সাঈদ জুবেরীর কবিতা নগদ; বকেয়া রাখে না কিছুই। সত্যের লগে মিল রাইখা আপাত সত্য-সূচক সন্দেহ গুঁজে দেয়াদেয়িটা নাই, আই মিন গোঁজামিল নাই। মানে হইল যে, পেরেশানির এই ব্যাপক বরষায় আমরা যারা নির্বিবাদিতার ছাতা লইয়া ঘুরি; যা কিনা আবার তালি মারা, তারা যদি জুবেরীর কবিতা লগে বাতচিত করি ত নয়া নয়া ভাংচুর আরম্ভ হইবার পারে ! কেননা জুবেরীর কবিতা কিন্তু তালি মারা না; অর্থাৎ জুবেরীর কবিতায় আপ্নেরা রোমান্টিক উপশম পাইবেন না। তালি মারা ছাতা দিয়া ভাবালুতারে ওম্ দিয়া দিয়া আমরা-আপ্নেরা যখন আপসে আপসে তথাগত নন্দন ফলাই তখন জুবেরীর কবিতা আচমকা পেটের ভিতর পূর্ণিমা হজম কইরা নিয়া জীবনের কেন্দ্রস্থলে গোপন নৈরাজ্য বাড়াইয়া দিতে পারে ! আর হুটহাট কইরা পেরেশানির এলাহি বরষা ঢুইকা পড়তে পারে এই তালিবিহীন কবিতার বরাতে; রেহাই নাই !!
আপ্নেরা যারা কবিতা দিয়া একটু আমোদ পোহাইবেন বইলা মধ্যবৃত্তীয় আলমিরার শোভাবর্ধক হিসাবে বইমেলা থাইকা কিছু কিছু কবিতা বই এখনও খরিদ কইরা লইয়া যান তাদের এই বই খরিদে ফায়দা অল্প। কারণ বৃষ্টিস্নাত কোন মুহূর্তেই এ কবিতা আপ্নেরে-আমারে কোন নরম নরম আমোদ দিতে পারবে না।
অল্প ফায়দা যা হইব তা হইল এই বইয়ের কভারের পরাবাস্তব চিত্রকর্ম সুর্রিয়াল-সার্রিয়াল কইরা চিল্লানেওয়ালাদের তথাকথিত নন্দনতাত্ত্বিক খোরাকি জুগাইবো যারা কিনা পরাবাস্তবতা-আন্দোলনের রাজনীতি বিলকুল উহ্য রাইখা আর্টের বস্তা লইয়া বস্তা-দৌড় খেলে।
নুনু-কেন্দ্রিক সভ্যতা ম্যাস্কিউলিনিটিরে পুঁজি কইরা যে আত্মজ্ঞানের পাটাতন তৈয়ারি কইরা দিতেছিল তারে ফাঁক কিংবা ফাক কইরা জুবেরীর কবিতা এক অন্তরঙ্গ ক্রোধ জাগাইয়া তোলে যা অহমের যে অমীমাংসিত জল এবং তাতে যে আমাদের অলৌকিক সাঁতার, সেসবরে খোঁচাইয়া খোঁচাইয়া জিগাইতে থাকে, আমরা কি এমন এমন যে, না জড়াব সংঘাতে কিংবা না লইব সন্ন্যাস???? আপনারে আপনি খুন করতে করতে জুবেরী কবিতার বরাতে দীর্ঘ শল্যচিকিৎসার মুখোমুখি হইতে থাকেন। এই দীর্ঘ শল্যচিকিৎসায় ‘আমি’ রে নিদারুণ ব্যবচ্ছেদ করতে করতে বুঝবার চেষ্টা চালাইতে থাকেন। ‘আমি’ যে কোন রিজিড-স্টেগ্নেন্ট তথা নিরেট ধারণা না, তা বুইঝা