্ঠি বেকার হয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে যাবে। বরাবরই একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরানোর জন্য নিম্নবিত্তকে বলি হতে হয়। এই ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্তের কোনও সমস্যা নেই তারা কোনও মতে ৫০ বছর শারীরিক শক্তি নিয়ে বেঁচে থেকে মরতে পারলেই সুখী। ৮০ বছর বাঁচার স্বাদ তাদের নেই, কারন ৮০ বছর বয়সেও তাঁকে রিক্সা চালাতে হবে, নয়তো অন্য কোনও কঠোর পরিশ্রম।

তাই পচা বাসি খাবার খেয়ে যত তাড়াতাড়ি মরা যায় ততই ভালো। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।