আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনার হাঁস আর লোভী বউ

এই নামে কেউ নেই অনেক অনেকদিন আগে বানারসীতে একজন ভোলাভালা ভাল লোক ছিলেন, তার ছিল এক বউ আর তিন মেয়ে। মেয়ে তিনজন খুবই রূপবতী ছিল দেখতে! নন্দা, নন্দবতী আর সুন্দরীনন্দা নামের এই তিন কন্যার রূপ আর গুনের কথা সারা বানারসীর লোকজনের মুখে মুখে ফিরতো। কিন্তু কপালের ফেরে এদের বিয়ে দেবার আগেই তাদের বাবা হঠাৎ একদিন মারা গেলেন। তাদের তেমন কোন সহায় সম্পত্তিও ছিল না, সুতরাং কোন উপায়ন্তর না দেখে তাদের মা তিন কণ্যাকে সাথে নিয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে গৃহভৃত্যের কাজ শুরু করলো। ওদিকে সেই লোক পৃথিবীর মায়া না কাটাতে পারছিল না, স্বর্গে তার মন নেই! সব দেখে শুনে সৃষ্টিকর্তা তাকে পূর্ণজন্ম দান করলেন, তবে মাঝে আবার একটা ফ্যাকরা বানিয়ে দিলেন! তার জন্ম হলো সোনার হাঁসের রুপে, মানুষ না।

তো সেই হাঁস একদিন ডিম ফুটে বের হলো, ধীরে ধীরে বড়ও হলো! সমগ্র হাঁস কুলের তার সোনালী পালক দেখে হিংসা চোখ টনটন করে আর সোনার হাঁস গর্ব ঘাড় বাকিয়ে বুক ফুলিয়ে, মাটিতে পা না ফেলে হেটে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেই পুকুরের পানিতে নিজের চেহারা দেখে! এমন দেখতে দেখতে এক তার মনে গভীর ভাবের উদয় হলো, সে ভাবলো 'আচ্ছা আমি পূর্ব্বজন্মে কি ছিলাম"! ভাবতে ভাবতে এক সময়ে তার নিজের বউ আর তিন মেয়ের কথা মনে পরে গেলো। পরিমরি করে সে তখন ছুটলো বউ মেয়েদর খোঁজে, গিয়ে যা দেখলো তাতে তার হৃদয় ভেঙ্গে ছয়খানা হয়ে গেলো! তার আদেরর মেয়েরা কিনা দাসীবৃ্ত্তি করে! সে তখন ভাবলো 'আমার গায়ের পালক গুলোত সব সোনার। আমি যদি ওদের একটা করে পালক দেই, তাহলে আর কোন কষ্ট থাকবে না। ' এই ভেবে একদিন সেই বিশাল সোনার হাঁস উড়ে গিয়ে বসলো তাদের কুড়ে ঘরের মাঝের আড়ার উপর! এত বড় সোনার হাঁস দেখে তো মেয়েদের চোখ ছানাবড়া! তারা 'মা মা দেখে যাও' বলে হাউকাউ, চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল! সেই চেচানীতে অতিষ্ট হয়ে হাঁস বলে উঠলো; 'থামো তোমরা! আমি তোমাদের বাবা, হাঁস হয়ে পূর্ণজন্ম লাভ করেছি। আমি তোমাদের দেখতে এসেছি।

এখন থেকে তোমাদের একটা করে পালক দেবো, সেটা বিক্রী করে ভালই টাকা পাবে, আর তোমাদের পরের বাড়িতে কাজ করতে হবে না"! এই বলে সে একটা সোনার পালক ফেলে দিয়ে উড়ে চলে গেলো আবার। এমনকরে মাঝে মাঝেই সে আসতো আর সোনার পালক দিয়ে যেতো। সেই পালক বিক্রী করে তার বউয়ের হাতে প্রচুর টাকা আসলো, তাদের আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। ঘরে বসে পায়ের উপর পা তুলে খায় আর ঘুমায়! টাকাপয়সার সাথে সাথে অবশ্য আরও একটা জিনিসও ফ্রি ফ্রি চলে আসলো তার কাছে, সেটা হলো আরও টাকার লোভ। সুতরাং এক সকালে সে তার মেয়েদের বললো ' এই সব পশুপাখির চরিত্র বোঝা যায় না! এই হাঁস যদি তোমাদের বাবা হতেন, তাহলে তো আমাদের সাথেই থাকতেন, তাই না? আর যদি সে তোমাদের বাবাও হন, তাহলেও পাখি হয়ে গেছেন, কবে যে আসা বন্ধ করে দেন! যদি আর না আসে তাহলে আমাদের কি হবে?" মেয়েরা ভাবলো আসলেই তো, 'সোনার হাঁস যদি আসা বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে!" মা তখন বললো " শোন মেয়েরা, এরপরে যেই না হাঁস আসবে আম্নি আমরা ওর সব পালক ছিড়ে নেবো!' কিন্তু মেয়েরা বাবার কষ্ট হবে বলে এই প্রস্তাবে রাজি হলো না।

তখন হাঁসের বউ বললো আচ্ছা যা করার আমি নিজেই করবো! এরপর একদিন হাঁস আসলো, সেদিন হাঁসের বউ আবার স্পেশাল সাজগোজ করে বসেছিল। হাঁস এসে আবার ঘরের আড়ার উপরে বসলে, বউ চোখে বিল্লোল কটাক্ষ হেনে বললো 'প্রিয়তম একবার আমার কাছে এসে বসো'! আহলাদে গদগদ হয়ে যেই না হাঁস বউরে কাছে গিয়ে বসছে, ওম্নি বউ তাকে দুই হাত দিয়ে জাপটে ধরে সব পালক এক এক করে উপরে ফেললো! হতভম্ব হাঁস শুধু ফ্যালফ্যাল করে দেখতে লাগলো! ওদিকে হাঁসে বউ পালক নিয়ে এক দৌড়ে অন্য ঘরে গিয়ে দেখে 'হায় হায়, কই সোনার পালক! সব তো সাদা বকের পালকের মতো হয়ে গেছে!' রাগে গজ গজ করতে করতে সে তখন হাঁসটাকে ধরে একটা বড় জালার মধ্যে আটকে রেখে দিল! মাঝে মাঝে বেড় করতো জালার বাইরে, কিন্তু গায়ে কোন পালক না থাকায় হাঁস আর উড়তে পারতো না! এভাবে আটক থাকতে থাকতে এক সময়ে তার গায়ে আবার পালক উঠলো, কিন্তু সেগুলো হলো সব সাদা! ওদিকে সোনার পালক সব হারিয়ে হাঁস বউ আর তার মেয়েদের আবার পুরানো কাজে ফিরে যেতে হলো! আমার গল্পটি ফুরলো নটে গাছটি মুড়লো! কেনরে নটে মুড়লি কেন? আমার ইচ্ছা তাই তোর তাতে কিরে ব্যাটা? ...................................................................................................গল্পটা 'জাতকের' সুবর্ণহংস অবলম্বনে লেখা। এমন সোনার হাঁসের গল্প আমরা ঈষপের গল্প, লা ফন্টেনের গল্পেও দেখি। ধারনা করা হয় এই 'সুবর্নজাতকই' এই সব গল্পদ্বরয়ের উৎস!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.