লইয়া কথা পাড়তে থাকেন আর গণনা কইরাও সিউর হইতে পারেন না যে, ‘আমি’র মইধ্যে দীর্ঘশ্বাসের হাওয়ায় যখন পেরেশানির আবাদ করে তখন ‘আমি’র যে সন্তান উৎপাদন হয় তা কি বিরোধী নাকি যৌথ ভাবনার ফসল- এ ব্যাপারে সন্দেহ জারি রাইখা যাপন আর মৃত্যুরে সিম্বলাইজ করেন। যাপনের মইধ্যে স্বপ্নের যে সিসিফাসীয় রূপ আর সম্ভাবনার যে নার্সিসাসীয় আত্মশ্লাঘা তারে সনাক্ত করত মৃত্যুরে তিনি দেখতে পান বিব্রত বয়ানে শব্দ আর নৈঃশব্দের দ্বান্দ্বিকতায় সংশ্লেষণী এক সত্তা রূপে যা কিনা তেল আর জলের চালাকিতে পৃথক !!!! তবু জীবন যখন সংযোগহীনতার সীমান্তে কাঁটাতারের ঘেরাটোঁপ থাইকা বেরুবার পথ খুঁইজা খুঁইজা শেষতক পলাইতে চায় তখন জুবেরীর কবিতা পুছ করে, পলানো কি আদৌ সম্ভব??? পায়ে চলা পথের পাশে কবরটির সাথে দরকষাকষিতে বোঝা যায় যে আসলে পলাইতে চাওয়া প্রাণেই পৃথিবী আজকাল সয়লাব আছে আর তাহা আদতে মুর্দাদের একখানা ব্যাপক ফরাসখানা হিসেবেই ধরা খায়!!!! আমাদের অন্ধত্ব আর আমাদের ডুবাইয়া দেওয়া ঢেউগুলা যখন আমাদের তলাইয়া লইয়া যায় তখন সিজোফ্রেনিক ঘুমে পালাইতে চাওয়া আমরা বিছানায় স্যানাটোরিয়াম খুঁইজা ফিরি; মাতাল হই, মদের গ্লাসে অনুকূল সূর্যরে ঘুম পাড়াই আর কি নিদারুণ ঘুমন্ত রইয়া দেখি না একি সময়েই আছে কত কত সূর্যোদয়ের উপাখ্যান !!!
“.......তবে কি খুলির ভেতর শ্যুটিং ইউনিট
তবে কি খুলির ভেতর গান পাউডার মারমারকাটকাট
তবে কি খুলির ভেতর রেলগাড়ি ধাওয়া করে ফেরা
তবে কি খুলির ভেতর নায়ক নায়িকার ক্রন্দন
তবে কি খুলির ভেতর ভিলেনের অট্টহাসি
তবে কি খুলির ভেতর একটা ঘোড়দৌড়ের মাঠ.....”
জুবেরী কবিতার অক্ষরে ফুঁ দিয়া আগুন জ্বালাইতে গিয়া বুঝবার পারেন যে, নিহত আর হত্যাকারীরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগত পরাজয় লইয়া আছে অদৃশ্য ছুরি হাতে; তলে তলে তদারকি করতেছে, সু্যোগ হইলেই দাবদাহের কালে ‘আমি’র ফ্যালাসটা কাইট্টা ফালাইব।
তখন পৃথিবীর তাবৎ লিবিডো কোন যোনিদেশ খুঁইজা না পাইয়া পথের মইধ্যে বিরাম চিহ্নের মতন খাড়াইয়া থাকব বিরতিহীন রাত্রির ট্রেনের অপেক্ষায়। কিন্তু রতি বিরতি কোনটাই তারে সঙ্গ দিব না !!
আর “......মাথার ভিতর বেড়ে চলে ঘাসহীন মাঠের বিস্তার......” সেই বিস্তারে বিস্তারিত জানবার লাইগা জুবেরী আমাদের সিনেমা দেখায়। দেখায় যে কিছু মানুষ খুন হইয়া যাইতেছে আর কিছু কিছু আড়ালে হাত ডইলা রক্তের দাগ উঠাইতেছে। এক একটা দৃশ্য কেমনে কেমনে শেষতক নিহত আর হত্যাকারীদের গভীর প্রণয় আকারে থিতু হইতে থাকে তা আমাদের দেখে নিতে হয়।
আমরা দেখি এত এত সন্দেহ কিন্তু তার কোন দৈহিক আদল বিলকুল ধরা খায় না।
জুবেরী সমস্যার দৈহিক আদল লইয়া ডিল করছেন। আমাদের ভাব-বোধ-বোধিনী এসকল সন্দেহ থাইকা বিবিধ বোল-চাল আমদানি করবার হেতু আমরা সারাদিন বইসা বইসা ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা ব্যাপ্ত করি। কাটা পড়ার ভয়ে কত কত ‘আমি’রা নিজেরে নিজে আড়াল করতেছে। জুবেরী কিন্তু পাশ কাটাইয়া যাইবার চান নাই । যে কিশোর ‘আমি’ পলাইত, থমকে যাইত, মুখের মইধ্যে রক্ত লুকাইয়া দুপুর বরাবর যাতায়াত করতো,সারা দুপুর পুকুরে ডুব দিয়া থাকত, সেও কিন্তু শেষতক গোধূলির ক্ষণটাতে আপ্নের-আমার মতন রোমান্টিক হইতে পারে নাই; বরং এই বিভ্রান্ত গরাদময় জাহানের গান-কান্নার অনুমিত এটার্নাল আঁকিবুকির পল্টি খাওয়া দেইখা বড় পেরেশানিতে নিপতিত হইত, আর হিসাব কিতাব কইরা বুইঝা লইত যে এটার্নিটি বইলা আদতে কিচ্ছুটি নাই !! তাই নিজেরেই শল্যচিকিৎসার শরনাপর্ণ কইরা নিজের অহম-রতি লগে মোকাবিলা করছেন।
এই নুনু-সভ্যতার তৈয়ারি করা ম্যাস্কিউলিনিটির আদলে যে চিন্তা-কাঠামো তাতে যে ‘আমি’ প্রশ্রয় পায় তারে খুন করছেন পহেলা প্রত্যূষেই । আর ‘আমি’ রে ‘অপরাপর’ এর মইধ্যে গ্রেফতার কইরা যারপরনাই সন্দেহ জারি রাখছেন সত্যের তাগিদে !!!!!!!কেননা “.........তুই ছাড়া তোর ঘর এত তোরময়” আমল না কইরা পৃথিবীর মন ও মনীষার বাঁশি বাজানো কি আদৌ পসিবল???????
পেটি-বুর্জোয়া বাস্তবতায় জুবেরী তার পেটি ক্রাইসিস লইয়া যখন ডিল করবার বাসনায় কবিতার লগে বাতচিত করতেছেন তখন আমরা তাবৎ পেটি-বুর্জোয়া, মধ্যবিত্ত আর পেটি-মধ্যবিত্ত রা দিশেহারা বোধ করি; কোন দিশকূল না পাইয়া নিজের অস্তিত্ব লইয়া বিপাকে পড়ি। আমরা কি তবু ‘আমি’দের শ্রেণী-চরিত্র বুইঝা লইয়া পলায়নে আস্কারা দিতে পারি ???? ‘আত্মরতির খুন’-য়ের লগে আমাদের বার বার দেখা ত হইয়া যায় । ‘আত্মরতির খুন’-য়ের আছর থাইকা কারো মুক্তি নাই!!!! তাই ‘আমি’র খুন দিয়াই শুরু......ওঁ গুরু.........তেরি অর মেরি খুন কি খুনিয়া,মগজে মোর আলবৎ দিতাছে বুনিয়া !!!!
(আমার বই নিয়া নাসিফ আমিনের এই লেখাটা নিজের পেজে শেয়ার করা নিয়া অনেক ভাইবা অবশেষে পোস্ট দেয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম। এইটারে আত্মপ্রচারণা কইলেও বিরোধীতা করুম না।
কারণ সেই বাসনা নানান কর্মেই বিদ্যমান আছে। কিন্তু আরো একটা চিন্তাও কাজ করছে সেইটাও জানানো জরুরী। সেটা হলো এখানে নাসিফ তার নিজের রিডিং দাড়া করাইছে। আর এই কাজটা সে প্রচলিত বই আলোচনার বাইরে থাইকা করছে। আরো একটা যায়গা নাসিফ আর আমার যাপিত জীবনের সম্পর্কটাও এইখানে এড়ায় না গিয়া বরং লেখাটায় ধারণ করছে সে।
আরো একটা কথা কই, এই ব্লগে অনেকদিন লেখি। আমার বইটা সম্পর্কেও নিয়মিত আমার পাতায় আসেন যারা, তারা অবহিত। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে এই শেয়ার করা যায়। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।